রিয়ালের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে অপেক্ষা বাড়ল বার্সার
Published: 15th, May 2025 GMT
লা লিগার শিরোপা নির্ধারিত হয়ে যেতে পারত মায়োর্কার মাঠে। রিয়াল মাদ্রিদ হোঁচট খেলেই বার্সেলোনা এক মৌসুমের বিরতি দিয়ে আবারও বনে যেত লিগ চ্যাম্পিয়ন। তবে মায়োর্কার বিপক্ষে সেটার খুব কাছে গিয়েও শেষমেশ হয়নি রিয়ালের। শেষ মুহূর্তের এক গোল সব হিসেব ওলটপালট করে দিল। সান্তিয়াগো বার্নাবুতে ৯৫তম মিনিটে ইয়াকোবো রামোনের গোলে মায়োর্কাকে ২–১ ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপার জন্য বার্সার অপেক্ষা আরও বাড়িয়ে দিল রিয়াল।
ম্যাচের শুরুতে এগিয়ে গিয়েছিল মায়োর্কা। ১১তম মিনিটে ডান দিক থেকে পাওয়া বল নিখুঁত শটে রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে পরাস্ত করেন মার্টিন ভালিয়েন্ত। এটি ছিল কোর্তোয়ার লা লিগা ক্যারিয়ারের ২০০তম ম্যাচ। তবে ধাক্কা খেয়েও লড়াই থামায়নি রিয়াল। তারকাহীন একাদশে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রদ্রিগোদের অনুপস্থিতিতে আক্রমণের দায়িত্ব কাঁধে নেন কিলিয়ান এমবাপ্পে ও জুড বেলিংহ্যাম। গোলের জন্য মরিয়া রিয়াল একের পর এক সুযোগ তৈরি করে, যদিও মায়োর্কার গোলরক্ষক লেও রোমান দুর্দান্ত সব সেভে রক্ষা করেন দলকে।
অবশেষে ৬৮তম মিনিটে কাঙ্ক্ষিত গোল পেয়ে যান এমবাপ্পে। তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে নিচু শটে বল জালে জড়ান এই ফরাসি ফরোয়ার্ড। এটি ছিল চলতি মৌসুমে তার ৪০তম গোল। তবে ম্যাচের নাটক তখনো বাকি। একবার মাতেউ মোরের শট ঠেকান কোর্তোয়া, আরদা গুলের শট ফিরিয়ে দেন রোমান। গোললাইন থেকে এমবাপ্পের শট ফিরিয়ে দেন ভালিয়েন্ত। যখন ড্রই সবচেয়ে সম্ভাব্য ফল মনে হচ্ছিল, তখনই দৃশ্যপটে আবির্ভাব ইয়াকোবো রামোনের।
৯৫তম মিনিটে গোলরক্ষক রোমানের মাথার ওপর দিয়ে দুর্দান্ত এক শটে বল জালে জড়ান ২০ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার। সেই গোলেই ২-১ ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে রিয়াল মাদ্রিদ। এই জয়ে ৩৬ ম্যাচে রিয়ালের পয়েন্ট এখন ৭৮। এক ম্যাচ কম খেলে বার্সার সংগ্রহ ৮২ পয়েন্ট। তিন নম্বরে থাকা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের পয়েন্ট ৭০।
তবে অপেক্ষার প্রহর হয়তো খুব বেশি লম্বা হবে না। বৃহস্পতিবার এসপানিওলের বিপক্ষে জয় পেলেই শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যাবে বার্সেলোনার।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রায় হলো ৩৯৭ দিনের মাথায়
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলা হয়েছিল গত বছরের ১৭ অক্টোবর। তারপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বিচার। সবশেষে রায় হতে সব মিলিয়ে লাগল ৩৯৭ দিন।
আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর দেওয়া রায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার অন্য দুই আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে।
সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান রয়েছেন ভারতে। তাদের দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম রয়েছে নিষিদ্ধ।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে।
পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়। ওই দিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
আরও পড়ুনরাষ্ট্র কেন শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিল০৫ নভেম্বর ২০২৫এ মামলায় প্রথমে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি। এ বছরের ১৬ মার্চ তাঁর পাশাপাশি সাবেক আইজিপি আল-মামুনকেও আসামি করা হয়।
একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে এই মামলায় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আসামি হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম প্রথমবারের মতো আসে গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদনে। সেদিন থেকে এ মামলায় আসামি হন তিনজন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও আল-মামুন।
তাঁদের বিরুদ্ধে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এর মধ্য দিয়ে ‘মিসকেস’ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলায় রূপ নেয়।
এরপর গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই আল–মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন।
গত ৩ আগস্ট এ মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।
মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ। তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
আরও পড়ুনমানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড১ মিনিট আগেএ মামলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় গত ৮ অক্টোবর। এরপর যুক্তিতর্ক শুরু হয় গত ১২ অক্টোবর, যা শেষ হয় ২৩ অক্টোবর।
সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল জানান, ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সব মিলিয়ে ‘মিসকেস’ থেকে এ মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।
পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন মো. আমির হোসেন।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম আগেই বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সাজা হলে তাঁরা আপিল করতে পারবেন না। এর কারণ তাঁরা পলাতক। আপিল করতে হলে তাঁদের আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।