গাজীপুরে সিটি করপোরেশনের ভবনে স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের কার্যালয়
Published: 13th, May 2025 GMT
গাজীপুর নগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সিটি করপোরেশনের পরিত্যক্ত ভবনে স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের কার্যালয় করা হয়েছে। ভবনটি একসময় সদর উপজেলার বাসন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কার্যালয় ছিল। গাজীপুর সিটি করপোরেশন হওয়ার পর থেকে ভবনটি পড়ে ছিল। সম্প্রতি ভবনটি রং ও সংস্কার করে একটি ঘরে যুবদল ও চারটিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। তবে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা দখল করায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি সাবেক গাজীপুর, টঙ্গী পৌরসভাসহ ছয়টি ইউপি নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। মোট আয়তন ৩২৯ দশমিক ৯০ বর্গকিলোমিটার। ইউপি কার্যালয়গুলোর জমি ও ভবন সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ আঞ্চলিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করলেও সাবেক বাসন ইউপির ভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় সেটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পরে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি ভাড়া করা ভবনে আঞ্চলিক কার্যালয় করা হয়। এরপর ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তবে পাশে একটি নতুন ভবনে চান্দনা ডাকঘর-১৭০২-এর কার্যক্রম চলছে। সম্প্রতি পরিত্যক্ত ভবনটি দখল করে স্বেচ্ছাসেবক দলের বাসন থানা কার্যালয় ও আরেকটি কক্ষে শাটার লাগিয়ে থানা যুবদলের কার্যালয় করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের পূর্ব পাশে একটি ভবনের চারটি কক্ষ আছে। আগে পরিত্যক্ত থাকলেও ভবনটি নতুন করে রং ও সংস্কার করা হয়েছে। সামনের নিচু জমি মাটি ফেলে উঁচু করা হয়েছে। উত্তর পাশের ভবনটিতে বড় করে লেখা হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের বাসন থানা কার্যালয়ের নাম। সামনে বেশ কিছু ব্যানার-পোস্টার পড়ে আছে। মূল ভবনের বাইরে পূর্ব পাশের একটি ছোট কক্ষ ডাকঘরের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ডান পাশে (পশ্চিম দিকে) একটি কক্ষে নতুন শাটার লাগানো। সেখানে লেখা আছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কার্যালয়।
ওই ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মফিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একসময় এটি বাসন ইউনিয়ন পরিষদের অফিস ছিল। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর এখানে আর কোনো কাজ হয়নি। আমরা সিএনজি স্ট্যান্ড করেছিলাম। পরে সিটি করপোরেশনের লোকজন আমাদের উঠিয়ে দেয়। এখন সেখানে বিএনপির লোকজন অফিস করেছে।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল খালেক বলেন, ‘এখন তাদেরই তো ক্ষমতা। তারা যা খুশি তাই করতেছে। সরকারি জমি, ভবন দখল করছে। অথচ প্রশাসনের লোকজন তাদের কিছুই বলছে না।’
জানতে চাইলে বাসন থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কোনো অফিস বা জমি দখল করিনি। ওইখানে এক ব্যক্তি দোকানঘর লিজ নিয়েছিলেন, তাঁর কাছ থেকে আমরা ভাড়া নিয়েছি। সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের যে ভবন ছিল সেটি নিয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল।’
বাসন থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মনসুর আহমেদ জানান, কে বা কারা সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইনবোর্ড দিয়েছে তাঁর জানা নেই। আজকে অন্যদের মাধ্যমে শুনেছেন, সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দলের বাসন থানা কমিটির নামে একটি সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। সংগঠনটির সদস্যসচিব মো.
যোগাযোগ করলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশনের জমি বা ভবন দখল করে স্বেচ্ছাসেবক ও যুবদলের কার্যালয় করার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ইনব র ড র ভবন ল কজন
এছাড়াও পড়ুন:
সীতাকুণ্ডে বনাঞ্চল কেটে গড়ে ওঠা জাহাজভাঙা কারখানা উচ্ছেদ
বনাঞ্চল কেটে গড়ে ওঠা বিতর্কিত সেই জাহাজভাঙা কারখানা উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। আজ বুধবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় এলাকার তুলাতলী মৌজায় কোহিনূল স্টিল নামে এই কারখানাটিতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এ সময় কারখানার ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিন হোসেন অভিযানে নেতৃত্ব দেন। অভিযানে সেনা, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সহযোগিতা করেন। এর আগে জেলা প্রশাসনই বনের জায়গায় জাহাজাভাঙা কারখানা স্থাপনের জন্য দুইবার ইজারার অনুমতি দিয়েছিল। আপত্তির পর আবার ইজারা বাতিল করা হয়েছিল। কোহিনূর স্টিল নামে এই কারখানাটি স্থাপন করেছিলেন আবুল কাসেম নামের এক ব্যক্তি। তিনি ‘রাজা কাসেম’ নামে পরিচিত।
ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিন হোসেন অভিযানের সময় বলেন, ‘তুলাতলী মৌজায় কারখানাটি যেখানে হয়েছে, সেটি জাহাজভাঙা কারখানার অঞ্চলভুক্ত এলাকা নয়। তুলাতলী মৌজায় সরকারি খাসজমি ও বনাঞ্চল দখল করে এটি গড়ে উঠেছিল। সেটি এখন উচ্ছেদ করা হয়েছে।’
উচ্ছেদের জন্য এক্সকাভেটরের পাশাপাশি অন্তত ৩০ জন শ্রমিককে কাজে লাগানো হয়। উচ্ছেদের সময় সেখানে লোকজনের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। গণমাধ্যমকর্মীদেরও ঢুকতে দেওয়া হয় সীমিত পরিসরে। ইয়ার্ডের স্বত্বাধিকারী আবুল কাসেম কারখানার বাইরে রাস্তায় অপেক্ষা করছিলেন। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চলে।
এ সময় আবুল কাসেম দাবি করেন, ‘২০২২ সালে সরকারি নীতিমালার আলোকে ইজারা নেওয়া হয়। বর্তমানে যে ভবনটি ভাঙা হচ্ছে, তা উত্তর সলিমপুর মৌজায় অবস্থিত। তুলাতলী মৌজাতে ছিল না। বিগত সরকারের দায়িত্বরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত করে যে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন তাতে ছিল উত্তর সলিমপুর মৌজা। কিন্তু কয়েক মাস আগে থেকে একটি মহল আমার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকতায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ অবৈধভাবে ভাঙার বিষয়ে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলে জানান তিনি।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, তুলাতলী মৌজায় বন বিভাগের ২০ ধারায় নোটিফিকেশনকৃত বনাঞ্চল রয়েছে। ইজারা চুক্তিতে কাগজে–কলমে সলিমপুর মৌজা দেখানো হলেও মূলত তুলাতলী মৌজায় বিতর্কিত এই ইয়ার্ড গড়ে ওঠে। বন বিভাগ বারবার এই ইজারায় আপত্তি জানিয়ে আসছিল। আপত্তি উপেক্ষা করে তখনকার জেলা প্রশাসকেরা একই ভূমি দুইবার রাজা কাসেমকে ইজারা দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে প্রথম ৭ দশমিক ১০ একর ভূমি শিপইয়ার্ডের জন্য ইজারা পায় কাসেমের বিবিসি স্টিল। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আইনি পদক্ষেপ নেয় এই ইজারার বিরুদ্ধে। কিন্তু তুলাতলী মৌজাটি বনাঞ্চল ঘেরা হওয়ায় উচ্চ আদালত ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি ইজারা চুক্তি অবৈধ ঘোষণা করেন। পরে আর ইজারা চুক্তি নবায়ন করেনি জেলা প্রশাসন।
বিবিসির নামে ইজারা বাতিল হওয়ার পর কাসেম তাঁর স্ত্রী কোহিনূর আকতারের নামে নতুন করে একই জায়গায় জমি ইজারার আবেদন করেন। আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয় কোহিনূর স্টিল। এরপর ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কোহিনূর স্টিলের নামে সীতাকুণ্ডের উত্তর সলিমপুর মৌজা দেখিয়ে পাঁচ একর বনভূমি ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। এ নিয়ে ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো পত্রিকায় ‘প্রথমে ব্যর্থ পরে “কৌশলে” ইজারা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আবার ২০২৩ সালের ৮ জুন ‘চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদারতায় ইয়ার্ডের পেটে ৫ হাজার গাছ’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
চুক্তির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে ২০২৩ সালে জেলা প্রশাসন সীতাকুণ্ডের কোহিনূর স্টিল নামের ওই জাহাজভাঙা কারখানার ইজারা বাতিল করেছিল। উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করে হাইকোর্টে প্রতিবেদনও দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এরপর বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে ইজারা চুক্তি বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করেন কোহিনূর স্টিলের মালিক আবুল কাসেম। ইজারা ফিরে পেয়ে কারখানাটিতে ফের জোরেশোরে কাজ শুরু করা হয়। সীতাকুণ্ডের সলিমপুর এলাকার তুলাতলী মৌজায় কোহিনূর স্টিল নামে ইয়ার্ডটির অবস্থান। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় বাতিল হওয়া ইজারা ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেয় ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে। এরপর কাসেম আবার ওই জায়গায় কাজ শুরু করেছিলেন। পরে আদালতের নির্দেশে তা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মোল্যা রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই জাহাজভাঙা কারখানার কারণে আমাদের অনেক বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। এখন ইয়ার্ড উচ্ছেদ হয়েছে। আমরা আবার বনাঞ্চল করব ওই জায়গায়।’
আরও পড়ুনপ্রথমে ব্যর্থ, পরে ‘কৌশলে’ ইজারা২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২