আইসিসির এপ্রিল মাসের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতে দারুণ উচ্ছ্বসিত মেহেদী হাসান মিরাজ। এই অর্জনকে তিনি দেখছেন তার ক্রিকেটীয় পথচলার এক বড় মাইলফলক হিসেবে।

আইসিসির মাসসেরা খেলোয়াড় হয়ে উচ্ছ্বসিত মিরাজ বলেন, “আইসিসি মেনস প্লেয়ার অব দ্য মান্থ হওয়া সত্যিই দারুণ সম্মানের। আইসিসির স্বীকৃতি যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর একটি। আর এই পুরস্কার যেহেতু বিশ্বজুড়ে ভোটের মাধ্যমে এসেছে, তাই আমার কাছে এর অর্থ অনেক বেশি।”

তিনি আরও বলেন, “এমন মুহূর্তগুলো আমাকে আমার যাত্রাপথের কথা মনে করিয়ে দেয় — ২০১৬ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ‘প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট’ নির্বাচিত হওয়াটা ছিল ক্যারিয়ারের শুরুতে বড় এক অনুপ্রেরণা। আর এই পুরস্কারটিও তেমনই বিশেষ অনুভব করছি।”

আরো পড়ুন:

ছোটবেলা থেকেই খুব খেলতে চাইতাম: তাসনুভা তিশা

নাটকীয় মোড়: রেকর্ড মূল্যে আইপিএলে দল পেলেন মোস্তাফিজ

পুরস্কারটি তার ভবিষ্যতের পথচলায় নতুন প্রেরণা হয়ে থাকবে উল্লেখ করে মিরাজ বলেন, “আমি সত্যিই খুব আনন্দিত। এই স্বীকৃতি আমাকে আরও ভালো করার সাহস দেবে, যাতে আমি দেশের জন্য আরও অবদান রাখতে পারি। একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমরা স্বপ্ন দেখি দেশের জন্য কিছু করার, মাঠে পারফর্ম করে মানুষকে খুশি করার। আইসিসির এই সম্মান আমাকে নিয়মিতভাবে আরও ভালো খেলার জন্য অনুপ্রাণিত করবে।”

শেষে তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “এই পুরস্কার শুধু আমার একার নয়। আমার সতীর্থ, কোচ এবং অসংখ্য ভক্ত-সমর্থকের অবদানে এটি সম্ভব হয়েছে। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।”

এপ্রিল মাসজুড়ে টেস্ট ক্রিকেটে বল ও ব্যাট হাতে নজরকাড়া পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন মিরাজ। বিশেষ করে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজে মিরাজ ছিলেন দারুণ সব্যসাচী। সিলেট টেস্টে দল হারলেও বল হাতে দুই ইনিংসেই পাঁচটি করে মোট ১০ উইকেট তুলে নিয়ে আলো ছড়ান।

তার ধারাবাহিকতা আরও জ্বলে ওঠে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে। সেই ম্যাচে মিরাজ দারুণ অলরাউন্ড নৈপূণ্য দেখান। ব্যাট হাতে দারুণ এক সেঞ্চুরি (১০৪ রান) করার পাশাপাশি দ্বিতীয় ইনিংসে তুলে নেন আরও একবার পাঁচ উইকেট। তার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে বাংলাদেশ ইনিংস ও ১০৬ রানে জয় পায়। তাতে সিরিজে ফেরে সমতা।

দুই ম্যাচের সিরিজে মিরাজ ১১.

৮৬ গড়ে শিকার করেন ১৫টি উইকেট। আর ৩৮.৬৬ গড়ে রান করেন ১১৬টি। এই নিখুঁত ও ধারাবাহিক পারফরম্যান্সই তাকে এনে দেয় আইসিসির মাসসেরা খেলোয়াড় হওয়ার স্বীকৃতি।

ঢাকা/আমিনুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ক র আইস স র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

পাহাড় থেকে পৃথিবীর পথে 

পিঠে থুরুং (ঝুড়ি) বাঁধা এক জুমিয়া নারী। মাথায় পাগড়ির বা শিরস্ত্রাণের মতো একটা ট্যাংক। ছবির পরিসরজুড়ে বিশালাকৃতির সেই নারীর চারপাশে বন্দুকধারী অসংখ্য ছায়ামূর্তি। তাদের আকৃতি নারীর তুলনায় বহুগুণ খর্বকায়। ট্যাংকের নল দিয়ে সেসব ছায়ামূর্তির ওপর পড়ছে পাতা আর ফুল।

শিল্পী জয়দেব রোয়াজা কালি ও কলমে এই ছবি এঁকেছিলেন ২০২৩ সালে। তাঁর অন্য সব ছবির মতোই এটিও পাহাড়ের সমকালীন অবস্থাই কেবল তুলে ধরে না; বরং তাকে ভীষণভাবে ছাপিয়ে যায়। বাস্তবতা পেরিয়ে জাদুবাস্তবতার সীমায় এসে দাঁড়ায়। মানুষের জীবন, সংগ্রাম আর প্রকৃতি সব ভেঙেচুরে কবিতার একটি পঙ্‌ক্তির ভেতরে যেন প্রবেশ করে।

১৯৭৩ সালে খাগড়াছড়ির খামারপাড়ার একটি ত্রিপুরা পরিবারে জন্ম জয়দেব রোয়াজার। মা নীহারিকা ত্রিপুরা আর বাবা হিরণ্ময় রোয়াজা। হিরণ্ময় মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন। শান্ত নিরিবিলি পাড়ার বাসিন্দা তাঁরা। পাহাড়, ঝিরি, ঝরনা আর জুমখেত দেখতে দেখতে বড় হওয়া। স্কুলে কবিতার বইয়ের ইলাস্ট্রেশন নকল করে খাতায় আঁকতেন। কবিতার চেয়ে ভালো লাগত ইলাস্ট্রেশন। শেষে এই ভালো লাগারই জয় হলো। বাংলাদেশের এই সময়কার এক উজ্জ্বল শিল্পী জয়দেব। তাঁর শিল্পকর্মের পরিচিতি ছড়িয়েছে সারা বিশ্বে। 

একনজরে জয়দেব

চারুকলার নতুন মাধ্যম পারফরম্যান্স আর্ট। জয়দেব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই এই মাধ্যমের প্রতি আকৃষ্ট হন। এই ধারার শিল্পীরা নিজের শরীরকেই করে তোলেন ক্যানভাস। সঙ্গে থাকে নানা প্রকাশভঙ্গি। পারফরম্যান্স করতে গিয়ে ছবি আঁকা ছাড়েননি তিনি। চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যের যেমন স্টোরিবোর্ড, তেমনি জয়দেবের পারফরম্যান্সের প্রতিটি ভঙ্গির ছবি আঁকা থাকে তাঁর স্কেচ খাতায়। এভাবেই দুই মাধ্যমকে যুক্ত করেছেন নিজের ধরনে। পাশাপাশি বড় ক্যানভাসেও ছবি আঁকেন। কালি ও কলমেই সিদ্ধহস্ত তিনি।

ভারতের কোচি বিয়েনাল, হংকং আর্ট বেজেল, অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে এশিয়া প্যাসিফিক ট্রায়েনিয়ালে অংশ নিয়েছেন তিনি। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারত, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ১১টির বেশি দেশে তিনি পারফরম্যান্স করেছেন। হয়েছে চিত্র প্রদর্শনীও। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের টেট মডার্ন মিউজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট, চীনের হংকংয়ের এম প্লাস, ফ্রান্সের প্যারিসের ক্যাডিস্ট ফাউন্ডেশন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবির গুগেনহাইম, ভারতের নয়াদিল্লির কিরণ নাদার মিউজিয়ামসহ বিশ্বের খ্যাতনামা বহু জাদুঘরে তাঁর শিল্পকর্ম রক্ষিত আছে। বাংলাদেশে তাঁর শিল্পসংগ্রহ রয়েছে সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন এবং দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনে। শিল্পবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রকাশনা আর্ট রিভিউ এশিয়া, আর্ট নিউজ, ফোর্বস এবং ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দু পত্রিকায় তাঁর শিল্পকর্মের সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছে। আবুধাবির গুগেনহাইম মিউজিয়াম জয়দেবের একটি শিল্পকর্ম বেশ ভালো দামে কিনে নিয়েছে। বর্তমানে তিনি মুম্বাইভিত্তিক ঝাভেরি কনটেমপোরারি গ্যালারির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। 

পাহাড় আর ঝিরির পথে পথে

খাগড়াছড়ি আর রাঙামাটির ঝিরি পথে বা কাপ্তাই হ্রদের নির্জনতায় সময় কাটে জয়দেব রোয়াজার। আন্তর্জাতিক খ্যাতি এলেও জীবন কাটান পাহাড়ি জুমিয়াদের মতো। কখনো মাছ ধরতে চলে যান জেলেদের সঙ্গে। আবার কখনো ঝিরি পথে হেঁটে হেঁটে দিন কাটে তাঁর। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কামিলাছড়ি গ্রামে নির্জন হ্রদের ধারে গড়ে তুলেছেন স্টুডিও। সেখানে সপ্তাহের দুই দিন কাটে তাঁর। পাহাড় ও পাহাড়ের মানুষজনকে নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা বুনে তোলেন ক্যানভাসে।

জয়দেব দেশের শিল্পীসমাজ ও শিল্পবোদ্ধাদের জগৎ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেন। তাঁর কথায়, ঢাকা তাঁকে কখনো টানে না। দু-এক দিন ঢাকা বা দেশের বাইরে থাকলে হাঁপিয়ে ওঠেন। ভাবেন, কখন ফিরবেন পাহাড়ে। 

সম্প্রতি কামিলাছড়িতে তাঁর স্টুডিওতে গিয়ে দেখা গেল আট ফুট দীর্ঘ একটি ক্যানভাসে কাজ করছেন তিনি। তিনতলা স্টুডিওর বারান্দায় এসে দাঁড়ালে অবারিত নীল হ্রদের হাতছানি। হ্রদের পাড়ে ঢেউখেলানো পাহাড়ের সারি। সেদিকে তাকালে আচ্ছন্ন হয়ে যেতে হয়। বারান্দায় বসে কথায় কথায় জানালেন নির্জন এই পাহাড়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে ছবি বিক্রির টাকায় এই স্টুডিও গড়ে তুলেছেন। স্ত্রী হাসনাহেনা পরশের সঙ্গে মিলে জঙ্গল পরিষ্কার করেছেন। একটাই চাওয়া, একটু আড়াল, একটু নির্জনতা। ছবি আঁকার জন্য এটুকু পরিসর চেয়েছেন জীবন থেকে। 

জয়দেব রোয়াজা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাহাড় থেকে পৃথিবীর পথে