কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে: বিএমবিএ
Published: 13th, May 2025 GMT
পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক পতনের ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের মূলধন হারাচ্ছেন। এই অবস্থায় যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে মার্চেন্ট ব্যাংকাররা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সোমবার (১২ মে) বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) আয়োজিত এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভায় এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন মার্চেন্ট ব্যাংকাররা।
বিএমবিএ’র সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম (এফসিএমএ) সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএমবিএ’র সভাপতি মাজেদা খাতুন।
এতে বিএমবিএ’র সহ-সভাপতি, মহাসচিব, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বিএমবিএ সভাপতি মাজেদা খাতুন ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সরকারের প্রতি পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল ও বিনিয়োগবান্ধব করতে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এই সভায় পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি, বিশেষ করে মার্চেন্ট ব্যাংকের নেগেটিভ ইক্যুইটি, আনরিয়ালাইজড লস এবং বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা অভিমত ব্যক্ত করেন যে, চলমান বাজার পরিস্থিতিতে নেগেটিভ ইক্যুইটি একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। যা মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সভায় উপস্থিত সদস্যরা গত ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তৃক ইস্যুকৃত চিঠিতে উল্লেখিত নেগেটিভ ইক্যুইটি সমন্বয়ের সময়সীমা ও কর্ম পরিকল্পনার উপর আলোচনা করেন এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের নেগেটিভ ইক্যুইটি আগামী ৫ বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সমন্বয় করতে সময় বৃদ্ধির জন্য বিএসইসির কাছে আবেদন করার বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্তে উপনীত হন।
ঢাকা/এনটি/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর স থ ত ব এমব এ
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ–যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক চুক্তির সম্ভাবনা
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের শুল্ক চুক্তি করার সম্ভাবনা রয়েছে। চুক্তির খসড়াও তৈরি হয়েছে, যা নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে আগামী ৩ ও ৪ জুলাই। চুক্তি হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপ করা বাড়তি ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের হার কিছুটা কমবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ওয়াশিংটন যাবেন। একই বিষয়ে ২৬ জুন যুক্তরাষ্ট্র সফররত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান ইউএসটিআরের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন। ইউএসটিআরের সঙ্গে আগামী বৈঠকেও খলিলুর রহমান উপস্থিত থাকবেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গতকাল রোববার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি করার দ্বারপ্রান্তে আছি ঠিক, তবে এটা শর্ত সাপেক্ষে। যদি মনে করি যে বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শর্তগুলো মানা সম্ভব, তাহলেই চুক্তি হবে।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছু তথ্য পাওয়া বাকি আছে। শর্তসহ পুরো প্রক্রিয়াটা উপদেষ্টা পরিষদকে জানাব। ৩ জুলাইয়ের আগে না গিয়ে পরেও যেতে পারি। নিরাপত্তা উপদেষ্টা তো যুক্তরাষ্ট্রে আছেনই।’
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে আসছে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে। গত ৩ এপ্রিল হঠাৎ ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশি পণ্যের ওপর বাড়তি ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। শুল্কের হার কম-বেশি করে দেশটি একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় ৬০টি দেশের ওপর।
বাড়তি শুল্ক আরোপ কার্যকরের কথা ছিল ৯ এপ্রিল। তবে ওই দিনই যুক্তরাষ্ট্র বাড়তি শুল্ক হারের ঘোষণা তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখে। স্থগিতের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৯ জুলাই। বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আশাবাদী যে স্থগিতের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে দিতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিন মাসের জন্য সিদ্ধান্ত স্থগিত চেয়ে গত ৭ এপ্রিল ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমানো নিয়ে বাংলাদেশ কাজ করছে বলে জানানো হয়।
ইউএসটিআরের রাষ্ট্রদূত জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে একই দিন আলাদা চিঠি পাঠিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিতে যদি কোনো বাধা থাকে, তা দূর করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত এবং বাংলাদেশ সব সময় গঠনমূলক সংলাপ ও সহযোগিতায় বিশ্বাসী।
উভয় দেশের মধ্যে এরপর দুই মাসে কয়েক দফা সরাসরি বৈঠক হয়েছে। হয়েছে চিঠি-চালাচালি এবং অনলাইন বৈঠক। ইউএসটিআরের সঙ্গে এর আগে গত ২১ এপ্রিলও ওয়াশিংটনে একটি বৈঠক হয় বাংলাদেশের। এতে তারা ছয়টি বিষয়ে জানতে চায়। ৪ জুন চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা জানানো হয়। শুল্ক চুক্তির খসড়াটি করা হয় ১২ জুন, যার ৫ দিনের মাথায় ১৭ জুন এর ওপর করা হয় অনলাইন বৈঠক। এ বৈঠকের ধারাবাহিকতায় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ২৬ জুন ওয়াশিংটনে বৈঠক করেন।
যে ছয় বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, সেগুলো কী, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে কথা না বলার শর্ত রয়েছে।
তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্র এমন কিছু বিষয় চেয়েছে, যা তাদের দেশের আইনে প্রযোজ্য। বাংলাদেশের আইনে প্রযোজ্য নয়, এমন বিষয়ে একমত না হতেই দর-কষাকষি করে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানতে পেরেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর পাশাপাশি ভারত, ভিয়েতনাম, জাপান ইত্যাদি দেশ পাল্টা শুল্কের হার কমানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে যে এ বিষয়ে তারা কোনো ধরনের আলোচনায় আর বসবে না।
বাণিজ্যসচিব গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, পাল্টা শুল্কের হার কমাতে যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশই এগিয়ে রয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে যেসব আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, তার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি তিন লাখ টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। প্রতি টনে ২০ থেকে ২৫ মার্কিন ডলার বেশি হলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকেই এ গম আমদানি করা হবে। বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোয়িং উড়োজাহাজ আমদানির। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির পরিমাণ বাড়াতে কয়েকটি গুদাম নির্মাণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয়, এমন বেশির ভাগ পণ্যের ওপর শুল্ক রাখা হয়নি অর্থাৎ শূন্য শুল্ক করে দেওয়া হয়েছে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়েছে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য।
বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মো. ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করছি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন পাল্টা শুল্ক আরোপের বিষয়টি লম্বা সময়ের জন্য স্থগিত করবে। একান্ত যদি না–ই করে, সরকারের উচিত হবে দেশটির সঙ্গে দেনদরবার করে বাংলাদেশের শুল্কের হার যেন প্রতিযোগী ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ভারত ইত্যাদি দেশের সমান বা কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া যায়।’
ফজলুল হক আরও বলেন, ভারতের পাল্টা শুল্কের হার বাংলাদেশের চেয়ে কম। ভারত যদি দর-কষাকষি করে আরও কমাতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের বিপদ ভবিষ্যতে বাড়বে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এ ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে।