মব (উচ্ছৃঙ্খল জনতার বিশৃঙ্খলা) সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা গ্রহণযোগ্য নয় এবং শুধু বিবৃতি দিয়ে দায় এড়ানো যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, বিচারের আগেই মব সৃষ্টি করে হেনস্তার মাধ্যমে অপরাধীর বিমানবিকীকরণের যে উদাহরণ সৃষ্টি হচ্ছে, তা মোটেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কোনো দৃষ্টান্ত নয়।

বিচারের নামে কোনো প্রহসন কিংবা মব বিচার যাতে আর কোনোভাবেই চলতে না পারে, সে জন্য সরকারকে অবিলম্বে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এই নেতা।

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর হাতিরপুলে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জোনায়েদ সাকি এ কথাগুলো বলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গণসংহতি আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা এবং দলের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

গত রোববার রাতে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে জুতার মালা গলায় পরানোর ঘটনা উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘সম্প্রতি ২০১৮ সালের নৈশ নির্বাচনের হোতা কে এম নূরুল হুদাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে জুতার মালা গলায় পরানোর ঘটনা আমরা দেখলাম। বাংলাদেশে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের প্রহসনের নির্বাচনের পেছনে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকেরই এসব নির্বাচন ও গণতন্ত্র ধ্বংসের দায় আছে। তাঁদের সবাইকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু বিচারের আগেই মব সৃষ্টি করে তাঁদের হেনস্তা করার মাধ্যমে অপরাধীর বিমানবিকীকরণের যে উদাহরণ সৃষ্টি হচ্ছে, তা মোটেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কোনো দৃষ্টান্ত নয়।’

সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘দেশে একধরনের মব তৈরি করে হামলা, অবমাননা ও নির্যাতনের সংস্কৃতি চালু হচ্ছে। এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এর আগে সংখ্যায় কম এমন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ হয়েছে, মাজারে আক্রমণ হয়েছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর আক্রমণ হয়েছে, বিভিন্ন ব্যক্তির ওপরও আক্রমণ হয়েছে। অভ্যুত্থানের ১০ মাস অতিবাহিত হলেও এসব ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কার্যকর কোনো ভূমিকায় দেখা যায়নি। বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের উপস্থিতি থাকলেও নিষ্ক্রিয়তা দেখা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত সব বাহিনীর কার্যকর ভূমিকা দেখতে চাই।’

গতকাল সোমবার রাতে ঢাকার বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান জোনায়েদ সাকি। অবিলম্বে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত না হলে এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় না আনা হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটার আরও সুযোগ তৈরি হবে। সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে যথাযথ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান সাকি।

অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে মাসব্যাপী কর্মসূচি

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান। জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে দলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ৪ জুলাই জুলাই যোদ্ধা এবং শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সম্মিলন। ৫ জুলাই গণসংহতির তরুণ জুলাই যোদ্ধাদের নতুন বাংলাদেশবিষয়ক ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় ও বিশেষ জাতীয় বর্ধিত সভা, ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের স্মৃতিবিজড়িত রংপুর জেলায় জুলাই সমাবেশ, ২৫ জুলাই ঢাকায় জুলাই গণসমাবেশ, ১ আগস্ট শহীদ জুলফিকার শাকিলের (ছাত্র ফেডারেশন নেতা) স্মৃতিবিজড়িত ঢাকার মিরপুরে জুলাই সমাবেশ এবং ৪ আগস্ট জুলাই-আগস্টের শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি। অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে গণসংহতির বিভিন্ন বন্ধুপ্রতিম গণসংগঠনও মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করবে বলে জানান আবুল হাসান।

এ ছাড়া আগামী ১০ থেকে ১২ অক্টোবর গণসংহতি আন্দোলনের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা করেন নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান। তবে কখন বা কোথায় এই সম্মেলন হবে, তা পরে জানানো হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে গণসংহতির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দিন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, দীপক কুমার রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অপর ধ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

এক দিনে গ্রেপ্তার ১৭৯৭

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন অপরাধে এক দিনে ১ হাজার ৭৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

রবিবার (২২ জুন) ২৪ ঘণ্টায় পরিচালিত অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার (২৩ জুন) পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের নিয়মিত অভিযানে গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ১৮৭ জন মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। এছাড়া অন্যান্য অভিযোগে ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আরো পড়ুন:

স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ২

কুড়িগ্রামে আ.লীগ ও যুবলীগের ৬ নেতাকর্মী কারাগারে 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ অভিযানে বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্য রয়েছে রাইফেল ৩টি, বিদেশি পিস্তল ১টি, ম্যাগাজিন ৪টি, চাপাতি ১টি, রামদা ১টি, ছুরি ২টি, ৬৬ রাউন্ড গুলি ও ককটেল।

পুলিশ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ধারাবাহিকভাবে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। এসব অভিযানে শুধু অপরাধী নয়, অস্ত্র ও মাদকের উৎস খুঁজে বের করে মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনাই লক্ষ্য।

ঢাকা/এমআর/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাতীয় নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকবে
  • সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় মানবাধিকার লঙ্ঘন, ৩০ নাগরিকের বিবৃতি
  • ব্যক্তি পর্যায়ে মুঠোফোন সিমের ব্যবহার আরও কমাচ্ছে সরকার
  • ৩০ নাগরিকের বিবৃতি: সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় মানবাধিকারের অঙ্গীকার লঙ্ঘিত হচ্ছে
  • লালমনিরহাটে ‘মব সন্ত্রাস’ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাবা-ছেলেকে হেনস্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ
  • ‘মব ভায়োলেন্স’ বন্ধ করা যাচ্ছে না, তবে কমিয়ে আনা হচ্ছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি
  • রথযাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চিতে ডিএমপিতে সমন্বয় সভা
  • এক দিনে গ্রেপ্তার ১৭৯৭