অনলাইনে কেনাকাটা এখন খুবই জনপ্রিয়। যানজট আর চাকরির ব্যস্ততার কারণে ফেসবুকভিত্তিক পেজ বা ওয়েবসাইট থেকে ঘরে বসে পণ্য কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেকে। এমনকি ঘরে বসেই ওই পণ্য হাতে পেয়ে যাচ্ছেন। এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে চাল, ডাল, তেল-নুনের মতো দৈনন্দিন বাজার-সদাইও করছেন। তবে অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে কিছুটা সাবধান হতে হয়।
অনলাইন কেনাকাটা সহজ, কিন্তু সচেতন না হলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই কেনার আগে যাচাই করুন, বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নিন।
এবার দেখা যাক, অনলাইন কেনাকাটার আগে কী কী ভাবতে হবে।
১.
বিশ্বস্ততা যাচাই করুন
অনলাইনে পণ্য কেনার আগে প্ল্যাটফর্মটি কতটা বিশ্বাসযোগ্য, তা যাচাই করা জরুরি। পরিচিত ও জনপ্রিয় সাইট যেমন দারাজ, পিকাবু, রকমারি বা আজকেরডিল, চালডাল ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মগুলো তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। অপরিচিত ও নতুন ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজ থেকে কেনাকাটায় সাবধানতা দরকার। পরিচিত ও বিশ্বাসযোগ্য ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠান থেকে কেনাকাটা করাই ভালো। তাহলে খারাপ পণ্য কেনার ঝুঁকি কম থাকে।
২. গ্রাহক সন্তুষ্টি (রিভিউ) দেখুন
একই প্ল্যাটফর্মে অনেক বিক্রেতা থাকেন। তাই পণ্যের নিচে থাকা গ্রাহকদের রিভিউ ও বিক্রেতার রেটিং দেখে নেওয়া উচিত। খারাপ রিভিউ বা কম রেটিং থাকলে সেই পণ্য এড়িয়ে চলুন।
ফেসবুকে ব্যবসা করা অধিকাংশ পেজের রয়েছে যাদের কোনো ব্যবসায় নিবন্ধন নেই। এমনকি মানসনদও থাকে না। পণ্যের প্রকৃত অবস্থা জানতে চাইলে বিক্রেতার কাছ থেকে আসল ছবি বা ভিডিও চাওয়া যেতে পারে। কারণ, অনেক সময় বিদেশি ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া ছবি ব্যবহার করে বিক্রেতারা নিম্নমানের পণ্য পাঠিয়ে দেন।
৩. টাকা ফেরতের নীতি
অনলাইনে কেনা পণ্য অনেক সময় বাস্তবে ভিন্ন হতে পারে। তাই রিটার্ন এবং টাকা ফেরত পাওয়ার শর্তগুলো ভালো করে জেনে নিন। রিটার্ন পলিসি না থাকলে ঝুঁকি বেশি। কিংবা ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ অর্ডার করতে পারেন।
৪. পণ্যের বিস্তারিত পড়ুন
শুধু ছবি দেখে নয়, পণ্যের ব্র্যান্ড, মডেল, ম্যাটেরিয়াল, ওয়ারেন্টি ইত্যাদি ভালোভাবে পড়ুন। প্রয়োজনে ইউটিউবে রিভিউ দেখুন বা গুগলে খোঁজ করুন। গ্রাহকের রিভিউ আপনাকে পণ্যটি সম্পর্কে একটি ধারণা দেবে।
৫. দাম যাচাই করুন
একই পণ্য একাধিক অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মিলতে পারে। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ঘুরে তুলনা করে সবচেয়ে ভালো দামে কিনুন। অনেক সময় পণ্যের দামে ছাড় থাকলেও ডেলিভারি চার্জ বেশি হয়—সেটাও খেয়াল রাখুন। আবার কম দামে পণ্য দিলেও মান ভালো নাও হতে পারে। এসব বিবেচনা করেই নিজের সামর্থ্য অনুসারে সবচেয়ে উপযোগী পণ্যটি কিনুন।
৬. মূল্য পরিশোধ পদ্ধতি কতটা নিরাপদ
পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধ (পেমেন্ট) পদ্ধতিও অনলাইনে প্রতারণার একটি বড় মাধ্যম। তাই অনলাইনে কেনাকাটার আগে পেমেন্ট চাইলেই সাবধান হতে হবে। ক্যাশ অন ডেলিভারির সুযোগ থাকলে সে পদ্ধতিতে কেনাকাটা করার পদ্ধতি বেছে নেওয়া ভালো। যদি বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে হয়, তাহলে ব্যক্তিগত নম্বরের পরিবর্তে মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টেই টাকা পাঠানোই নিরাপদ। পাশাপাশি পেমেন্টের রসিদ বা স্ক্রিনশট সংরক্ষণ করে রাখা উচিত। যাতে পরবর্তী সময়ে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। প্রতারণার বড় মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে অগ্রিম পেমেন্ট।
৭. ভুয়া অফারে সাবধান
বিভিন্ন পণ্যের ‘ভুয়া অফার’ থাকে। এমন ফাঁদে পা দেবেন না। এসবের পেছনে প্রতারণা লুকিয়ে থাকতে পারে।
৮. ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা
পণ্য কেনাকাটা বা নিবন্ধনের সময় কিছু ওয়েবসাইট অপ্রয়োজনীয়ভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়। এসব তথ্য দেওয়ার আগে নিশ্চিত হোন, এসব ওয়েবসাইট নিরাপদ কি না। এতে পরবর্তী সময়ে আপনি প্রতারিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম য চ ই কর ন র পদ
এছাড়াও পড়ুন:
আধুনিক টিভির যত আধুনিক সুবিধা
টেলিভিশনকে বাংলায় বলা হয় ‘দূরদর্শন’। মাত্র কয়েক বছর আগেও এটি সত্যিই ছিল দূরদর্শনের মাধ্যম—দূরের কোনো ঘটনা চোখের সামনে এনে দেওয়ার একটি যন্ত্র। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে টিভির সংজ্ঞা, উদ্দেশ্য ও ব্যবহার। প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতিতে আজকাল টিভি হয়ে উঠেছে একটি ‘স্মার্ট হাব’, যেখানে সিনেমা দেখা, গেম খেলা, ভিডিও কল করা, এমনকি বাড়ির অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আধুনিক টিভিগুলোর সুবিধা কেবল ছবি বা সাউন্ডে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এগুলো এখন ব্যবহারকারীদের এনে দিয়েছে একসঙ্গে বিনোদন, সংযোগ, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স।
স্মার্ট অপারেটিং সিস্টেমবর্তমান প্রজন্মের টিভিগুলো শুধু নাটক কিংবা সিনেমা দেখার একটি স্ক্রিন নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ স্মার্ট ডিভাইস। স্মার্ট টিভিতে অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) হিসেবে টাইজেন, অ্যান্ড্রয়েড টিভি, রোকু টিভি এবং ওয়েবওএস ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এই সিস্টেমগুলোর মাধ্যমেই বর্তমান যুগের টিভিগুলো হয়ে উঠছে আধুনিক থেকে আধুনিকতর। ব্যবহারকারীরা এখন চাইলেই স্মার্ট টিভিগুলোতে নেটফ্লিক্স, ইউটিউব, স্পটিফাই, অ্যামাজন প্রাইম কিংবা যেকোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্মও সরাসরি উপভোগ করতে পারেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘অ্যাপ স্টোর ইন্টিগ্রেশন’। টিভিতেই এখন মোবাইলের মতো অ্যাপ ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়। ওয়েদার অ্যাপ, গেমস, নিউজ—এমনকি ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপও ব্যবহার করা যায় টিভির বড় স্ক্রিনে।
ভয়েস কন্ট্রোল: কথা বলেই নিয়ন্ত্রণরিমোট খোঁজার ঝামেলা এখন যেন অতীত। আগে টিভির সবকিছু রিমোট দ্বারা পরিচালিত হলেও এখনকার আধুনিক টিভিগুলোতে আছে ভয়েস কন্ট্রোল—যেখানে ব্যবহারকারীর ভয়েস দ্বারাই টিভি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই প্রযুক্তি বিক্সবি, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, অ্যালেক্সার মতো ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে কাজ করে। এর পাশাপাশি কিছু হাই-এন্ড মডেলে রয়েছে জেসচার কন্ট্রোল—যেখানে হাত নাড়লেই টিভি রেসপন্স করে। টিভি চালু-বন্ধ করা, চ্যানেল পরিবর্তন—এমনকি ভলিউম বাড়ানো-কমানোর মতো কাজও করা যায় হাতের ইশারায়। এ ক্ষেত্রে গ্যালাক্সি ওয়াচের কথা বলা যায়। এটি হাতের নড়াচড়াকে শনাক্ত করে এসব কমান্ড কার্যকর করে।
মাল্টি-ডিভাইস কানেকটিভিটি: এক স্ক্রিনে সব সংযোগবর্তমানে টিভি শুধু সম্প্রচার মাধ্যম নয়; এটি হয়ে উঠেছে একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল ইউনিট। মোবাইল ফোন, স্পিকার, ল্যাপটপ, গেমিং কনসোল—সব ডিভাইস এখন টিভির সঙ্গে সহজেই সংযুক্ত করা যায়।
বেশির ভাগ স্মার্ট টিভিতে রয়েছে ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, এইচডিএমআই এআরসি, এয়ার প্লে, মিরাকাস্টসহ বিভিন্ন সুবিধা। ফলে ব্যবহারকারী চাইলে নিজের ফোনের ছবি, ভিডিও বা প্রেজেন্টেশন মুহূর্তেই বড় স্ক্রিনে শেয়ার করতে পারেন। সেই সঙ্গে আধুনিক টিভিগুলোতে রয়েছে গেমারদের জন্য এইচডিএমআই ২.১ পোর্ট এবং কম ইনপুট ল্যাগযুক্ত ডিসপ্লে, যা গেমিং এক্সপেরিয়েন্সকে করে তোলে আরও স্মুথ।
আধুনিক টিভিগুলো ব্যবহারকারীদের এনে দিয়েছে একসঙ্গে বিনোদন, সংযোগ, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স