এক কোটির বেশি সদস্য সংগ্রহে দুই মাসের কর্মসূচি বিএনপির
Published: 9th, May 2025 GMT
সমাজের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির মানুষদের লক্ষ্যে রেখে এক কোটির বেশি নতুন সদস্য সংগ্রহে দুই মাসের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ১৫ মে থেকে শুরু হয়ে আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে।
অন্য দল থেকে কিংবা আওয়ামী লীগ থেকে কেউ আসতে পারবেন কি না—এমন প্রশ্নে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ধরুন, কেউ দীর্ঘদিন রাজনীতি করেননি অথবা হয়তো একসময়ে আওয়ামী লীগ করতেন, কিন্তু আওয়ামী লীগের দুঃশাসন, বর্বরোচিত কর্মকাণ্ড, লুটপাট, টাকা পাচারকে পছন্দ করেননি, আওয়ামী লীগ থেকে সরে গেছেন; তাঁরা আসতে পারবেন না কেন?
সমাজের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির মানুষদের দলে আনা উদ্দেশ্য জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের চিন্তা হলো সমাজের ফ্রেশ মানুষ (রাজনীতিতে নতুন)—অবসরে যাওয়া ব্যক্তি; যিনি শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যাংকার হতে পারেন, এনজিও কর্মী, কৃষক বা শ্রমিক হতে পারেন; তাঁরা আমাদের আদর্শে বিশ্বাস করেন কি না।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘একেবারে ফ্রেশ মানুষ, সমাজে যাঁদের সুনাম আছে, ভদ্রলোক বলে জানে, তাঁরা যাতে আমাদের দলের সদস্য হতে কোনো ধরনের বাধার মুখে না পড়েন, আমরা সেটাই টার্গেট করব।’
বিএনপির এই নেতা আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘সমাজের সর্ব ক্ষেত্রের মানুষ যাঁরা বিএনপিকে পছন্দ করেন, জাতীয়তাবাদী চিন্তাচেতনা লালন করেন; তাঁরা আগ্রহী হয়ে এ দলের সদস্য হবেন—এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। কারণ, এখন শেখ হাসিনার সেই ভয়ংকর দুঃশাসনের ছোবল নেই। সে ক্ষেত্রে অনেকেই এগিয়ে আসবেন। এই এগিয়ে আসার মধ্য দিয়ে আমাদের এই কর্মসূচি শুরু হবে।’
যোগদানের প্রক্রিয়া সম্পর্কে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমাদের ২০ টাকার যে ফরমটা পূরণ করতে হয় এবং এর সঙ্গে একটা অঙ্গীকারনামা, যেটা আমাদের গঠনতন্ত্রে আছে; এবার যাঁরা প্রাথমিক সদস্য হবেন, তাঁদের এ আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। পরে সেসব ফরম যাচাই-বাছাই হবে। কারণ, দোসররা নানাভাবে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করবে।’
এর আগে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে প্রাথমিক সদস্য নবায়নসংক্রান্ত কমিটির বৈঠক করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি এই কমিটির আহ্বায়ক।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, আবদুস সালাম আজাদ ও সৈয়দ এমরান সালেহ, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাতসহ সাংগঠনিক সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র আম দ র সদস য আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
পানির জন্য সর্বাত্মক যুদ্ধের শঙ্কা
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাত ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান এই উত্তেজনার একটি প্রধান কারণ হলো, পানিসম্পদ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন। ভারত ইতোমধ্যেই চেনাব নদীর পানিপ্রবাহ কমিয়ে দিয়েছে। আর এতেই পাকিস্তান আরও সংকটে পড়েছে। এই পানি নিয়ে টানাপোড়েনে দুই দেশের সংঘাত সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২২ এপ্রিল কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পাদিত দীর্ঘদিনের ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ থেকে সরে এসেছে ভারত। দেশটি চেনাবের পানিপ্রবাহও কমিয়ে দিয়েছে। এতে পাকিস্তান পানি সংকটের মুখে পড়েছে। এই অবস্থায় ইসলামাবাদ খুবই অসন্তুষ্ট। এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধও স্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পানি চুক্তি স্থগিত করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি ভারত। গত বুধবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডের ৯টি স্থানে সামরিক হামলা চালায় দেশটি। সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার পাশাপাশি সীমান্ত দিয়ে পারাপারও বন্ধ করেছে দুই দেশ। পাকিস্তানকে পানির সংকটে ফেলতে চায় ভারত। পানি চুক্তির সব বিধান নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় দিল্লি।
১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তান বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় সিন্ধু পানি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল সিন্ধুর ব্যবস্থার পানিবণ্টন নিয়ন্ত্রণ করা। চুক্তি অনুসারে, ভারত পূর্বাঞ্চলের নদী রাবি, বিয়াসসহ তিনটি নদীর ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। অন্যদিকে পাকিস্তান পশ্চিমের
তিনটি নদী সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীর ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করে, যা দেশটির জলসম্পদের ৮০ শতাংশ প্রয়োজন মেটায়। চুক্তি অনুসারে কোনো পক্ষ এককভাবে চুক্তি থেকে সরে যেতে পারবে না। কিন্তু ভারত একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে গেছে।
নদীগুলোর পানিপ্রবাহের ধরন ও নদী নেটওয়ার্ক কাঠামো প্রক্রিয়া ভারতের অনুকূলে। এজন্য ভারত পানিপ্রবাহ কমিয়ে দিলে তা পাকিস্তানের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই অবস্থায় সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করায় পাকিস্তানের ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ার শঙ্কায় রয়েছে। ভারত নদীগুলোর পানিপ্রবাহের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এতে পাকিস্তানে পানির ঘাটতি কিংবা বন্যা সৃষ্টি হতে পারে।
জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ওই সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। তাদের অধিকাংশই পর্যটক। ভারত এই হামলায় পাকিস্তানকে দোষারোপ করে। ভারতের জনগণের মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার দাবি উঠতে থাকে। এই অবস্থায় গত বুধবার ভারত পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর আগে দেশটি পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত ঘোষণা করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে পানিপ্রবাহ বন্ধ করার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। বিশ্বব্যাংকও পানি চুক্তি স্থগিত করার বিষয়ে ভারতের বিরোধিতা করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানিপ্রবাহ বন্ধ করা প্রকৃতির স্বাভাবিক চক্রে ব্যাঘাত ঘটানোর শামিল। এই পরিস্থিতির ফলাফল অত্যন্ত খারাপ হতে পারে। মানবসভ্যতা টিকে থাকার সঙ্গে যা সরাসরি জড়িত। এই অবস্থায় ভারতের পদক্ষেপে পাকিস্তান স্বাভাবিকভাবে ক্ষুব্ধ হতে বাধ্য। কারণ পানির প্রবাহ কমে গেলে নদীগুলো শুকিয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে দেখা দিতে পারে খরা, অনাবৃষ্টি কিংবা দুর্ভিক্ষ। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে পানিপ্রবাহ সংকটে উত্তপ্ত আবহাওয়া বিরাজ করে থাকে।
ভারত-পাকিস্তানের এই জলযুদ্ধ শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক যুদ্ধেও রূপ নিতে পারে। নিজ স্বার্থে প্রতিবেশী দেশের মধ্যে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দিলে সেই ক্ষতি ভারতের দিকেও পরিচালিত হতে পারে। এই জলযুদ্ধ বিশ্বের বড় বড় যুদ্ধের কারণে হতে দেখা গেছে। নীল নদের পানিপ্রবাহ নিয়ে যুদ্ধের ইতিহাস রয়েছে। জর্ডান নদীর প্রবাহ রোধ ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতেরও একটি কারণ। সূত্র: আলজাজিরা, জিও নিউজ।