‘আমি চাকরিজীবনে কারও ক্ষতি করিনি। বিভিন্ন সাংবাদিকের উপকার করেছি। বিভিন্ন সময় তিনজন সাংবাদিক আমাকে নিয়ে লিখেছেন। আল্লার কী খেল, তিনজনই অকালে মারা গেছেন।’

রাজধানীতে ৩৬টি ফ্ল্যাট থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পরিদর্শক কাজী আমীর খশরু এই বক্তব্য দিয়েছেন। দ্রুত তাঁর কাছে তিন সাংবাদিকের নাম জানতে চাওয়া হয়। তিনিও সঙ্গে সঙ্গে তিনজনের নাম জানালেন।

তাৎক্ষণিক খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই তিন সাংবাদিকই জীবিত আছেন। একজন বর্তমান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, আরেকজন একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক। অন্যজন একটি দৈনিকে কর্মরত। এ তথ্য জানালে কাজী আমীর খশরু কিছুটা নমনীয় হন। তাঁর সম্পদপ্রাপ্তির নিজস্ব ব্যাখ্যাও দেন।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, উপইমারত পরিদর্শক হিসেবে চাকরিতে যোগদানের সময় আমীর খশরুর বেতন স্কেল ছিল ১ হাজার ৪৮০ টাকা। মাসে মূল বেতন ছিল প্রায় চার হাজার টাকা। চাকরিজীবনের ৩২ বছরে নানা সময় নানা অভিযোগে এক যুগেরও বেশি সময় তিনি সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন। বর্তমানে তাঁর বেতন প্রায় ৫০ হাজার টাকা।

রাজধানীতে আমীর খশরু ও তাঁর স্ত্রীর নামে ৩৬টি ফ্ল্যাট আছে। উত্তরায় ৩০ কোটি টাকা দামের দুটি প্লট আছে। সব মিলিয়ে শতকোটি টাকার সম্পদ তাঁর। প্রাপ্ত অভিযোগ ও কাগজপত্র যাচাই করেছে সমকাল। তথ্য সংগ্রহ করেছে সরেজমিন। 

বাড্ডা পুনর্বাসন প্রকল্পের ১০ নম্বর রোডের ৭৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ছয়তলা বাড়িটির নাম ফারিয়া নিশাত কুঞ্জ। আনুমানিক পাঁচ কাঠা আয়তনের কর্নার প্লটের বাড়িটির কাজ শেষ হয়েছে বছরখানেক আগে। নিচতলায় পার্কিং, গার্ডরুম, একটি ফ্ল্যাট ছাড়াও অন্য তলাগুলোতে রয়েছে দুটি করে ১১টি ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দেওয়া। আমীর খশরু মাঝেমধ্যে সেখানে যান। ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী মো.

কালাম ও পার্শ্ববর্তী ভবনের বাসিন্দা জানান, এই বাড়ির মালিক আমীর খশরু; রাজউকে বড় চাকরি করেন। এ এলাকায় তাঁর আরও বাড়ি আছে বলেও জানান তারা।

সেই সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাড্ডা পুনর্বাসন প্রকল্পের ১১ নম্বর রোডের ৬৯ ও ৭১ নম্বর হোল্ডিংয়ে দুটি প্লটেরও মালিক এই রাজউক কর্মচারী। তিন কাঠা আয়তনের দুটি প্লটকে এক করে সেখানে ছয়তলা আরেকটি বাড়ি বানিয়েছেন তিনি। বাড়িটিতে গাড়ি ঢোকা ও বের হওয়ার জন্য রয়েছে দুটি বড় ফটক। প্রতিটি ফ্ল্যাটে রয়েছে তিনটি বেডরুম, তিনটি বারান্দা, ড্রইং-ডাইনিং, চারটি বাথরুম ও কিচেন কেবিনেট। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন প্রায় দুই হাজার বর্গফুট। 

ভবনের এক নিরাপত্তাকর্মী ও একাধিক বাসিন্দা জানান, এ বাড়ির তিনটি ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিয়েছেন আমীর খশরু। তারা বলেন, একেকটি ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। ভবনের নিচতলায় পার্কিং, গার্ডরুম ও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ভবনে ফ্ল্যাটের সংখ্যা ১১। 

আমীর খশরু সমকালকে বলেন, ‘এই দুটি প্লটের মালিক আমার স্ত্রী। যখন বাড্ডা পুনর্বাসন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, তখন ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে আমি কয়েকটি অ্যাওয়ার্ড (মালিকানাস্বত্ব) কিনে নিই। তখন একেকটি অ্যাওয়ার্ড ৪০-৫০ হাজার টাকায় কেনা যেত। পরে ডেভেলপারকে দিয়ে বাড়ি করি এবং অর্ধেক ফ্ল্যাট পাই।’ 

বাড্ডা পুনর্বাসন প্রকল্পের ১২ নম্বর রোডের ৬৫ নম্বর হোল্ডিংয়ে তিন কাঠার ওপর আরেকটি ছয়তলার বাড়ির সঙ্গে আমীর খশরুর নাম জড়িয়ে আছে। এটিরও প্রতি তলায় দুটি করে ফ্ল্যাট। তবে এই বাড়ির মালিকের নাম আসলাম বলে জানান বাড়ির একজন নিরাপত্তাকর্মী। আমীর খশরুর একজন ঘনিষ্ঠ সহকর্মী জানান, খশরুর ভাগনে এই আসলাম। বাড়িটির মূল মালিক তিনি নিজেই। বোন ও ভাগনের নামে এ বাড়ি করেছেন তিনি।

এ বাড়ির বিষয়ে আমীর খশরু বলেন, ‘আমার আত্মীয়স্বজনের কার কী সম্পত্তি আছে, তা আমি জানি না।’

পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ৭৪১ নম্বর হোল্ডিংয়ে ১৭টি ফ্ল্যাটের ছয়তলা বাড়ি রয়েছে আমীর খশরুর। এটি তাঁর প্রথম করা বাড়ি। আনুমানিক পাঁচ কাঠার ওপর গোলাপি, লাল ও আকাশি রং করা বাড়িটিতে একসময় তিনি নিজেই থাকতেন। 

বাড়ির এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, বাড়ির মালিক খশরু তেমন একটা আসেন না। তবে একটি ফ্ল্যাটে তাঁর এক আত্মীয় থাকেন। আর ভাড়া তুলে মালিকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। 

কাজী আমীর খশরু সমকালকে বলেন, পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বাড়িটিই কেবল তাঁর নামে। তাঁর মা পৈতৃক সূত্রে সেখানে এক কাঠা জমি পেয়েছিলেন। আরও কয়েক কাঠা কিনে পারিবারিকভাবে বাড়িটি তিনি তৈরি করেছেন।

উত্তরায় দুই প্লট
উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডে ২২/এ নম্বর হোল্ডিংয়ে আমীর খশরুর রয়েছে পাঁচ কাঠার একটি প্লট। গত ৩০ এপ্রিল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সেখানে টিনশেড বানিয়ে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সামনে তিনটি দোকান। 

পোশাক দোকানি অজন্তা সেলাইঘরের স্বত্বাধিকারী আবদুস সালাম সমকালকে নিশ্চিত করেন, কাজী আমীর খশরু নামে রাজউকের এক ‘কর্মকর্তা’র কাছ থেকেই দোকান ভাড়া নিয়েছেন। তিনি জানান, দোকানগুলো ছাড়াও পেছনে আরও কিছু ভাড়াটিয়া আছেন। সব মিলিয়ে মাসে লাখ টাকার মতো ভাড়া ওঠে। মাস শেষে খশরু নিজে এসে ভাড়া নিয়ে যান। স্থানীয়রা জানান, প্লটটির বাজারমূল্য অন্তত ১৫ কোটি টাকা।

উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৮ নম্বর রোডের ৪১ নম্বর প্লটের মালিকও এই আমীর খশরু। কর্নারের এই প্লটটিতেও কিছু দোকানপাট বানিয়ে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। দোকানগুলো থেকে মাসে লক্ষাধিক টাকা ভাড়া পান তিনি।

একটি দোকানের মালিক নিশ্চিত করেন, এটিও আমীর খশরুর। তিনি জানান, মাস শেষে প্লটের মালিক ভাড়া নিয়ে যান। স্থানীয়রা জানান, এই প্লটটির বর্তমান বাজারমূল্য অন্তত ১৫ কোটি টাকা।

রাজউক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোটায় পূর্বাচলে আরেকটি প্লট বরাদ্দ পেয়েছিলেন আমীর খশরু। কিন্তু বিভিন্ন অভিযোগে বরখাস্ত থাকার কারণে রাজউক তাঁকে প্লটের আইডি দেয়নি। 

এ প্লটের বিষয়ে আমীর খশরু বলেন, ‘একটি প্লট আমার মায়ের নামে।’ ভাড়াটিয়ারা বলছেন, অন্য প্লটটিও আপনার। আপনি ভাড়া তোলেন। এর জবাবে তিনি কিছু বলেননি। 

রাজউকে একচেটিয়া প্রভাব
বিভিন্ন প্লটের ফাইল আটকে রেখে বাণিজ্য করার অভিযোগে ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে যৌথ বাহিনীর হাতে আটক হন আমীর খশরু। সে সময় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর নামে একটি মামলা করে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ওই মামলা থেকে দায়মুক্তি পান তিনি। তখন তাঁর আইনজীবী ছিলেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। আমীর খশরু এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পরে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে খশরুর বিরুদ্ধে দুদক ফের মামলা করে। এবার তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে রাজউক। বর্তমানে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আছে।

১৯৯৩ সালে রাজউকে চাকরিতে যোগদানের পর থেকে রাজউকের বিএনপিপন্থি শ্রমিক ইউনিয়নে সক্রিয় ছিলেন। একসময় ইউনিয়নের সভাপতিও হন। ওই সময় রাজউকে ছিল তাঁর একচেটিয়া প্রভাব। গত ৬ আগস্ট দলবল নিয়ে রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ছিদ্দিকুর রহমানকে চাপ দিয়ে ইন্সপেক্টর পদ নেওয়ার অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে। তবে রাজউক এখনও তাঁকে কোনো সুনির্দিষ্ট জায়গায় পদায়ন করেনি।

এর পর রাজউকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে গত অক্টোবরে তাঁকে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে বদলি করা হয়। তিন মাস পর আমীর খশরু আবার রাজউকে বদলি হয়ে আসেন। তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমাকে অন্যায়ভাবে বদলি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ভুল বুঝতে পেরে আবার আমাকে ফিরিয়ে এনেছেন।’

এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যেভাবেই তিনি ব্যাখ্যা করুন না কেন, রাষ্ট্রের একজন সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা হয়েও বৈধ আয়ে এত সম্পত্তির মালিক হওয়া সম্ভব না। এটা খুবই সোজাসাপ্টা ব্যাপার, রাজউকে অনিয়ম-দুর্নীতি আছে। তার ওপর তিনি রাজউকে শ্রমিক রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় তিনি এসব সম্পত্তির মালিক হয়েছেন, বোঝাই যায়। রাজউকের উচিত হবে, এটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনও তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে। এটা না হলে দুর্নীতির অসুস্থ সংস্কৃতি থেকে আমরা বের হতে পারব না।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জউক কর মকর ত র জউক র সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

সংবেদনশীল না হলে কেউ ভালো শিল্পী হতে পারে না: জুয়েল আইচ

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রায়ই তরুণদের দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ভুগতে। ফলে অনেক সময় যথেষ্ট মেধা, আগ্রহ ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারেন না। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা জোগাতে প্রথম আলো ডটকম ও প্রাইম ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পডকাস্ট শো ‘লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হকের সঞ্চালনায় একাদশতম পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। আলোচনার বিষয় ছিল ‘শিল্প, মুক্তিযুদ্ধ এবং মানবতার সংমিশ্রণে গঠিত এক অনন্য লিগ্যাসি’।

‘মানুষ তার আশার সমান সুন্দর, বিশ্বাসের সমান বড় এবং কাজের সমান সফল। কাজই মুক্তি। তবে আশাও বড় রাখতে হবে। আশা না থাকলে কাজ হবে না।’ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেন জুয়েল আইচ। পডকাস্ট শোর এ পর্ব প্রচারিত হয় গতকাল শনিবার প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে।

পডকাস্টের শুরুতেই সঞ্চালক জানতে চান, মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে প্রথম যেদিন জাদু দেখালেন, সেই অনুভূতি কেমন ছিল?

উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সব বাদ দিয়ে যুদ্ধে যোগ দিই। আমরাই খুব সম্ভবত প্রথম পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করি। আমি শৈশব থেকেই জাদু দেখাই। তবে মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে জাদু দেখানোর সেই অনুভূতিটি ছিল একেবারেই ম্যাজিক্যাল।’

প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, শিল্পকে সাহস করে অস্ত্রতে পরিণত করার এই আত্মবিশ্বাস কোথা থেকে এল?

জুয়েল আইচ বলেন, ‘এটা আত্মবিশ্বাস নয়। আমি অসম্মান সহ্য করতে পারি না। আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখছিলাম, তারা (পাকিস্তান) আমাদের বিভিন্নভাবে অসম্মান করে আসছে। কখনো গানে, কখনো ছবি এঁকে কিংবা কবিতার ভাষায় আমরা সব সময় এর প্রতিবাদ করে এসেছি। এভাবে করেই শেষ পর্যন্ত আমরা মুক্তিযুদ্ধে নেমে গেলাম।’

জুয়েল আইচকে কেউ বলেন ম্যাজিশিয়ান, আবার কেউ বলেন মিউজিশিয়ান। তবে জুয়েল আইচ একজন দার্শনিকও বটে। জাদুর মোহনীয়তা আর বাস্তবতার যে রূঢ় চিত্র—এই দুটো আপনার জীবনে কেমন প্রভাব ফেলেছে?

সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘বাস্তবতাকে আমরা বলে থাকি “কঠিন” আর স্বপ্ন তো আমরা আকাশসমান ভাবতে পারি। একদম রংধনুর মতো সাত রং। এই দুটোকে যদি কেউ আয়ত্ত না করতে পারে, তবে তার জীবন কিন্তু সেখানেই শেষ। সে বেঁচে থাকবে কিন্তু মরার মতো।’ তিনি বলেন, ‘সে জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দরকার। যেমন আপনি কোনোভাবেই আমাকে দুঃখী বানাতে পারবেন না। আমি দুঃখ পাই না, তবে বারবার আমাকে খ্যাপাতে থাকলে আমি রুখে দাঁড়াই।’

জুয়েল আইচ কখনোই পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ছাড়া স্টেজে ওঠেন না। সঞ্চালক জানতে চান, এর পেছনে কারণ কী?

জুয়েল আইচ বলেন, প্রস্তুতি ছাড়া কোনো কাজ সুন্দরমতো হয় না। প্রস্তুতি ছাড়া যদি কেউ কিছু করে, তবে সেগুলো অনেক নিম্নমানের হবে। তিনি বলেন, ‘আমি একটি বাঁশি দিয়ে সব রাগ বাজাতে পারি। এটা কি এক দিনেই সম্ভব!’

আপনার পারফরম্যান্সের সময় আপনি মাঝেমধ্যে নিঃশব্দ হয়ে যান। যেখানে কোনো উদ্যম নেই। এই ‘সাইলেন্স’-এর কারণটা কী?

সঞ্চালক জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, শব্দের চেয়ে নিঃশব্দের ভাষা বেশি গভীর। একটি পেইন্টিং, যেখানে কোনো শব্দ থাকে না কিন্তু কত কিছু বলে দেয়! দেখবেন কেউ অনেক খেপে গেলে নীরব হয়ে যায়। আসলে শব্দে যা বলা যায়, নিঃশব্দে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব।

বর্তমানের এই ডিজিটাল যুগে সবকিছুই হাতের নাগালে, এমনকি জাদুও। জাদু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আসার পর এর আবেদন কিছুটা কমে যাচ্ছে কি না? জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, খালি চোখে দেখলে তা আসলেই কমে যাচ্ছে। কারণ, এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে জাদুগুলো দেখানো হচ্ছে, তা দেখে মানুষ বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘তারা ভাবছে, আমরা আগে যেসব জাদু দেখেছি, এগুলো তো তার থেকেও বিস্ময়কর। কিন্তু তারা হয়তো বুঝতে পারছে না, এখন সবকিছুর সঙ্গে মিশে গেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।’

সঞ্চালক এরপর প্রশ্ন করেন, আপনি একসময় ‘পালস স্টপিং’ ধরনের ইলিউশন বন্ধ করেছিলেন। এর পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল?

জুয়েল আইচ বলেন, ‘এই পালস স্টপিংয়ের মাধ্যমে আমি পুরো দেশজুড়ে এক বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলাম। দলে দলে মানুষ এটি দেখতে আসত। কিন্তু এসব দেখে মানুষ অনেক বেশি আতঙ্কিত হতো, অনেক মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ত। একবার একজন অনেক বড় পালোয়ান এটি দেখতে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। সেদিন শো শেষ করেই আমি আমার টিমকে বলি, এই ম্যাজিক আর হবে না। কারণ, এই ম্যাজিক এত এত মানুষকে ডেকে আনছে বটে কিন্তু এটি মাত্রা অতিক্রম করে ফেলছে। যা মোটেও ঠিক নয়।’

প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, তাহলে কি একজন শিল্পীকে সংবেদনশীলও হতে হয়?

‘অবশ্যই।’ জুয়েল আইচ বলেন, একজন শিল্পীকে অবশ্যই সংবেদনশীল হতে হবে। সংবেদনশীল না হলে তিনি ভালো শিল্পী হতে পারবেন না।

আপনি যেমন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতাদের সামনে পারফর্ম করেছেন, তেমনি এমন শিশুদের জন্যও জাদু দেখিয়েছেন, যারা কখনো টিকিট কিনে শো দেখতে পারে না। আপনার চোখে আসল মর্যাদা কোথায়—বৃহৎ মঞ্চে, নাকি একটিমাত্র বিস্মিত মুখে?

সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে জুয়েল আইচ বলেন, ‘আসলে মঞ্চ ব্যাপার নয়। আমি আমার জাদুতে বিস্মিত এবং মুগ্ধ হয়ে থাকা দেখতে ভালোবাসি। শুধু বিস্ময় নয়, বিস্ময়ের সঙ্গে মুগ্ধতা আমার ভালো লাগে।’

আরও পড়ুননীতি আর মূল্যবোধ শক্ত থাকলে কেউ থামাতে পারবে না: রুবাবা দৌলা১২ অক্টোবর ২০২৫

পডকাস্টের শেষ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, আমরা আরেকজন জুয়েল আইচ কবে পাব?

মুচকি হেসে জুয়েল আইচ বলেন, ‘যখন সেই উদ্যম নিয়ে কেউ কাজ করবে, ঠিক তখন। সে হয়তো আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে। শুধু ম্যাজিকে নয়, সব দিক দিয়েই।’

আরও পড়ুনবাবা প্রথমে আমাকে অফিস সহকারীর কাজ দিয়েছিলেন: হাতিলের চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান০৫ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এপস্টেইনের নথি প্রকাশের পক্ষে হঠাৎ কেন অবস্থান নিলেন ট্রাম্প
  • এশিয়ার প্রভাবশালী নারী ব্যবসায়ী কারা, কীসের ব্যবসা তাঁদের
  • করদাতা মারা গেলেও যে কারণে কর দিতে হয়, কীভাবে দেওয়া হয়
  • ৩ কোটি টাকা, ব্যক্তিগত উড়োজাহাজসহ আরও যা যা পান একজন মিস ইউনিভার্স
  • গায়িকা থেকে বিধায়ক, মৈথিলীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসারী চমকে ওঠার মতো
  • সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিলেন উপদেষ্টার এপিএস
  • বিএনপি নেতা খুন: অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী ফেসবুকে লিখলেন ‘আউট’
  • সাজা হলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ আবেদন করা হবে
  • সূর্যের সামনে স্কাইডাইভার, তৈরি হয়েছে এক অলীক আলোকচিত্র
  • সংবেদনশীল না হলে কেউ ভালো শিল্পী হতে পারে না: জুয়েল আইচ