ইসরায়েলি অবরোধে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখে ফিলিস্তিনের গাজার বাসিন্দারা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ফিলিস্তিনের একটি প্রজন্মের ওপর দুর্ভিক্ষের স্থায়ী প্রভাব পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল মঙ্গলবার সৌদি আরবে পা রাখার সঙ্গেই গাজায় হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের আশ্রয়কেন্দ্রে নতুন করে হামলা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেছে ৪৬ ফিলিস্তিনির।
 
আলজাজিরা জানায়, দুই মাসের বেশি সময় ধরে গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি রিক পিপারকর্ন বলেন, তিনি ক্লিনিকগুলোতে এমন শিশু দেখেছেন, অপুষ্টির কারণে যাদের কম বয়সী দেখায়। পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসেবার মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। ইসরায়েল স্বীকার করেছে, হামাসকে অবশিষ্ট বন্দি মুক্তি দেওয়ার জন্য চাপে ফেলতে খাদ্য, পানি ও ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফরের অংশ হিসেবে সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে গাজায় হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। গাজার পূর্ব অংশসহ অন্যান্য এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটতে দেখা গেছে। নুসাইরাত ও বুরাইজ শরণার্থী শিবিরে ভারী বিমান হামলা হয়েছে। নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে হামলায় হাসান এসলাইহ নামে এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ২১৫ সাংবাদিক। 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, গাজার বেশির ভাগ শিশু এখন চরম ক্ষুধার মুখোমুখি। ইউনিসেফ সতর্ক করে দিয়েছে, গত ২ মার্চ থেকে ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়ার পর থেকে ক্ষুধা ও অপুষ্টি তীব্র হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরোপুরি দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে গাজা। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার প্রধান বিবিসিকে বলেন, গাজায় দুর্ভিক্ষকে ‘যুদ্ধের অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল। 

এদিকে ১৯ মাস বন্দি থাকার পর মার্কিন-ইসরায়েলি বন্দি এডান আলেক্সান্ডারকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। তিনি পরিবারের সঙ্গে মিলিত হন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেন। একই সঙ্গে ইসরায়েল কমপক্ষে ৯ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।
রয়টার্স জানায়, কান উৎসব শুরু হওয়ার আগে গাজায় গণহত্যার নিন্দা করেছেন চলচ্চিত্র তারকারা। ৩৮০ জন তারকা খোলা চিঠিতে এই নিন্দা জানান।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, কাতারের রাজধানী দোহায় যুদ্ধবিরতির আলোচনার জন্য দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে যুদ্ধ অবসানের কোনো চিন্তা নেই তাঁর। ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে তিনি জানান। 

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধে কমপক্ষে ৫২ হাজার ৯০৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ লাখ ১৯ হাজার ৭২১ জন আহত হয়েছে।  

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

মার্কিন ‘আগ্রাসনের’ হুমকি, জরুরি অবস্থা জারি করতে প্রস্তুত ভেনেজু

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলেছেন, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘আগ্রাসনের’ হুমকির প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে প্রস্তুত।

সাম্প্রতিক সময়ে ভেনেজুয়েলার সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌকাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক প্রাণঘাতী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো সোমবার এ মন্তব্য করেন। খবর আলজাজিরার।

আরো পড়ুন:

ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করল ওরেগন

যুক্তরাষ্ট্রে গির্জায় বন্দুক হামলা, নিহত ৪

মাদুরো এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, “আমেরিকান সাম্রাজ্য ভেনেজুয়েলায় সামরিক হামলা চালালে, যাতে আমাদের জনগণ এবং দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করা যায়, সে লক্ষ্যে সংবিধানের আলোকে একটি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে আজ আমরা পরামর্শ প্রক্রিয়া শুরু করেছি।”

এর আগে ভেনেজুয়েলার ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেলসি রদ্রিগেজ বিদেশি কূটনীতিকদের বলেন, “প্রেসিডেন্ট মাদুরো একটি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র যদি আমাদের মাতৃভূমিকে আক্রমণ করার দুঃসাহস দেখায়, তবে এই ডিক্রি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তাকে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে ‘বিশেষ ক্ষমতা’ প্রদান করবে।”

এই ডিক্রি মাদুরোকে সারা দেশে সৈন্য মোতায়েনের অনুমতি দেবে এবং জনসেবা ও তেল শিল্পের ওপর সামরিক কর্তৃত্ব দেবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভেনেজুয়েলর উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আটটি যুদ্ধজাহাজ, একটি পরমাণু শক্তি চালিত সাবমেরিন ও এফ-৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসন এই অভিযানকে মাদক পাচার মোকাবিলার একটি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দাবি করলেও, বিশ্লেষকদের মতে এটি মাদুরোর ওপর চাপ তৈরির কৌশল।

সাম্প্রতিক সময়ে ভেনেজুয়েলার আন্তর্জাতিক জলসীমায় কমপক্ষে তিনটি নৌযানে বোমা হামলা চালিয়েছে মার্কিন সেনাবাহিনী। দাবি করেছে, সবগুলো নৌকা ‘অবৈধ মাদক পাচার করছিল’।

এসব হামলায় ভেনেজুয়েলার কমপক্ষে ১৭ নাগরিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ভেনেজুয়েলা বলছে যে, যুক্তরাষ্ট্র দেশটির বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করেছে। মাদুরোর নেতৃত্বধীন ভেনেজুয়েলা সরকার দীর্ঘদিন ধরেই মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা ‘সাম্রাজ্যবাদের’ বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে আসছে।

আলজাজিরা জানিয়েছে, বিদ্যমান পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা ‘ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরে মাদক পাচারকারীদের লক্ষ্যবস্তু’ করার লক্ষ্যে বিমান হামলার পরিকল্পনা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচারে ভেনেজুয়েলার বড় ভূমিকা থাকার মার্কিন দাবি প্রত্যাখ্যান করে মাদুরো বলেছেন, তিনি চান দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ‘ঐতিহাসিক এবং শান্তিপূর্ণ’ হোক।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মার্কিন ‘আগ্রাসনের’ হুমকি, জরুরি অবস্থা জারি করতে প্রস্তুত ভেনেজু