টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ জিএসটি গুচ্ছভুক্ত ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকেল ৩টায় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.

মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ ফলাফল প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ফলাফল ওয়েবসাইটে : gstadmisson.ac.bd - লগইন করে পরীক্ষার্থীরা জানতে পারবে। এছাড়া ভর্তি সংক্রান্ত পরবর্তী কার্যক্রমের অন্যান্য তথ্যাদিও ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪২ হাজার ৭১৪ জন। অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৫৩ জন। সে হিসাবে শতকরা উপস্থিতির হার ৮৭.৯৮ শতাংশ।

আরো পড়ুন:

ভর্তিতে বিড়ম্বনা এড়াতে বিশেষ উদ্যোগ ঢাবি প্রশাসনের

রাবির ‘সি’ ইউনিটের ফল প্রকাশ

পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছেন ৫৭ হাজার ৪২৫ জন এবং অকৃতকার্য হয়েছে ৬৮ হাজার ১২৮ জন। অনুপস্থিতির সংখ্যা ১৭ হাজার ১৬১ জন। ওএমআর বাতিলের সংখ্যা ৩৯টি। পরীক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর ৮৪.৭৫।

এর আগে, বিকেল ৩টায় গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে ফলাফল ঘোষণার পর কমিটির আহ্বায়ক সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানান। 

গত ২৫ এপ্রিল ‘সি’, ২ মে ‘বি’ এবং ৯ মে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ২১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক যোগে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এ নিয়ে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন এবং ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।

কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ ভর্তি পরীক্ষা সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

ঢাকা/কাওছার/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ক ষ র ফল ফল

এছাড়াও পড়ুন:

বছরজুড়ে ভাঙছে কুশিয়ারা বিলীন বসতঘর, ফসলি জমি

শুকনো মৌসুমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে ভাঙছে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী জনপদ। যাতায়াতের সড়ক, হাট-বাজার, মসজিদ, মাদ্রাসা, বাড়িঘর ও কবরস্থানসহ বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি।
অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথ নষ্ট হওয়ায় বছরজুড়ে ভাঙন অব্যাহত থাকে কুশিয়ারা নদীতে। বিয়ানীবাজার উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জনপদ এতে ঝুঁকির মধ্যে। 
এদিকে নদীর ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর জেলার সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর অববাহিকতায় পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের লক্ষ্যে দুই নদীর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। এসব যাচাই নিরূপণ শেষে মন্ত্রণালয়ে সিলেট জেলা সুরমা-কুশিয়ারা নদীর অববাহিকায় সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের নামে চার হাজার কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রেরণ করা হয়েছিল। বিশাল বাজেট হওয়ায় মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি ফেরত আসে।
এরপর এ প্রকল্পকে তিনটি ফেজে (ধাপে) ভাগ করে প্রথম ফেজের (ধাপের) জন্য এক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এ প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান দায়িত্বশীলরা।
কুশিয়ারা নদীর প্রবল ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে উপমহাদেশের প্রাচীন ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর কওমি মাদ্রাসা। কুড়ারবাজার ইউনিয়নে অবস্থিত এ মাদ্রাসাসহ আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর ও আশপাশের গ্রাম নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করতে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে গ্রামবাসী ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছের পৃথকভাবে স্মারকলিপি দেন। উপজেলার শতবর্ষের পুরোনো হাট বৈরাগীবাজারও ভাঙনের মুখে রয়েছে। দেশ স্বাধীনের পূর্ব থেকে এখন পর্যন্ত ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড।
স্থানীয়রা জানান, দায়িত্বশীলরা অনেকবার ভাঙনপ্রবণ এলাকা পরিদর্শন করলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। অথচ এ বাজার থেকে প্রতি বছর সরকার রাজস্ব আয় করে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। 
সরেজমিন নদী ভাঙনকবলিত বৈরাগীবাজার অংশে গিয়ে দেখা যায়, নদী তীরবর্তী গ্রামীণ সড়ক বিলীন হওয়ার পথে। এর আগে বাজারের পাকা ভবন ভাঙনে বিলীন হয়েছে। চলাচলের রাস্তা ভেঙে বাজারের দোকানপাটের সামনের অংশ ধসে গেছে।
একই অবস্থা আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকা। কবরস্থানসহ মসজিদ, মাদ্রাসা, সড়ক, স্থানীয় ফাঁড়ির বাজার, বসতঘর ও ফসলিজমি ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। নদী ভাঙনরোধে আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জিও বেগ ফেলে রাখা হয়েছে। গ্রামবাসী জানান, কয়েক মাস ধরে এসব ব্যাগ এভাবে ফেলে রাখা। কিছু শ্রমিক কয়েক দিন কাজ করার পর তারাও চলে গেছে। ব্যাগগুলো পড়ে আছে নদীর পাড়ে।
শুধু কুড়ারবাজার ইউনিয়ন নয়, কুশিয়ারা নদীর ভাঙনের কবলে বিলীন হচ্ছে বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের নয়াদুবাগ, দক্ষিণ চরিয়া, শেওলা ইউনিয়নের বালিঙ্গা, শেওলা, দিঘলবাগ, তেরাদল, কাকরদিয়া, শালেশ্বও, কোনা শালেশ্বরসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। ভাঙনে এসব গ্রামের স্কুল, মসজিদ, বাজার, গ্রামীণ সড়ক, ফসলি জমি ও বসতঘর বিলীন হয়েছে।
বৈরাগীবাজার থেকে প্রতি বছর রাজস্ব আদায় হলেও বাজারটি রক্ষায় দায়িত্বশীলদের কোনো উদ্যোগ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়রা। স্থানীয় মুরব্বি আক্তারুজ্জামান আজব আলী বলেন, ব্রিটিশ শাসন আলম থেকে বৈরাগীবাজার নদী ভাঙনের মুখে। প্রতি বছর প্রশাসনের লোকজন ভাঙন এলাকা দেখে যান কিন্তু কোনো পদক্ষেপ আজ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর বৈরাগী বাজার থেকে সরকার রাজস্ব আয় করে ২০ লাখ টাকার বেশি। কুশিয়ারা নদীর ভাঙন থেকে বাজার রক্ষা করতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
অপরিকল্পিতভাবে আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে পৃথক স্মারকলিপি দিয়েছেন আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর কওমি মাদ্রাসা ও গ্রামবাসী। গ্রামের যুবক জুয়েল আহমদ বলেন, দীর্ঘদিন থেকে এই এলাকা নদী ভাঙনকবলিত। তিন বছর ধরে এখান থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে এবং নদীতে অস্বাভাবিক গর্ত হওয়ায় গোসল করতে যাওয়া এক কিশোর ডুবে মারাও গেছে।
প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভাঙ্গনের বিষয়টি অবহিত করছেন জানিয়ে কুড়ারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তুতিউর রহমান তুতা বলেন, শতবর্ষী বৈরাগীবাজার রক্ষা করতে এলাকাবাসীর পক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ইউনিয়নের আঙ্গুরা মোহাম্মদপুরসহ ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ঝুঁকির মুখে আতঙ্কে রয়েছেন ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়রা।
ইউএনও গোলাম মুস্তফা মুন্না বলেন, গ্রামবাসী ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের স্মারকলিপি পেয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দিপক রঞ্জণ দাস বলেন, কুশিয়ারা ও সুরমা নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা নিরূপণ করে সিলেট জেলা সুরমা-কুশিয়ারা নদী অববাহিকায় সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের প্রথম ধাপের জন্য এক হাজার ৩০০ কোটির টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ের প্রেরণ করা হয়েছে। এ প্রকল্প অনুমোদন পেলে নদী ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আসবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ