‘মব’ করে হেনস্তা ও অপরাধীর বিমানবিকীকরণ ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত নয়: জোনায়েদ সাকি
Published: 24th, June 2025 GMT
মব (উচ্ছৃঙ্খল জনতার বিশৃঙ্খলা) সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা গ্রহণযোগ্য নয় এবং শুধু বিবৃতি দিয়ে দায় এড়ানো যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, বিচারের আগেই মব সৃষ্টি করে হেনস্তার মাধ্যমে অপরাধীর বিমানবিকীকরণের যে উদাহরণ সৃষ্টি হচ্ছে, তা মোটেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কোনো দৃষ্টান্ত নয়।
বিচারের নামে কোনো প্রহসন কিংবা মব বিচার যাতে আর কোনোভাবেই চলতে না পারে, সে জন্য সরকারকে অবিলম্বে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এই নেতা।
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর হাতিরপুলে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জোনায়েদ সাকি এ কথাগুলো বলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গণসংহতি আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা এবং দলের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
গত রোববার রাতে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে জুতার মালা গলায় পরানোর ঘটনা উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘সম্প্রতি ২০১৮ সালের নৈশ নির্বাচনের হোতা কে এম নূরুল হুদাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে জুতার মালা গলায় পরানোর ঘটনা আমরা দেখলাম। বাংলাদেশে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের প্রহসনের নির্বাচনের পেছনে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকেরই এসব নির্বাচন ও গণতন্ত্র ধ্বংসের দায় আছে। তাঁদের সবাইকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু বিচারের আগেই মব সৃষ্টি করে তাঁদের হেনস্তা করার মাধ্যমে অপরাধীর বিমানবিকীকরণের যে উদাহরণ সৃষ্টি হচ্ছে, তা মোটেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কোনো দৃষ্টান্ত নয়।’
সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘দেশে একধরনের মব তৈরি করে হামলা, অবমাননা ও নির্যাতনের সংস্কৃতি চালু হচ্ছে। এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এর আগে সংখ্যায় কম এমন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ হয়েছে, মাজারে আক্রমণ হয়েছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর আক্রমণ হয়েছে, বিভিন্ন ব্যক্তির ওপরও আক্রমণ হয়েছে। অভ্যুত্থানের ১০ মাস অতিবাহিত হলেও এসব ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কার্যকর কোনো ভূমিকায় দেখা যায়নি। বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের উপস্থিতি থাকলেও নিষ্ক্রিয়তা দেখা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত সব বাহিনীর কার্যকর ভূমিকা দেখতে চাই।’
গতকাল সোমবার রাতে ঢাকার বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান জোনায়েদ সাকি। অবিলম্বে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত না হলে এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় না আনা হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটার আরও সুযোগ তৈরি হবে। সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে যথাযথ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান সাকি।
অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে মাসব্যাপী কর্মসূচি
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান। জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে দলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ৪ জুলাই জুলাই যোদ্ধা এবং শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সম্মিলন। ৫ জুলাই গণসংহতির তরুণ জুলাই যোদ্ধাদের নতুন বাংলাদেশবিষয়ক ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় ও বিশেষ জাতীয় বর্ধিত সভা, ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের স্মৃতিবিজড়িত রংপুর জেলায় জুলাই সমাবেশ, ২৫ জুলাই ঢাকায় জুলাই গণসমাবেশ, ১ আগস্ট শহীদ জুলফিকার শাকিলের (ছাত্র ফেডারেশন নেতা) স্মৃতিবিজড়িত ঢাকার মিরপুরে জুলাই সমাবেশ এবং ৪ আগস্ট জুলাই-আগস্টের শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি। অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে গণসংহতির বিভিন্ন বন্ধুপ্রতিম গণসংগঠনও মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করবে বলে জানান আবুল হাসান।
এ ছাড়া আগামী ১০ থেকে ১২ অক্টোবর গণসংহতি আন্দোলনের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা করেন নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান। তবে কখন বা কোথায় এই সম্মেলন হবে, তা পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে গণসংহতির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দিন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, দীপক কুমার রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শাটডাউনের বিপক্ষে জনজীবন
আওয়ামী লীগের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকায় জনজীবনে তেমন কোনো চাপ সৃষ্টি হয়নি।
রবিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল থেকে গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, চানখারপুল, সচিবালয়, জিপিওসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো ঘুরে দেখা গেছে- যান চলাচল স্বাভাবিক, মানুষের চলাচল স্বাভাবিক এবং বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডও অন্যান্য দিনের মতোই চলছে।
আরো পড়ুন:
ঢাবি শিক্ষক এরশাদের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি ছাত্র ফ্রন্টের
ঢাবিতে কৃত্রিম বুদ্ধমত্তা-বিষয়ক জাতীয় প্রতিযোগিতা
সকাল থেকেই বিভিন্ন সড়কে রিকশা ও অটোরিকশার আধিক্য যেমন লক্ষ্য করা গেছে, বাসের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীও দেখা গেছে। কোথাও যান সংকট হয়নি, বরং কিছু বাসে বাড়তি যাত্রীর চাপ ছিল।
গুলিস্তানে এক বেসরকারি অফিসকর্মী রিফাত হোসেন বলেন, “শাটডাউন বলে আজকে কিছুই বুঝলাম না। প্রতিদিন যেমন বের হই, আজও ঠিক তেমনই বের হয়েছি। রাস্তায় কোনো সমস্যা দেখিনি।”
চানখারপুলে বাসের জন্য অপেক্ষমাণ মাহমুদা আক্তার বলেন, “শাটডাউনের নামে মানুষকে ভয় দেখানো ঠিক না। বাস কম হলেও চলাচল পুরোপুরি থেমে যায়নি। আমরা স্বাভাবিকভাবেই অফিসে যাচ্ছি।”
ঠিকানা পরিবহন শ্রমিক শহীদুল ইসলাম বলেন, “শাটডাউন ডেকেছে শুনেছি, কিন্তু রাস্তায় কোনো প্রভাব নেই। পুলিশের বাড়তি অবস্থানও দেখি নাই। গাড়ি চলছে, যাত্রীও আছে।”
সচিবালয়ের কাছে একজন সরকারি চাকরিজীবী হাসিবুল করিম বলেন, “শাটডাউনের মতো কর্মসূচি কখনোই জনস্বার্থের পক্ষে নয়। এতে ব্যবসার ক্ষতি হয়, মানুষের দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হয়। আজকে যানচলাচল প্রতিদিনের মতোই।”
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক
নিষিদ্ধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সতর্ক উপস্থিতি বিশেষভাবে দেখা যায়নি। নিয়মিত দায়িত্বপালন ছাড়া আলাদা কোনো প্রস্তুতি চোখে পড়েনি।
শাটডাউনের বিপক্ষে জনমতই শক্তিশালী
সরেজমিন চিত্র, সাধারণ মানুষের বক্তব্য এবং বিভিন্ন পরিবহন সংশ্লিষ্টদের প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট- রাজধানীবাসী শাটডাউনের পক্ষে নয়। বরং জনজীবন স্বাভাবিক রাখার পক্ষেই তাদের মত।
রাজধানীর ৩৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জসিম উদ্দীন বলেন, ব্যস্ত সকাল, মানুষের স্বাভাবিক আনাগোনা এবং চলমান পরিবহন কার্যক্রম প্রমাণ করেছে- শাটডাউন ঢাকার জনজীবনে চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি বরং জনগণ নিষেধাজ্ঞামূলক রাজনীতির বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত অবস্থানই দেখিয়েছে।
ঢাকা/আসাদ/ফিরোজ