দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেনি কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। এ কারণে দুই হাসপাতালেরই বিদ্যুৎ সংযোগ গতকাল মঙ্গলবার বিচ্ছিন্ন করা হয়। এতে প্রায় চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় ভোগান্তি পোহান রোগীসহ হাসপাতালের সবাই।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বকেয়া ২৩ লাখ এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতাধীন বিশেষায়িত ট্রমা সেন্টারের বকেয়া ১৮ লাখ টাকা।

একাধিকবার চিঠি দিলেও বকেয়া পরিশোধ করেনি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল সকাল ৯টায় হাসপাতালের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় জেলা পিডিবি অফিস। এতে ৬ শতাধিক রোগীর চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়। চিঠি পাঠিয়ে বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দিলে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে পুনরায় সংযোগ দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

আবদুর রউফ বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবেও দেখা করেছেন। প্রয়োজনে পিডিবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেছেন। গত সোমবার ফোন করলেও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. হেলিশ রঞ্জন সরকার ফোন ধরেননি। সব শেষে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়। 
এ বিষয়ে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. হেলিশ রঞ্জন সরকার বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে থেকেই কিছু কিছু বকেয়া জমেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যখনই কিছু টাকা বরাদ্দ দেয়, তখনই বিল পরিশোধ করা হয়। এবার বকেয়ার জন্য পিডিবি অফিস থেকে একাধিকবার চিঠি পাঠালে তাদের আগামী অর্থবছরের জন্য জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে অনুরোধ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, মাত্র এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে পারল না! হাসপাতালের মতো একটা স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল। ৬ শতাধিক রোগীর চরম ভোগান্তি হয়েছে। অস্ত্রোপচারের শিডিউল ছিল। সেগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছে। প্যাথলজিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমারও টাকা না, নির্বাহী প্রকৌশলীরও না। এক মন্ত্রণালয়ের টাকা যাবে আরেক মন্ত্রণালয়ে। এর জন্য এত বড় হাসপাতালের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া আগে কখনও দেখিনি।’

শিশু ওয়ার্ডের দুই অভিভাবক আসমা আক্তার ও সাইদুর রহমান জানান, প্রচণ্ড গরমে সব রোগীরই অনেক কষ্ট হয়েছে। বেশি কষ্ট হয়েছে শিশুদের।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও সকাল ৯টায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বিদ্যুৎ অফিস। এতে পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ সব ধরনের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি সেবা বন্ধ। ভর্তিকৃত রোগী আছেন ৫০ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ওয়ার্ডে ১৭ জন, মহিলা ওয়ার্ডে ১৭, শিশু ওয়ার্ডে ১৪ ও গাইনি ওয়ার্ডে ২ জন। শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যাই বেশি। বিদ্যুৎ না থাকায় তারা নেবুলাইজার নিতে পারছেন না। চিকিৎসাধীন আম্বিয়া বেগম বলেন, ‘এমনেতে অই গতর ভালা না। আবার কারেন নাই। গরমে ভিতরডা ছটপড করতাছে।’
হাসপাতালের প্যাথলজিস্ট লুৎফর রহমান জানান, সকালে হাসপাতালে আসার পর থেকেই দেখেন, বিদ্যুৎ নেই। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গড়ে ৫০ জনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় কোনো সেবা দেওয়া যায়নি। 

কোনো নোটিশ ছাড়াই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আব্দুল করিম। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক রোগী ফিরে গেছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ থাকায় দু’জন নারীর অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। 
আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা জানান, এই হাসপাতাল ১০০ শয্যার হলেও এখনও ৫০ শয্যাই রয়ে গেছে। কিন্তু প্রতিটি বিভাগে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে। তাই দিন দিন বিল বাড়ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নতুন যোগদান করেছেন। তিনি এ বিষয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। চিঠির মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভাগকে টাকা পরিশোধের নির্ধারিত সময় জানানো হবে।
এ বিষয়ে প্রথমে কথা বলতে চাননি ভৈরব বিদ্যুৎ অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মো. সামসুল আলম। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এ বিষয়ে কথা বলতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি দেয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল থাকায় লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই তা চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি মহোদয় অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে বকেয়া বিল পরিশোধ করবেন। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আবার বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।’
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স স ব স থ য কমপ ল ক স স য গ ব চ ছ ন ন কর পর ক ষ কর ছ ন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শুরু হচ্ছে বৃক্ষমেলা, উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা

ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে শুরু হচ্ছে পরিবেশ ও বৃক্ষমেলা। 

বুধবার (২৫ জুন) এই মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২৪, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ জাতীয় পুরস্কার ২০২৫ এবং বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার ২০২৪ প্রদান করা হবে। একইসঙ্গে সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের মাঝে লভ্যাংশের চেক বিতরণ করা হবে।

এ বছরের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য— “প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়” এবং বৃক্ষরোপণ অভিযানের প্রতিপাদ্য— “পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি”।

সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছিলেন, পরিবেশ মেলা চলবে ২৫ থেকে ২৭ জুন, আর বৃক্ষমেলা চলবে ২৫ জুন থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

উপদেষ্টা আরো জানান, মেলার অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ১০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিত্রাঙ্কন, বিতর্ক, স্লোগান প্রতিযোগিতা, সেমিনার এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজন করা হবে। এছাড়া, বিভিন্ন পর্যায়ে বৃক্ষমেলা ও শিক্ষার্থীদের মাঝে চারা বিতরণ করা হবে। এসএমএস প্রচারণা, ব্যানার স্থাপন ও জনসম্পৃক্ত কর্মসূচির মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা/হাসান/ইভা

সম্পর্কিত নিবন্ধ