ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো দুই দিনব্যাপী রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্মেলন শুরু হয়েছে। আজ রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মুজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘পরিবর্তনশীল গণতন্ত্রে রাষ্ট্র সংস্কার: আন্দোলন থেকে নির্বাচন ও নতুন রাষ্ট্রের পথচলা’।

উদ্বোধনী বক্তব্যে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার জরুরি। তবে বর্তমানে সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে অযৌক্তিক বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে, যেটার প্রয়োজন নেই। সম্মেলনের মাধ্যমে এই বিতর্ককে প্রশমিত করার একটি বড় সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে। সংস্কার ও নির্বাচন যে একই সঙ্গে হতে পারে, সেটা দেখানোই এই সম্মেলনের সবচেয়ে বড় অবদান হতে পারে।

অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ। উদ্বোধনী সেশনে আরও বক্তব্য দেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান নাসিমা খাতুন।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজের সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করার কথা রয়েছে।

সম্মেলনটি আয়োজন করেছে ছায়া সংস্কার কমিশন, ছায়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং পলিটিক্যাল অ্যান্ড পলিসি সায়েন্স রিসার্চ ফাউন্ডেশন (পিপিএসআরএফ)। উদ্বোধনী সেশনে জানানো হয়, সম্মেলনে ৮টি পৃথক সেশনে ৭৮টি গবেষণা প্রস্তাবের মধ্য থেকে নির্বাচিত ৫৬টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হবে। এসব সেশনে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার, অর্থনৈতিক ন্যায্যতা, মানবাধিকার, স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, তরুণদের অংশগ্রহণ ও ভূরাজনীতিসংক্রান্ত নানা বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

সম্মেলনের অন্যতম অংশ হিসেবে থাকবে রাজনৈতিক সংলাপ, যেখানে ছায়া সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব তুলে ধরা হবে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। এ ছাড়া গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, গবেষক ও শিক্ষাবিদদের অংশগ্রহণে বিশেষ আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে।

আগামীকাল সোমবার সম্মেলনের সমাপনী দিনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার বক্তব্য দেবেন। এদিন সেরা গবেষণা ও উপস্থাপনার জন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ষ ট রব জ ঞ ন উপ চ র য

এছাড়াও পড়ুন:

‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাদ দিয়ে অন্য কিছু যোগ করলে তর্ক থাকবে না: হাসনাত কাইয়ূম

সংবিধানের মূলনীতিতে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র বদলে কাছাকাছি ভিন্ন কোনো শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিতর্ক এড়ানো যাবে বলে মনে করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম।

আজ রোববার বিকেলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের বৈঠকের পঞ্চম দিনের আলোচনা শেষে এক ব্রিফিংয়ে সংবিধানের মূলনীতি বিষয়ে চলমান বিতর্ক নিয়ে হাসনাত কাইয়ূম এসব কথা বলেন। বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল মাল্টিপারপাস হলে এই বৈঠক শুরু হয়।

হাসনাত কাইয়ূম বলেন, ‘আলোচনা এই পর্যায়ে এসেছে যে আগের মূলনীতিগুলো অটুট থাকবে আর এর সঙ্গে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের তিন মূলনীতি যুক্ত হবে নাকি আগের চার মূলনীতিকে বাদ দিয়ে নতুন চার মূলনীতি হবে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো ঐকমত্য হয়নি।’

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটা নিয়ে যতটা আপত্তি আছে, শব্দটার কনটেন্ট নিয়ে সে রকম আপত্তি নেই। এ জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দের বদলে “ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি” লেখার পরে ধর্মনিরপেক্ষতা অনুচ্ছেদের মধ্যে যা কিছু আছে, সেটা নিয়ে কোনো তর্ক থাকবে না।’

একই ব্রিফিংয়ে অংশ নিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) বলেন, ‘আমরা দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর পজিশন (মেয়াদ) চাই। কিন্তু কেউ যদি সরাসরি ১০ বছরের কথা আনেন, এখানে ফাঁকি থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের বিষয়ে উপসংহার টানার সময় অভিন্ন কী শব্দ ব্যবহার করা যায়, সেটির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেব।’
সংবিধানের মূলনীতির বিষয়ে রুহিন হোসেন বলেন, ‘এই মূলনীতি বিশেষ কোনো দলের, এমনটি মনে করি না। বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতির বিষয়ে স্বাধীনতাবিরোধীরা ছাড়া সব দল একমত ছিল। তাই ওই চার মূলনীতিতে একমত ছিলাম, এখনো অনড় আছি।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, উচ্চ পরিষদের প্রতিনিধিত্ব কীভাবে হবে, এনসিসি কীভাবে গঠিত হচ্ছে এবং সংরক্ষিত ১০০ নারী আসনে নির্বাচনের বিষয়টি প্যাকেজ আকারে উত্থাপন করা হয়েছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এটিকে প্যাকেজ আকারে বিবেচনা করতে সম্মত নয়। নির্দিষ্ট বিষয়ে নির্দিষ্ট আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মোস্তাক হোসেন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ ১০ বছর, আলোচনায় ঐকমত্য হয়নি
  • সংস্কার নিয়ে আর অবহেলা নয়
  • প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল একমত: জোনায়েদ সাকি
  • সরকার ও দলগুলোর সামনে ৪ চ্যালেঞ্জ দেখছেন আলী রীয়াজ
  • প্রধানমন্ত্রিত্ব মেয়াদ, উচ্চকক্ষ ও এনসিসি, ‘একই প্যাকেজে’ আলোচনা চায় বিএনপি
  • ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বেশ অগ্রগতি দেখছে জামায়াত
  • ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাদ দিয়ে অন্য কিছু যোগ করলে তর্ক থাকবে না: হাসনাত কাইয়ূম
  • ১০ বছরের বেশি কারও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পক্ষে নয় জামায়াত
  • মৌলিক বিষয়ে দলগুলোর দূরত্ব কমেনি