যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস হয়নি, বরং মাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে গেছে- এমনই তথ্য উঠে এসেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের গোয়েন্দা সংস্থা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (ডিআইএ) একটি গোপন প্রতিবেদনে।

বুধবার (২৫ জুন) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, ডিআইএ’র একটি প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মূল অবকাঠামো বিনষ্ট হয়নি।

গত সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্রের বোমারু বিমান ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পরমাণু স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়। তবে ডিআইএ-এর প্রাথমিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, হামলায় ইরানের মূল ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক অবকাঠামো ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রযুক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

আরো পড়ুন:

ইরানের অন্তত ১৪ বিজ্ঞানীকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের

ইরানের হামলার আগে কাতারের ঘাঁটি থেকে সৌদিতে যুদ্ধবিমান ও রসদ সরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র

সিএনএন জানিয়েছে, মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষয়ক্ষতি ও হামলার প্রভাব বিশ্লেষণ চলছে এবং আরো গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেলে নিশ্চিত করে কিছু বলা যেতে পারে। তবে প্রাথমিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলোকে ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস’ করার দাবি করেছিলেন। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী  পিট হেগসেথও বলেছিলেন যে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন’ করা হয়েছে।

তবে ডিআইএ’র প্রতিবেদনের সঙ্গে পরিচিত দুজন ব্যক্তি সিএনএনকে বলেছেন, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ ধ্বংস হয়নি। একটি সূত্র বলেছে, সেন্ট্রিফিউজগুলো মূলত ‘অক্ষত’ রয়েছে। অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন হামলার আগেই সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ও গুরুত্বপূর্ণ সেন্ট্রিফিউজ সরিয়ে নিয়েছিল ইরান।

সূত্রগুলোর বরাতে সিএনএন আরো জানিয়েছে, ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ অংশ অক্ষত রয়েছে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মূলত ভূ-পৃষ্ঠের কাঠামো, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ও পরমাণু ধাতুতে রূপান্তরের কিছু অংশ।

তবে হোয়াইট হাউজ ডিআইএ’র এই প্রতিবেদনকে ‘ভুল’ ও ‘গোপন তথ্য ফাঁসের উদাহরণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

হোয়াইট হাইজের প্রেস সেক্রেটারি কারোলাইন লেভিট বলেন, “এই কথিত প্রতিবেদন সম্পূর্ণ ভুল এবং এটি ‘অতি গোপন বিষয়’। তবুও গোয়েন্দা সংস্থার একজন বেনামী ও নিম্নপদস্থ কর্মকর্তা সিএনএনের কাছে এটি ফাঁস করে দিয়েছে। এই কথিত প্রতিবেদন ফাঁস করাটা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হেয় করার এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করার জন্য নিখুঁতভাবে সম্পাদিত মিশন পরিচালনাকারী সাহসী পাইলটদের অসম্মান করার একটি স্পষ্ট অপচেষ্টা। সবাই জানে, চৌদ্দটি ৩০ হাজার পাউন্ড বোমা লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে ফেলে দিলে কী হয়: সম্পূর্ণ ধ্বংস।”

এদিকে ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে নেদারল্যান্ডস সফরে থাকা ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে সিএনএনের প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, “ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার মার্কিন হামলা ইতিহাসের সবচেয়ে সফল সামরিক হামলাগুলোর মধ্যে একটি। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে।”

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ইসর য় ল স এনএন ড আইএ

এছাড়াও পড়ুন:

রণতরিসহ ডজনখানেক যুদ্ধজাহাজ ও ১৫ হাজার সেনা মোতায়েন, ভেনেজুয়েলায় মার্কিন হামলা কি আসন্ন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলায় হামলা চালানোর বিষয়ে তিনি অনেকটাই মনস্থির করে ফেলেছেন। সম্প্রতি উচ্চপর্যায়ের মার্কিন কর্মকর্তারা তাঁকে কয়েক দফায় এ বিষয়ে ব্রিফ করেন। এরপর তিনি এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি আরও জোরদার করা হয়েছে।

চারটি সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন বলেছে, মার্কিন কর্মকর্তারা চলতি সপ্তাহে ভেনেজুয়েলায় সামরিক অভিযান পরিচালনার বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে ট্রাম্পকে ব্রিফ করেন। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য বিস্তৃত অভিযান শুরু করলে কী কী লাভ-ক্ষতি হতে পারে, তা পর্যালোচনা করছেন তাঁরা।

এদিকে, ‘অপারেশন সাউদার্ন স্পিয়ার’ নামে পেন্টাগন ঘোষিত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ক্যারিবীয় অঞ্চলে ১২টির বেশি যুদ্ধজাহাজ এবং ১৫ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী।

গত শুক্রবার ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে অবৈধ অভিবাসীর ঢল ও মাদক পাচার বন্ধ করতে তিনি তাঁর লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছেন। এয়ারফোর্স ওয়ান উড়োজাহাজে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি অনেকটা মনস্থির করে ফেলেছি। সেটা কেমন হবে, আমি আপনাদের ঠিক বলতে পারছি না, তবে আমি একরকম সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি।’

ট্রাম্পকে কর্মকর্তারা কী বলেছেন

বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইনসহ মার্কিন কর্মকর্তাদের ছোট একটি দল ট্রাম্পকে ব্রিফ করে। এরপর বৃহস্পতিবার ‘সিচুয়েশন রুমে’ বড় পরিসরে জাতীয় নিরাপত্তা দলের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক হয়। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওসহ অন্য শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দুটি বৈঠকেই ট্রাম্প ও তাঁর কর্মকর্তারা সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করেন। ট্রাম্পকে ভেনেজুয়েলা নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে বিভিন্ন বিকল্প পথ দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সামরিক বা সরকারি স্থাপনায় বিমান হামলা, মাদক পাচারের রুটগুলোয় হামলা অথবা মাদুরোকে উৎখাতে আরও সরাসরি প্রচেষ্টা চালানোর বিষয়ে বলা হয়েছে। এর আগে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ভেনেজুয়েলার ভেতরে কোকেন উৎপাদনকেন্দ্র এবং মাদক পাচারের রুটগুলো লক্ষ্য করে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা নিয়ে ট্রাম্প ভাবছেন।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড চলতি সপ্তাহের শুরুতে লাতিন ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে পৌঁছেছে। এই রণতরি যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর সবচেয়ে মারাত্মক যুদ্ধ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত। সামরিক বাহিনীর প্রায় ১৫ হাজার সদস্য এবং ১ ডজনের বেশি যুদ্ধজাহাজ সেখানে মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

শেষ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে সরেও আসতে পারেন ট্রাম্প। গত মাসে প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি সিআইএকে (কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা) দেশটিতে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিয়েছেন। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে আইনপ্রণেতাদের বলেছেন, ভেনেজুয়েলার ভেতরে স্থল অভিযান চালানোর পক্ষে কোনো আইনি ভিত্তি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নেই। যদিও প্রয়োজন হলে তাঁরা এমন আইন তৈরি করে নিতে পারেন। সমপ৶তি ট্রাম্প সিবিএসের ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি ভেনেজুয়েলার ভেতরে হামলার কথা ভাবছেন না। যদিও এর আগে তিনি এ ধরনের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

ট্রাম্পের বৈঠকের বিষয়ে অবগত সূত্র বলছে, ব্যর্থ হতে পারে বা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপের ব্যাপারে আদেশ দেওয়ার বিষয়ে ট্রাম্পকে সতর্ক বলে মনে হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রণতরিসহ ডজনখানেক যুদ্ধজাহাজ ও ১৫ হাজার সেনা মোতায়েন, ভেনেজুয়েলায় মার্কিন হামলা কি আসন্ন
  • শেষ হলো এক ছাদের নিচে ৩ খাতের প্রদর্শনী