বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, কষ্ট পেলেন কয়েকশ রোগী
Published: 25th, June 2025 GMT
দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেনি কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। এ কারণে দুই হাসপাতালেরই বিদ্যুৎ সংযোগ গতকাল মঙ্গলবার বিচ্ছিন্ন করা হয়। এতে প্রায় চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় ভোগান্তি পোহান রোগীসহ হাসপাতালের সবাই।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বকেয়া ২৩ লাখ এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতাধীন বিশেষায়িত ট্রমা সেন্টারের বকেয়া ১৮ লাখ টাকা।
একাধিকবার চিঠি দিলেও বকেয়া পরিশোধ করেনি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল সকাল ৯টায় হাসপাতালের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় জেলা পিডিবি অফিস। এতে ৬ শতাধিক রোগীর চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়। চিঠি পাঠিয়ে বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দিলে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে পুনরায় সংযোগ দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
এ বিষয়ে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. হেলিশ রঞ্জন সরকার বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে থেকেই কিছু কিছু বকেয়া জমেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যখনই কিছু টাকা বরাদ্দ দেয়, তখনই বিল পরিশোধ করা হয়। এবার বকেয়ার জন্য পিডিবি অফিস থেকে একাধিকবার চিঠি পাঠালে তাদের আগামী অর্থবছরের জন্য জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে অনুরোধ করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, মাত্র এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে পারল না! হাসপাতালের মতো একটা স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল। ৬ শতাধিক রোগীর চরম ভোগান্তি হয়েছে। অস্ত্রোপচারের শিডিউল ছিল। সেগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছে। প্যাথলজিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমারও টাকা না, নির্বাহী প্রকৌশলীরও না। এক মন্ত্রণালয়ের টাকা যাবে আরেক মন্ত্রণালয়ে। এর জন্য এত বড় হাসপাতালের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া আগে কখনও দেখিনি।’
শিশু ওয়ার্ডের দুই অভিভাবক আসমা আক্তার ও সাইদুর রহমান জানান, প্রচণ্ড গরমে সব রোগীরই অনেক কষ্ট হয়েছে। বেশি কষ্ট হয়েছে শিশুদের।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও সকাল ৯টায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বিদ্যুৎ অফিস। এতে পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ সব ধরনের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি সেবা বন্ধ। ভর্তিকৃত রোগী আছেন ৫০ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ওয়ার্ডে ১৭ জন, মহিলা ওয়ার্ডে ১৭, শিশু ওয়ার্ডে ১৪ ও গাইনি ওয়ার্ডে ২ জন। শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যাই বেশি। বিদ্যুৎ না থাকায় তারা নেবুলাইজার নিতে পারছেন না। চিকিৎসাধীন আম্বিয়া বেগম বলেন, ‘এমনেতে অই গতর ভালা না। আবার কারেন নাই। গরমে ভিতরডা ছটপড করতাছে।’
হাসপাতালের প্যাথলজিস্ট লুৎফর রহমান জানান, সকালে হাসপাতালে আসার পর থেকেই দেখেন, বিদ্যুৎ নেই। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গড়ে ৫০ জনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় কোনো সেবা দেওয়া যায়নি।
কোনো নোটিশ ছাড়াই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আব্দুল করিম। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক রোগী ফিরে গেছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ থাকায় দু’জন নারীর অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি।
আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা জানান, এই হাসপাতাল ১০০ শয্যার হলেও এখনও ৫০ শয্যাই রয়ে গেছে। কিন্তু প্রতিটি বিভাগে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে। তাই দিন দিন বিল বাড়ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নতুন যোগদান করেছেন। তিনি এ বিষয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। চিঠির মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভাগকে টাকা পরিশোধের নির্ধারিত সময় জানানো হবে।
এ বিষয়ে প্রথমে কথা বলতে চাননি ভৈরব বিদ্যুৎ অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মো. সামসুল আলম। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এ বিষয়ে কথা বলতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি দেয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিল থাকায় লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই তা চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি মহোদয় অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে বকেয়া বিল পরিশোধ করবেন। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আবার বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ স ব স থ য কমপ ল ক স স য গ ব চ ছ ন ন কর পর ক ষ কর ছ ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুদকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচারের’ প্রতিবাদ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘মানহানিকর ও ভিত্তিহীন’ অভিযোগ ছড়ানোর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুদকের জনসংযোগ দপ্তরের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর একটি পোস্ট কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। পোস্টটিতে তিনি যাচাই-বাছাই ছাড়াই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন।
এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করে দুদক জানায়, একটি প্রতারক চক্র দুদকের চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক বা কর্মকর্তা পরিচয়ে মামলা থেকে অব্যাহতির আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করছে। এসব ঘটনার সঙ্গে কমিশনের কোনো কর্মকর্তা জড়িত নন। ইতিমধ্যে কমিশন বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রতারক চক্রের অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
দুদকের ভাষ্য, ‘এর আগেও প্রতারণা রোধে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে, যা বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুদককে দোষারোপ করেন। এতে কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।’
এ ধরনের ঘটনায় নাগরিকদের সহযোগিতা চেয়ে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘প্রতারণামূলক ফোনকল, বার্তা বা ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে কারও কাছ থেকে টাকা চাওয়া হলে অথবা কোনো অনিয়মের তথ্য জানা থাকলে, তা দুদকের টোল ফ্রি হটলাইন ১০৬-এ জানানোর অনুরোধ করা যাচ্ছে। এ ছাড়া নিকটস্থ দুদক কার্যালয় বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তাও নেওয়া যেতে পারে।’
এর আগে এনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে দুদকের চা খাওয়ার বিল ১ লাখ টাকা। আপনার নামে দুর্নীতির কোন অভিযোগ না থাকলেও সেটার ক্লিয়ারেন্স নিতে আপনাকে ১ লাখ টাকা দিতে হবে। সম্প্রতি মাহমুদা মিতুর কাছে থেকে এই টাকা চাওয়া হয়েছে দুদকের ডিজি আকতার আর তাঁর ডিডি পরিচয়ে। মাহমুদা মিতুকে বলা হয়, আপনি একজন ডাক্তার, আপনার তো টাকাপয়সার অভাব থাকার কথা না। আপনি এক লাখ টাকা দিয়ে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে যান।’
হাসনাত পোস্টে আরও লেখেন, ‘দুদকের সর্বনিম্ন রেট নাকি ১ লাখ টাকা। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আকতার আবার ফোন দিয়ে জানতে চান, টাকা দিবে কি না? টাকা না দিলে নাকি খবর করে ছেড়ে দেওয়া হবে। রেড ক্রিসেন্টে মাহমুদা মিতু যোগ দিয়েছেন ৫ আগস্টের পর। দুদক এখন তদন্ত করছে আওয়ামী লীগের সময়ের দুর্নীতি নিয়ে। অথচ হাস্যকরভাবে আওয়ামী আমলের কর্মকর্তাদের নাম না দিয়ে তখনকার দায় চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে এখনকার লোকজনের ওপর। এখানে বড় অংকের টাকার লেনদেনের সমূহ সম্ভাবনা আছে। কিছু না করা মানুষের কাছ থেকেই যদি ১ লাখ করে নেয়, আওয়ামী লীগ আমলের কর্মকর্তাদের থেকে তাহলে কত করে নিয়েছে?’
এনসিপি নেতা পোস্টে লিখেছেন, ‘দুদকের এসব কাজ-কারবার এই প্রথম না। হাসিনার আমলে খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের বহু নেতাকে এরা হয়রানি করেছে। অথচ আওয়ামী লীগের হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে এরা কিছুই বলেনি। আমরা আশা করেছিলাম, ৫ আগস্টের পর এদের মধ্যে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু আসেনি। বরং এরা এখন চা খাওয়ার জন্য ১ লাখ করে টাকা চাওয়া শুরু করেছে। মাহমুদা মিতু সাহস করে ভিডিও করে রেখেছেন, অন্যায় ঘুষ দেন নাই। কিন্তু কত সাধারণ মানুষ এদের এই চায়ের বিল দিতে বাধ্য হয়েছে জানা নেই।’
হাসনাত আবদুল্লাহ পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। মাহমুদা মিতু কেন, যদি আমার নামেও এক পয়সা দুর্নীতির অভিযোগ আসে, সেটা মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিন। কাউকে ফোন করারও দরকার নেই। দুর্নীতি পেলেই সেগুলো প্রকাশ করে মামলা করে দেন। আইনের হাতে তুলে দিন। তা না করে নিরীহ লোকজনের ওপরে এই চাঁদাবাজি কেন করছেন? কেন চা খাওয়ার বিল চান, কেন টাকা না দিলে হুমকি দেন?’
হাসনাত লেখেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ চাই। হাসিনার করে যাওয়া দুর্নীতির পথে যেন আর কেউ না যেতে পারে, সেজন্য দুদককেও আমরা নতুন রূপে দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নতুন বাংলাদেশেও দুদক সেই পুরনো পথেই হাঁটা শুরু করেছে। আমলাতন্ত্র আবারও বিষদাঁত নিয়ে কামড় বসাতে হাজির হয়েছে। এই বিষদাঁত ভাঙতে না পারলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন হেরে যাবে। আমরাও হেরে যাবো। আমরা দুদকের এই দুর্নীতির বিচার চাই। আমলাদেরকে এক লাখ টাকার চা খাওয়ানোর জন্যই কি জুলাইতে বাংলাদেশের মানুষ জীবন দিয়েছিল?’