সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলাধীন মাহতাবপুর গ্রামের বাসিন্দাদের দুটি পক্ষের দ্বন্দ্বের রেশ টানছে নির্মাণাধীন সেতু। গ্রামীণ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বহুদিন ধরে ওই দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব চলমান।
যদিও চলমান সেতুর নির্মাণকাজের সঙ্গে স্থানীয় পক্ষ দুটির দ্বন্দ্বের কোনো সম্পর্ক নেই, তবুও তাদের কারণে প্রকল্পটি বিলম্বিত হচ্ছে। উভয় পক্ষের লোকজনের নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গের চেষ্টায় থমকে আছে জনগুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের কাজ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন লক্ষাধিক বাসিন্দা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাবলীলভাবে চলতে থাকা জনগুরুত্বপূর্ণ মাহতাবপুর সেতুর কাজ আকস্মিকভাবে থেমে যায়। এরপর পেরিয়ে গেছে তিন মাস। এখনও এর কাজ শুরু করা হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাদের দিক থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা নেই। স্থানীয়দের দ্বন্দ্ব, বিরোধের জেরে কাজ বন্ধ রয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮টি প্যাকেজে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে মাহতাবপুর সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন পায়। প্রকল্পের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সোনা মিয়া ট্রেডিং। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, মাহতাবপুর সেতুর নির্মাণকাজের প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৪ লাখ টাকা। ৮টি প্যাকেজে এই সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা জানান, পর্যায়ক্রমে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ৮টির মধ্যে ৭টি প্যাকেজের কাজ সম্পন্ন করা হলেও শেষ প্যাকেজের নির্ধারিত কাজ করা যাচ্ছে না। মাহতাবপুর গ্রামের এ সেতুটির কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ওই গ্রামের দুটি পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে। প্রকল্পের শেষ প্যাকেজ অনুযায়ী মাটির কাজ শুরু করার পরপরই গ্রামের একটি পক্ষের লোকজন বাধা দেন। এরপর থেকে সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে।
এদিকে জটিলতা শেষ করে দ্রুত সেতুটির কাজ সম্পন্ন করতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন একই গ্রামের বাসিন্দারা। বুধবার তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে মাহতাবপুর গ্রামের পক্ষ থেকে ফরিদ উদ্দিন, তৌফিক মিয়া, বোরহান উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন, বাবুল মিয়াসহ ১২ গ্রামবাসীর স্বাক্ষরসংবলিত একটি লিখিত আবেদন জমা দেওয়া হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়, মাহতাবপুর গ্রামের কবরস্থান থেকে মাহতাবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত চলাচলের রাস্তার মধ্যবর্তী স্থানে চলছে মাহতাবপুর সেতুর নির্মাণকাজ। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্র জানায়, নদী ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন এবং স্থানীয় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে এ প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয়। স্বার্থান্বেষী মহলের সদস্যরা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে প্রকল্পটির কাজ বন্ধ করে দেয়।
সেতুর কাজ থমকে থাকায় একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন চাষিরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করা না হলে নদী ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে গ্রামবাসীর ভোগান্তি আরও বাড়বে।
স্থানীয়রা আবেদনে আরও উল্লেখ করেন, প্রতি বছর বন্যার ধাক্কায় এখানকার বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। যদি বেড়িবাঁধ ভেঙে যায় এবং এর আগে যথাস্থানে সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করা না হয় তবে স্থানীয়দের ভোগান্তি আরও বাড়বে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সোনা মিয়া ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী জুনায়েদ আহমদ বলেন, মার্চ মাসের শুরুতে তিনি সেতুটি নির্মাণকাজের মাটি কাজ শেষ করেছিলেন। নির্মাণকাজের দ্বিতীয় ধাপ শুরু করতে গেলে গ্রামের একটি পক্ষের বাধার কারণে কাজ থমকে যায়।
মাহতাবপুর গ্রামের ফরিদ উদ্দিন বলেন, গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এ রাস্তায় ওপর একটি সেতু নির্মাণ। সেতু নির্মাণকাজটি যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করা হয় সেটিই তাদের লক্ষ্য।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুহিবুল ইসলাম বলেন, মাহতাবপুর গ্রামের রাস্তার ওপর সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নিয়েছে। 
সেতুটি নির্মাণ হলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ লোকজন সহজেই আসা-যাওয়া করতে পারত। এছাড়া বর্ষাকালে বৌলাই নদীর ও বৃষ্টির পানি সহজেই নিষ্কাশন হতো। মাহতাবপুর গ্রামে দু’পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে নির্মাণকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র দ বন দ ব র প রকল প র ক জ বন ধ

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ সফরে আসছেন তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থার প্রধান

বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে আলোচনার জন্য তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থার সচিব অধ্যাপক হালুক গরগুন ৮ জুলাই ঢাকায় আসছেন। এক দিনের সফরে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

তুরস্ক থেকে একাধিক কূটনৈতিক সূত্র সোমবার প্রথম আলোকে জানিয়েছে, দুই দেশের প্রতিরক্ষাবাহিনীর মাঝে সহযোগিতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণ, গবেষণা, কেনাকাটা, বিনিয়োগ ইত্যাদি নানা বিষয়ে অধ্যাপক হালুক গরগুন আলোচনা করতে পারেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের অধীনে সরাসরি কাজ করে প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থা (ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি এজেন্সি–এসএসবি)। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুরস্কের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক—বিশেষ করে প্রশিক্ষণ, গবেষণার মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর বিকাশ ও বিবর্তনের বিষয়ে এসএসবি মূল ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুরস্কের সমরাস্ত্র কেনাকাটা এবং বিনিয়োগের দেখভাল করে এসএসবি।

তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসার গুল বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার রাজনৈতিক দিকটি দেখভাল করেন। আর তুরস্কের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার কৌশলগত বিষয়টির দায়িত্বে রয়েছেন হালুক গরগুন। কারণ, এসএসবি প্রতিরক্ষাশিল্প নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরাসরি ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্পের জন্য প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা। এটি সমরাস্ত্রের নকশা ও উৎপাদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কাছে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়।

বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা বলছেন, সম্প্রতি ঢাকা–আঙ্কারা সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে তুরস্ক নানা ধরনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দিয়ে থাকে। গত সাত বছরে বারাক্তার টিবি–২ ড্রোনসহ অন্তত ১৫ ধরনের আধুনিক সমরাস্ত্র কিনেছে বাংলাদেশ।

মূলত ২০১৮ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে সমরাস্ত্র কেনাকাটা এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এর পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তির আরও কিছু সমরাস্ত্র কেনাকাটা, বাংলাদেশে সমরাস্ত্রের কারখানা স্থাপন ও বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর নিয়েও আলোচনা চলছে। দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দীর্ঘ মেয়াদে আরও শক্তিশালী হওয়ার নানা ইঙ্গিত আছে বলে মনে করেন ঢাকার কূটনীতিকেরা।

গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ওমের বোলাত। সফরকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। প্রধান উপদেষ্টা তাঁকে বাংলাদেশে প্রতিরক্ষাশিল্প স্থাপন, প্রযুক্তি স্থানান্তর, বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

উত্তরে ওমের বোলাত বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্ক টেক্সটাইল শিল্প ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৈচিত্র্যময় করতে পারে। প্রতিরক্ষাশিল্প, স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধশিল্প এবং কৃষিযন্ত্র খাতে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে।

সমরাস্ত্রবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে আঙ্কারার কাছ থেকে কোবরা আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার ও স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে ঢাকা।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতার আওতায় তুরস্ক নির্মিত মাইন থেকে সুরক্ষাকারী যান, সাঁজোয়া যান এবং বহুমাত্রিক রকেট প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কিনেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত কামানের গোলা বিক্রির বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের কাছে সামরিক হেলিকপ্টার ও ট্যাংক বিক্রিতে আগ্রহী তুরস্ক। তুরস্কের একটি কোম্পানি বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে শেল বানানোর প্রযুক্তি দিয়েছে। এ ছাড়া নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের টহল নৌযান তৈরির জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রস্তাব করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে তুরস্ক থেকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সমরাস্ত্র কিনেছে। ওই বছর গ্রাউন্ডেড সার্ভিলেন্স রাডার, কৌশলগত সাঁজোয়া যান কোবরা ২-সহ কয়েক ধরনের সাঁজোয়া যান ও বহনযোগ্য জ্যামার কেনা হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে অফশোর ক্রেন, সাঁজোয়া যান এবং অ্যাম্বুলেন্স, মিসাইল লঞ্চিং সিস্টেম, ওরলিকন স্কাই গার্ড রাডার সিস্টেমসহ নানা ধরনের সমরাস্ত্র কেনা হয়েছে।

আরও পড়ুনতুরস্ক থেকে সমরাস্ত্র কেনা বেড়েছে২৭ ডিসেম্বর ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ