‘জবের বন্যা’ বনাম হাজার হাজার ছাঁটাই ও বুলডোজারতন্ত্র
Published: 18th, May 2025 GMT
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সামিট নিয়ে তুমুল উচ্ছ্বাস দেখা গেল। ৪৮০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিও পাওয়া গেল। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেই ফেললেন, ‘জবের বন্যা’ বয়ে যাবে। বিদেশি বিনিয়োগ আনতে সরকারের এই ‘স্মার্ট’ উদ্যোগ দেখে সবাই ভীষণ খুশি। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, সরকারি ‘জবের বন্যা’র প্রতিশ্রুতির সঙ্গে মাঠের বাস্তবতার তীব্র ফারাক থাকে, বরাবরই।
এই যে বিদেশি বিনিয়োগ মানেই ‘জবের বন্যা বয়ে যাবে’, এই বাণী তো বিগত আমলের বিডার (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) চেয়ারম্যানও দিয়েছিলেন; টাকাপয়সা খরচ করে প্রচারণাও চালিয়েছিলেন; বিপুলসংখ্যক কৃষক উচ্ছেদ করে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলও বানিয়ে ফেলেছিলেন। উদ্দেশ্য একটাই ছিল, বিদেশিদের আকৃষ্ট করা। তখনকার বিডা আর এখনকার বিডার মধ্যে দর্শনগত জায়গায় কোনো পার্থক্য আছে?
এ ধরনের ‘গরিব মারা’র কাঠামোতে শুধু বিদেশি বিনিয়োগ এলেই মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটবে? সেটা হলে তো হাসিনার আমলেই হতো। এগুলো তো সেই পুরোনো অর্থনৈতিক বন্দোবস্তের চিরচেনা মডেল। বৃহৎ কোম্পানির মুনাফা, ধনীর সম্পদ বৃদ্ধি আর গরিবের আরও গরিব হওয়া।বিদেশি বিনিয়োগের প্রচলিত কাঠামোটি কিন্তু আগাগোড়াই পাবলিকের সম্পদ ‘কুক্ষিগত’ করার একটি মডেল। বহুদিনের ‘দরিদ্র-অবান্ধব’ ও ‘শ্রমিক-বৈরী’ কাঠামোতে এ ধরনের ‘টপ-ডাউন’ বিনিয়োগ অর্থনীতির নিচুতলায় পরিবর্তন ঘটেনি কখনোই। তাই লাখ লাখ চাকরি তৈরি হবে, এমন প্রতিশ্রুতি শুনলেই আওয়ামী লীগ আমলের সেই মিথ্যা প্রচারণাগুলোই মনে পড়ে যায়। ‘পদ্মা সেতু হলে খুলনায় লক্ষ চাকরি তৈরি হবে’, ‘১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে ১ কোটি কর্মসংস্থান হবে’, এসব ফাঁকা বুলি আমরা ভুলিনি। বাস্তবে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে এক হাজার চাকরিও তৈরি হয়নি; খুলনার খালিশপুর এখন বেকারের এলাকা।
এগুলো কিন্তু অর্থনৈতিক অঞ্চল মডেলের দীর্ঘদিনের বাস্তবতা। প্রথমে জমি কেড়ে নেয়, এরপর বিনিয়োগ হয় না; এরপর ‘জোন’গুলো বাতিল হয়, অথচ তত দিনে শহরে চলে এসেছেন হাজারো কৃষক—নগরের নতুন হকার; নতুন অটোরিকশাওয়ালা—সবার ঘৃণার পাত্র।
কারখানা বন্ধ: সরকারের দায় নেই
চাকরি তৈরি নিয়ে সরকারের অতি উচ্ছ্বাস সমস্যাজনক মনে হওয়ার কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ আছে। এই মুহূর্তে দেশের প্রতিটা শিল্পাঞ্চলে একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছে; নিয়মবহির্ভূতভাবে শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে। কিন্তু এই চরম সংকট মোকাবিলা করতে ‘অভ্যুত্থানের সরকার’ কোনো উদ্যোগ নিয়েছে? একদিকে ৩৫ লাখ চাকরির গল্প শোনানো হচ্ছে, আরেক দিকে গত ৮ মাসে বন্ধ হয়েছে ১১৩টি কারখানা। কাজ হারিয়েছেন ৯৬ হাজার শ্রমিক (এর মধ্যে আছে বেক্সিমকোর ২৪টি, কেয়া গ্রুপের ৪টি, টিএনজেডের ৪টি কারখানা। এস আলম গ্রুপের ৬টি কারখানা বন্ধের পর বেকার হয়েছেন অর্ধলক্ষ মানুষ)।
এসব কলকারখানা বাঁচাতে কী করেছে সরকার? মালিকানা বদলের সঙ্গে সঙ্গে নির্বিচার শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে, এই সত্য আড়াল করে শ্রমিকদের আন্দোলনকে কি ‘ষড়যন্ত্র’ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়নি? শ্রমিক তাঁর কর্মজীবনের সবটুকু দেবেন কারখানাকে, তারপর হরেদরে ছাঁটাই হবেন, বকেয়া বেতনের জন্য রাস্তায় দাঁড়াবেন, অথচ দেশের শ্রম মন্ত্রণালয়, শ্রমসচিব, শ্রম আদালত, শ্রম ভবন—কারও কোনো দায়
থাকবে না? ছাঁটাই হওয়া শ্রমিক যখন আন্দোলন করবেন, ‘বীরপুরুষ’ যৌথ বাহিনী তখন গুলি চালাবে, পরিবার বাঁচাতে শ্রমিক যখন ধারদেনা করে একটা অটোরিকশা কিনে রাস্তায় নামবেন, বীরপুরুষ সিটি করপোরেশন তখন হাসিনার সেই চিরচেনা হলুদ বুলডোজারগুলো নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
এসব কারখানা চালু রাখতে কী করা যেত? কারখানা সচল রাখতে, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করতে, সরকার থেকে দ্রুত প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার নজির তো বাংলাদেশে আছেই। একজন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া কি খুব কঠিন কাজ? সিটি করপোরেশনের মতো একটি বৃহৎ ও জটিল পরিসরে প্রজ্ঞাপন দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার বেলায় তো মনে হয়নি এটা কঠিন কাজ।
বিনিয়োগ সামিট সফল করতে বিপুল আয়োজন হলো; শত শত বিদেশি ব্যবসায়ীকে ঢাকায় আনা হলো; খাওয়ানো–ঘোরানো হলো; বিপুল খরচও হলো। চাকরি তৈরি করতে এই আয়োজন জরুরি ছিল অবশ্যই। তাহলে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে সচল কর্মসংস্থান চালু রাখা জরুরি ছিল না? কারখানা রেডি আছে, ভবন আছে, মেশিন আছে, দক্ষতা আছে, অর্ডার আছে—এই পরিস্থিতিতে যোগ্য প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে কারখানাগুলো বাঁচানো হলো না কেন?
বিদেশি বিনিয়োগ কবে আসবে, কবে কারখানা বসবে, অফিস বসবে, কর্মসংস্থান তৈরি হবে, কবে প্রশিক্ষণ হবে—ভবিষ্যতের অনিশ্চিত বিনিয়োগের ডামাডোলের চেয়ে ইতিমধ্যে তৈরি হওয়া অবকাঠামো ও লাখো কর্মসংস্থান রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া সরকারের প্রধান কাজ হওয়ার কথা ছিল না? কারখানায় প্রশাসক দেবেন না, কারখানা বাঁচাবেন না আর শ্রমিক চাকরি হারিয়ে অটোরিকশা চালাতে গেলে, হকারি করতে গেলে, অনির্বাচিত প্রশাসক দিয়ে বুলডোজার চালাবেন?
ইপিজেড মডেলের ঝামেলা
বিদেশি বিনিয়োগনির্ভর উৎপাদনের মডেল যে দারিদ্র্য দূর করতে পারে না, তা বহু আগের থেকে আলোচিত; অর্থাৎ বিনিয়োগ এলেই হবে
না, শ্রমিকের জীবনমান বাড়ল কি না, এই প্রশ্নের সামনে আমাদের বারবার দাঁড়াতে হবে। গত এক দশকের অভিজ্ঞতা বলছে, আমাদের ৪০ লাখ পোশাককর্মী একটুও সঞ্চয় করতে পারেন না; ওভারটাইম ছাড়া মাসিক খরচের জোগান দিতে পারেন না এবং ৯০ শতাংশ শ্রমিকই ঋণগ্রস্ত।
এ ছাড়া আছে অটোমেশনের বাস্তবতা। বিদেশি বিনিয়োগ আসছে, কারখানা হচ্ছে, ভারী অ্যাসেম্বলি লাইন বসছে, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেই তুলনায় কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। বাংলাদেশে হুন্দাইয়ের বিনিয়োগ নিয়ে মাতামাতি কম হলো না। শেষে দেখা গেল, চাকরি হয়েছে মাত্র ৩০০ শ্রমিকের (কারণ, ‘অ্যাসেম্বলি লাইন’ পুরাটাই অটোমেশন করা)।
গাজীপুরের শত শত হকার এবং অটোরিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলে দেখুন, তাঁরা প্রায় সবাই একসময় সোয়েটার কারখানার শ্রমিক ছিলেন। মেশিনের প্রকোপে চাকরি হারিয়েছেন। তার মানে, এই মেশিনের জমানায় শুধু বিদেশি বিনিয়োগ এলেই লাখে লাখে চাকরি তৈরি হয় না।
দেশি কারখানার ভর্তুকি বনাম বিদেশি কোম্পানির মুনাফা
বিদেশি বিনিয়োগ তো এমনি এমনি আসে না। বিনিয়োগ আনতে কোম্পানিকে আকৃষ্ট করতে হয়। বিডার চেয়ারম্যান নিজেই বললেন, বাংলাদেশ থেকে ব্যবসার রিটার্ন ভীষণ ভালো! অন্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। তো ‘রিটার্ন’ ভালোর মানে হলো, বিদেশিরা দান–খয়রাত করতে আসবেন না, ডলার খাটাবেন এবং ডলার নিয়েই ফেরত যাবেন।
আমরা ভুলিনি, বছরে মাত্র ২০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয় বলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ২৬টি পাটকল, ৯টি চিনিকল। রেডিমেড কারখানা ছিল, দক্ষ শ্রমিক ছিল, হাজারটা মেশিন ছিল, শ্রমিকের কলোনি ছিল—এত আয়োজন থাকার পরও মাত্র ২০০ কোটি টাকার অজুহাতে আজ পর্যন্ত চালু হলো না এতগুলো কারখানা। শতকোটি টাকার ‘রেডিমেড’ অবকাঠামো ও লাখখানেক দক্ষ শ্রমিককে ছুড়ে ফেলা দেওয়া হলো (তাঁরা হয়তো কেউ হকার হয়েছেন, কেউ অটোরিকশাওয়ালা)।
অথচ পাটকল–চিনিকলে ভর্তুকি মানে দেশের টাকা দেশে থাকা। এই ভর্তুকির টাকা দেশের অর্থনীতিতেই ‘সার্কুলেট’ করত; পুনর্বিনিয়োগ হতো। কারখানা শ্রমিকের দৈনন্দিন খরচ ঘিরে গড়ে উঠেছিল লাখো মানুষের শক্তিশালী স্থানীয় অর্থনীতি; শত রকমের দোকানপাট; ভাতের হোটেল, আসবাবের দোকান, পোশাকের মার্কেট। একটা গোটা শিল্পনগরীর হাজারটা জীবিকার ভিত্তি ছিল ওইটুকু সরকারি ভর্তুকি।
তো এখন আমরা কী করছি? বিদেশিদের লোভ দেখাচ্ছি, ‘আসো, আসো, আমরা সবচেয়ে সস্তা মানুষ নিয়ে বসে আছি, তোমরা আমাদের খাটিয়ে বিরাট মুনাফা নিয়ে যাও।’ তো মুনাফা যে নেবে, প্রবাসী শ্রমিকের ঘামঝরানো ডলারের রিজার্ভ থেকেই তো নেবে। পাটকলের ভর্তুকির টাকার চেয়ে বহুগুণ বেশি টাকা তো বিদেশিরাই নিয়ে যাবেন, নাকি? দেশের ভর্তুকির টাকা দেশে থাকলে খুব খারাপ আর বিদেশি কোম্পানি নিয়ে গেলে খুব ভালো। এটাকেই বলে ‘স্মার্ট’ বিনিয়োগ?
স্থানীয় বিনিয়োগ বনাম বিদেশি বিনিয়োগ
বিদেশি বিনিয়োগের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার বিপদটা বুঝতে হলে একটু ভারতের অর্থনীতির দিকে তাকানো দরকার। নব্বইয়ের শেষে ভারতজুড়ে গড়ে উঠেছিল শত শত ‘কল সেন্টার’। লাখ লাখ চাকরি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ১৫ বছরের মধ্যেই ধস নামল ইন্ডাস্ট্রিতে। একপর্যায়ে ভারতের ৭০ শতাংশ কল সেন্টার ফিলিপাইন আর পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে স্থানান্তরিত হয়। অথচ এই বিশাল কর্মী বাহিনীর চাহিদার ওপর নির্ভর করেই তৈরি হয়েছিল ভারতের অটোমোবাইল শিল্প ও আবাসন খাত।
কল সেন্টারগুলো বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি, ফ্ল্যাট, কম্পিউটারসহ সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের ব্যবসাতেও ধস নামল। ভারতের সরকারি তথ্যই বলছে, গত কয়েক বছরে শিক্ষিত মধ্যবিত্তের সঞ্চয় তো কমেছেই, উল্টো ঋণগ্রস্ততা বেড়েছে। পশ্চিমা চাহিদানির্ভর ভারতীয় আইটি খাত হরেদরে ছাঁটাই করছে শিক্ষিত গ্র্যাজুয়েটদের।
এমনকি জাতিসংঘের ‘ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’–সংক্রান্ত প্রতিবেদনও বলছে, নব্বই দশকের সেই স্বর্ণযুগ আর নেই। সস্তা শ্রমের দেশগুলো রপ্তানি বাজারে ঢুকছে, প্রতিযোগিতা বেড়েছে, পশ্চিমা বিনিয়োগের ওপর ভিত্তি করে দেশের অর্থনীতি চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে আমাদের বিডার নিজস্ব তথ্যই বলছে, বাংলাদেশে ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৫ হাজার কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগের বিপরীতে কর্মসংস্থান হয়েছে মাত্র ৫ লাখ। অন্যদিকে মোট ১০ হাজার কোটি ডলার স্থানীয় বিনিয়োগের বিপরীতে কর্মসংস্থান হয়েছে ২৮ লাখ; অর্থাৎ বিদেশি বিনিয়োগে চাকরি তৈরির হার তিন গুণ কম।
কিন্তু স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের কোনো মর্যাদা আছে এই দেশে? আমাদের ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলোর বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থান তৈরি করার সম্ভাবনা ছিল, অথচ বৈরী পরিবেশ এবং রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার অভাবে কেউ টিকে থাকতে পারছে?
এই দেশে কৃষিযন্ত্রের একটা বিশাল বাজার আছে। প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার। এর ৫০ শতাংশই তৈরি হয় দেশে; বাকিটা আমদানি হয়। ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, হারভেস্টার, রিপার—সবই বানাতে পারেন স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা। এই খাতের উদ্যোক্তারা দীর্ঘদিন ধরে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কসুবিধা ও প্রণোদনা চাইছেন, পাননি। ভারতীয় কৃষিযন্ত্রে ভরে গেছে বাজার।
সিন্ডিকেটের দাপটে দেশের ৩০ লাখ প্রান্তিক পোলট্রিখামারি এখন নিঃস্ব হওয়ার পথে (দেশের বড় কোম্পানিগুলো বাচ্চা মুরগি আর ফিডের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে রেখেছে)। এদিকে গুঁড়া দুধের অনিয়ন্ত্রিত আমদানিতে লাখ লাখ দেশীয় ডেইরি খামারি মার খাচ্ছে। এই দেশে স্থানীয় উদ্যোক্তারা সহজ ঋণ পান না, প্রণোদনা পান না, কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কছাড় পান না, গ্যাস পান না, বিদ্যুৎ পান না, সিন্ডিকেটের উৎপাত থেকে মুক্তি পান না। এদিকে দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ অনানুষ্ঠানিক খাতের হকার, মজুর, অটোওয়ালা ও গরিব উদ্যোক্তা। এই বিপুলসংখ্যক স্থানীয় উদ্যোক্তাদের বাঁচাতে কী করেছে সরকার, বুলডোজার চালানো ছাড়া।
কৃষি খাতে উৎপাদন খরচ বেড়েই চলেছে, একের পর এক কৃষক আত্মহত্যা করছেন। ধান, পাট, পেঁয়াজ, আলু, ফুলকপি—প্রতিটি ফসলেই মার খাচ্ছেন কৃষক। সরকারি ক্রয়কেন্দ্রগুলো এখানে দুর্নীতির আখড়া। সামান্য কয়েকটি কোল্ডস্টোরেজের অভাবে কৃষক শীতের সবজি সংরক্ষণ করতে পারেন না। স্থানীয় কৃষির ওপর ভিত্তি করে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে উঠতে পারছে না।
গ্রামেগঞ্জে বছরে ৬ মাস কোনো কাজ নেই, গ্রামীণ অর্থনীতিতে ন্যূনতম কোনো বিনিয়োগ নেই। দলে দলে কৃষক আর খেতমজুর শহরে আসছেন একটা কাজের আশায়। এমন অবস্থায় পরিবহনের বিপুল চাহিদা আছে বলেই গড়ে উঠছে গরিব চালক আর গরিব মেকানিকের এই অটোরিকশার ইন্ডাস্ট্রি। যন্ত্রাংশ তৈরি, মেকানিক শপ, মিস্ত্রি, কারিগর, পেইন্টার মিলে একটা শক্তিশালী স্থানীয় ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়িয়ে গেছে। তৈরি হয়েছে ৭০ লাখ কর্মসংস্থান।
অথচ সরকারের তরফ থেকে নেই কোনো স্পষ্ট নীতিমালা। যন্ত্রাংশের আমদানি চলছে, সেনাকল্যাণ সংস্থার শোরুম ঠিকই চলছে, গাজীপুরের হোতাপাড়ায় কারখানা বসিয়ে ধনী কোম্পানির ইজিবাইক তৈরির অ্যাসেম্বলি লাইন চলছে, শুধু ফসলের মাঠ আর কলকারখানা থেকে ছিটকে পড়া শ্রমজীবী মানুষ তাঁর অটোরিকশাটি নিয়ে, ছোট্ট দোকানটি নিয়ে রাস্তায় নামলেই ‘নিয়মনীতির ইন্টেরিম’ প্রতিষ্ঠায় ধুমধাম বুলডোজার চলে?
এ ধরনের ‘গরিব মারা’র কাঠামোতে শুধু বিদেশি বিনিয়োগ এলেই মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটবে? সেটা হলে তো হাসিনার আমলেই হতো। এগুলো তো সেই পুরোনো অর্থনৈতিক বন্দোবস্তের চিরচেনা মডেল। বৃহৎ কোম্পানির মুনাফা, ধনীর সম্পদ বৃদ্ধি আর গরিবের আরও গরিব হওয়া।
মাহা মির্জা লেখক ও গবেষক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ন য় গ এল ই সরক র র ভর ত ক ন র ভর আম দ র আমদ ন র ওপর ধরন র হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
জাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, মোট ভোটার ১১ হাজার ৯১৯
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী আজ সোমবার সকাল ৯টা থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে।
এর আগে গত ১০ আগস্ট রাতে খসড়া ভোটার তালিকা ও খসড়া আচরণবিধি প্রকাশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে যেসব শিক্ষার্থীর নাম তালিকায় আসেনি তাঁদের আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়। যাচাই–বাছাই শেষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ও চূড়ান্ত আচরণবিধি প্রকাশ করেছে কমিশন।
কোন হলে কত ভোটার
চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী ২১টি আবাসিক হলে মোট ভোটার ১১ হাজার ৯১৯ জন। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ৫ হাজার ৮৬০, আর ছাত্রী ভোটার ৬ হাজার ০৫৯।
ছাত্র হল
আলবেরুনী হলে ২১১, আ ফ ম কামালউদ্দিন হলে ৩৪১, শহীদ সালাম–বরকত হলে ২৯৯, মওলানা ভাসানী হলে ৫২১, ১০ নম্বর হলে ৫৪০, শহীদ রফিক–জব্বার হলে ৬৫৬, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৩৫৭, ২১ নম্বর হলে ৭৫২, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ৯৯৪, শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ হলে ৯৫৪, মীর মশাররফ হোসেন হলে ৪৭৭ জন।
ছাত্রী হল
নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ২৮২, জাহানারা ইমাম হলে ৪০০, প্রীতিলতা হলে ৪০২, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৪১৭, সুফিয়া কামাল হলে ৪৬০, ১৩ নম্বর হলে ৫৩২, ১৫ নম্বর হলে ৫৭৬, রোকেয়া হলে ৯৫৭, ফজিলাতুন্নেছা হলে ৮০৮, বীর প্রতীক তারামন বিবি হলে ৯৮৩ জন।
আজ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ
তফসিল অনুযায়ী আজ সোমবার (১৮ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এবং আগামীকাল মঙ্গলবার একই সময়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে। তবে প্রার্থীকে নিজে উপস্থিত হয়ে মনোনয়ন জমা দিতে হবে।
মনোনয়নপত্রের নির্দেশনা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে সাত দফা নির্দেশনা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে রয়েছে—
১. একজন প্রার্থী একাধিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
২. প্রতিটি মনোনয়নপত্রে একজন প্রস্তাবক ও একজন সমর্থকের স্বাক্ষর, শিক্ষাবর্ষ ও বিভাগ উল্লেখ করতে হবে।
৩. একই ব্যক্তি একাধিক প্রার্থীর প্রস্তাবক বা সমর্থক হতে পারবেন না (কার্যকরী সদস্য পদ ছাড়া)। কার্যকরী সদস্য পদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছয়জনের (তিন নারী, তিন পুরুষ) প্রস্তাবক বা সমর্থক হওয়া যাবে।
৪. মনোনয়ন জমার সময় শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র বা ছবিযুক্ত লাইব্রেরি কার্ড/ইনডেক্স কার্ড প্রদর্শন করতে হবে।
৫. প্রার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে সব পাওনা পরিশোধের প্রমাণ দিতে হবে।
৬. মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি জমা দিতে হবে (দুই মাসের বেশি পুরোনো ছবি গ্রহণযোগ্য নয়)।
৭. প্রতিটি হলে মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও জমাদানের জন্য পৃথক রেজিস্ট্রার খাতা সংরক্ষণ করতে হবে।