সেই ১৯৫৫ সালে চালু হয়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) একমাত্র আবাসিক ছাত্রাবাস শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি হল। ৭০ বছর পার হলেও প্রায় ৭৫০ ছাত্রের আবাসন সুবিধার হলটির কোনো সংস্কার হয়নি। নতুন কোনো হলও নির্মাণ হয়নি। বর্তমানে হলটির জরাজীর্ণ হাল; পিলার ফেটে, ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। এরই মধ্যে কিছু কক্ষকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। তবু ছাত্রদের বিকল্প আবাসন ব্যবস্থা হয়নি।  

দুই সপ্তাহ ধরে আবাসন সংকট নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। গত শনিবার কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবারও শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা করেছেন।  
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তদানীন্তন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ ভবনকে (বর্তমান ঢামেক হাসপাতালের মূল ভবন) অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পে রূপান্তর করা হয়। যুদ্ধের পরে ১৯৪৬ সালে সেখানেই গড়ে ওঠে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এরপর বিভিন্ন সময় ভবনের কিছু অংশ বর্ধিত হলেও কলেজটির অবকাঠামোর উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি হয়নি। 
গতকাল রাজধানীর বকশীবাজার-সংলগ্ন কলেজের একমাত্র হলে গিয়ে দেখা যায়, মূল ভবনের ছাদের বড় বড় পলেস্তারা খসে পড়ার পাশাপাশি পিলারগুলোও ফেটে ভেতরের কংক্রিট বেরিয়ে এসেছে। 
ছাত্রদের ডা.

ফজলে রাব্বি হলের মূল ভবনে মূলত এমবিবিএসের ছাত্ররা থাকেন। ভবনটিতে ১২০টি কক্ষ রয়েছে। গণপূর্ত অধিদপ্তর ডা. ফজলে রাব্বি হলের মূল ভবনের চারতলাকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পর সেখানে শিক্ষার্থীরা থাকেন না। চারতলায় ৩০টির মতো কক্ষ রয়েছে। ফলে নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আবাসনের কোনো সুষম 
ব্যবস্থা হয়নি।  

হলের ভেতরে এ, বি, সি ব্লক ভবনে জ্যেষ্ঠ ছাত্র এবং ডা. মিলন ইন্টার্নি হোস্টেলে পোস্টগ্র্যাজুয়েট ইন্টার্ন ছাত্ররা থাকেন। সেই ভবনগুলোর অবস্থাও ভালো না। অন্যদিকে, ছাত্রীদের ডা. আলীম চৌধুরী হলেরও একই হাল। ১৯৫০ সালে নির্মিত পুরোনো এ হলটিতে সাড়ে ৫০০ ছাত্রীর আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। 
কলেজের ইন্টার্ন ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন সমকালকে বলেন, মহাপরিকল্পনার কথা জানিয়ে বিগত সময়ে কলেজের কোনো সংস্কার কাজই হয়নি। ফলে পুরো কলেজের ভবনেরই অবস্থা ভালো নয়। সবগুলো ভবন পুরোনো। 
বর্তমান চলমান আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র (কে-৭৯) আবদুল্লাহ আল নোমান। তিনি সমকালকে বলেন, অনেকে হলে থাকে না নিয়মিত। তবে ওয়ার্ডে ডিউটি করতে হয় সেজন্য সবাই হলে বেড রাখে। তাই সবাইকে আবাসন সুযোগ দিতে হয়। নতুন ব্যাচের জন্য গণরুমের আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আমরা এটার প্রতিবাদ করেছি। 
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের সভায় আমরা প্রতিটি দাবি নিয়ে কথা বলেছি। যেহেতু দাবিগুলো রাতারাতি বাস্তবায়নযোগ্য নয়, তাই আমরা বাস্তবায়নের জন্য রূপরেখা চেয়েছি। তারা বলেছেন, সামনে সরকার মেডিকেলের জন্য যে কাজ করবে, এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে বসব। ছাত্রদের বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করা হলে আমরা ক্লাসে ফিরব। 

কয়েক বছর আগে কলেজ এবং হাসপাতালের আমূল সংস্কারে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ ২০২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাপরিকল্পনার সঙ্গে মিলিয়ে ঢামেকের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী। তবে সরকারের আর্থিক সংকটে প্রকল্পগুলো আলোর মুখ দেখেনি। তবে প্রবল ঝুঁকি থাকার পরও হলের কোনো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।  
এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম বলেন, কলেজ এবং হাসপাতালের একটি অবকাঠামো পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তবে সেটি একনেকে পাস হয়নি। এই মহাপরিকল্পনার কারণে অন্য কোনো বড় সংস্কারও ঢাকা মেডিকেল কলেজে হয়নি। যার কারণে কলেজের একাডেমিক ভবন ও ছাত্রদের হোস্টেলের এ দুর্দশা চলছে। আমরা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।  

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ ম ল ভবন ব যবস থ র জন য কল জ র হয় ছ ল ভবন র

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রাম চেম্বার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, ১ নভেম্বর ভোট

প্রশাসক দায়িত্ব গ্রহণের ১১ মাস পর অবশেষে চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ সোমবার বিকেলে চেম্বারে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন নির্বাচন বোর্ডের প্রধান ও চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক মনোয়ারা বেগম। আগামী ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে চেম্বারের নির্বাচন।

তফসিল অনুযায়ী, ৩০ আগস্ট গ্রুপ ও টাউন অ্যাসোসিয়েশন সদস্যের সঙ্গে বৈঠকে তাঁদের প্রতিনিধি ঠিক করা হবে। ৭ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচনী বোর্ড। ১৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশ হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। ফরম বিক্রি হবে ১৪ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর। জমাদানের শেষ তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর। ২৫ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও ৫ অক্টোবর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।

নির্বাচন বোর্ডের সদস্য হিসেবে আছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান এবং বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (সাধারণ শাখা) আহমেদ হাছান। গত এপ্রিলে প্রাথমিকভাবে এ নির্বাচন বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। প্রথমে মে মাসের শেষে এবং পরে আগস্টের শুরুতে নির্বাচনের পরিকল্পনা ছিল।

নির্বাচন বোর্ডের সদস্য ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তফসিল অনুযায়ী চট্টগ্রাম চেম্বারে আগামী ১ নভেম্বর ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রাম চেম্বারে শেষ ভোট হয়েছিল ২০১৩ সালে। এরপর নির্বাচন হলেও ভোট হয়নি। এ সময় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ নির্বাচনের নামে প্রভাব খাটিয়ে ও কারসাজি করে কিছু ব্যক্তিকে নেতা বানিয়ে চেম্বারে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ করেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর চেম্বারের সভাপতি ও দুই সহসভাপতিসহ ২১ পরিচালক ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চট্টগ্রাম চেম্বার নিয়ে ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ প্রতিবাদে রূপ নেয়। ফলে চেম্বারের পুরো পর্ষদ পদত্যাগে বাধ্য হয়। এটি ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত শতবর্ষী এই চেম্বারের পুরো পর্ষদের পদত্যাগের প্রথম ঘটনা বলে জানা গেছে। লতিফপন্থী নেতাদের পদত্যাগের পর থেকে চেম্বারের নতুন ভোটার তালিকা করার দাবি জোরদার হয়।

রাষ্ট্রক্ষমতার পালাবদলের পর গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসকের দায়িত্ব নেন তৎকালীন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা। শুরুতে তাঁর মেয়াদ ছিল ১২০ দিন। পরে আরও দুই দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। সবশেষ গত ৩ জুলাই এর প্রজ্ঞাপনে তাঁর মেয়াদ আরও ৬০ দিনের জন্য বাড়ানো হয়। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর শেষ হচ্ছে তাঁর মেয়াদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ