স্প্যানিশ লা লিগায় শিরোপা জয়ের দৌড়ে বার্সেলোনার পেছনে পড়ে গেলেও হাল ছাড়ছে না রিয়াল মাদ্রিদ। বুধবার (১৪ মে) দিবাগত রাতে সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে এক নাটকীয় লড়াইয়ে মায়োর্কাকে ২-১ গোলে হারিয়ে শিরোপার ক্ষীণ আশাটা এখনও ধরে রেখেছে তারা। অন্যদিকে শিরোপা জয়ের অপেক্ষাটাও আরেকটু বাড়িয়ে দিয়েছে বার্সার।

চোটে জর্জরিত স্কোয়াড নিয়ে একাদশ গঠনে হিমশিম খাচ্ছিল রিয়াল। তবুও শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে মরিয়া ছিল এমবাপ্পে ও উঠতি তারকা এন্ড্রিকের আক্রমণভাগ। কিন্তু প্রথম ধাক্কাটাই আসে রিয়ালের বিপক্ষে—১১ মিনিটেই মায়োর্কার মার্টিন ভালেন্ট ডি-বক্স থেকে নেয়া শটে গোল করে এগিয়ে দেন দলকে।

গোল হজমের পর আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠে রিয়াল। একের পর এক আক্রমণ গড়ালেও বিরতির আগ পর্যন্ত দুর্দান্ত প্রতিরোধ গড়ে গোল রুখে দেন মায়োর্কার গোলকিপার রোমান।

আরো পড়ুন:

কোচ হিসেবে রিয়ালে ফিরলেন জাবি আলোনসো

৭ গোলের এল ক্লাসিকো জিতে শিরোপার দুয়ারে বার্সা

দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে রিয়াল যেন রণকৌশল বদলায়। বারবার আক্রমণের পর ৬৮ মিনিটে অবশেষে আসে কাঙ্ক্ষিত সমতা। গোলদাতার নাম এমবাপ্পে—এই মৌসুমে লা লিগায় তার ২৮তম গোল, সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে যা গিয়ে দাঁড়ায় ৪০-এ।

ম্যাচ তখন গড়াতে থাকে উত্তেজনার চূড়ায়। যখন মনে হচ্ছিল ম্যাচটি পয়েন্ট ভাগাভাগির দিকেই যাচ্ছে, তখনই নাটকীয় মোড়। অতিরিক্ত সময়ের পঞ্চম মিনিটে তরুণ ডিফেন্ডার রামন গোল করে রিয়ালকে এনে দেন মহামূল্যবান জয়। সিনিয়র দলের মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা এই ২০ বছর বয়সী প্রতিভাবান তরুণ যেন রাতারাতি রিয়াল সমর্থকদের হৃদয়ের নায়ক হয়ে উঠেছেন।

এই জয়ের ফলে ৩৬ ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদের সংগ্রহ দাঁড়ালো ৭৮ পয়েন্ট। অপরদিকে বার্সেলোনা ৩৫ ম্যাচে ৮২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে। তবে বার্সা যদি আজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসাসুনার বিপক্ষে জিতে যায় তাহলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই তাদের হাতে উঠবে লা লিগার শিরোপা।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রায় হলো ৩৯৭ দিনের মাথায়

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলা হয়েছিল গত বছরের ১৭ অক্টোবর। তারপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বিচার। সবশেষে রায় হতে সব মিলিয়ে লাগল ৩৯৭ দিন।

আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর দেওয়া রায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার অন্য দুই আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে।

সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান রয়েছেন ভারতে। তাদের দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম রয়েছে নিষিদ্ধ।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে।

পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়। ওই দিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

আরও পড়ুনরাষ্ট্র কেন শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিল০৫ নভেম্বর ২০২৫

এ মামলায় প্রথমে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি। এ বছরের ১৬ মার্চ তাঁর পাশাপাশি সাবেক আইজিপি আল-মামুনকেও আসামি করা হয়।

একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে এই মামলায় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আসামি হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম প্রথমবারের মতো আসে গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদনে। সেদিন থেকে এ মামলায় আসামি হন তিনজন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও আল-মামুন।

তাঁদের বিরুদ্ধে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এর মধ্য দিয়ে ‘মিসকেস’ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলায় রূপ নেয়।

এরপর গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই আল–মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন।

গত ৩ আগস্ট এ মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।

মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ। তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

আরও পড়ুনমানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড১ মিনিট আগে

এ মামলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় গত ৮ অক্টোবর। এরপর যুক্তিতর্ক শুরু হয় গত ১২ অক্টোবর, যা শেষ হয় ২৩ অক্টোবর।

সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল জানান, ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সব মিলিয়ে ‘মিসকেস’ থেকে এ মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।

পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন মো. আমির হোসেন।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম আগেই বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সাজা হলে তাঁরা আপিল করতে পারবেন না। এর কারণ তাঁরা পলাতক। আপিল করতে হলে তাঁদের আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ