এনটিআরসিএর সিদ্ধান্তে ক্ষোভ, চাকরিপ্রার্থীরা চান দ্রুত সমাধান
Published: 25th, June 2025 GMT
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সাম্প্রতিক কার্যক্রম নিয়ে দেশজুড়ে বেকার তরুণ-তরুণীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বয়স নির্ধারণ ও মৌখিক পরীক্ষায় ‘বিধি লঙ্ঘন করে’ হাজার হাজার প্রার্থীকে চাকরির দৌড় থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে রাজধানীর রাজপথে নেমে এসেছেন ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীরা।
গত ৪ জুন এনটিআরসিএ ১৮তম নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, মৌখিক পরীক্ষায় ২৩ হাজারের বেশি প্রার্থীকে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে।অথচ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হতো। বহু প্রার্থী অভিযোগ করছেন, তারা ৪০ শতাংশের বেশি নম্বর পাওয়ার মতো উত্তর দিয়েছেন, কিন্তু তাদের ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ ফেল করানো হয়েছে।
ভাইভার প্রশ্নপত্রে অনিয়মের অভিযোগ
চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ মৌখিক পরীক্ষায় শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপর ১২ নম্বর এবং প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে ৮ নম্বর বরাদ্দ থাকলেও, তা যথাযথভাবে মানা হয়নি। অনেক সময় বিষয় সংশ্লিষ্টতা ছাড়াই অনভিজ্ঞ পরীক্ষকদের দ্বারা ভাইভা নেওয়া হয়েছে, যা নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
আরো পড়ুন:
খাতা জমা দিতে দেরি করায় ১৬ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত, হাসপাতালে ২
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় ষড়যন্ত্রের শিকার, অভিযোগ বেরোবির সেই শিক্ষকের
সোমবার এক পরীক্ষার্থী রাসেল আকতার বলেন, “ভালোভাবে উত্তর দিয়েও অকৃতকার্য, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। মনে হচ্ছে, আমাদের বাদ দেওয়ার আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা হয়েছিল।”
নির্ধারণ বয়সসীমা
বয়সসীমা নির্ধারণে ‘অবিবেচনাপ্রসূত’ সিদ্ধান্ত আরো বিস্তর ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে ১৬ জুন প্রকাশিত ১ লাখ ৮২২ শিক্ষকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। এতে বলা হয়েছে, আবেদনকারীর বয়স সর্বোচ্চ ৩৫ বছর হতে হবে—ফল প্রকাশের দিন (৪ জুন ২০২৫) অনুযায়ী। অথচ নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল ২০২৩ সালের নভেম্বরে।
চাকরিপ্রার্থীদের প্রশ্ন, দেড় বছর বিলম্ব করে এনটিআরসিএ যখন ফল প্রকাশ করেছে, তখন বয়স নির্ধারণে সেই ফল প্রকাশের দিনকে ভিত্তি ধরা কতটা যৌক্তিক? অনেকেই এই কারণে আবেদনের সুযোগ হারিয়েছেন।বিক্ষোভকারীদের ভাষায়, ফল প্রকাশের তারিখ দিয়ে বয়স গুনলে তো ভবিষ্যতে আরো হাজারো তরুণ বঞ্চিত হবে। বিলম্বের দায় প্রার্থীরা নেবে কেন?
সড়কে আন্দোলন, নীরব এনটিআরসিএ
বিক্ষোভের সময় একাধিকবার পুলিশি হস্তক্ষেপ হয়েছে।গত রবিবার সচিবালয়মুখী লং মার্চে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে, লাঠিচার্জ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ইস্কাটনে এনটিআরসিএ দপ্তরের সামনেও বৃষ্টিতে ভিজে চলে অবস্থান কর্মসূচি। আন্দোলনের মধ্যেই এক চাকরিপ্রার্থী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, এনটিআরসিএ কর্মকর্তারা আন্দোলনের মুখেও নির্বিকার। চেয়ারম্যানে দায়িত্বপ্রাপ্ত নূরে আলম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) বর্তমান সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এ.
শিক্ষানীতি গবেষক ড. মাহবুব হাসান বলেন, “প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ছাড়া কোনো নিয়োগ টেকসই হয় না। মৌখিক পরীক্ষার মতো বিষয় খুবই সংবেদনশীল, সেখানে অব্যবস্থাপনা থাকলে সেটি শুধু চাকরিপ্রার্থীদের নয়, গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকেই হুমকির মুখে ফেলে।”
প্রেসক্লাবের সামনে কথা হয় সামিয়া আক্তার নামের এক আন্দোলনকারীর সাথে। তিনি বলেন, “যেখানে একটি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ন্যূনতম স্বচ্ছতা ও নিয়ম মানার প্রত্যাশা থাকে, সেখানে এনটিআরসিএর সাম্প্রতিক আচরণ গভীর উদ্বেগের বিষয়। মৌখিক পরীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা এবং বয়স নির্ধারণে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নতুনভাবে শিক্ষক সমাজে অনাস্থা তৈরি করছে। এ সংকট নিরসনে দ্রুত ও দায়িত্বশীল হস্তক্ষেপ প্রয়োজন সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে।”
ঢাকা/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ কর প র র থ দ র ম খ ক পর ক ষ য় এনট আরস এ ক পর ক ষ র প রক শ র
এছাড়াও পড়ুন:
এনটিআরসিএর সিদ্ধান্তে ক্ষোভ, চাকরিপ্রার্থীরা চান দ্রুত সমাধান
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সাম্প্রতিক কার্যক্রম নিয়ে দেশজুড়ে বেকার তরুণ-তরুণীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বয়স নির্ধারণ ও মৌখিক পরীক্ষায় ‘বিধি লঙ্ঘন করে’ হাজার হাজার প্রার্থীকে চাকরির দৌড় থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে রাজধানীর রাজপথে নেমে এসেছেন ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীরা।
গত ৪ জুন এনটিআরসিএ ১৮তম নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, মৌখিক পরীক্ষায় ২৩ হাজারের বেশি প্রার্থীকে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে।অথচ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হতো। বহু প্রার্থী অভিযোগ করছেন, তারা ৪০ শতাংশের বেশি নম্বর পাওয়ার মতো উত্তর দিয়েছেন, কিন্তু তাদের ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ ফেল করানো হয়েছে।
ভাইভার প্রশ্নপত্রে অনিয়মের অভিযোগ
চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ মৌখিক পরীক্ষায় শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপর ১২ নম্বর এবং প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে ৮ নম্বর বরাদ্দ থাকলেও, তা যথাযথভাবে মানা হয়নি। অনেক সময় বিষয় সংশ্লিষ্টতা ছাড়াই অনভিজ্ঞ পরীক্ষকদের দ্বারা ভাইভা নেওয়া হয়েছে, যা নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
আরো পড়ুন:
খাতা জমা দিতে দেরি করায় ১৬ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত, হাসপাতালে ২
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় ষড়যন্ত্রের শিকার, অভিযোগ বেরোবির সেই শিক্ষকের
সোমবার এক পরীক্ষার্থী রাসেল আকতার বলেন, “ভালোভাবে উত্তর দিয়েও অকৃতকার্য, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। মনে হচ্ছে, আমাদের বাদ দেওয়ার আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা হয়েছিল।”
নির্ধারণ বয়সসীমা
বয়সসীমা নির্ধারণে ‘অবিবেচনাপ্রসূত’ সিদ্ধান্ত আরো বিস্তর ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে ১৬ জুন প্রকাশিত ১ লাখ ৮২২ শিক্ষকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। এতে বলা হয়েছে, আবেদনকারীর বয়স সর্বোচ্চ ৩৫ বছর হতে হবে—ফল প্রকাশের দিন (৪ জুন ২০২৫) অনুযায়ী। অথচ নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল ২০২৩ সালের নভেম্বরে।
চাকরিপ্রার্থীদের প্রশ্ন, দেড় বছর বিলম্ব করে এনটিআরসিএ যখন ফল প্রকাশ করেছে, তখন বয়স নির্ধারণে সেই ফল প্রকাশের দিনকে ভিত্তি ধরা কতটা যৌক্তিক? অনেকেই এই কারণে আবেদনের সুযোগ হারিয়েছেন।বিক্ষোভকারীদের ভাষায়, ফল প্রকাশের তারিখ দিয়ে বয়স গুনলে তো ভবিষ্যতে আরো হাজারো তরুণ বঞ্চিত হবে। বিলম্বের দায় প্রার্থীরা নেবে কেন?
সড়কে আন্দোলন, নীরব এনটিআরসিএ
বিক্ষোভের সময় একাধিকবার পুলিশি হস্তক্ষেপ হয়েছে।গত রবিবার সচিবালয়মুখী লং মার্চে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে, লাঠিচার্জ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ইস্কাটনে এনটিআরসিএ দপ্তরের সামনেও বৃষ্টিতে ভিজে চলে অবস্থান কর্মসূচি। আন্দোলনের মধ্যেই এক চাকরিপ্রার্থী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, এনটিআরসিএ কর্মকর্তারা আন্দোলনের মুখেও নির্বিকার। চেয়ারম্যানে দায়িত্বপ্রাপ্ত নূরে আলম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) বর্তমান সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এ.এম.এম. রিজওয়ানুল হক। তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিনকেই বয়স গণনার ভাবনা রয়েছে, তবে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মৌখিক পরীক্ষার অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।”
শিক্ষানীতি গবেষক ড. মাহবুব হাসান বলেন, “প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ছাড়া কোনো নিয়োগ টেকসই হয় না। মৌখিক পরীক্ষার মতো বিষয় খুবই সংবেদনশীল, সেখানে অব্যবস্থাপনা থাকলে সেটি শুধু চাকরিপ্রার্থীদের নয়, গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকেই হুমকির মুখে ফেলে।”
প্রেসক্লাবের সামনে কথা হয় সামিয়া আক্তার নামের এক আন্দোলনকারীর সাথে। তিনি বলেন, “যেখানে একটি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ন্যূনতম স্বচ্ছতা ও নিয়ম মানার প্রত্যাশা থাকে, সেখানে এনটিআরসিএর সাম্প্রতিক আচরণ গভীর উদ্বেগের বিষয়। মৌখিক পরীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা এবং বয়স নির্ধারণে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নতুনভাবে শিক্ষক সমাজে অনাস্থা তৈরি করছে। এ সংকট নিরসনে দ্রুত ও দায়িত্বশীল হস্তক্ষেপ প্রয়োজন সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে।”
ঢাকা/এসবি