গাজীপুর নগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সিটি করপোরেশনের পরিত্যক্ত ভবনে স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের কার্যালয় করা হয়েছে। ভবনটি একসময় সদর উপজেলার বাসন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কার্যালয় ছিল। গাজীপুর সিটি করপোরেশন হওয়ার পর থেকে ভবনটি পড়ে ছিল। সম্প্রতি ভবনটি রং ও সংস্কার করে একটি ঘরে যুবদল ও চারটিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। তবে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা দখল করায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি সাবেক গাজীপুর, টঙ্গী পৌরসভাসহ ছয়টি ইউপি নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। মোট আয়তন ৩২৯ দশমিক ৯০ বর্গকিলোমিটার। ইউপি কার্যালয়গুলোর জমি ও ভবন সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ আঞ্চলিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করলেও সাবেক বাসন ইউপির ভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় সেটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পরে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি ভাড়া করা ভবনে আঞ্চলিক কার্যালয় করা হয়। এরপর ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তবে পাশে একটি নতুন ভবনে চান্দনা ডাকঘর-১৭০২-এর কার্যক্রম চলছে। সম্প্রতি পরিত্যক্ত ভবনটি দখল করে স্বেচ্ছাসেবক দলের বাসন থানা কার্যালয় ও আরেকটি কক্ষে শাটার লাগিয়ে থানা যুবদলের কার্যালয় করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের পূর্ব পাশে একটি ভবনের চারটি কক্ষ আছে। আগে পরিত্যক্ত থাকলেও ভবনটি নতুন করে রং ও সংস্কার করা হয়েছে। সামনের নিচু জমি মাটি ফেলে উঁচু করা হয়েছে। উত্তর পাশের ভবনটিতে বড় করে লেখা হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের বাসন থানা কার্যালয়ের নাম। সামনে বেশ কিছু ব্যানার-পোস্টার পড়ে আছে। মূল ভবনের বাইরে পূর্ব পাশের একটি ছোট কক্ষ ডাকঘরের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ডান পাশে (পশ্চিম দিকে) একটি কক্ষে নতুন শাটার লাগানো। সেখানে লেখা আছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কার্যালয়।

ওই ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মফিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একসময় এটি বাসন ইউনিয়ন পরিষদের অফিস ছিল। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর এখানে আর কোনো কাজ হয়নি। আমরা সিএনজি স্ট্যান্ড করেছিলাম। পরে সিটি করপোরেশনের লোকজন আমাদের উঠিয়ে দেয়। এখন সেখানে বিএনপির লোকজন অফিস করেছে।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল খালেক বলেন, ‘এখন তাদেরই তো ক্ষমতা। তারা যা খুশি তাই করতেছে। সরকারি জমি, ভবন দখল করছে। অথচ প্রশাসনের লোকজন তাদের কিছুই বলছে না।’

জানতে চাইলে বাসন থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কোনো অফিস বা জমি দখল করিনি। ওইখানে এক ব্যক্তি দোকানঘর লিজ নিয়েছিলেন, তাঁর কাছ থেকে আমরা ভাড়া নিয়েছি। সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের যে ভবন ছিল সেটি নিয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল।’

বাসন থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মনসুর আহমেদ জানান, কে বা কারা সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইনবোর্ড দিয়েছে তাঁর জানা নেই। আজকে অন্যদের মাধ্যমে শুনেছেন, সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দলের বাসন থানা কমিটির নামে একটি সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। সংগঠনটির সদস্যসচিব মো.

নূরুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি সম্পত্তিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নামে কারা সাইনবোর্ড দিয়েছে আমার জানা নেই।’

যোগাযোগ করলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশনের জমি বা ভবন দখল করে স্বেচ্ছাসেবক ও যুবদলের কার্যালয় করার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ইনব র ড র ভবন ল কজন

এছাড়াও পড়ুন:

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় দুই পা হারালেও মনোবল হারাননি আমজাদ

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম একটি শোকের দিন বললে ভুল হবে না। সাভারের রানা প্লাজা ধসে প্রাণ হারান প্রায় এগারো শ শ্রমিক, আহত হন আরও প্রায় আড়াই হাজার। ভবনটিতে কাজ করা কর্মী ও তাঁদের পরিবারের জীবনে নেমে আসে মানবিক বিপর্যয়।

এই ভয়াবহ শিল্প-দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন ভবনটিতে কাজ করা কুড়িগ্রামের আমজাদ হোসেনও। যদিও প্রাণে বেঁচে যান তিনি, কিন্তু চিরতরে হারিয়ে ফেলেন দুটি পা। পরিবারের কর্মক্ষম মানুষটি মুহূর্তের মধ্যেই পঙ্গুত্ব বরণ করেন, সমাজ ও পরিবারের গ্লানিতে পরিণত হন। জীবন যেন থমকে যায়।

প্রথম এক বছর পঙ্গুত্ব আর হতাশার মধ্যেই কাটে আমজাদের। নিজের ভবিষ্যৎ, পরিবারের দায়িত্ব—সবকিছু নিয়ে ছিল দুশ্চিন্তা আর অনিশ্চয়তা।

আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ওই দুর্ঘটনা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে প্রায় দেড় বছর লেগে গেছে। আগে সুস্থ ছিলাম, দৌড়াদৌড়ি করে বেড়াতাম। যেখানে খুশি সেখানে ঠিকভাবে যাওয়া যেত। কিন্তু দুর্ঘটনার পর বাড়িতে আসার পর আর সেরকমটা করা হয় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর যখন জ্ঞান ফিরে পেলাম, শুয়ে শুয়ে ভাবতাম এখন কী করব। কী করলে জীবন চলবে। সংসার চলবে।’

অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা সত্ত্বেও থেমে যাননি আমজাদ। প্রবল মনোবল আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, জীবনে নতুনভাবে পথচলার। আর এই যাত্রায় তাঁর পাশে দাঁড়ায় বেসরকারি মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক। ছোট্ট একটি দোকান দিয়ে তাঁর নতুন জীবনের শুরু।

আমজাদ হোসেন বলেন, ‘দোকান শুরু করার পর ভাবি, কোন জিনিসটি করলে দোকান সবচেয়ে ভালো চলবে। তারপর ভাবছিলাম রিচার্জের ব্যবসা কীভাবে করা যায়। নিজে নিজেই ভাবছিলাম কার কাছ থেকে এই সিমগুলো পাওয়া যাবে। কার মাধ্যমে এই সিমগুলো নিলে ব্যবসা করা যাবে...।’

স্মৃতি হাতড়ান আমজাদ, ‘বাংলালিংকের মনু নামের একজন ছিলেন, মারা গেছেন। উনি একদিন আমার দোকানে এসে বলেন, কী ব্যাপার, তোমার দোকানে কি রিচার্জের সিম নেই? আমি বলি, না ভাই, নেই। তখন তিনি বলেন, তাহলে তোমাকে বাংলালিংকের একটা সিম দিই? আমি রাজি হই। রিচার্জের সিম দেওয়ার কিছুদিন পরেই উনি পোস্ট কোড করে দেন। তখন টপ-আপ আমার কাছে ছিল না। বাংলালিংকের সঙ্গে প্রথম কাজ শুরু করি, আমি রিচার্জের কাজ করব বাংলালিংকের—যেন অন্য রকম একটি ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করতে থাকে।’

বর্তমানে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মোবাইল রিচার্জ বিক্রিকারী দোকানের মালিক আমজাদ। মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয় করেন এই দোকান থেকে। শুধু অর্থনৈতিক সাফল্যই নয়, সামাজিকভাবেও তিনি হয়ে উঠেছেন অনুকরণীয় একজন ব্যক্তি।

গ্রামের অনেকেই জানান, এলাকায় আগে তাঁরা এ ধরনের সেবা পাননি। আমজাদ হোসেনের কারণেই এই সেবা পাচ্ছেন। বাংলালিংকের সহায়তায় এবং আমজাদের ইচ্ছাশক্তির জোরেই আজ তিনি সফল।

নিজের জীবন বদলে দিয়ে অন্যদেরও অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘যদি মনোবল শক্ত না থাকত তাহলে আমার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হতো না।’

আমজাদের মতে, বাংলালিংক কেবল একটি মোবাইল অপারেটরই নয়, বরং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার একটি প্ল্যাটফর্ম। সমাজের পিছিয়ে পড়া অসংখ্য মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, তাঁদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সাহায্য করে আসছে বাংলালিংক। আর প্রতিনিয়ত তৈরি করছে ‘দিনবদলের গল্প’।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চান্দনা ডাকঘরে এখন স্বেচ্ছাসেবক ও যুবদলের কার্যালয়
  • চরফ্যাশনে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এনসিপির সাইনবোর্ড
  • রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় দুই পা হারালেও মনোবল হারাননি আমজাদ