বিনিয়োগের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি
Published: 22nd, June 2025 GMT
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকলে বিনিয়োগ আসে না। ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি। গতকাল রােববার রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সংলাপে এমন মত উঠে আসে।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সংস্থার সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবারের বাজেটের আকার কমানো হয়েছে। এরপরও বাস্তবায়নের নিরিখে এ বাজেট বড়। তবে অর্থনৈতিক প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এ ছাড়া বাজেটে পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা রাখা হয়েছে। জুলাই বিপ্লবের পর সবার মধ্যে বড় পরিবর্তনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। বাজেটে তা পূরণ হয়নি। তিনি উল্লেখ করেন, বাজেটের বাস্তবায়ন মানসম্মতভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা সিপিডির দিক দেখে দেখা হবে।
বিএনপির সহআন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, নির্বাচন নানা কারণে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে বিনিয়োগ আসে না। রাজনৈতিক সরকার থাকলে তাদের একটা রোডম্যাপ থাকে। আগামীতে তারা কী করবে, কতদিন থাকবে এসব পরিষ্কার থাকে। তবে যে সরকারের নিশ্চয়তা থাকে না সে সরকার কখনও ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য সুসংবাদ বয়ে আনে না।
রুমিন ফারহানা বলেন, সরকার কল্যাণমুখী কিনা তা দেখতে হলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ দেখতে হবে। এবারের সরকার তো রাজনৈতিক সরকার নয়। তারা এই দুটি খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের ওপর একটা চাপ তৈরি করতে পারত। সামাজিক সুরক্ষায় অন্যান্য অনেক বরাদ্দ থাকে। যতটুকু থাকে তার মধ্যে ৬০ শতাংশ আবার বেহাত হয়ে যায়। তিনি বলেন, গতানুগতিকতা থেকে বেরিয়ে এসে বাজেটে নতুন কিছু দেওয়ার ক্ষেত্রে এবারও ঘাটতি দেখা গেছে; যা দুঃখজনক।
বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, যারা ব্যাংক লুট করেছে সেই গ্রাহক, ব্যাংকার কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ তাদের মূলধন সহায়তার মাধ্যমে এখন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। যা লুটেরাদের উৎসাহিত করার শামিল। যেসব ব্যাংকের ৯০ শতাংশের বেশি ঋণখেলাপি তা আবার একীভূত করার কী আছে– প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি বলেন, এই সরকারও বিকৃত তথ্যের দিকে যাচ্ছে। শিল্পকারখানায় বিদ্যুৎ-গ্যাস পাচ্ছে না। অথচ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, মে মাসে ৫০ শতাংশ বেশি গ্যাস দেওয়া হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, বাজেট গতানুগতিক, এতে নতুনত্ব কিছু নেই। অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, গত ১৫ বছরে কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান একটি গ্রুপের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। তারা ঋণ নিয়ে আর ফেরত দিচ্ছে না। এদের শাস্তি হওয়া উচিত। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড.
বিজিএমইএর সহসভাপতি ইনামুল হক খান বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ এবং বৈশ্বিক ট্যারিফ অর্থনীতিকে বড় সংকটে ফেলবে। অথচ এসব নিয়ে এখন পর্যন্ত এই সরকার তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। এলডিসি উত্তরণ অন্তত তিন বছর পিছিয়ে দেওয়া দরকার।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। এবারের বাজেট গতানুগতিক। তবে মুদ্রানীতির সঙ্গে রাজস্ব নীতির সমন্বয় রয়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতিতে একটা ইতিবাচক ফল আসতে পারে।
জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি শামীম আহমেদ পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশে কার্যকর বাজেট হয় না। সব সময় আমলারা তৈরি করে দেন। সবার সামনে উপস্থাপন করা হয়। বর্তমান দেশ টিকে আছে প্রবাসীদের জন্য। অথচ তাদের বরাদ্দ কমেছে। এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বাজেট বোঝে কিনা এমন ৫০ জন ভালো সংসদ সদস্য তৈরি হয়নি।
মূল প্রবন্ধে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ব্যর্থ। কিছু রাজস্ব পদক্ষেপ বাজেটের মূল প্রতিপাদ্যের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বাজেট বক্তব্যে ভৌত অবকাঠামোর পরিবর্তে মানুষের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নে যথাযথ বরাদ্দ বা পদক্ষেপ নেই। তবে কর ছাড়, বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ ও প্রণোদনা এবং ক্ষতিকর কার্যক্রমে উচ্চ কর আরোপের মতো কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ রয়েছে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া রাজস্ব বাড়বে না। সংস্কারের ক্ষেত্রে একটা সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দরকার। বাজেট বাস্তবায়নকে দক্ষতার সঙ্গে দেখতে হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধির জন্য বাজেট বাস্তবায়নের মধ্যমেয়াদি পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনের ব্যবস্থা থাকা জরুরি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত ক স পদক ষ প ন বল ন র জন য বর দ দ সরক র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
সুনামগঞ্জে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
সুনামগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহত হওয়ার প্রতিবাদ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ পৌর শহরে পৃথক এই কর্মসূচি পালিত হয়।
গতকাল বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের পাশে যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে ভর্তি হয়ে বাড়ি ফেরার পথে শিক্ষার্থী স্নেহা চক্রবর্তী, সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা জাহান ওরফে খুশি ও সুনামগঞ্জ পৌর শহরের আলীপাড়া এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম (৫৫) নিহত হন।
আজ সকালে সুনামগঞ্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদর মোড়ে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে অবস্থা নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এখানে ‘কথায় কথায় অবরোধ, এখন তোমার কোথায় বোধ’, ‘আর কত খুশি মরলে, প্রশাসনের টনক নড়বে’, ‘আমার বোন কবরে, খুনি কেন বাহিরে’ প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়। কর্মসূচি চলাকালে সড়কে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা ফিটনেসবিহীন যান চলাচলে বাধা না দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে সড়কে অবস্থান নিয়ে বেলা একটা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন তাঁরা।
কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাকবিল হোসেন, জাকারিয়া নাইম, রাহাত আহমেদ, আশরাফ হোসেন; টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী হুমায়ুন আহমদ, শান্ত রায়, সুমাইয়া আক্তার, আমিন উদ্দিন, পূর্বা তালুকদার, তাহমিদা জাহান, বুশরা আক্তার প্রমুখ।
আরও পড়ুনবিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শেষে মেয়েকে তুলে দেন অটোরিকশায়, ১০ মিনিট পর পেলেন মৃত্যুর খবর১৮ ঘণ্টা আগেবক্তারা বলেন, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে এখন প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। অথচ প্রশাসন, পুলিশ উদাসীন। এই সড়কে ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি চলে। অদক্ষ চালকেরা গাড়ি চালান। কিন্ত তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অথচ তুচ্ছ কোনো কিছু অজুহাত পেলেই পরিবহনশ্রমিকেরা ধর্মঘট ডেকে মানুষকে ভোহান্তিতে ফেলেন। সড়কে এসব হত্যা বন্ধ করতে হবে। শিক্ষার্থী স্নেহা, আফসানার মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
এদিকে, বেলা সাড়ে ১১টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের আলফাত স্কয়ারে একই দাবিতে মানববন্ধন করে বিশ্বজন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এরপর একই স্থানে মানববন্ধন করে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা শাখা। এসব কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার, নিহত শিক্ষার্থী আফসানা জাহানের মামা সাইফুল ইসলাম (ছদরুল), সাংবাদিক লতিফুর রহমান ও মাহবুবুর রহমান পীর, শিক্ষক শাহিনা চৌধুরী, হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতা ওবায়দুল হক, উন্নয়নকর্মী সালেহিন চৌধুরী, বিশ্বজন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উপদেষ্টা নুরুল হাসান আতাহের, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কর্ণ বাবু দাস প্রমুখ।
আরও পড়ুনজন্মদিনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, ব্যাগে ছিল সহপাঠীদের দেওয়া উপহার৪ ঘণ্টা আগেসুনামগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজনের মৃত্যুর প্রতিবাদ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানববন্ধন। আজ দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের আলফাত স্কয়ারে