বাজেটে তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপের দাবি
Published: 13th, May 2025 GMT
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও কার্যকর কর আরোপের দাবি জানিয়েছেন গবেষক, চিকিৎসক, গণমাধ্যমকর্মীসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা।
মঙ্গলবার (১৩ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা আহছানিয়া মিশন আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও কার্যকর কর আরোপের দাবি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন এমন দাবি জানান তারা।
এছাড়া সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে প্রতি ১০ শলাকার সিগারেটের প্যাকেটের সর্বনিম্ন খুচরা মূল্য ৯০ টাকা করার দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, “সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরের দাম কাছাকাছি হওয়ায় দাম বাড়লেও মধ্যম থেকে নিম্নস্তরের সিগারেট সেবনের প্রবণতা বাড়ে, তবে দুই স্তরকে একত্রিত করে দাম বাড়ালে সেই সেবনের প্রবণতা কমবে। পাশাপাশি তরুণেরা সিগারেট সেবনে নিরুৎসাহিত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৯ লাখ তরুণের তামাকজনিত অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।”
ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য খাত সংষ্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা.
এ সময় মূল প্রবেন্ধ ঢাকা আহছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী শরিফুল ইসলাম জানান, সুপারিশ অনুযায়ী আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তামাকপণ্যের বিদ্যমান কর ব্যবস্থা সংস্কার করলে সিগারেটের ব্যবহার ১৫.১% থেকে হ্রাস পেয়ে ১৩.০৩% হবে। প্রায় ২৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে এবং প্রায় ১৭ লাখ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। দীর্ঘ মেয়াদে ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫৮ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৮ লাখ ৬৯ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠীর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়া প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে অর্থাৎ ২০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয় হবে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি।
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি ক্যানসার রোগী আছে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ ক্যানসারের জন্য সরাসরি দায়ী হলো তামাক। তামাকসহ সব স্বাস্থ্য ক্ষতিকর পণ্যের জন্য সিন ট্যাক্স প্রচলন ও তা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যয় করার প্রস্তাবনা কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংস্কারের কথা বলা হয়েছে।”
তামাক হ্রাসে যা যা করণীয় তার সবই সরকারের উচিত বলে মনে করেন তিনি।
কর প্রস্তাবনার সাথে একমত পোষন করে সুশান্ত সিনহা বলেন, “কর বাড়িয়ে তামাক পণ্যের মূল্য বাড়ালে সরকারের রাজস্ব বাড়বে, অন্যদিকে কোম্পানির লভ্যাংশ কমবে। কেননা করের টাকা পুরোটাই সরকারের কোষাগারে জমা হবে। কর বৃদ্ধি পেলে চোরাচালান বাড়বে মর্মে তামাক কোম্পানির মিথ্যাচারের বিরোধিতা করে বলেন বাংলাদেশে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সিগারেট সবচেয়ে সস্তা।”
শাফিউন নাহিন শিমুল জানান, সিগারেট বা তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাজস্ব আহরণের চেয়ে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার। তামাকপণ্য বিক্রি থেকে যে রাজস্ব আসে, তা তামাকজনিত স্বাস্থ্য ব্যয়ের মাত্র ৭৫ শতাংশ। এমনকি, কার্যকর করারোপের মাধ্যমে সিগারেট বিক্রি থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ১১ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
এছাড়া প্রস্তাবিত তামাক কর সংস্কার একটি সুস্থ জাতি গঠনে অবদান রাখবে। পাশাপাশি দেশের স্বাস্থ্যখাত ও উন্নয়ন অগ্রাধিকারসমূহে অর্থায়ন এবং টেকসই কর ব্যবস্থার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অতিরিক্ত অর্থের যোগান দিতে সক্ষম হবে বলেও জানান বক্তারা।
ঢাকা/হাসান/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত ম কপণ য র সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
কালোটাকা সাদা না করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত
অন্তর্বর্তী সরকার যে জনমতকে সম্মান জানায়, তার প্রমাণ পাওয়া গেল ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটের চূড়ান্ত অনুমোদনে। ২ জুন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট প্রস্তাবকালে ফ্ল্যাট ও ভবন নির্মাণে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কালোটাকা সাদা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় তা বাদ দেওয়া হয়।
অতীতে এমন সুযোগ বারবার দেওয়া হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রগুলো বলছে, এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে অপ্রদর্শিত প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঘোষণায় এসেছে; অর্থাৎ সাদা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশ থেকে পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হলেও কেউ এ সুযোগ নেননি।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতিবিদেরা বাজেটে কালোটাকা সাদা করার প্রতিবাদ করেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, এর মাধ্যমে সরকার নিয়মমাফিক করদাতাদের প্রতি অবিচার করেছে। এ রকম কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলে সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হন।
রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রহিতসহ ২ জুন ঘোষিত বাজেটে আয়কর, শুল্ক, ভ্যাটসংক্রান্ত কিছু পরিবর্তন আনা হয়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাজেট কার্যকর করা হবে।
চূড়ান্ত অনুমোদনে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৯১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব করা হয়েছিল ৮১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। এর অর্থ ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। যদিও ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার ব্যয়ের বাজেট অপরিবর্তিতই থাকছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় শুল্ক-করহারেও কিছু পরিবর্তন করেছে। পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি, যাদের পরিশোধিত মূলধনের অন্যূন ১০ শতাংশ শেয়ার আইপিও বা সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে হস্তান্তর হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে আয়ের সাড়ে ২২ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। তবে ব্যাংক লেনদেনের শর্তে এ হার হবে ২০ শতাংশ।
এ ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের করহার ১৫ শতাংশের স্থলে ১০ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে। সম্পত্তি হস্তান্তর থেকে কর সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কর কর্তনের হার ৮ শতাংশ, ৬ শতাংশ ও ৪ শতাংশের স্থলে কমিয়ে যথাক্রমে ৫ শতাংশ, ৩ শতাংশ ও ২ শতাংশ করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে বাজেটটিকে মন্দের ভালো বলা যায়। বাজেট পেশের পর দেওয়া সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টাও বাজেট কিছুটা গতানুগতিক হয়েছে বলে স্বীকার করেছিলেন। এবারের বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, আর আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪৪ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা দেশীয় ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিতে হবে। দেশীয় উৎস থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। আর বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিলে তার সুদ গুনতে হবে জনগণকেই।
এবারের ইতিবাচক দিক হলো বাজেট ঘোষণার পর নিত্যপণ্যের দাম খুব একটা বাড়েনি। আর উদ্বেগের বিষয় হলো বাজেট শেষ না হতেই সরকার পরিবর্তন হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পূর্বাভাস দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে অর্থবছরের শেষ চার মাস বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকছে না। নতুন সরকার আসবে। তাদের অর্থনৈতিক নীতি ও জনগণের কাছে কী প্রতিশ্রুতি থাকে, তার ওপরও বাজেটের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে।
অন্তর্বর্তী বা নির্বাচিত—যে–ই সরকারই থাকুক, বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। অন্যথায় বাজেট যত ভালো হোক না কেন, তার সুফল বৃহত্তর জনগণ পাবেন না।