রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ে দেখা মিলল গোলাপি রঙের একটি দুই মাস বয়সী বন্যহাতির শাবক। জেলার বরকল উপজেলার বরুণাছড়ি ইউনিয়নে দুর্গম পাহাড়ে বন বিভাগের এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের (ইআরটি) এক সদস্য গত ১৩ জুন প্রথমে গোলাপি রঙের শাবকটি দেখতে পান। একটি হাতির পাল গোলাপি রঙের নতুন হাতির শাবকসহ বরুণাছড়ি এলাকায় কাপ্তাই হ্রদ পার হতে দেখেন তিনি। সেই দৃশ্যটি সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও ধারণ করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পাঠান এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের পর বিষয়টি সামনে আসে।

বন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, বরকল উপজেলার বরুণাছড়ি ইউনিয়নে থাকা হাতির পালে আটটি হাতি আছে। এর মধ্যে পাঁচটি পূর্ণ বয়সী, একটি কিশোর, দুটি শাবক। সবচেয়ে ছোট শাবকটি গোলাপি রঙের। সাধারণত বাচ্চা হাতির সারা গায়ের লোম কালো হলেও নতুন শাবকের গায়ের রঙ অনেকটাই গোলাপি এবং কিছুটা ব্যতিক্রম এই গোলাপি শাবক। হাতির দলের সঙ্গে থাকা এ শাবকটির বয়স আনুমানিক দুই মাস। শাবকটি পুরুষ। বন কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে এর আগে এমন রঙের হাতির দেখা পাওয়া যায়নি। হাতি শাবকের মা স্বাভাবিক রঙের, তবে দলনেত্রীর শুঁর ও মাথার সম্মুখভাগ স্বাভাবিকের তুলনায় গোলাপি। 

দুর্গম পাহাড়ে হাতির অবস্থান সম্পর্কে ইআরটি-এর সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘‘সেদিন আমার বাড়ির পাশ থেকে দেখি কয়েকটি হাতি সাঁতরে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যাচ্ছে। সেগুলো যেতে দেখে আমি তাদের ভিডিও ধারণ করি। সাঁতার কেটে হাতি একে একে উঠার সময় দেখতে পেলাম বাচ্চা শাবকটির রঙ গোলাপি রঙের। এটি দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম। ভিডিওটি স্টেশন কর্মকর্তা শরিফুল স্যারের কাছে পাঠাই। এরপর অনেকেই হাতি দেখার জন্য এবং গবেষণা করার জন্য আসছেন।’’ 

আরো পড়ুন:

মাগুরায় সড়কে হাতির আকস্মিক মৃত্যু

উখিয়ায় সংরক্ষিত বন থেকে মৃত হাতি উদ্ধার

পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের কাচালংমুখ বন শুল্ক ও পরীক্ষণ ফাঁড়ির স্টেশন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘‘ইআরটি-এর সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের কাছ থেকে ভিডিওটা দেখে আমি নিজেই হাতিটি দেখতে যাই। আমিও দুই মাসের এই শাবকটি গোলাপি রঙের দেখতে পাই। পরবর্তীতে বন্য প্রাণী গবেষকসহ বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এলাকা পরিদর্শন করেছেন।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘যে গবেষকেরা এসেছেন, তারা জানিয়েছেন রঞ্জক পর্দাথের অভাবে শাবকটি এই ধরনের গোলাপি রঙের হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি বাংলাদেশের প্রথম বলেও তারা জানিয়েছেন। বর্তমান হাতিগুলো সুস্থ আছে। এরা এখন গহীন জঙ্গলে রয়েছে।’’ 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাতির চামড়ায় যে রঞ্জক পদার্থ তৈরি হয়, তা যদি কোনো অস্বাভাবিকতার কারণে তৈরি না হয়; তখন সেটি কিছুটা ফ্যাকাসে বা গোলাপি রঙ ধারণ করে এবং এই নতুন হাতির শাবকটির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। হাতির জিনগত কোনো অস্বাভাবিকতার কারণে অনেক সময় হাতির গায়ের রঙের ভিন্নতা আসে এবং এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।  

‘‘প্রাণী জগতে এটা বিরল হলেও অস্বাভাবিক কিছু না’’ বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড.

সুপ্রিয় চাকমা। তিনি বলেন, ‘‘শাবকটির মা-বাবা কিংবা তার আগের প্রজন্ম হয়ত এই জেনেটিক বৈশিষ্ট্য বহন করে আসছে। হয়ত সেটা কয়েক প্রজন্মও হতে পারে। আর এটি হয়ত এই শাবকটির মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘পলিটিক্যালি রাষ্ট্র ভাগ হলেও প্রাণিজগতের ক্ষেত্রে তো আর বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এসব দেশ আলাদা না। সেই ক্ষেত্রে হয়ত শত বছর আগেও কোনো এক প্রজন্মের মধ্যে এই জেনেটিক বৈশিষ্ট্য ছিল। এটা অস্বাভাবিক কিছু না।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘বুনো কিংবা পোষা প্রাণীর মধ্যে অনেক সময় স্বাভাবিক গায়ের রং থেকে আলাদা সাদা রঙের প্রাণী দেখা যায়। এদের ‘অ্যালবিনো’ বলা হয়। তবে হাতির ক্ষেত্রে পুরোপুরি সাদা অ্যালবিনো অত্যন্ত বিরল। হাতির ক্ষেত্রে আংশিক রং পরিবর্তন দেখা যায় বেশি। লালচে-বাদামি কিছু হাতি আছে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস ও ভিয়েতনামে। পানিতে ভিজলে এই রঙের হাতিকে হালকা গোলাপি মনে হয়।’’  

পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘‘হাতি শাবকটি দেখতে কিছুটা সাদা প্রকৃতির। তবে ভেজা শরীরে কিছুটা গোলাপি রঙ ধারণ করে।’’ কেন এই ধরনের রঙ ধারণ করে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এটা গবেষণার বিষয়। গবেষণার মাধ্যমে এর উত্তর দেয়া সম্ভব।’’ 

তিনি আরো জানান, উত্তর বন বিভাগের অধীনে তিনটি এলিফেন্ট রেসপন্স টিম গঠন করা হয়। এই তিন টিমে মোট ৪৬ জন সদস্য হাতি ও মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে কাজ করছেন বলে তিনি জানান। 

ঢাকা/শংকর/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত র বন ব ভ গ র শ বকট র র শ বক সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

আরো ৭ দেশে ব্র্যান্ড বিজনেস সম্প্রসারণ ওয়ালটনের

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ গ্লোবাল ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড হয়ে উঠার লক্ষ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে এগিয়ে যাচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত টেক জায়ান্ট ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। সেই লক্ষ্য অর্জনে বৈশ্বিক বাজার সম্প্রসারণে ব্যাপক সাফল্য দেখাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিনিয়ত ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার নতুন নতুন দেশে নিজস্ব ব্র্যান্ড বিজনেস সম্প্রসারণ করে চলেছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত অন্যতম শীর্ষ এই প্রতিষ্ঠান। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নতুন ৭টি দেশে সম্প্রসারিত হয়েছে ওয়ালটনের ব্র্যান্ড বিজনেস।

ওয়ালটন গ্লোবাল বিজনেস শাখার সূত্রমতে, গত অর্থবছরে ওয়ালটনের ব্র্যান্ড বিজনেস সম্প্রসারণকৃত দেশের তালিকায় রয়েছে উত্তর ও মধ্য আমেরিকায় অবস্থিত ক্যারিবিয়ান দ্বীপ বার্বাডোস, ওশেনিয়া অঞ্চলের দ্বীপরাষ্ট্র ফিজি ও ভানুয়াতু, আফ্রিকা মহাদেশের ক্যামেরুন ও ক্যাপভার্ড এবং এশিয়ার শ্রীলঙ্কা ও সিঙ্গাপুর।

আরো পড়ুন:

ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্স পরিদর্শন করলেন ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের প্রতিনিধিরা

এবার ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ওয়ালটনের ব্র্যান্ড বিজনেস সম্প্রসারণ

আন্তর্জাতিক বাজার কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে ওয়ালটনের গ্লোবাল বিজনেস ডিভিশনের প্রধান আব্দুর রউফ বলেন, “পণ্যের সর্বাধুনিক উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, টেকসই ও উচ্চ গুণগতমান, বিদ্যুৎ সাশ্রয়, পরিবেশবান্ধব এবং মূল্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় আন্তর্জাতিক বাজারে অন্যান্য ব্র্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ওয়ালটন। ফলে বৈশ্বিক বাজারে ওয়ালটন ব্র্যান্ড অতি অল্প সময়ের মধ্যে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করে নিতে সক্ষম হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে নতুন নতুন দেশে প্রতিনিয়ত ব্র্যান্ড বিজনেস সম্প্রসারণ করে চলেছে ওয়ালটন।”

তিনি বলেন, “গত এক বছরে (২০২৪-২৫) নতুন ৭টি দেশের বাজারে ওয়ালটন ব্র্যান্ড বিজনেস কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।”

আব্দুর রউফ জানান, চলতি দশকের শুরু থেকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গ্লোবাল ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডের তালিকায় স্থান করে নেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে ওয়ালটন। সেই লক্ষ্য অর্জনে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত বিশ্বের বাজারে নিজস্ব ব্র্যান্ড বিজনেস সম্প্রসারণে কাজ করছে ওয়ালটন। সেজন্য সুদক্ষ এবং চৌকস গ্লোবাল বিজনেস টিম গঠন করা হয়েছে।পাশাপাশি কয়েকটি দেশে সাবসিডিয়ারি এবং শাখা অফিস স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়ায় স্থাপন করা হয়েছে ওয়ালটনের গ্লোবাল রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার। সেখানে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচারের উদ্ভাবনী পণ্যের পাশাপাশি ইউরোপ ও আমেরিকার স্ট্যান্ডার্ড, আবহাওয়া এবং ক্রেতাদের চাহিদা ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণার প্রেক্ষিতে পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। যার ফলে একের পর এক নতুন দেশে ওয়ালটন পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ করা সম্ভব হচ্ছে।”

ফ্রিজ, এসি, টিভি, ওয়াশিং মেশিন, কম্প্রেসর, ফ্যানসসহ অন্যান্য ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যসামগ্রী রপ্তানিকারক শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত ওয়ালটন পণ্য। বাংলাদেশে ওয়ালটন পণ্য ক্রেতা চাহিদার শীর্ষে রয়েছে।যার ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের কাছে ওয়ালটন আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

ঢাকা/সাহেল/পলাশ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ