নওগাঁর ধামইরহাট থানায় এইচএসসির প্রশ্নপত্রের ট্রাংক খুলে প্রশ্ন বের করার ঘটনায় রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শনিবার (২১ জুন) বিকেলে বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ.ন.ম মোফাখখারুল ইসলাম বিষয়টি জানিয়েছেন।

তিনি জানান, বোর্ডের কলেজ পরিদর্শককে আহ্বায়ক করে তিনি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন। কমিটিতে একজন উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও ধামইরহাট উপজেলার এমএম সরকারি ডিগ্রি কলেজের একজন শিক্ষককে রাখা হয়েছে। আগামী রবিবারের (২২ জুন) মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। 

এদিকে, এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন এবং জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও আলাদা দুইটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এর আগেই থানা হাজতে প্রশ্নপত্রের ট্রাংক খোলার ঘটনায় একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও একজন পুলিশ কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

শার্ট ও ক্যাপ পরিয়ে বান্ধবীকে হলে নিয়ে রাত্রিযাপন রাবি ছাত্রের

রাজশাহীর পদ্মা নদীর বাঁধ থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

সম্প্রতি ১৭টি ট্রাংকে এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ধামইরহাট থানায় পাঠায় বোর্ড কর্তৃপক্ষ। মালখানা হিসেবে ব্যবহৃত ট্রাংক রাখা হয়েছিল নারী হাজতখানায়। ওই রাতে একটি হত্যা মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য উদঘাটনের কৌশলগত কারণে তাদের আলাদা আলাদা স্থানে রাখা হয়। এক আসামিকে রাখা হয়েছিল নারী হাজতখানায়।

সেখানে প্রশ্নপত্রের ট্রাংকে দুইটিতে তালা থাকলেও চাবি ছিল তালার সঙ্গেই। তারপর সিলগালা করা ছিল। ওই আসামির হাতে হ্যান্ডকাপ থাকলেও এক হাত খোলা ছিল। তিনি সিলগালার সিল তুলে চাবি দিয়ে তালা খোলেন। এরপর একটি প্রশ্নের প্যাকেট বের করে কাটেন। প্রশ্নপত্র দেখার পর তিনি কয়েকটি প্রশ্ন ছিঁড়েও ফেলেন। পরে সকালে পুলিশ গিয়ে এগুলো দেখতে পায়। এ ঘটনায় সরকারি সম্পদ বিনষ্টের অভিযোগে ওই আসামির বিরুদ্ধে পুলিশ একটি মামলা করে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ওসিসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের সামনে নওগাঁ-জয়পুরহাট আঞ্চলিক মহাসড়কে আয়োজিত মানববন্ধনে উপজেলা, পৌর ও কলেজ শাখা ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলা শাখা, উপজেলা শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।

এ দিন বিকেলে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বোর্ডের গঠন করা তদন্ত কমিটির সদস্যরা থানা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ.

ন.ম মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, “১৭ জুন দিনগত রাত ৪টা ৪০ মিনিটে ওই আসামিকে থানা হাজতে ঢোকানো হয়। বের করা হয় ১৮ জুন দুপুর ১২টায়। এই সময়ের মধ্যেই সে এ কাণ্ড ঘটায়।”

তিনি বলেন, “আসলে অবকাঠামোগত দুর্বলতা আছে তো। সে জন্যই হাজতখানা ব্যবহার হয় মালখানা হিসেবে। এটা একটা দুর্ঘটনা। আবার এটা পরীক্ষা এবং সরকারকে বিতর্কের মুখে ফেলার ষড়যন্ত্রও হতে পারে। আসামির মনোজগতের কোনো ত্রুটিও থাকতে পারে। আসলেই কী ঘটনা সেটা তদন্ত কমিটিগুলোর প্রতিবেদনেই আসবে। আমরা সেভাবে ব্যবস্থা নেব।”

এ ঘটনাটি নিয়ে বাংলাদেশ আন্তঃ শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির শনিবার বিকেলে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, “ধামইরহাটের সরকারি এম এম ডিগ্রি কলেজের জন্য বরাদ্দকৃত এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের তিনটি ট্রাংক থানার লকার রুমে সংরক্ষণ করা হয়। প্রশ্ন সর্টিংয়ের সময় একটি ট্রাংক তালা খোলা অবস্থায় পাওয়া যায় এবং ইতিহাস দ্বিতীয়পত্রের এক প্যাকেট প্রশ্ন লকার রুমের এক কর্ণারে পাওয়া যায়। ওই প্যাকেটের কিছু প্রশ্নপত্র ছেঁড়া থাকলেও প্রশ্নপত্রের সংখ্যা সঠিক পাওয়া যায় বলেও নওগাঁর জেলা প্রশাসক নিশ্চিত করেছেন।”

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এ বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে ও দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ চিহ্নিতকরণের জন্য জেলা প্রশাসন তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ইতিহাস দ্বিতীয়পত্রের (বিষয় কোড-৩০৫) যে সেটের প্রশ্ন খোলা অবস্থায় পাওয়া যায়, সব কেন্দ্রের সেই সেটের প্রশ্ন বাতিল করা হয়েছে। একই বিষয়ের প্রশ্নপত্রের ভিন্ন কয়েকটি সেট বোর্ডের কাছে সংরক্ষিত থাকায় পরীক্ষা গ্রহণে কোনো জটিলতা তৈরি হবে না।”

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ ধ মইরহ ট পর ক ষ উপজ ল র ঘটন সরক র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

চার্লি কার্ককে কে হত্যা করল

গত কয়েক বছরে চার্লি কার্কের অনুষ্ঠানে আমার কয়েকবার অংশ নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। তাঁকে আমার সব সময় ভদ্র, শ্রদ্ধাশীল ও বিভিন্ন ধ্যানধারণার প্রতি আন্তরিকভাবে আগ্রহী একজন মানুষ বলে মনে হয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে আমাদের মতপার্থক্য ছিল, তা–ও তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনতেন।

চার্লি বাক্‌স্বাধীনতার একজন দৃঢ় সমর্থক ছিলেন এবং তরুণ প্রজন্মকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন—রাজনৈতিক ভিন্নতা থাকলেও বাক্‌স্বাধীনতা ও সংলাপের মূল্য বেশ গভীর।

মাত্র ৩১ বছর বয়সে চার্লি দেশের রক্ষণশীল তরুণদের সবচেয়ে বড় সংগঠনের জনপ্রিয় নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। ফলে এ দেশের ভবিষ্যতের রক্ষণশীল আন্দোলনে তাঁর প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। এমনকি তিনি রিপাবলিকান পার্টিকে প্রভাবিত করার মতো শক্তিশালী অবস্থানেও পৌঁছে গিয়েছিলেন।

বিগত রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারের সময় আমি নিজেই লক্ষ করেছি, এ দেশের তরুণেরা স্বাধীনতা, শান্তি ও সমৃদ্ধির আদর্শে সত্যিই অনুপ্রাণিত।

গত সপ্তাহে চার্লি কার্কের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমরা আসল গল্পটি জানতে পেরেছি, তা আমি বিশ্বাস করি না। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (এফবিআই) ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার দেওয়া বিবরণে ব্যাপক অসংগতি দেখা যাচ্ছে। এসব সংস্থার বর্ণনাকে আমার বারবার পাল্টে যাওয়া কাহিনি বলে মনে হয়েছে, যা কোনো অর্থই বহন করে না।

কার্কের কাছের কিছু ব্যক্তি জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে তাঁর অবস্থান ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছিল। প্রচলিত নব্য রক্ষণশীল যুদ্ধংদেহী (মিলিটারিজম) মনোভাব থেকে সরে এসে তিনি আরও অহস্তক্ষেপমূলক (নন-ইন্টারভেনশনিস্ট) নীতির দিকে ঝুঁকছিলেন।

টাকার কার্লসন সম্প্রতি জানিয়েছেন, ইরানে হামলা চালানো থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিরত রাখতে কার্ক নিজেই হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

আরও পড়ুনচার্লি কার্কের মৃত্যু উদ্‌যাপনকারীদের বিচারের আওতায় আনা উচিত: জেডি ভ্যান্স১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ ছাড়া রক্ষণশীল পডকাস্টার (রাজনৈতিক ভাষ্যকার) ও চার্লি কার্কের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ক্যান্ডেস ওয়েন্স তাঁর নিজের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, কার্ক সম্প্রতি ‘আধ্যাত্মিক সংকটের’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি আগের যুদ্ধংদেহী সমর্থন থেকে সরে এসে ‘যুক্তরাষ্ট্রের অহস্তক্ষেপবাদী’ পথের দিকে ঝুঁকেছিলেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান অস্থিরতায় তিনি এদিকে এগোচ্ছিলেন।

প্রশ্ন থেকে যায়, চার্লি কার্ক কি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এমন কোনো শক্তির দ্বারা নিহত হয়েছেন, যাঁরা তাঁর মতো এমন এক প্রভাবশালী নেতার দৃষ্টিভঙ্গির ওই রকম পরিবর্তন মেনে নিতে পারছিলেন না। তবে কী হয়েছে, তা আমরা এখনো জানি না।

যেমনটি বলেছি, তেমন কিছু যদি ঘটেও থাকে, তা শান্তির ধারণাকে এগিয়ে নেওয়া ঠেকাতে যাঁরা মরিয়া, তাঁরা অবশ্যই আড়াল করতে চাইবেন। যেমনটি তাঁরা অতীতে অনেক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে করেছেন।

আমার সাম্প্রতিক বই ‘দ্য সারাপটিশস কু: হু স্টোল ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশন?’-এ আমি এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এতে আমি জন এফ কেনেডি, রবার্ট এফ কেনেডি, মার্টিন লুথার কিংসহ বেশ কিছু হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেছি।

১৯৬০–এর উত্তাল দশকে তাঁদের হত্যা করা হয়েছিল। কারণ, তাঁরা প্রচলিত অবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এবং শীতলযুদ্ধ চলাকালে সাংঘর্ষিক অবস্থান নেওয়া থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ডানপন্থী রাজনৈতিক কর্মী ও বিশ্লেষক চার্লি কার্ক ফাইল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুসলিম বিশ্বে জ্ঞানচর্চার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়ার উপায়
  • তামান্না কী আধ্যাত্মিক মানুষ?
  • চাকসু নির্বাচন: প্যানেলে ভিপি-জিএস পদে নারী শুধু একজন
  • সুনামগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষ, নিহত ১
  • ঘরের চালে ঢিল ছোড়া নিয়ে বিরোধ, মীমাংসার পর মারামারিতে প্রাণ গেল একজনের
  • জাদুঘর থেকে উধাও ফারাওর সেই ব্রেসলেট চুরির পর সোনা পেতে গলিয়ে ফেলা হয়েছে
  • কারাগারে ও বিদেশে ছিলেন আসামিরা, তবু ‘মোবাইলের আলোতে চিনতে’ পেরেছেন বাদী এনসিপি নেতা
  • জীবিকার জন্য পরিশ্রম করা ইবাদত
  • যুক্তরাষ্ট্রের হেনড্রিক্স কলেজের মর্যাদাপূর্ণ বৃত্তি পাওয়া চারজনের একজন বাংলাদেশের মুমতাহিনা
  • চার্লি কার্ককে কে হত্যা করল