ইসরায়েলের একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রে চাকরি করতেন সেদেশের প্রোকৌশলী মোরেখাই ভানূনু।গাজায় দিনের পর দিন ইসরায়েলের হামলা চালানোর ঘটনা ভানূনুকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলছিলো। এরপর ভানূন সিদ্ধান্ত নেন পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রের চাকরি ছেড়ে, ইসরায়েল থেকে দূরে কোথাও চলে যাবেন। এবং ইসরায়েল গোপনে গোপনে কি কি বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করছে তা বিশ্বকে জানিয়ে দেবেন।

ভানূনু চাকরি ছাড়ার আগে ওই গবেষণা কেন্দ্রের ছবি অতিগোপনে তোলেন। এবং উপযুক্ত প্রমাণ সংগ্রহ করে দেশ ছাড়েন। এরপর দ্য সানডে টাইমসকে ইসরায়েলের গোপন অস্ত্রের খবর জানিয়ে দেন। এরপরেই ভানূনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। ইসরায়েলের গুপ্তচরের পাল্লায় পড়েন ভানূন। ওই গুপ্তচর ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তিনিই ভানূনকে হানিট্যাপে ফেলে এক দেশ থেকে অন্য দেশে নিয়ে যান এবং ইসরায়েলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। পুরো প্রক্রিয়াটা নাটকীয়ভাবে ঘটতে থাকে।

বিবিসির খবর-লন্ডনের পত্রিকা দ্য সানডে টাইমস ১৯৮৬ সালের অক্টোবরে একটা প্রতিবেদন ছেপেছিল, ‘রিভিলড্ – দ্য সিক্রেটস অফ ইসরায়েলস্ নিউক্লিয়ার আর্সেনাল’, অর্থাৎ ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্রের গোপন তথ্য ফাঁস। মনে করা হয় ওই খবরটি ব্রিটিশ সাংবাদিকতায় সবথেকে বড় ‘স্কুপ’ খবরগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা।

আরো পড়ুন:

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরানে ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

ইরানে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দা জানাল ব্রিকস

বিশ্বাসঘাতক না কি হুইসল-ব্লোয়ার

দ্য সানডে টাইমসের সাংবাদিক হাউনামের সঙ্গে সেবছরই অগাস্টে ভানূনুর প্রথম দেখা হয় অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। প্রথম সাক্ষাতে ভানূনুর চেহারা দেখে অবাকই হয়েছিলেন হাউনাম।

হাউনাম বলেন, ‘‘ভানূনুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মনেই হয়নি যে উনি কোনোভাবে পরমাণু বিজ্ঞানী। দেখতে ছোটখাটো, মাথায় টাক পড়েছে, দেখে খুব একটা আত্মবিশ্বাস আছে বলেও মনে হয়নি, সাধারণ পোশাক পরা একটা মানুষ। তবে তিনি ডিমোনায় যা দেখেছেন, সেটা পুরো বিশ্বকে জানানোর সিদ্ধান্তে অটুট ছিলেন।"

১৯৮৫-র শেষ দিকে ভানূনু চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে এশিয়া-ভ্রমণে বের হন। ইসরায়েল যেভাবে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ব্যবহার করে আর তাদের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রকল্প – এই দুইটি বিষয়ই ইসরায়েলের প্রতি ভানূনের মোহভঙ্গ ঘটিয়েছিল।

চাকরি ছাড়ার আগে অবশ্য তিনি পারমাণবিক কারখানার ভেতরে ফিল্মের দুটি রোল ভর্তি ছবি তুলে নিয়েছিলেন। সেই সব ছবির মধ্যে যেমন ছিল অস্ত্র তৈরির জন্য কীভাবে তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিষ্কাশন করা হয় সেই সব ছবি আর পরীক্ষাগারে বানানো থার্মোনিউক্লিয়ার যন্ত্রের একটা মডেলের ছবিও ছিল তার কাছে।

ভানূনু  গিয়েছিলেন লন্ডনে। দ্য সানডে টাইমসের খবর ছাপা হলো, তারপরই ইসরায়েলি গুপ্তচর বাহিনী মোসাদ তাকে রোম থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ইসরায়েলে – দীর্ঘ কারাবাসের সাজা হয় তার।

এক মাস পরে ইসরায়েল ঘোষণা করেছিল ভানূনুকে আটক করা হয়েছে। যেভাবে হানি-ট্র্যাপ করা হয়, অর্থাৎ নারীকে ব্যবহার করে ফাঁদে ফেলার যে কায়দা, একেবারেই সেভাবে ধরা পড়েন ভানূনু। অজ্ঞান অবস্থায় তাকে নৌকায় করে ইসরায়েলে পাচার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।তাকে যখন ইসরায়েলের জেল থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন যাতে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকরা তার অপহরণের ব্যাপারে কিছু তথ্য জানতে পারেন, সেজন্য হাতের তালুতে তিনি কিছু লিখে রেখেছিলেন। জানলায় সেই হাতটা চেপে ধরেছিলেন তিনি, যাতে সাংবাদিকরা ওই লেখাগুলো পড়তে পারেন।

তিনি জানিয়েছিলেনম লন্ডনে পর্যটকের ভেক ধরে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে জন্মানো এক মোসাদ এজেন্ট শেরিল বেনতোভ। তাকে লোভ দেখিয়ে রোমে নিয়ে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে যাওয়ার পরে তাকে অপহরণ করে ওষুধ দিয়ে অজ্ঞান করে দেওয়া হয়।

বিশ্বাসঘাতকতা ও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ১৯৮৭ সালের মার্চ মাসে ভানূনুর বিচার শুরু হয়। তার ১৮ বছরের জেলের সাজা হয়। জেলে থাকার প্রায় অর্ধেকটা সময় তাকে একা একটা সেলে বন্দী থাকতে হয়।

ভানূনু কেন জানালেন সেই তথ্য
জেল থেকেই দেওয়া একটি রেকর্ড করা সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, "আমি বিশ্বকে জানাতে চেয়েছিলাম যে আসলে কী ঘটছে। এটা বিশ্বাসঘাতকতা নয়। ইসরায়েলের নীতির বিপরীতে গিয়ে আমি বিশ্বকে একটা তথ্য দিতে চেয়েছিলাম।

এই প্রোকৌশলী জেল থেকে তিনি ছাড়া পান ২০০৪ সালের ২১শে এপ্রিল।কিন্তু ইসরায়েল ছাড়ার অনুমতি তাকে কখনই দেওয়া হয়নি। মুক্তি পাওয়ার শর্ত ভঙ্গ করায় তারপরেও তাকে বেশ কয়েকবার জেলে যেতে হয়েছে।

এরকমই একবার তাকে যখন জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ২০০৯ সালে, তখন চিৎকার করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘১৮ বছরেও আমার কাছ থেকে কিছু বার করতে পার নি, তিন মাসেও পারবে না। ধিক্কার তোমাকে ইসরায়েল।’’

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য় ল র ব শ বক র খবর

এছাড়াও পড়ুন:

লাইনচ্যুত বগি রেখে চলে গেল ট্রেন, ১১ ঘণ্টা পর উদ্ধার

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ঢাকামুখী লেনে একটি লাইনচ্যুত বগিসহ মোট তিনটি বগি রেখে চলে গেছে একটি মালবাহী ট্রেন। এই দুর্ঘটনার ১১ ঘণ্টা পর বগি তিনটি উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে সীতাকুণ্ড রেলস্টেশন থেকে এক কিলোমিটার উত্তরে শেখপাড়া এলাকায়। এতে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন না ঘটলেও গন্তব্যে পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হতে পারে বলে জানায় রেলওয়ে সূত্র।

গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। লাইনচ্যুত হওয়ার পর ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত বগিটিকে অন্তত ১০০ মিটার পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়। ফলে বগিটি ছাড়াও রেলের স্লিপার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রেলসূত্র জানিয়েছে, ঘটনার খবর পেয়ে আজ শনিবার সকালে উদ্ধারকাজ শুরু করে উদ্ধারকারীরা। এরপর ঘটনার ১১ ঘণ্টা পর বেলা দুইটার দিকে লাইনচ্যুত বগিটি উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনে চলাচলকারী ট্রেনগুলো ডাউন লাইন (চট্টগ্রামমুখী লেন) দিয়ে চলাচল করেছে। এতে গন্তব্যে কিছুটা দেরিতে পৌঁছেছে ট্রেনগুলো। দুর্ঘটনাকবলিত তিনটি বগিতে গার্মেন্টস পণ্য ও জুতা রয়েছে।

রেল পুলিশের সীতাকুণ্ড ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ ছিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঢাকামুখী একটি মালবাহী ট্রেন সীতাকুণ্ড রেলস্টেশন থেকে এক কিলোমিটার দূরে শেখপাড়া এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ফলে দুর্ঘটনাকবলিত বগিটির একপাশের চাকা রেললাইনের বাইরে অপর পাশের চাকা দুই রেললাইনের মাঝে ছিল। এতে সামনের দিকের আরও দুটি বগি আটকা পড়ে। দুর্ঘটনাকবলিত তিনটি বগি রেখে ট্রেনটি পরে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। খবর পেয়ে উদ্ধারকারী ট্রেন এসে লাইনচ্যুত বগিটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে। আজ বেলা দুইটার দিকে লাইনচ্যুত বগিটি রেললাইনের ওপরে তুলতে সক্ষম হয়।

রেলওয়ে পূর্বঞ্চলের উপসহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেনটির একটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার পর অন্তত ১০০ মিটার টেনে নিয়ে যায় ইঞ্জিন। ফলে রেলের চাকার সঙ্গে সিমেন্টের স্লিপার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বগিটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি বলেন, রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা এসে বগিটি উদ্ধার করে লাইনের ওপর তোলেন। যে সব স্লিপার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলোকে তুলে তাৎক্ষণিক কাঠের স্লিপার দিয়ে রেললাইন সচল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

দুর্ঘটনায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা যাচাই করা হচ্ছে বলে জানান রেলওয়ের প্রকৌশলী আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বগিটিকে ওয়ার্কশপে নেওয়া হবে। ঢাকামুখী রেললাইন ঠিক করার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হবে। এরপর ওই পথ দিয়ে ট্রেন চালানো হবে। ততক্ষণ সময় পর্যন্ত চট্টগ্রামমুখী লাইন দিয়ে উভয় দিকে রেল চলাচল করবে। এতে যাত্রাপথে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর কিছুটা সময় বিলম্ব হচ্ছে। তবে ট্রেন চলাচল বন্ধ নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পশ্চিমাদের উপগ্রহগুলোতে গুপ্তচরবৃত্তি করছে রাশিয়া ও চীন
  • আকুর বিল পরিশোধের পর কমল রিজার্ভ
  • ‘জেমস বন্ড’ সিরিজের পরিচালক মারা গেছেন
  • গলায় ছুরিকাঘাত নিয়ে তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন অটোরিকশাচালক, পরে মৃত্যু
  • কাটা গলা নিয়ে রিকশাচালিয়ে ৩ কিলোমিটার, হাসপাতালে মৃত্যু
  • শরীয়তপুরে জাতীয় যুবশক্তির কমিটি ঘোষণার ২০ মিনিট পরই সদস্যসচিবের পদত্যাগ
  • ৩৭ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের কাছে সিরিজ হারল দ. আফ্রিকা
  • ‘দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন’ লিখে রেখে যাওয়া নবজাতকের অভিভাবক হতে কয়েক শ ফোনকল
  • লাইনচ্যুত বগি রেখে চলে গেল ট্রেন, ১১ ঘণ্টা পর উদ্ধার
  • ওপেনএআইয়ের এপিআই ব্যবহার করে চলছে গুপ্তচরবৃত্তি