ঘর থেকে শুরু হোক প্লাস্টিকমুক্তির অভিযান
Published: 22nd, June 2025 GMT
বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় আট লাখ টন প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়, যার ৩৬ শতাংশ ব্যবহারের পরপরই ফেলে দেওয়া হয়। এর বড় অংশই এককালীন (সিঙ্গেল ইউজ) প্লাস্টিক; যেমন পলিথিন ব্যাগ, পানির বোতল, খাবারের মোড়ক– যা সহজে পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে পরিবেশে থেকে যায়।
চট্টগ্রাম দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত হলেও, গত এক দশকে শহরটি ভয়াবহ প্লাস্টিক দূষণের চাপে পড়েছে। প্রতিদিন সেখানে কয়েক হাজার টন কঠিন বর্জ্য তৈরি হয়, যার মধ্যে প্রায় ৮ দশমিক ৩ শতাংশ প্লাস্টিক। এই প্লাস্টিকের বড় অংশ যথাযথভাবে সংগ্রহ বা রিসাইক্লিং না হওয়ায় তা গিয়ে পড়ে খাল, ড্রেন, নালা ও কর্ণফুলী নদীতে। ফলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা হয়ে দাঁড়ায় শহরবাসীর নিত্যদিনের দুর্ভোগের কারণ।
পরিবেশগত দিক থেকেও চিত্র বেশ উদ্বেগজনক। বৈশ্বিকভাবে প্লাস্টিক বর্জ্যের মাত্র ৯ শতাংশ রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহারে আসে। তবে বাংলাদেশের চিত্র তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালো– ঢাকায় রিসাইক্লিং হার প্রায় ৩৭ শতাংশ এবং জাতীয় পর্যায়ে তা ৩১ শতাংশের মতো। তবুও বাকি বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য নানা পথে শেষ পর্যন্ত গিয়ে জমা হয় ডাস্টবিন, খোলা জায়গা, ড্রেন, নদী ও সমুদ্রে। এর ফলে সামুদ্রিক প্রাণীর জীবন হুমকির মুখে পড়ে, উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস ও নদীপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়, এমনকি এসব ক্ষতিকর বর্জ্য মানবদেহেও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রায় দুই লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ে, যা দেশের সামুদ্রিক পরিবেশের জন্য এক বড় বিপদ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
এই সংকট মোকাবিলায় চট্টগ্রামে প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা উদ্যোগের মাধ্যমে স্থানীয় কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। নগরীর বাংলা বাজার এলাকার গৃহবধূ খাদিজা বেগম এখন তাঁর চার সদস্যের পরিবারে প্রতিদিন ঘর থেকেই আলাদা করে রাখেন এককালীন প্লাস্টিক। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, এসব বর্জ্য ফেলার বদলে বিক্রি করবেন স্থানীয় রিসাইক্লারদের কাছে। এখন তিনি সপ্তাহে প্রায় এক কেজি প্লাস্টিক জমিয়ে বিক্রি করেন। এতে সামান্য আয় যেমন হচ্ছে, তেমনি এই অভ্যাস ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর ছোট সন্তানদের মধ্যেও। খাদিজা বলেন, ‘আগে এসব প্যাকেট আর বোতল ড্রেনে ফেলতাম। এখন বুঝি, এগুলো জমলে পানি আটকে যায়, রোগ ছড়ায়। ঘর থেকেই যদি শুরু না করি, শহর পরিষ্কার হবে কীভাবে?’
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উদ্যোগে অংশগ্রহণকারীদের মাধ্যমে পরিবারে সচেতনতা ছড়িয়ে পড়ছে। অনেক নারী এখন স্থানীয়ভাবে পাটের ব্যাগ, কাগজের প্যাকেট ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য সামগ্রী ব্যবহার করে ক্ষুদ্র ব্যবসাও গড়ে তুলছেন– যা পরিবেশের পাশাপাশি অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা গেলে এই দূষণ অনেকাংশে কমানো সম্ভব। এটি শুধু পরিবেশ রক্ষাই নয়, জনস্বাস্থ্যের দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, প্লাস্টিকের অতি সূক্ষ্ম কণিকা (মাইক্রোপ্লাস্টিক) এখন আমাদের খাদ্য, পানি এমনকি রক্তেও পাওয়া যাচ্ছে– যা ক্যান্সার, হরমোনজনিত সমস্যা এবং শিশুদের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতার ঝুঁকি বাড়ায়।
ঘরের ছোট একটি অভ্যাসই হতে পারে বৃহৎ পরিবেশ আন্দোলনের সূচনা। পরিবেশের জন্য প্রতিটি পদক্ষেপ হোক দায়িত্বশীল ও স্থায়ী– আজ থেকেই।
শিক্ষার্থী
নৃবিজ্ঞান, তৃতীয় বর্ষ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প ল স ট ক বর জ য পর ব শ র ব যবহ র বর জ য
এছাড়াও পড়ুন:
আধুনিক টিভির যত আধুনিক সুবিধা
টেলিভিশনকে বাংলায় বলা হয় ‘দূরদর্শন’। মাত্র কয়েক বছর আগেও এটি সত্যিই ছিল দূরদর্শনের মাধ্যম—দূরের কোনো ঘটনা চোখের সামনে এনে দেওয়ার একটি যন্ত্র। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে টিভির সংজ্ঞা, উদ্দেশ্য ও ব্যবহার। প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতিতে আজকাল টিভি হয়ে উঠেছে একটি ‘স্মার্ট হাব’, যেখানে সিনেমা দেখা, গেম খেলা, ভিডিও কল করা, এমনকি বাড়ির অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আধুনিক টিভিগুলোর সুবিধা কেবল ছবি বা সাউন্ডে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এগুলো এখন ব্যবহারকারীদের এনে দিয়েছে একসঙ্গে বিনোদন, সংযোগ, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স।
স্মার্ট অপারেটিং সিস্টেমবর্তমান প্রজন্মের টিভিগুলো শুধু নাটক কিংবা সিনেমা দেখার একটি স্ক্রিন নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ স্মার্ট ডিভাইস। স্মার্ট টিভিতে অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) হিসেবে টাইজেন, অ্যান্ড্রয়েড টিভি, রোকু টিভি এবং ওয়েবওএস ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এই সিস্টেমগুলোর মাধ্যমেই বর্তমান যুগের টিভিগুলো হয়ে উঠছে আধুনিক থেকে আধুনিকতর। ব্যবহারকারীরা এখন চাইলেই স্মার্ট টিভিগুলোতে নেটফ্লিক্স, ইউটিউব, স্পটিফাই, অ্যামাজন প্রাইম কিংবা যেকোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্মও সরাসরি উপভোগ করতে পারেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘অ্যাপ স্টোর ইন্টিগ্রেশন’। টিভিতেই এখন মোবাইলের মতো অ্যাপ ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়। ওয়েদার অ্যাপ, গেমস, নিউজ—এমনকি ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপও ব্যবহার করা যায় টিভির বড় স্ক্রিনে।
ভয়েস কন্ট্রোল: কথা বলেই নিয়ন্ত্রণরিমোট খোঁজার ঝামেলা এখন যেন অতীত। আগে টিভির সবকিছু রিমোট দ্বারা পরিচালিত হলেও এখনকার আধুনিক টিভিগুলোতে আছে ভয়েস কন্ট্রোল—যেখানে ব্যবহারকারীর ভয়েস দ্বারাই টিভি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই প্রযুক্তি বিক্সবি, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, অ্যালেক্সার মতো ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে কাজ করে। এর পাশাপাশি কিছু হাই-এন্ড মডেলে রয়েছে জেসচার কন্ট্রোল—যেখানে হাত নাড়লেই টিভি রেসপন্স করে। টিভি চালু-বন্ধ করা, চ্যানেল পরিবর্তন—এমনকি ভলিউম বাড়ানো-কমানোর মতো কাজও করা যায় হাতের ইশারায়। এ ক্ষেত্রে গ্যালাক্সি ওয়াচের কথা বলা যায়। এটি হাতের নড়াচড়াকে শনাক্ত করে এসব কমান্ড কার্যকর করে।
মাল্টি-ডিভাইস কানেকটিভিটি: এক স্ক্রিনে সব সংযোগবর্তমানে টিভি শুধু সম্প্রচার মাধ্যম নয়; এটি হয়ে উঠেছে একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল ইউনিট। মোবাইল ফোন, স্পিকার, ল্যাপটপ, গেমিং কনসোল—সব ডিভাইস এখন টিভির সঙ্গে সহজেই সংযুক্ত করা যায়।
বেশির ভাগ স্মার্ট টিভিতে রয়েছে ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, এইচডিএমআই এআরসি, এয়ার প্লে, মিরাকাস্টসহ বিভিন্ন সুবিধা। ফলে ব্যবহারকারী চাইলে নিজের ফোনের ছবি, ভিডিও বা প্রেজেন্টেশন মুহূর্তেই বড় স্ক্রিনে শেয়ার করতে পারেন। সেই সঙ্গে আধুনিক টিভিগুলোতে রয়েছে গেমারদের জন্য এইচডিএমআই ২.১ পোর্ট এবং কম ইনপুট ল্যাগযুক্ত ডিসপ্লে, যা গেমিং এক্সপেরিয়েন্সকে করে তোলে আরও স্মুথ।
আধুনিক টিভিগুলো ব্যবহারকারীদের এনে দিয়েছে একসঙ্গে বিনোদন, সংযোগ, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স