ভোলা সরকারি কলেজ ছাত্রদল নেত্রী সুকর্ণা আক্তারের মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনের দাবি জানিয়েছে পরিবার ও তাঁর সংগঠন। গত ২০ জুন লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীরহাট নৌ পুলিশ মেঘনা নদীর তীর থেকে লাশ উদ্ধার করে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করে।

১৭ জুন ভোলা থেকে ঢাকাগামী একটি লঞ্চ থেকে সুকর্ণা মেঘনা নদীতে লাফ দেন। তিনি নিজে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন, নাকি তাঁকে কেউ ফেলে দিয়েছে– এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমন অবস্থায় তাঁর মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনের দাবি উঠেছে।

সুকর্ণা ভোলা সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী এবং কলেজ ছাত্রদলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি নতুন কমিটির ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক পদের জন্য ফরম জমা দিয়েছিলেন।
গতকাল মঙ্গলবার সদর উপজেলার নবীপুর গ্রামের বাড়িতে সুকর্ণার মা ইয়ানুর বেগম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমার মেয়ে লঞ্চ থেকে ঝাঁপ দিয়েছে, না তাকে মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে, না ধর্ষণ করে মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে– আমরা কিছুই জানি না। আমরা জানতে চাই। কারণ, সে নদীতে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের একটাই দাবি, কীভাবে হলো, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত বিষয়টি জানতে চাই। যদি কোনো অপরাধী বের হয়, তার যেন শাস্তি হয়।’
এদিকে, সুকর্ণার মৃত্যুর ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাম আসায় গতকাল কলেজে মানববন্ধন করেছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তারাও সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন এবং অপরাধীর শাস্তি দাবি করেন।

মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন ভোলা কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব ফজলুল করীম, যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর হোসেন, আরাফাত ইসলাম ইপ্তি, নির্বাহী সদস্য আবদুস সামাদ, ছাত্রদল কর্মী নাইম ইসলাম, জিদান আনবীর, কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
আরাফাত ইসলাম ইপ্তি জানান, কলেজ কমিটি গঠন নিয়ে কিছু বিরোধ চলছে। তিনি সভাপতি প্রার্থী হওয়ায় সংগঠনের প্রতিপক্ষ অপপ্রচার চালাচ্ছে। সুকর্ণার মৃত্যুর সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারের ঘটনায় মঙ্গলবার সদর মডেল থানায় জিডি করেন ইপ্তি।
জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জসিম উদ্দিন জানান, সুকর্ণার সঙ্গে তাদের দলীয় সম্পর্ক। পারিবারিক বিরোধকে ভিন্ন খাতে নিতে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি করে অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।
সুকর্ণার লাশ উদ্ধারের পর ২১ জুন নৌ পুলিশ লক্ষ্মীপুর সদর থানায় হত্যা মামলা করে। ২৩ জুন তাঁর বাবা মাসুদ রানা লক্ষ্মীপুর গিয়ে লাশ শনাক্তের পর একই থানায় অভিযোগ দেন। দুটি অভিযোগেই কারও নাম উল্লেখ নেই।

ভোলা সদর থানার ওসি আবু শাহাদৎ মো.

হাচনাইন পারভেজ জানান, সুকর্ণা নিখোঁজ হন ১৭ জুন। তাঁর বাবা ২০ জুন জিডি করেন। প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে মেয়ের নিখোঁজের কথা জানান তিনি। লক্ষ্মীপুর থানাকে ঘটনা তদন্তে সহায়তা করা হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর সদর থানার ওসি আবদুল মোন্নাফ জানান, তদন্ত কর্মকর্তা মঙ্গলবার ভোলার ইলিশা ঘাটে বিভিন্নজনকে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে মন্তব্য করতে রাজি হননি তদন্ত কর্মকর্তা আজিজুল হক।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স কর ণ র ম লক ষ ম প র ছ ত রদল র ন ত কর ইসল ম তদন ত র সদর

এছাড়াও পড়ুন:

বৃত্তি পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীরা

এবার পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে না কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সরকার থেকে পাওয়া বইয়ে তারা পড়াশোনা করলেও প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষা থেকে তাদের দূরে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে বিব্রত করার ষড়যন্ত্র দেখছেন শিক্ষকেরা।

নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ১৭ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক পরিপত্রে এবার বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। কিন্তু কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহী সিটি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী মহানগর শাখা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক রিপন বলেন, “সারাদেশে প্রায় ৪০ হাজার কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৭০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে পঞ্চম শ্রেণির প্রায় ৮ লাখ শিক্ষার্থী এবার বৃত্তি পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে। অথচ ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ও ২০২২ সালের বৃত্তি পরীক্ষায় কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে সাফল্য অর্জন করেছে।”

তিনি আরো বলেন, “এই শিক্ষার্থীরা একই বই পড়াশোনা করে। বই সরকারই দেয়। অথচ এবার তাদের বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক। বৃত্তি শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, এটি একটি শিক্ষার্থীর আত্মমর্যাদা ও অনুপ্রেরণার প্রতীক। কোনো শিশু শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের ধরন ভিন্ন হওয়ার কারণে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারলে তা মানসিক আঘাত ও হতাশার সৃষ্টি করবে। এটি জাতীয় শিক্ষানীতির সাম্যের নীতির পরিপন্থী। আমি অবিলম্বে পরিপত্রটি বাতিল করে সবাইকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘‘২০২৩ ও ২০২৪ সালে বৃত্তি পরীক্ষা হয়নি। তার আগের পরীক্ষাগুলোতে অংশ নিয়ে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি অর্জনের হার প্রায় শতভাগ। এই কারণে এবার তাদের পরীক্ষায় সুযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে একটি পক্ষ। কারণ, কিন্ডারগার্টেনে ভাল পড়াশোনা হয় বলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। শিক্ষার্থী টানতে কিন্ডারগার্টেনকে বাদ দিয়ে শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির সুযোগ দেওয়ার হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নানা বিষয়ে আন্দোলন লেগেই আছে। আমার মনে হয়, এটাও একটা ষড়যন্ত্রের অংশ। কারণ, কিন্ডারগার্টেনে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। তাদের বাদ দিলে আন্দোলন হতে পারে। সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে আমলাদের একটি গোষ্ঠী এ ষড়যন্ত্র করেছে বলে আমাদের ধারণা।’’

সংবাদ সম্মেলনের পর বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও প্রাথমিক শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এতে সব শিক্ষার্থীকেই বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। আর আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও বিভাগীয় উপপরিচালকের কার্যালয় ঘেরাও এবং ‘মার্চ ফর ঢাকা’সহ কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক শাহজাহান আলী, রাজশাহী মহানগর সভাপতি রফিকুল আলম, সহ-সভাপতি ড. ইব্রাহিম হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ, সাংগাঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, অর্থ সম্পাদক এম এম রহমান, শিক্ষা সম্পাদক মনোয়ার হোসেন, প্রচার সম্পাদক শিহাব উদ্দিন প্রমুখ।

ঢাকা/কেয়া/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ