শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন অহিদুল্লাহ মিয়া (৬৫)। তিনি কুলিয়ারচর উপজেলার বাসিন্দা। তাঁকে দিনে একাধিকবার নেবুলাইজার নিতে হয়। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে তাঁর সমস্যা বাড়তে থাকে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই নেবুলাইজার পেতে তিনি বারবার নার্সদের তাগিদ দিচ্ছিলেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। একপর্যায়ে নেবুলাইজার পেতে তিনি হাসপাতালে ছোটাছুটি শুরু করেন। কিন্তু হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকায় নার্সরাও ছিলেন অসহায়। বিদ্যুৎ না থাকায় জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম সচল করা সম্ভব হয়নি।

কেবল অহিদুল্লাহ নন, প্রয়োজন হওয়া সত্ত্বেও আরও অনেক রোগী নেবুলাইজার সেবা পাননি। তবে চার ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ আসে। তখন হাসপাতালের স্বাভাবিক সেবা চালু হয়। অহিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্বাস নিতে পারতেছিলাম না। মনে হইছিল, অহনই দম বাইর হইয়া যাইব। আর কিছুক্ষণ দেরি হইলে কী হইত, আল্লাহ জানে।’

হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স তারজিয়া আক্তার বলেন, বিশেষ করে শ্বাসকষ্টের রোগীরা একটু পরপর এসে হইচই করছিলেন নেবুলাইজারের জন্য। কিন্তু কিছুই করার ছিল না। খুব অসহায় লাগছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালের কাছে আবাসিক বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগে ৪১ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও পরিশোধ না করায় আজ সকাল ৯টার দিকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় নেবুলাইজার ছাড়াও অক্সিজেন সরবরাহ, ভ্যাকসিন সংরক্ষণ, ও প্যাথলজি ল্যাব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বহু রোগী প্রত্যাশিত সেবা পাননি। পরে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে বিল পরিশোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লিখিত প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর বিদ্যুৎ বিভাগ বেলা ১টার দিকে সংযোগ ফিরিয়ে দেয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি কাগজে-কলমে ১০০ শয্যার হলেও সরকারি সুবিধা মেলে ৫০ শয্যার মতো। তাতে রোগীর চাপ বেশি, আবার বিদ্যুৎ খরচও তুলনামূলক বেশি। এর ওপর যোগ হয়েছে ২০ শয্যার একটি ট্রমা সেন্টার, যার কার্যক্রম না থাকলেও বিদ্যুৎ ব্যবহার চলছে। ৪১ লাখ টাকার বকেয়ার মধ্যে ২৩ লাখ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের, আর ১৮ লাখ ট্রমা সেন্টারের। ট্রমা সেন্টারের জন্য আলাদা বাজেট না থাকায় এই বিলও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকেই পরিশোধ করতে হয়। এর আগে দুই দফায় ১৪ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ রোগী শয্যায় বসে আছেন, অনেকের স্বজন হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন। পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা শ্বাসকষ্টের রোগী হানিফ মিয়া বলেন, ‘এই গরমে ফ্যান ছাড়া থাকা যায়? ঘামে বিছানা ভিজা গেছে। ভাবতেছিলাম, বাড়িতে চইল্লা যামু।’ পাশের শয্যার রোগী আলতু আলী বলেন, ‘কারেন্ট না থাকায় আরও বেশি অসুস্থ হইয়া গেছি।’

আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো.

আবদুল করিম বলেন, সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে আজ লিখিতভাবে জানানো হয়নি। তবে মৌখিকভাবে আগেই জানানো হয়েছিল। জানলে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া যেত। বেলা ১টার দিকে বিদ্যুৎ–সংযোগ পুনরায় স্থাপন করা হয়।

ভৈরব আবাসিক বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, দিন দিন বকেয়া বাড়ছিল। অনেকবার বলার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিল পরিশোধ করেনি। তাই বাধ্য হয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স শ ব সকষ ট র ন ব ল ইজ র পর শ ধ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নারী নিহত

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের রাজৈরে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের খাদে পড়ে এক নারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) মধ্যরাতে রাজৈর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। 

নিহত নিলুফা ইয়াসমিন নিলা (৩০) বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রুনসী গ্রামের আবুল বাসারের স্ত্রী।

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে ডাম্পট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কা, মা-মেয়ে নিহত

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুয়াকাটা থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল চন্দ্রা পরিবহনের বাসটি। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের রাজৈর বাসস্ট্যান্ড পার হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি সড়কের পাশের খাদে পড়ে যায়।  পরে হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিলার মরদেহ উদ্ধার করে। আহত হন অন্তত ২০ জন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

মাদারীপুরের মস্তফাপুর হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, বাস খাদে পড়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করা হয়। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। একজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। নিহত নারীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা/বেলাল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ