মিস ওয়ার্ল্ড ২০২৫: বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধি আকলিমা
Published: 8th, May 2025 GMT
সম্প্রতি বাংলাদেশের ফ্যাশন অঙ্গনের প্রভাবশালী উদ্যোক্তা ও ন্যাশনাল ডিরেক্টর আজরা মাহমুদ মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০২৫-এর আনুষ্ঠানিক লাইসেন্স পেয়েছেন। এবারের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছে আকলিমা আতিকা কনিকা।
সৌন্দর্য ও ফ্যাশন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের নাম উঠে আসছে বেশ কয়েক বছর থেকেই।দেশিয় প্রতিযোগিরা , ভিনদেশের প্রতিযোগিদের দিকে রীতিমতো ছুঁড়ে দিচ্ছেন চ্যালেঞ্জ। মোদ্দা কথা, মিস ওয়ার্ল্ড এর মতো বড় পরিসরের প্রতিযোগিতাতেও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। এরই মাঝে বাংলাদেশ ফ্যাশনের ন্যাশনাল ডিরেক্টর আজরা মাহমুদ পেলেন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০২৫ এর লাইসেন্স। এ বছরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণকারীদের জন্য মিস ওয়ার্ল্ডের পথ সুগম হবে বলেই আশা করা যাচ্ছে। এছাড়াও এর মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা নিজের দায়িত্বে নিয়ে নিলেন। যদিও তাঁর কাধে ইতিমধ্যে মিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, মিস সেলিব্রিটি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং ফেস অফ এশিয়া, বাংলাদেশ-এর মতো বড় পরিসরের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মগুলোর দায়িত্ব আছে। এখানে উল্লেখ্য, মিস ওয়ার্ল্ড-এর ৭২তম আসরটি অনুষ্ঠিত হবে মে মাসে ভারতের তেলেঙ্গানায়।
সময়ের সীমাবদ্ধতা এবং বৈশ্বিক আয়োজনের বাঁধাধরা সময়সূচির কারণে এ বছর মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০২৫-এর মূল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে ওঠেনি। বিশেষ কোনো আয়োজন ছাড়াই করা হয় প্রতিনিধি মনোনয়ন করা হয়।মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০২৪-এর প্রথম রানার আপ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন আকলিমা আতিকা কনিকা। এ বছর তিনিই বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন, বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দৈহিক সৌন্দর্য ছাপিয়েও যোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে তুলে ধরার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে আকলিমার। তিনি ইতোমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত ফেস অফ এশিয়া ২০২৪ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের হয়ে লড়েছেন। তাঁর নিখুঁত উপস্থাপনা ও আত্মবিশ্বাস আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কুড়িয়েছে প্রশংসা। এই অভিজ্ঞতা তাকে মিস ওয়ার্ল্ড মঞ্চে একজন যোগ্য প্রতিনিধি হিসেবে আরও প্রস্তুত করে তুলেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাই সবদিক বিবেচনায় বাংলাদেশের মুখ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে তাঁকে।
আজরা মাহমুদ বলেন, আকলিমা মেধা, সৌন্দর্য ও উদ্দেশ্যবোধের প্রতীক। সে এমন একটি ফ্রেশ ফেইস যাকে মিস ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন সবার সামনে তুলে ধরতে চায়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার অভিজ্ঞতা, পরিশ্রম এবং দেশের প্রতি তার ভালোবাসা আছে। সে শীঘ্রই আমাদের ও বাংলাদেশের গর্ব হবে বলে আমরা আশাবাদী।
আজরা মাহমুদের নেতৃত্বে গঠিত আজরা মাহমুদ ট্যালেন্ট ক্যাম্প (এ এম টি সি) ইতোমধ্যেই দেশের সম্ভাবনাময় তরুণীদের আন্তর্জাতিক মানের প্রস্তুতি দেওয়ার একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। সেখানে সৌন্দর্য, নেতৃত্ব, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও আত্মবিশ্বাসের সমন্বয়ে এমন এক প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে, যারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে নতুনভাবে তুলে ধরতে সক্ষম।
আকলিমার এই মনোনয়ন এক কথায় আজরা মাহমুদের দূরদর্শিতা, সংগঠনের সামগ্রিক প্রস্তুতি ও দৃঢ় নেতৃত্বের প্রতীক। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার নামেই মানুষের মধ্যে এক ধরনের ধারণা জন্মায় যে, এটি কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতা। ধারণাটি একেবারেই ভুল। আজরা মাহমুদের উদ্যোগে প্রতিটি প্রতিযোগীকে সমাজসচেতন, শিক্ষিত ও ব্যক্তিসচেতনতা বৃদ্ধি করে, পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা স্পষ্ট।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে আকলিমা শুধুমাত্র একজন সুন্দরী প্রতিযোগী নন, বরং একজন সচেতন, আত্মপ্রত্যয়ী ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের সঠিক প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে সক্ষম নারী। আশা করা যায়, আকলিমা তাঁর লক্ষ্যে সফল হবেন। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার দৌঁড়ে বাংলাদেশের মুকুটে যোগ হবে নতুন পালক, যা আগে কখনও দেখেনি বাংলাদেশ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বেতনের অর্ধেক যদি চলে যায় বাসা ভাড়ার পেছনে...
বাংলাদেশের শহুরে জীবন যেমন নানা সুযোগ এনে দিয়েছে, তেমনি সমস্যারও অন্ত নেই। ঝকঝকে ভবন, আধুনিক অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—সবকিছুই মানুষকে শহরমুখী করছে। কিন্তু এই আকর্ষণের আড়ালে সবচেয়ে বড় সংকট হলো ভাড়া বাড়ির ক্রমবর্ধমান চাপ। ঢাকার মতো মহানগরে, যেখানে কাজ, শিক্ষা ও ব্যবসার সুযোগ সবচেয়ে বেশি, সেখানে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে এ সমস্যা গভীরভাবে প্রভাবিত করছে।
প্রতিবছর ভাড়া বাড়ছে, কিন্তু আয়ের হার তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না। একজন চাকরিজীবীর বেতনের অর্ধেক বা তার বেশিই চলে যায় ভাড়ার পেছনে। এরপর বাজার, বিদ্যুৎ-গ্যাস, চিকিৎসা ও সন্তানের পড়াশোনা সামলাতে গিয়ে পরিবারগুলোকে কঠিন চাপে পড়তে হয়। কেউ খরচ কমিয়ে চালায়, কেউ ঋণ নেয়। এ কারণে মানসিক অশান্তি বাড়ে, পারিবারিক দ্বন্দ্বও তৈরি হয়।
শহরে নতুন আসা শিক্ষার্থী বা চাকরিজীবীদের অবস্থা আরও দুর্বিষহ। নিরাপদ ও সাশ্রয়ী বাসা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ভালো এলাকায় থাকতে হলে মোটা অগ্রিম টাকা গুনতে হয়। অনেকে কয়েকজন মিলে ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়, খরচ ভাগ করে। কিন্তু ঘন ঘন বাসাবদল, নতুন এলাকায় মানিয়ে নেওয়া কিংবা প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক—সবই একেকটা চাপ।
এ কারণে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষদের ক্রমে শহরের প্রান্তিক বা অস্বাস্থ্যকর এলাকায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এসব এলাকায় স্কুল-কলেজ দূরে, পরিবেশ খারাপ, নিরাপত্তা অনিশ্চিত। এতে শিশুদের পড়াশোনার মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বড়রা মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন। জীবনযাত্রার মান পুরোপুরি নেমে যায়।
বাস্তব অভিজ্ঞতা
রাকিব নামের এক তরুণ চাকরিজীবী ঢাকায় একটি কক্ষে থাকেন। বেতনের অর্ধেক চলে যায় ভাড়ায়। বাকি টাকা দিয়ে বাজার, বিদ্যুৎ-গ্যাস, চিকিৎসা সব সামলাতে গিয়ে প্রতিদিন নতুন চাপে পড়েন। মানসিক চাপ এত বেড়ে যায় যে ঘুম কম হয়, কাজে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
শিরিন, একজন কলেজছাত্রী। পড়াশোনার জন্য শহরে এসে এক বন্ধুর সঙ্গে ফ্ল্যাট শেয়ার করেন। ভাড়া ও খরচ সামলাতে গিয়ে প্রায়ই তাঁকে খাবার বা বইয়ের খরচ বাদ দিতে হয়। এতে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে।
তিন সন্তানের জনক মাহমুদ পরিবার নিয়ে শহরের কেন্দ্রে ছোট্ট ফ্ল্যাটে থাকেন। নিয়মিত ভাড়া বাড়ানোর কারণে স্কুল, চিকিৎসা ও দৈনন্দিন ব্যয় সামলানো দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবারে স্থিতি নেই, চাপ কেবল বাড়ছেই।
সামাজিক ও মানসিক প্রভাব
ভাড়া সংকট শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক ও মানসিক দিক থেকেও ভয়াবহ। পরিবারগুলো ঘন ঘন বাসাবদলের চিন্তায় থাকে। শিশুদের পড়াশোনা ব্যাহত হয়, বড়রা কাজে মনোযোগ হারান। ভিড় ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়। অনেক পরিবার বাধ্য হয়ে ছোট জায়গায় একসঙ্গে গাদাগাদি করে থাকে, যা স্বাধীনতা কমায় এবং পারিবারিক টানাপোড়েন বাড়ায়।
সমাধান কী হতে পারে
সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্প: সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে কম খরচের নিরাপদ ফ্ল্যাট বা সরকারি আবাসন বাড়াতে হবে।
আইনগত সুরক্ষা: ভাড়াটিয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে বাড়িওয়ালারা ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়াতে না পারেন।
মানুষকেন্দ্রিক পরিকল্পনা: নতুন ফ্ল্যাট তৈরি যথেষ্ট নয়; বিদ্যমান আবাসনব্যবস্থায়ও নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা জরুরি।
ভাড়াটিয়া সমিতি: ভাড়াটিয়াদের অধিকার রক্ষায় স্থানীয় কমিটি বা সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।
শেষ কথা
শহুরে জীবনের এই ভাড়া সংকট অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানসিকভাবে মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করছে। এখনই প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও নীতিগত পদক্ষেপ। নিরাপদ, স্থিতিশীল ও সাশ্রয়ী আবাসন নিশ্চিত করা গেলে শহরের মানুষ আবার শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে। শিশুরা ভালো শিক্ষা পাবে, পরিবারে স্থিরতা আসবে, মানসিক চাপ কমবে। শহর হবে আরও সুন্দর, মানবিক ও সবার জন্য বাসযোগ্য।
আরশী আক্তার গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়