গোবিন্দভোগ ও গোলাপখাসের দামে হতাশ চাষিরা, হিমসাগর সংগ্রহের সময় এগোনোর দাবি
Published: 12th, May 2025 GMT
সাতক্ষীরার বাজারে গোবিন্দভোগ ও গোলাপখাস আমে সয়লাব হয়ে গেছে। চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি আম বাজারে ওঠায় দাম পড়ে গেছে। ফলে আমচাষিরা বিপাকে পড়েছেন। একদিকে মূল্য পাচ্ছেন না, অন্যদিকে প্রচণ্ড গরমে পেকে আম দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। পাকতে শুরু করায় চাষিরা হিমসাগর আম সংগ্রহের নির্ধারিত তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন।
গত ৩০ এপ্রিল জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যৌথ সভায় আম পাড়ার ক্যালেন্ডার চূড়ান্ত করা হয়। সেই অনুযায়ী ৫ মে থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস ও বৈশাখীসহ স্থানীয় জাতের আম সংগ্রহ ও বাজারজাত করা শুরু হয়েছে। তবে হিমসাগর আম বাজারে আসবে ২০ মে, ল্যাংড়া ২৭ মে এবং আম্রপালি ও মল্লিকা ৫ জুন থেকে পাওয়া যাবে।
আমচাষিরা বলছেন, জেলার ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টরের ছোট-বড় প্রায় ৫ হাজার আম বাগানের মধ্যে অর্ধেক জমিতে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস ও বৈশাখীসহ স্থানীয় জাতের আম উৎপাদন হয়। ১৫ দিন এ আম বাজারে থাকে। তারপর ২০ মে থেকে হিমসাগর আম বাজারে এলে অন্য আমের চাহিদা থাকে না। মূল্যও স্বাভাবিকভাবে আরও কমে যায়। চলতি মৌসুমে এ সময় প্রচণ্ড গরম পড়ায় আম দ্রুত পেকে যাচ্ছে। এসব আম সংরক্ষণে হিমাগারের ব্যবস্থা না থাকায় লোকসান করেও আম বিক্রি করে ফেলছেন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এক সপ্তাহ ধরে জেলায় তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। ২০২৪ সালের এ সময় তাপমাত্রা ছিল ৩০ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।
আজ সোমবার সকালে সাতক্ষীরা শহরের বড় বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েক শ ভ্যান ও পিকআপে গোবিন্দভোগ এবং গোলাপখাস আম নিয়ে আসা হয়েছে। সরবরাহ বেশি হওয়ায় অনেকে আম নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
তালা উপজেলার নওয়াপাড়া এলাকার আমচাষি আব্দুল আলিম জানান, তীব্র তাপপ্রবাহে আম পেকে যাচ্ছে। বাজারে চাহিদার চেয়ে আম উঠছে অনেক বেশি। ফলে তাঁরা এ সময় যে আম মণপ্রতি ২২০০-২৮০০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকেন, এবার সেই আম বিক্রি করছে ১৮০০-২০০০ টাকা মণ দরে। তাঁদের সব খরচ-খরচা বাদ দিয়ে আম চাষে লাভ হচ্ছে না।
ফিংড়ি এলাকার আমচাষি আনিসুর রহমান জানান, বাজারে গোবিন্দভোগ কিংবা গোলাপখাসের চাহিদা কম। অথচ আমে বাজারে সয়লাব। বাইরের ক্রেতারা অপেক্ষায় আছেন হিমসাগর আমের জন্য। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী হিমসাগর আম আর এক সপ্তাহ পরে ২০ মে পাড়া শুরু হবে। তিনি দাবি করেন ইতিমধ্যে হিমসাগর আম পাকতে শুরু করেছে। হিমসাগর আম পাড়ার তারিখ এগিয়ে ১৫ মে করা হোক। তাপদাহে আম পেকে যাচ্ছে। নেই আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা।
তবে গোবিন্দভোগ ও গোলাপখাস আম ১৮০০-২২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে পারলে চাষিরা লোকসানে পড়বেন না বলে মনে করেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, দু–চারটে হিমসাগর আম পাকলেও সংগ্রহের তারিখ এগিয়ে নিয়ে এলে গোবিন্দভোগ ও গোলাপখাসসহ দেশীয় জাতের আমের বাজারদর আরও কবে যাবে।
সাতক্ষীরা বড় বাজার কাঁচাবাজার সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রওশন আলী বলেন, প্রতিদিন সকালে বাজারে আমে সয়লাব হয়ে যায়। কিন্তু ক্রেতা নেই। বাধ্য হয়ে অপেক্ষাকৃত কম মূলে চাষি ও ব্যবসায়ীরা আম বিক্রি করছেন। তিনি দাবি করেন, গোবিন্দভোগ ও গোলাপখাস দেশীয় জাতের আম আরও অনন্ত এক সপ্তাহ আগে পাড়া শুরু করলে চাষি ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হতেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে, যেখানে ১৩ হাজার ১০০ কৃষক জড়িত। এবার ৭০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। চাষিরা ৪০০ কোটি টাকার আম বিক্রি করতে পারবেন বলে ধারণা করছেন তাঁরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য় জ ত র আম আম ব ক র আম ব জ র র আম ব আম প ক আমচ ষ ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
ভাঙ্গা–বরিশাল মহাসড়কের ৪৯ কিলোমিটার বেহাল, ‘ভরসা’ জোড়াতালির মেরামত
বরিশাল থেকে সপ্তাহে দুবার ঢাকায় যাতায়াত করেন নাঈম হাওলাদার। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি করছেন। নাঈম হাওলাদার বলেন, বরিশাল থেকে বাসে এত ঝাঁকুনি লাগে যে শরীর ব্যথা হয়ে যায়। অনেক যাত্রী বমিও করে ফেলেন। মন দুরুদুরু করে, কখন কী হয়ে যায়!
বরিশাল থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত সড়কের অবস্থা এমনই বেহাল। সড়কের পিচ, পাথর সরে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সড়কটিকে সাময়িকভাবে চলাচলের উপযোগী করতে ইট ফেলে খানাখন্দ ভরাট করে ওপরে বালু ফেলা হচ্ছে। এরপর দেওয়া হচ্ছে পিচের প্রলেপ।
তবে যাত্রী ও যানবাহনের চালক–সহকারীরা বলছেন, প্রতিবছর পাঁচ থেকে সাতবার সড়ক মেরামত করা হয়। কিন্তু মাস ঘুরতেই আগের অবস্থায় ফিরে যায়। সাময়িক সংস্কার অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।
কুয়াকাটা-ঢাকা পথের একটি বাসের চালক কেরামত আলী বলেন, ‘সড়কের যে অবস্থা, তাতে বাস চালাতে অনেক ঝুঁকি। যাত্রীরা আতঙ্কে থাকেন। আমাদের সময়ও বেশি লাগে। যেভাবে মেরামত করা হচ্ছে, তাতে খুব বেশি দিন টিকবে বলে মনে হয় না। কারণ, এ রকম সংস্কার আগেও বহুবার হয়েছে।’
বরিশাল থেকে ভাঙ্গার দূরত্ব ৯৭ কিলোমিটার। মাত্র ২৪ ফুট প্রশস্ত সড়কটিতে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ থাকে। এ ছাড়া জুলাই মাসে এ অঞ্চলে ভারী বর্ষণ হয়েছে। ফলে এ অংশের প্রায় পুরোটাতেই বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল থেকে গৌরনদীর ভুরঘাটা পর্যন্ত ৪৯ কিলোমিটার সড়ক বরিশাল সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের আওতায়, বাকিটা ফরিদপুর সওজের অধীনে।
যেভাবে মেরামত করা হচ্ছে, তাতে খুব বেশি দিন টিকবে বলে মনে হয় না। কারণ, এ রকম সংস্কার আগেও বহুবার হয়েছে।কেরামত আলী, বাসচালকগতকাল সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মহাসড়কের ওই অংশ ঘুরে দেখা যায়, বড় বড় খানাখন্দ ও গর্তে বালু, ইটের সুরকি ও পিচ ফেলে মেরামতের কাজ চলছে। বাবুগঞ্জ উপজেলার শিকারপুর সেতুর পূর্ব প্রান্তে একদল শ্রমিক মেরামতের কাজ করছেন। কয়েক কিলোমিটার পর গৌরনদীর বার্থী এলাকায়ও একই দৃশ্য দেখা গেল।
বার্থী এলাকায় সওজের একটি ট্রাকের চালক মো. শাহজাহান সরদার বলেন, ‘বৃষ্টিতে রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। আগে ইট দিয়ে গর্ত ভরাট করতাম, এখন তার ওপর পিচ ও বালু দিয়ে প্রলেপ দিচ্ছি, যাতে যান চলাচলে ব্যাঘাত কমে এবং যাত্রীদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়।’
পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা সাগর হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘দেড়-দুই মাস আগে একইভাবে রাস্তা মেরামত হয়েছিল, কিন্তু টেকেনি। এতে শুধু অর্থের অপচয় হয়।’
একই কথা বললেন ভুরঘাটাগামী একটি মাহেন্দ্রর চালক আবদুল বাছেদ।
বার্থী থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত আরও একটি ট্রাকে মেরামতের কাজ চলছিল খাঞ্জাপুর এলাকায়। কাজ তদারক করছিলেন সওজের কার্য সহকারী (ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট) মো. জাকির হোসেন সরদার। তিনি বলেন, সাময়িক ভোগান্তি কমাতে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় কাজ চলছে।
সওজ সূত্র জানায়, সত্তরের দশকে বরিশাল–ভাঙ্গা সড়ক ছিল ১২ ফুট প্রশস্ত। এখন বেড়ে হয়েছে মাত্র ২৪ ফুট। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বেড়েছে তিন গুণ। এত চাপ নিতে পারছে না সড়কটি।
ছয় লেন মহাসড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে উল্লেখ করে বরিশাল সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাসুদ খান বলেন, তহবিল পাওয়া গেলে দ্রুত ছয় লেনের কাজ শুরু করা যাবে। আপাতত জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে যাত্রীদের ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা করছেন।
পটুয়াখালী–কুয়াকাটা মহাসড়কও বেহালটানা বর্ষণে বরিশাল–কুয়াকাটা মহাসড়কের প্রায় ৭১ কিলোমিটারজুড়ে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। একাধিক বাঁকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
বাস মালিক সমিতি ও সওজ সূত্র জানায়, এই সড়কে প্রতিদিন অন্তত দুই হাজার যান চলাচল করে। পদ্মা সেতু চালুর পর কুয়াকাটাগামী যানবাহনের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু বেহাল সড়কের কারণে প্রতিদিনই দুর্ভোগ বাড়ছে।
মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, একটু পরপর গর্ত। বিশেষ করে আমতলী চৌরাস্তা, মানিকঝুড়ি, শাখারিয়া, সাহেববাড়ি, আমড়াগাছিয়া, পাটুখালী, বান্দ্রা ও পখিয়া এলাকায় গর্ত বেশি। জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় ইট ফেলে সাময়িকভাবে ভরাটের চেষ্টা চলছে।
পটুয়াখালী সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাসুদ করিম বলেন, ‘আমরা জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে খানাখন্দ মেরামতের কাজ করছি। আশা করি, এতে ভোগান্তি লাঘব হবে।’