চট্টগ্রাম নগরের স্ট্র্যান্ড রোড। নগরের সদরঘাট থেকে শুরু হয়ে এই সড়ক মিলিত হয়েছে বারিক বিল্ডিং মোড়ে। দেড় কিলোমিটারের কম দৈর্ঘ্যের এই সড়কটি পণ্য পরিবহনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই সড়কের পাশেই রয়েছে কর্ণফুলী নদী। আর নদীতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ছোট-বড় ২২টি ঘাট রয়েছে। এসব ঘাট থেকে লোহার স্ক্র্যাপ, ভোগ্যপণ্য ও সিমেন্টের ক্লিংকারসহ বিভিন্ন পণ্য খালাস করা হয়। আর এসব পণ্য গাড়ির মাধ্যমে স্ট্র্যান্ড রোড হয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে যায়।

পণ্য পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের অবস্থা এখন বেহাল। সড়কজুড়ে ছোট-বড় খানাখন্দ। কিছু কিছু অংশে গর্তের আকার এমন বড় হয়েছে, তা দিয়ে গাড়ি চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মাঝেমধ্যে গাড়ি উল্টে যায় গর্তগুলোতে পড়ে। সড়কের কোথাও কোথাও উঁচু-নিচু ঢেউয়ের আকৃতি নিয়েছে। প্রায় সময় লেগে থাকছে যানজট। অথচ চার বছর আগে প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে স্ট্র্যান্ড রোডটি সংস্কার করেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। কিন্তু সংস্কারের বছর দুয়েক পর থেকে সড়কটি ভাঙতে শুরু করে। এখন আবার আট কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শুধু স্ট্র্যান্ড রোড নয়, চট্টগ্রাম নগরের অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি সড়ক এখন বেহাল। এর মধ্যে নগরের প্রধান সড়ক যেমন রয়েছে, তেমনি অলিগলির সড়কও রয়েছে। সরেজমিনে বেহাল সড়কের এই চিত্র দেখা গেছে। সড়কগুলো যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ভাঙা সড়কের গাড়ি চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে যানজটের সমস্যায় ভুগছেন চালক ও যাত্রীরা। আবার কিছু কিছু সড়কের এমন খারাপ অবস্থা, তাতে হেঁটে চলাচল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা করে সিটি করপোরেশন। তবে এবার কী পরিমাণ সড়ক নষ্ট হয়েছে, তার তালিকা সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সড়ক ব্যবহারকারীরা অভিযোগ করেছেন, বছরের পর বছর ধরে সড়কগুলো ঠিকভাবে সংস্কার করা হয় না। মাঝেমধ্যে সংস্কার করা হলেও তা জোড়াতালির সংস্কার। বৃষ্টি কিংবা ভারী গাড়ি চলাচল করলে অল্প দিনের মধ্যে সড়কগুলো ভেঙে পুরোনো চেহারায় ফেরে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সড়ক ব্যবহারকারীরা অভিযোগ করেছেন, বছরের পর বছর ধরে সড়কগুলো ঠিকভাবে সংস্কার করা হয় না। মাঝেমধ্যে সংস্কার করা হলেও তা জোড়াতালির সংস্কার। বৃষ্টি কিংবা ভারী গাড়ি চলাচল করলে অল্প দিনের মধ্যে সড়কগুলো ভেঙে পুরোনো চেহারায় ফেরে। এই কারণে তাঁরা যাতায়াতে যেমন কষ্ট পাচ্ছেন, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

নগরের সড়ক নিয়ে নগরবাসী প্রতিবছর ভোগান্তি পোহালেও রাস্তাঘাট সংস্কারে সিটি করপোরেশনের ব্যয়ও কম নয়। গত আট বছরে ছয়টি প্রকল্পের আওতায় অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু এই বিপুল অর্থের সুফল পাচ্ছেন না মানুষ।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীদের দাবি, ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতা এবং বিভিন্ন সেবা সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়ক বারবার নষ্ট হচ্ছে। তবে সড়কগুলো সংস্কারে নিয়মিত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

বছরের পর বছর ধরে বেহাল

চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের পাশ দিয়ে গেছে চান মিয়া সওদাগর সড়ক। ২০১৭ সালে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে বড় ধরনের সংস্কার করা হয়েছিল সাড়ে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়কটি। তবে এই সংস্কার বেশি দিন টেকেনি। দুই থেকে তিন বছর পর ভাঙতে শুরু করে। এর মধ্যে সড়কের পাশে মির্জা খালে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এরপর সড়কের অবস্থা আরও খারাপ হয়। এখনো তা ঠিক করা হয়নি। তবে গাড়ি চলাচলের জন্য এখন ইট দিয়ে কোনোরকম ঠিক করে দিচ্ছে সিটি করপোরেশন।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে সড়কটি ঘুরে দেখা যায়, ব্যস্ততম এই সড়ক দিয়ে টেম্পো, ভ্যান, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চলাচল করছে। কিন্তু কোথাও পিচঢালাইয়ের (কার্পেটিং) চিহ্ন নেই। মাঝে মাঝে গর্ত। জমে রয়েছে কাদাপানি।

সড়কের কালারপুল এলাকার লেপ–তোশকের দোকানি মোহাম্মদ রুবেল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাত-আট বছর ধরে সড়কের এমন দুরবস্থা। সিটি করপোরেশনের কেউ খোঁজখবর নেন না। ঠিকও করেন না। দোকানের সামনে কাদাপানি জমে আছে। গাড়ি গেলে তা ছিটকে পড়ে দোকানে রাখা মালামালে। এখন ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

নগরের পলিটেকনিক এলাকার আব্দুল হান্নান সড়ক এখন এমন বেহাল। গতকাল দুপুরে মডেল স্কুল এলাকায়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স স ক র কর এই সড়ক সড়কগ ল র জন য সড়ক র র বছর নগর র র সড়ক

এছাড়াও পড়ুন:

ঘুষে চলে যায় বরাদ্দের অর্ধেক

সড়ক পাকাকরণের কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ। ঠিকাদার মোট বিলের ৮০ শতাংশ তুলে নিয়ে তিন বছর ধরে লাপাত্তা। এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের কাজ থমকে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। 
এ চিত্র দেখা গেছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে নওগাঁ মাজার থেকে রংমহল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের। ইতোমধ্যে সড়কে বিছানো খোয়া উঠে গেছে। ধুলাবালি জমে সামান্য বৃষ্টিতে কাদাপানিতে একাকার সড়ক। 
এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলম হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে কল রিসিভ করলেও তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন জানান, কার্যাদেশ পাওয়ার মোট বরাদ্দের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রকৌশলী,  অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন জনকে দিতে হয়। কাজ চলাকালে উপজেলা প্রকৌশল অফিসের যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী সাইটে যান, তাদের ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা হাজিরা হিসাবে দিতে হয়। এভাবে বরাদ্দের অর্ধেক টাকা চলে যায় ঘুষের পেছনে। যে টাকা থাকে, তা দিয়ে মানসম্মত কাজ করা সম্ভব হয় না। এ কারণে অনেক ঠিকাদার কিছুদিন কাজ করার পর বরাদ্দের টাকা তুলে লাপাত্তা হয়ে যান। কর্তারা তাদের কীভাবে বিল ছাড় করেন, তারাই বলতে পারবেন। অবৈধ আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশল অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বীকার করেননি।
২০২১-২২ অর্থবছরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ৩-এর আওতায় নওগাঁ ইউনিয়নের নওগাঁ মাজার থেকে রংমহল পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এ কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৬৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯৪ টাকা। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ৬৬ লাখ ১১ হাজার ৮৯৯ টাকায় কার্যাদেশ পায় মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজ। ২০২২ সালের ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। এর পর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তা শেষ হয়নি।
২০২১ সালের ২২ অক্টোবর তৎকালিন সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ সড়ক পাকাকরণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর পর ঠিকাদার সড়কের উভয় পাশে মাটি খুঁড়ে বালু ফেলে খোয়া বিছিয়ে দেন। এর মধ্যে সড়কের কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ। কিন্তু ঠিকাদার ৮০ শতাংশ কাজের বিল তুলে লাপাত্তা। তিন বছর ধরে সড়কটি বেহাল পড়ে আছে। 
সড়কের কাজ শেষ করতে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বারবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিলেও 
সাড়া মেলেনি। নিরুপায় হয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কার্যাদেশ বাতিল করেছে। এখন চলছে পুনঃদরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া। 
সড়কটি দিয়ে নওগাঁয় হজরত শাহ শরিফ জিন্দানী (র.)-এর মাজার, নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজ, নওগাঁ ফাজিল মাদ্রাসা, নওগাঁ হাটবাজার, নওগাঁ সোনালী ব্যাংক, নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ অফিসে যাতায়াত করতে হয়। 
উপজেলা প্রকৌশলী ফজলুল হক বলেন, ‘প্রকল্প পরিচালক সড়কটি পরিদর্শন করেছেন। ঠিকাদার প্যালাসাইডিং, সাববেজ, সেন্ট ফিলিং ও ডব্লিউবিএম করেছে। সে অনুযায়ী বিল পাঠিয়েছি। বাকি কাজ না করায় বেশ কয়েকবার তাগাদা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সাড়া না পাওয়ায় ঠিকাদারের চুক্তিপত্র বাতিল করা হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টানলেই উঠছে কার্পেটিং, কাজ বন্ধ করে দিলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
  • ধর্মপাশা-মধ্যনগর সড়ক খানাখন্দে বেহাল, ক্ষোভ
  • ঘুষে চলে যায় বরাদ্দের অর্ধেক