বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা প্রাকৃতিক সমস্যা নয়, বরং দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও খাল দখলের ফল। যারা অতীতে সিডিএর নেতৃত্বে ছিলেন, তারাই মূলত এ অবস্থার জন্য দায়ী। আমি নিজে চট্টগ্রামে প্রাথমিক থেকে কলেজ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। তখন শহরে এ রকম জলাবদ্ধতা ছিল না।

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ বক্স কালভার্ট, মহেশ খাল, নাজির খাল ও বির্জা খাল পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা.

শাহাদাত হোসেনসহ সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

চট্টগ্রামে চলমান খাল খনন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান পর্যবেক্ষণের সময় ফাওজুল কবির খান বলেন, জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান করা কোনো একক সংস্থার পক্ষে সম্ভব নয়। সব নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা প্রশাসনিক দিক থেকে সব প্রস্তুতি শেষ করেছি। এখন নাগরিকদের দায়িত্ব সচেতন হওয়ার। 

তিনি আরও বলেন, খালের ওপর গড়ে ওঠা দোকান, ঘরবাড়ি এমনকি চিনির গুদাম পর্যন্ত অপসারণ করা হয়েছে। অনেক বাধা অতিক্রম করে আমরা খালগুলোকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনার কাজ করছি। সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীকেও এই কাজে সম্পৃক্ত করেছি।

নাগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, খাল পরিষ্কারের পর আবারও যদি কেউ সেখানে ময়লা ফেলে, তাহলে তা হবে আমাদের সব প্রচেষ্টার অপচয়। নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেউ বাইরে ময়লা ফেললে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. জিয়া উদ্দিন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নুরুল করিম, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগরী আমির শাহজাহান চৌধুরী প্রমুখ। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিশ্রুত গ্যাস এখনও মিলছে না

সংকট কাটাতে গত ৭ মে শিল্পে অতিরিক্ত ২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। সপ্তাহ পেরোলেও সংকটের তেমন উন্নতি হয়নি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্যাস সরবরাহ খুব একটা বাড়েনি। ভোগান্তি আগের মতো রয়ে গেছে। ২৫ কোটি ঘনফুটের বিপরীতে মিলছে মাত্র চার থেকে পাঁচ কোটি ঘনফুট গ্যাস। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্যাস সংকটের কারণে ঢাকা, গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়ার অধিকাংশ পোশাক কারখানা দিনের বড় একটা সময় বন্ধ থাকছে। এর ফলে উৎপাদনে ধস নেমেছে। বিদেশি ক্রেতাদের পণ্য সময়মতো সরবরাহ করাতে পারছেন না শিল্প উদ্যোক্তারা। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে রপ্তানি আয়। আগামী ঈদে সময়মতো শ্রমিকের বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। লোকসান ঠেকাতে কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।

উদ্যোক্তারা বলছেন, গ্যাস সংকটে ঝুঁকিতে পড়েছে বস্ত্র ও তৈরি পোশাকশিল্পের ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ। সমস্যার সমাধান চেয়ে সম্প্রতি জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে চিঠি পাঠায় টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। সংগঠনটির সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, গ্যাস সরবরাহে যে সংকট, তা অব্যাহত থাকলে বস্ত্রকলগুলোর উৎপাদন আরও কমে একসময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সামনে ঈদুল আজহায় শ্রমিকের বেতন-বোনাস পরিশোধে সংকট তৈরি হতে পারে। শ্রমিক অসন্তোষের শঙ্কাও রয়েছে বলে চিঠিতে সতর্ক করা হয়।
এরপর গত ৭ মে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন জ্বালানি উপদেষ্টা। সভা শেষে তিনি জানান, শিল্পে অতিরিক্ত ২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেওয়া হবে। এর মধ্যে রমজানে বিদ্যুতের জন্য বরাদ্দ দৈনিক ১২০ কোটি ঘনফুট থেকে ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরিয়ে শিল্প খাতে দেওয়া হবে। মে থেকে আগস্ট– এই চার মাসে চারটি অতিরিক্ত এলএনজি কার্গো আমদানি করা হবে। এর ফলে দৈনিক আরও ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে।

তবে শিল্পমালিকরা বলছেন, এখনও তারা প্রায় আগের মতো গ্যাস পাচ্ছেন। পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি, বিশেষ করে সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে সংকট প্রকট হয়েছে। নিট গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সমকালকে বলেন, গ্যাস সরবরাহ তেমন বাড়েনি। 

ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও নরসিংদী এলাকায় গ্যাস সরবরাহকারী তিতাসের এক ব্যবস্থাপক সমকালকে জানিয়েছেন, তারা এক সপ্তাহ আগে যে পরিমাণ গ্যাস পেতেন, এখনও প্রায় সমপরিমাণ গ্যাস পাচ্ছেন। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্যাস থেকে গাজীপুর অঞ্চলে সরবরাহ একটু বাড়ানো হয়েছে। সেটিও চার থেকে পাঁচ কোটি ঘনফুটের বেশি না।

পেট্রোবাংলার সরবরাহ করা তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬ মে দেশে দৈনিক মোট গ্যাস সরবরাহ করা হয় ২৭২ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে বিদ্যুতে দেওয়া হয় ১০৭ কোটি, সারে ১২.৬ কোটি এবং আবাসিক ও শিল্পে ১৪৯ কোটি ঘনফুট। ১২ মে মোট সরবরাহ ছিল ২৭০ কোটি ঘনফুট। বিদ্যুৎ পায় ৯৯.৬ কোটি, সার কারখানা ১১.২ কোটি এবং আবাসিক ও শিল্প পায় ১৬০ কোটি ঘনফুট।

পেট্রোবাংলার এক পরিচালক সমকালকে বলেন, রমজানে বিদ্যুতে যে গ্যাস দেওয়া হতো, তা এপ্রিলেই কমানো হয়েছে। আর রমজানের চেয়ে বর্তমানে গ্যাসের মোট সরবরাহ কমেছে প্রায় ১৪ কোটি ঘনফুট। ফলে চাইলেই শিল্পে সরবরাহ খুব বেশি বাড়ানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া বাড়তি যে এলএনজি কার্গো আসার কথা রয়েছে, তা আসবে চলতি মাসের শেষের দিকে। তখন পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়।
জানতে চাইলে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির সমকালকে বলেন, চাইলেই তো রাতারাতি গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো যায় না। তার ওপর গত দু’দিন তাপমাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। তাই বিদ্যুতেও বেশি গ্যাস দিতে হচ্ছে। এর পরও তিতাসকে যতটুকু সম্ভব বেশি গ্যাস দিতে বলা হয়েছে। আর বাড়তি এলএনজি কার্গো কেনার অর্থ জোগাড় করতে  হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) অনুমোদন পাওয়া গেছে। ২১ বা ২২ মে কার্গোটি দেশে আসার কথা রয়েছে। তখন শিল্পে সরবরাহ আরও বাড়বে। 


সাভার ও আশুলিয়ায় শিল্প ধুঁকছে

সাভারের হেমায়েতপুরের বৃহত্তর পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান একেএইচ গ্রুপ। এই তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক। কারখানার মালিক আবুল কাশেম সমকালকে জানান, এপ্রিলের চেয়ে এ মাসে গ্যাস সংকট আরও বেড়েছে। সরকার গ্যাস সংকট উত্তরণে নানা পদক্ষেপ নিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার নিউ এজ পোশাক কারখানার উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন বলেন, আমাদের পোশাক কারখানায় প্রয়োজন কমপক্ষে ১০ পিএসআই (প্রতি বর্গইঞ্চিতে গ্যাসের চাপ)। সেখানে গ্যাস পাচ্ছি ১ থেকে ২ পিএসআই। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ডিজেল ব্যবহার করায় খরচ দ্বিগুণ হচ্ছে। কিন্তু বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে না। সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় বিদেশি ক্রেতা হারাতে হচ্ছে।

জানা গেছে, সাভার ও আশুলিয়ায় কারখানা রয়েছে এক হাজার দুইশর বেশি। কয়েক মাস ধরে এসব কারখানা গ্যাস সংকটে আর্থিক ক্ষতির মধ্যে আছে। সাভারের উলাইল এলাকার আল-মুসলিম পোশাক কারখানার ব্যবস্থাপক মোসলেমুদ্দিন জানান, জেনারেটর বা বয়লার চালানোর জন্য পোশাক কারখানাগুলোয় ১৫ পিএসআই চাপের গ্যাস প্রয়োজন। কিন্তু গত ১ জানুয়ারি থেকে এ চাপ ২-৩ পিএসআইয়ে নেমে এসেছে। এতে কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সরেজমিন ওই কারখানায় দেখা যায়, ড্রায়ার মেশিনে গ্যাসের চাপ কম থাকায় তৈরি পোশাক ওয়াশ করা যাচ্ছে না। শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন। তিতাসের আশুলিয়া জোনের ব্যবস্থাপক আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন জানান, লাইনে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় সাভার ও আশুলিয়া শিল্প এলাকায় গ্যাসের চাপ কম। 

গাজীপুরেও সংকট
গতকাল দুপুরে গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী এলাকার তুসুকা জিন্স লিমিডেট কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, গ্যাস সংকটে শ্রমিকরা বেকার সময় পার করছেন। তুসুকা গ্রুপের পরিচালক তারেক হাসান বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে গ্যাস সরবরাহ ছিল ১ পিএসআইয়েরও কম। অথচ কারখানা চালানোর জন্য প্রয়োজন ১৫ পিএসআই। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন অব্যাহত রাখা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে শুধু ডিজেল কেনায় প্রতিদিন বাড়তি খরচ হচ্ছে ৩০ লাখ টাকা। পাশের মৌচাক এলাকার ফ্যাশন ওয়্যার কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, পরিস্থিতি আরও খারাপ। এ কারখানায় গ্যাস সবরাহ নেই বললেই চলে। পাঁচ হাজার শ্রমিকের কারখানাটি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আংশিক চালানো হচ্ছে। গতকাল এ কারখানার ৭৫ শতাংশ শ্রমিক অলস সময় পার করেছেন। সাদমা গ্রুপের পরিচালক সোহেল রানা সমকালকে বলেন, ডিজেল বাবদ প্রতিদিন চার লাখের বেশি টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। তারপরও পুরোপুরি চালাতে পারছি না। এখন ঠিকমতো উৎপাদন করতে না পারলে ঈদের আগে বড় ধাক্কা আসতে পারে। ঈদের আগে বেতন-বোনাস দিতে না পারলে পরিস্থিতি কোন দিকে যায় কে জানে। 

সফিপুর আনসার একাডেমি এলাকার স্টারলিং নামক পোশাক তৈরির কারখানার নিজস্ব জেনারেটরটি গ্যাস সংকটে কারণে চালানো যাচ্ছে না। ফলে দিনের বেশির ভাগ সময় শ্রমিকদের কর্মস্থলে বসে থাকতে হচ্ছে।

গাজীপুরের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক মহর আলী বলেন, জেলা ও মহানগরে দুই হাজারের বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কারখানা পরিদর্শনে গেলে কর্তৃপক্ষ প্রায় সময়ই গ্যাস সংকটের বিষয়ে অভিযোগ করেন। তিতাস গ্যাসের গাজীপুর জোনের ব্যবস্থাপক রিদওয়ানুজ্জামান সমকালকে বলেন, জেলা ও মহানগরে দৈনিক প্রায় ৫৯ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। তবে পাওয়া যাচ্ছে ৩০ কোটি ঘনফুট। 

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধি) 

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ