ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার গৃহবধূ নার্গিস বেগমের (২৫) গরু ফিরিয়ে দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বেল্লাল হোসেন খান। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজাপুর শুক্তাগড় ইউনিয়নের কেওতা ঘিগরা মাদ্রাসায় এক সালিসের মাধ্যমে গরুটি ফেরত দেওয়া হয়। তবে গরু ফিরিয়ে দেওয়ার আগে একটি কাগজে ২৬ হাজার ৬০০ টাকা পাওনা আছে বলে ওই নারীর কাছ থেকে সই নেওয়া হয়।

বুধবার সকালে উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের ঘিগড়া গ্রামের একটি মাঠ থেকে গরুটি নিয়ে যান বেল্লাল। তিনি শুক্তাগড় ইউনিয়নের বামন খান গ্রামের বাসিন্দা, একই ইউনিয়নের বাসিন্দা ও রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালামের আজাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আর ভুক্তভোগী নার্গিস বেগম শুক্তাগড় ইউনিয়নের ঘিগড়া গ্রামের আবু বক্করের স্ত্রী। আবু বক্কর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন। নার্গিস বেগমের দাবি, স্বামী আওয়ামী লীগের রাজনীতি করায় বেল্লাল ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। চাঁদা না পেয়ে তিনি গরুটি নিয়ে গিয়েছিলেন।

বৃহস্পতিবারের সালিসে বেল্লাল হোসেন খান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদের ভাতিজা নাজমুল হুদা ওরফে চমনসহ স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বেল্লাল হোসেন খানকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

রাজাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রতন দেবনাথ ও সদস্যসচিব আমিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বেল্লাল হোসেন খানকে তাঁর দলীয় সব ধরনের পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়। রতন দেবনাথ বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বেল্লাল হোসেন খানকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি যে ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা দলের জন্য লজ্জার।

ভুক্তভোগী নার্গিস বেগম বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করায় সালিসি বৈঠকে উপস্থিত উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদের ভাতিজা নাজমুল হুদা ওরফে চমন আমাকে দুটি চর-থাপ্পড় মারেন। পরে জোর করে একটি সাদা কাগজে ২৬ হাজার ৬০০ টাকা পাওনা আছে বলে আমার কাছ থেকে সই নেওয়া হয়। পরে আমার গরুটি ফেরত দেওয়া হয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত বেল্লাল হোসেন খান বলেন, ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে আমি গ্রান্টার হয়ে নার্গিস বেগমের স্বামী আবু বক্করের জন্য ২০ হাজার টাকা ঋণ উত্তোলন করে দিই। সেই টাকা সুদে আসলে ৩০ হাজার টাকা হয়। সেই ঋণের জন্য কর্তৃপক্ষ আমাকে চাপ সৃষ্টি করে। তাই বাধ্য হয়ে গরুটি নিয়েছি। আজ বিকেলে মুরব্বিদের উপস্থিতিতে একটি সাদা কাগজে ২৬ হাজার ৬০০ টাকা পাওনা আছে বলে স্বাক্ষর রেখে গরু ফেরত দিয়েছি।’

রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টির একটি সুষ্ঠু সমাধান হয়েছে, এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়।

আরও পড়ুন‘চাঁদার’ টাকা না পেয়ে গৃহবধূর গরু নিয়ে গেলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী৭ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জ প র উপজ ল ন র গ স ব গম

এছাড়াও পড়ুন:

ইসলামি বিপ্লবে পদচ্যুত শাহর পুত্রকে ব্রিটিশ এমপিদের আমন্ত্রণ

ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির নির্বাসিত ছেলে রেজা পাহলভি আগামী সোমবার যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে বক্তব্য দিতে যাচ্ছেন।

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও লেবার পার্টির একাধিক সূত্র মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

মিডল ইস্ট আইয়ের দেখা এ–সংক্রান্ত এক আমন্ত্রণপত্রে বলা হয়েছে, পাহলভি ব্রিটিশ এমপি ও আইনসভার উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসের সদস্যদের উদ্দেশে ‘ইরানে চলমান পরিস্থিতি, বর্তমান শাসনব্যবস্থার সম্ভাব্য পতন ও দেশে একটি স্থিতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লক্ষ্যে তাঁর পরিকল্পনার কথা তুলে ধরবেন’।

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবনে একটি কমিটির কক্ষে বিকেল পাঁচটায় সভাটি অনুষ্ঠিত হবে। যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করেছেন লেবার এমপি লুক একেহার্স্ট ও কনজারভেটিভ এমপি আফরা ব্র্যান্ডরেথ।

মিডল ইস্ট আইকে একহার্স্ট বলেন, ইরানি জনগণই নির্ধারণ করবেন, তাঁরা কী ধরনের সরকার চান। তবে ইরানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভিন্ন বিরোধী কণ্ঠ কী বলছে, স্বাভাবিকভাবেই সেগুলো শোনায় এমপিদের আগ্রহ থাকবে।

পাহলভি তাঁর সমর্থকদের কাছে ‘নির্বাসিত রাজা’ নামে পরিচিত। ৬৪ বছর বয়সী রেজা পাহলভি ইরানের প্রয়াত শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির জ্যেষ্ঠ পুত্র। ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত চলা গণ-অভ্যুত্থানে তাঁর বাবা ক্ষমতাচ্যুত হন। এর ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠিত হয় আজকের ইসলামি প্রজাতন্ত্র (বর্তমান ইরান)।

যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত রাজতন্ত্রের এক অকৃত্রিম সমর্থক হিসেবে রেজা পাহলভি দীর্ঘদিন ধরেই ইরানে রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আশায় কাজ করছেন। এ লক্ষ্যে তিনি একাধিকবার ইসরায়েল সফর করেছেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ছবি তুলেছেন এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্রের পতন ঘটলে নিজেকে ‘আধুনিক ইরানের একমাত্র কার্যকর নেতৃত্ব’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

লেবার মুসলিম নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান আলী মিলানি মিডল ইস্ট আইকে বলেন, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করার অর্থ, ‘স্বাধীনতা ও ন্যায়ের জন্য সংগ্রামে নিয়োজিত প্রত্যেক ইরানির মুখে একপ্রকার চপেটাঘাত’।

মিলানি বলেন, রেজা পাহলভি তাঁর পুরো জীবন নির্বাসনে কাটিয়েছেন, কিন্তু কখনোই তাঁর বাবার নিপীড়নমূলক শাসনের নিন্দা করতে রাজি হননি।

মিলানি আরও বলেন, পাহলভির বাবার শাসনামলে বিশেষ পুলিশ বাহিনী অগণিত ইরানিকে গুম, নির্যাতন ও হত্যা করেছে। অথচ এসব ভয়াবহ ঘটনার দায় তিনি কখনো যথাযথভাবে স্বীকারই করেননি।

শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি (বাঁয়ে), স্ত্রী ফারাহ পাহলভি ও ছেলে রেজা। ২৬ অক্টোবর ১৯৬৭

সম্পর্কিত নিবন্ধ