বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার নদীর তীরে কৈগরদাসকাঠি চরের বাসিন্দা সিদ্দিক শেখ। জীবনের ৫০ বসন্তের ৪০টি কেটেছে এ চরে। তাঁর চোখের সামনেই বালুতে ভরাট হয়েছে বিস্তীর্ণ কৃষিজমি। গড়ে উঠেছে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এক দশক আগেও এসব জমিতে উৎপাদিত ধানে বছর চলে যেত সিদ্দিক শেখসহ শতাধিক পরিবারের।
পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে সিদ্দিক শেখ বললেন, ‘জমিতে ফসল হয় না, নদীতে মাছ পাই না। সারারাত নদীতে জাল টেনে ১২০ টাকার মতো মাছ ধরা পড়ে। কীভাবে চারজনের সংসার চলে, আল্লাহ্ ছাড়া কেউ জানে না।’
সিদ্দিক শেখের সঙ্গে কথা বলার সময়ে একটু দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর স্ত্রী শাফিয়া বেগম। তাঁর চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। অসুস্থ শরীরে স্বামী-সন্তানের জন্য ঠিকমতো রান্নাও করতে পারছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একসময় নিজেদের ধানেই বছর চলে যেত।’
কৈগরদাসকাঠি চরে এমন গল্পের সংখ্যা কম নয়। রেজাউল শেখ নামের এক ব্যক্তি জানালেন, আগে এখানে তারা ধান চাষ ও মাছ ধরে জীবন চালাতেন। ধান রোপণ ও মাছের ঘের প্রস্তুত করার জন্য অনেক শ্রমিক লাগত, এমনকি বাইরে থেকেও শ্রমিকরা দুই-তিন সপ্তাহের জন্য আসতেন। অথচ এখন দেখলে মনে হয় মরুভূমিতে তাদের বসবাস।
পশুর নদসংলগ্ন কাপাসডাঙ্গা গ্রামে গড়ে ওঠা কৈগরদাসকাঠি চরের একদিকে বাগেরহাটের রামপাল, অপরদিকে খুলনার দাকোপ উপজেলার সীমান্ত। ২০১০ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য রামপালের সাপমারি, কাটাখালি ও কৈগরদাসকাঠি মৌজায় ১ হাজার ৮৩৪ একর কৃষি, মৎস্য ও আবাসিক এলাকার জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর ৯৫ শতাংশই তিন ফসলি কৃষিজমি। সে সময় এ প্রকল্পের জন্য ভিটেমাটি হারাতে হয় অনেক পরিবারকে। সরকার ১৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে বাস্তুহারাদের ঠাঁই দিলেও দুঃখ ঘোচেনি তাদের।
কৈগরদাসকাঠি চরের অনেক বাসিন্দা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। নদীতে মাছ কমে যাওয়ায় তিনবেলা খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। চরের অদূরেই বিদ্যুৎকেন্দ্র। স্থানীয়দের মতে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য নদীতে পড়ার পর থেকে মাছ কমতে শুরু করে। সারাদিন মাছ ধরেও সংসার চালানোর খরচ ওঠে না তাদের।
আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করা হেনা বেগম নামের এক নারী জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন হওয়ার পর কিছুদিন আগে সরকার আশ্রয়কেন্দ্রে একটি ঘর দিয়েছে। এর আগে অনেক বছর গোলপাতার ছাউনি দেওয়া একটি ঘরে চারজন নিয়ে থাকতেন। এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্বামী খুলনায় রিকশা চালান আর তিনি নদীতে মাছ ধরেন।
জীবিকা সংকটে পড়েছেন চরের বাসিন্দা ৪৩ বছর বয়সী রহমান ফকিরও। তিনি জানান, বাপদাদার আমল থেকে ধান চাষ আর নদীতে মাছ ধরে বড় হয়েছেন। এখন না হয় ধান, আর না আছে মাছ। বাধ্য হয়ে তিন বছর ধরে ভ্যান চালাচ্ছেন। কিন্তু বাজারের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড.
এ বিষয়ে রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তামান্না ফেরদৌসি বলেন, জীবন ও জীবিকার মান উন্নয়নে উপজেলাজুড়ে তাদের কাজ চলছে। যদিও স্থানীয় চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। কৈগরদাসকাঠি চর পরিদর্শন করে বরাদ্দ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব গ রহ ট র জন য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নারী নিহত
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের রাজৈরে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের খাদে পড়ে এক নারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) মধ্যরাতে রাজৈর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন তারা।
নিহত নিলুফা ইয়াসমিন নিলা (৩০) বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রুনসী গ্রামের আবুল বাসারের স্ত্রী।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে ডাম্পট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত
অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কা, মা-মেয়ে নিহত
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুয়াকাটা থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল চন্দ্রা পরিবহনের বাসটি। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের রাজৈর বাসস্ট্যান্ড পার হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি সড়কের পাশের খাদে পড়ে যায়। পরে হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিলার মরদেহ উদ্ধার করে। আহত হন অন্তত ২০ জন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
মাদারীপুরের মস্তফাপুর হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, বাস খাদে পড়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করা হয়। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। একজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। নিহত নারীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা/বেলাল/মাসুদ