চট্টগ্রামে বর্ষার শুরুতে ক্ষতবিক্ষত সড়ক
Published: 25th, June 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের স্ট্র্যান্ড রোড। নগরের সদরঘাট থেকে শুরু হয়ে এই সড়ক মিলিত হয়েছে বারিক বিল্ডিং মোড়ে। দেড় কিলোমিটারের কম দৈর্ঘ্যের এই সড়কটি পণ্য পরিবহনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই সড়কের পাশেই রয়েছে কর্ণফুলী নদী। আর নদীতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ছোট-বড় ২২টি ঘাট রয়েছে। এসব ঘাট থেকে লোহার স্ক্র্যাপ, ভোগ্যপণ্য ও সিমেন্টের ক্লিংকারসহ বিভিন্ন পণ্য খালাস করা হয়। আর এসব পণ্য গাড়ির মাধ্যমে স্ট্র্যান্ড রোড হয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে যায়।
পণ্য পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের অবস্থা এখন বেহাল। সড়কজুড়ে ছোট-বড় খানাখন্দ। কিছু কিছু অংশে গর্তের আকার এমন বড় হয়েছে, তা দিয়ে গাড়ি চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মাঝেমধ্যে গাড়ি উল্টে যায় গর্তগুলোতে পড়ে। সড়কের কোথাও কোথাও উঁচু-নিচু ঢেউয়ের আকৃতি নিয়েছে। প্রায় সময় লেগে থাকছে যানজট। অথচ চার বছর আগে প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে স্ট্র্যান্ড রোডটি সংস্কার করেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। কিন্তু সংস্কারের বছর দুয়েক পর থেকে সড়কটি ভাঙতে শুরু করে। এখন আবার আট কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
শুধু স্ট্র্যান্ড রোড নয়, চট্টগ্রাম নগরের অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি সড়ক এখন বেহাল। এর মধ্যে নগরের প্রধান সড়ক যেমন রয়েছে, তেমনি অলিগলির সড়কও রয়েছে। সরেজমিনে বেহাল সড়কের এই চিত্র দেখা গেছে। সড়কগুলো যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ভাঙা সড়কের গাড়ি চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে যানজটের সমস্যায় ভুগছেন চালক ও যাত্রীরা। আবার কিছু কিছু সড়কের এমন খারাপ অবস্থা, তাতে হেঁটে চলাচল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা করে সিটি করপোরেশন। তবে এবার কী পরিমাণ সড়ক নষ্ট হয়েছে, তার তালিকা সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সড়ক ব্যবহারকারীরা অভিযোগ করেছেন, বছরের পর বছর ধরে সড়কগুলো ঠিকভাবে সংস্কার করা হয় না। মাঝেমধ্যে সংস্কার করা হলেও তা জোড়াতালির সংস্কার। বৃষ্টি কিংবা ভারী গাড়ি চলাচল করলে অল্প দিনের মধ্যে সড়কগুলো ভেঙে পুরোনো চেহারায় ফেরে।স্থানীয় বাসিন্দা ও সড়ক ব্যবহারকারীরা অভিযোগ করেছেন, বছরের পর বছর ধরে সড়কগুলো ঠিকভাবে সংস্কার করা হয় না। মাঝেমধ্যে সংস্কার করা হলেও তা জোড়াতালির সংস্কার। বৃষ্টি কিংবা ভারী গাড়ি চলাচল করলে অল্প দিনের মধ্যে সড়কগুলো ভেঙে পুরোনো চেহারায় ফেরে। এই কারণে তাঁরা যাতায়াতে যেমন কষ্ট পাচ্ছেন, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নগরের সড়ক নিয়ে নগরবাসী প্রতিবছর ভোগান্তি পোহালেও রাস্তাঘাট সংস্কারে সিটি করপোরেশনের ব্যয়ও কম নয়। গত আট বছরে ছয়টি প্রকল্পের আওতায় অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু এই বিপুল অর্থের সুফল পাচ্ছেন না মানুষ।
সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীদের দাবি, ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতা এবং বিভিন্ন সেবা সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়ক বারবার নষ্ট হচ্ছে। তবে সড়কগুলো সংস্কারে নিয়মিত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বছরের পর বছর ধরে বেহাল
চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের পাশ দিয়ে গেছে চান মিয়া সওদাগর সড়ক। ২০১৭ সালে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে বড় ধরনের সংস্কার করা হয়েছিল সাড়ে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়কটি। তবে এই সংস্কার বেশি দিন টেকেনি। দুই থেকে তিন বছর পর ভাঙতে শুরু করে। এর মধ্যে সড়কের পাশে মির্জা খালে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এরপর সড়কের অবস্থা আরও খারাপ হয়। এখনো তা ঠিক করা হয়নি। তবে গাড়ি চলাচলের জন্য এখন ইট দিয়ে কোনোরকম ঠিক করে দিচ্ছে সিটি করপোরেশন।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে সড়কটি ঘুরে দেখা যায়, ব্যস্ততম এই সড়ক দিয়ে টেম্পো, ভ্যান, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চলাচল করছে। কিন্তু কোথাও পিচঢালাইয়ের (কার্পেটিং) চিহ্ন নেই। মাঝে মাঝে গর্ত। জমে রয়েছে কাদাপানি।
সড়কের কালারপুল এলাকার লেপ–তোশকের দোকানি মোহাম্মদ রুবেল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাত-আট বছর ধরে সড়কের এমন দুরবস্থা। সিটি করপোরেশনের কেউ খোঁজখবর নেন না। ঠিকও করেন না। দোকানের সামনে কাদাপানি জমে আছে। গাড়ি গেলে তা ছিটকে পড়ে দোকানে রাখা মালামালে। এখন ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
নগরের পলিটেকনিক এলাকার আব্দুল হান্নান সড়ক এখন এমন বেহাল। গতকাল দুপুরে মডেল স্কুল এলাকায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স স ক র কর এই সড়ক সড়কগ ল র জন য সড়ক র র বছর নগর র র সড়ক
এছাড়াও পড়ুন:
মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সড়ক যেন মরণফাঁদ
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। এসব গর্তের পাশ দিয়ে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পথচারী ও যানবাহন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধের দুই পাশে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও সড়কের পিচ উঠে গেছে, কোথাও আবার গর্তের গভীরতা এত বেশি যে, ছোট যানবাহন উল্টে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে দুর্ঘটনায় কলেজছাত্রের মৃত্যু, ট্রাকে আগুন
সিলেটে বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষ, বাবা-মেয়ে নিহত
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও, এর ওপরে নির্মিত পাকা সড়কটি সওজ বিভাগের আওতাধীন। এ সড়কটি ব্যবহার করে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর যানবাহন চলাচল করে।
স্থানীয় অটোরিকশা চালক রোবেল হোসেন বলেন, “নির্মাণের দুই-তিন বছর যেতে না যেতেই সড়কের দুই পাশে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রতিদিন গাড়ি চালাতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। একটু অসাবধান হলেই ঘটবে দুর্ঘটনা।”
মোটরসাইকেল চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “দিনে কোনোভাবে পার হওয়া যায়, কিন্তু রাতের পরিস্থিতি থাকে ভয়ঙ্কর। কারণ, অনেক সময় দূর থেকে গর্ত দেখা যায় না। এই সড়কে খুব ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”
পিকআপ ভ্যানের চালক আব্দুর রহমান বলেন, “কয়েক বছর না যেতেই রাস্তা গর্তে ভরে গেছে। রাতের বেলায় গর্তগুলো বোঝা যায় না, তাই সব সময় আতঙ্ক নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”
কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কটি এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। এখন গর্তের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত মেরামতের জন্য আমরা একাধিকবার জানিয়েছি।”
মতলব উত্তর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, “এই বেড়িবাঁধ শুধু মতলব নয়, পুরো অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান সড়ক। তাই সওজ বিভাগের উদাসীনতা জনজীবনে ঝুঁকি তৈরি করছে। বর্ষার আগেই এই সড়কটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার জরুরি।”
চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অতিবৃষ্টির কারণে গর্ত তৈরি হয়েছে। আমরা সড়কটি মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছি।”
উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, মতলব ব্রিজ থেকে বেড়িবাঁধের পূর্ব অংশে সংস্কার কাজের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। পশ্চিম অংশ এখনও ঠিকাদারের দায়িত্বে আছে, তাদেরকেও মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দাঃ) সেলিম শাহেদ বলেন, “বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও এর ওপরে থাকা পাকা সড়ক সওজ বিভাগের দায়িত্বে। বেড়িবাঁধের যদি কোথাও ক্ষতি হয়, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই; সড়ক সংস্কার কাজ সওজ বিভাগকেই করতে হয়।”
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত দেখা গেছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।”
ঢাকা/অমরেশ/মাসুদ