বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, কষ্ট পেলেন কয়েকশ রোগী
Published: 24th, June 2025 GMT
দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেনি কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। এ কারণে দুই হাসপাতালেরই বিদ্যুৎ সংযোগ গতকাল মঙ্গলবার বিচ্ছিন্ন করা হয়। এতে প্রায় চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় ভোগান্তি পোহান রোগীসহ হাসপাতালের সবাই।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বকেয়া ২৩ লাখ এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতাধীন বিশেষায়িত ট্রমা সেন্টারের বকেয়া ১৮ লাখ টাকা।
একাধিকবার চিঠি দিলেও বকেয়া পরিশোধ করেনি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল সকাল ৯টায় হাসপাতালের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় জেলা পিডিবি অফিস। এতে ৬ শতাধিক রোগীর চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়। চিঠি পাঠিয়ে বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দিলে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে পুনরায় সংযোগ দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
এ বিষয়ে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. হেলিশ রঞ্জন সরকার বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে থেকেই কিছু কিছু বকেয়া জমেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যখনই কিছু টাকা বরাদ্দ দেয়, তখনই বিল পরিশোধ করা হয়। এবার বকেয়ার জন্য পিডিবি অফিস থেকে একাধিকবার চিঠি পাঠালে তাদের আগামী অর্থবছরের জন্য জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে অনুরোধ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, মাত্র এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে পারল না! হাসপাতালের মতো একটা স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল। ৬ শতাধিক রোগীর চরম ভোগান্তি হয়েছে। অস্ত্রোপচারের শিডিউল ছিল। সেগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছে। প্যাথলজিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমারও টাকা না, নির্বাহী প্রকৌশলীরও না। এক মন্ত্রণালয়ের টাকা যাবে আরেক মন্ত্রণালয়ে। এর জন্য এত বড় হাসপাতালের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া আগে কখনও দেখিনি।’
শিশু ওয়ার্ডের দুই অভিভাবক আসমা আক্তার ও সাইদুর রহমান জানান, প্রচণ্ড গরমে সব রোগীরই অনেক কষ্ট হয়েছে। বেশি কষ্ট হয়েছে শিশুদের।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও সকাল ৯টায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বিদ্যুৎ অফিস। এতে পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ সব ধরনের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি সেবা বন্ধ। ভর্তিকৃত রোগী আছেন ৫০ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ওয়ার্ডে ১৭ জন, মহিলা ওয়ার্ডে ১৭, শিশু ওয়ার্ডে ১৪ ও গাইনি ওয়ার্ডে ২ জন। শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যাই বেশি। বিদ্যুৎ না থাকায় তারা নেবুলাইজার নিতে পারছেন না। চিকিৎসাধীন আম্বিয়া বেগম বলেন, ‘এমনেতে অই গতর ভালা না। আবার কারেন নাই। গরমে ভিতরডা ছটপড করতাছে।’
হাসপাতালের প্যাথলজিস্ট লুৎফর রহমান জানান, সকালে হাসপাতালে আসার পর থেকেই দেখেন, বিদ্যুৎ নেই। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গড়ে ৫০ জনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় কোনো সেবা দেওয়া যায়নি।
কোনো নোটিশ ছাড়াই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আব্দুল করিম। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক রোগী ফিরে গেছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ থাকায় দু’জন নারীর অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি।
আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা জানান, এই হাসপাতাল ১০০ শয্যার হলেও এখনও ৫০ শয্যাই রয়ে গেছে। কিন্তু প্রতিটি বিভাগে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে। তাই দিন দিন বিল বাড়ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নতুন যোগদান করেছেন। তিনি এ বিষয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। চিঠির মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভাগকে টাকা পরিশোধের নির্ধারিত সময় জানানো হবে।
এ বিষয়ে প্রথমে কথা বলতে চাননি ভৈরব বিদ্যুৎ অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মো. সামসুল আলম। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এ বিষয়ে কথা বলতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি দেয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল থাকায় লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই তা চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি মহোদয় অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে বকেয়া বিল পরিশোধ করবেন। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আবার বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স স ব স থ য কমপ ল ক স স য গ ব চ ছ ন ন কর পর ক ষ কর ছ ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
রবি শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি প্রত্যাহার, যমুনা সেতুতে যান চলাচল স্বাভাবিক
যমুনা সেতু পশ্চিম মহাসড়কে হওয়া ব্লকেড ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ১ ঘণ্টা পর প্রত্যাহার করেছেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুর ১ টা ১০ মিনিটে এ কর্মসূচি স্থগিত করেন তারা।
এর আগে, স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে যমুনা সেতু পশ্চিমে মহাসড়ক ব্লকেড করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের ২২ জেলার যাত্রী ও চালকেরা দুর্ভোগে পড়েন।
আরো পড়ুন:
দ্বিতীয় তিস্তা সেতু উদ্বোধনের নতুন তারিখ ঘোষণা
উদ্বোধনের আগেই ঝুঁকিতে পড়ছে দ্বিতীয় তিস্তা সেতু
এর আগে, স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) দ্রুত অনুমোদন ও বাস্তবায়নের দাবিতে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে যমুনা সেতু পশ্চিম গোলচত্বর এলাকায় ঢাকা ও উত্তরবঙ্গমুখী উভয় লেন বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচীর কারণে মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
ব্লকেড প্রত্যাহারের পর ঢাকা ও উত্তরবঙ্গগামী উভয় লেনে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। এতে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের ২২ জেলার যাত্রী ও চালকেরা দুর্ভোগে পড়েন। বর্তমানে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
যমুনা সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান মহাসড়কে স্বাভাবিকভাবে যান চলাচলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জাকারিয়া জিহাদ বলেন, “১১টা ৫০ মিনিটে যমুনা সেতু পশ্চিম মহাসড়কে শিক্ষার্থীরা বসে পড়েন। এতে উভয় লেনেই যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ১ ঘণ্টা মহাসড়কে বিক্ষোভ করার পরে সড়ক ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “আজকে রেল ও সড়ক পথ অবরোধের কথা ছিল। কিন্তু বুধবার (১৩ আগস্ট) উল্লাপাড়ায় রেলপথ অবরোধের কারণে সিডিউল বিপর্যয় ঘটে। জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা রেলপথ ছেড়ে দিয়েছি। তবে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে বিক্ষোভ করার পর মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছি। শিগগিরই আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।”
প্রতিষ্ঠার ৯ বছরেও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্কের (ডিপিপি) অনুমোদন না হওয়ায় আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের সঙ্গে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
গত ১৯ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত একটানা কর্মসূচিতে মহাসড়ক অচল করে দেয় শিক্ষার্থীরা। তখন সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করায় আন্দোলন স্থগিত করা হয়। এরপর ৬ মাসেও ডিপিপি অনুমোদন না হওয়ায় ২৬ জুলাই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচি বয়কটের মধ্য দিয়ে পূণরায় আন্দোলন শুরু হয়।
ঢাকা/রাসেল/মেহেদী