জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির ক্ষেত্রে মতৈক্য না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আমরা কোনো বিষয়েই একমত হব না, এটাই যেন আমাদের আলোচনার মূলনীতি।’

আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান। আজ কমিশনে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি নিয়ে আলোচনা হয়।

মজিবুর রহমান বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির ক্ষেত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা-সম্প্রীতি ও পক্ষপাতহীনতা—এই অভিপ্রায়গুলো যুক্ত করলে সব পক্ষের মতামতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে শুধু ভাষার হেরফেরের কারণে এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের প্রধান আকাঙ্ক্ষা হলো ফ‍্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ। হাসিনার মতো একচ্ছত্র ক্ষমতাচর্চার সংস্কৃতি বজায় থাকলে সংস্কার বলতে কিছুই হবে না।’

মজিবুর রহমান বলেন, ‘সংস্কারের প্রধান লক্ষ‍্য হচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরপেক্ষ রাখার ব্যবস্থা করা এবং সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতিকে কঠিনতর করা। অতীতে শেখ হাসিনা নিজের ইচ্ছেমতো দলবাজ লোক নিয়োগ দিয়ে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছেন। এখনো যদি সেই ব্যবস্থা বজায় রাখার পক্ষে কোনো দল মত দেয়, তাহলে বোঝা যাবে, তারা আসলে ফ‍্যাসিবাদী নীতি পরিবর্তনে অনিচ্ছুক।’

এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানী আবদুল হক বলেন, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ পদে নিয়োগের জন্য প্রস্তাবিত কমিটি গঠিত হলে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা হ্রাস পাবে, এমন ধারণা সঠিক নয়। বরং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গঠনপ্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করতে পারলে নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ: আগামী সপ্তাহে দলগুলোর সঙ্গে আবার আলোচনায় বসবে ঐকমত্য কমিশন

জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার আলোচনায় বসবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আলোচনার দিনক্ষণ আজ মঙ্গলবার ঠিক করা হতে পারে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া চূড়ান্ত করা হলেও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি। এ কারণে আটকে আছে জুলাই সনদ।

বাস্তবায়নের উপায় ঠিক করতে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তিন দিন আলোচনা হলেও এখনো ঐকমত্য হয়নি। আপাতত আলোচনা মুলতবি রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা কমিশনকে ইতিমধ্যে বলেছেন, সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন টেকসই করতে হলে গণভোট বা গণপরিষদের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করা হবে সবচেয়ে ভালো বিকল্প।

গতকাল সোমবার কমিশন সূত্র জানায়, আজ মঙ্গলবার কমিশনে নিজেদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করার কথা রয়েছে। সেখানে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হতে পারে। আগামী ৪ বা ৫ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার আলোচনা করার পরিকল্পনা আছে। কমিশনের লক্ষ্য হলো আর এক দিন আলোচনা করে বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করা। আগামী ১৫ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশনের বর্ধিত মেয়াদ শেষ হবে। এর মধ্যেই কমিশন জুলাই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করতে চায়।

আরও পড়ুনঐকমত্য কমিশন ব্যর্থ হলে, ব্যর্থতা সবার: আলী রীয়াজ১৫ জুলাই ২০২৫

বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা অব্যাহত আছে। সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে সংবিধান আদেশ জারি ও পরবর্তী সময়ে এর ভিত্তিতে গণভোট, গণপরিষদ গঠন, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়াসহ একাধিক বিকল্প পদ্ধতি আলোচনায় আছে। এগুলো নানাভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের পদ্ধতি জুলাই সনদের অংশ হবে না। এ বিষয়ে সরকারকে একাধিক সুপারিশ দেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

বিশেষজ্ঞরা কমিশনকে ইতিমধ্যে বলেছেন, সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন টেকসই করতে হলে গণভোট বা গণপরিষদের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করা হবে সবচেয়ে ভালো বিকল্প।

সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের পদ্ধতি জুলাই সনদের অংশ হবে না। এ বিষয়ে সরকারকে একাধিক সুপারিশ দেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

আরও পড়ুনজুলাই সনদ কার্যকর হলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কার অধীনে২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে। বিএনপি আগামী সংসদের মাধ্যমে সংবিধান–সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পক্ষে। এর বাইরে অন্য কোনোভাবে সংবিধান সংস্কার সম্ভব কি না, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া যেতে পারে বলে মনে করে দলটি।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলনসহ আরও কোনো কোনো দল এ ধরনের সংবিধান সংস্কার সভা গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে। এর বাইরে কিছু দল সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার পক্ষে।

জামায়াতে ইসলামী চায় সংবিধান আদেশ জারি এবং গণভোটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন। আর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চায় গণপরিষদ। দলটি মনে করে, গণপরিষদ একই সঙ্গে নিয়মিত সংসদ হিসেবেও কাজ করতে পারে। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলনসহ আরও কোনো কোনো দল এ ধরনের সংবিধান সংস্কার সভা গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে। এর বাইরে কিছু দল সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার পক্ষে।

জাতীয় ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার পরিকল্পনা রয়েছে। এর আগে ও পরে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশনের আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ ১৫ অক্টোবরের মধ্যে
  • ঐকমত্য কমিশন বলছে, শরিয়াহ নিয়ে প্রশ্ন ছিল না, মামুনুল হক বললেন অসতর্কতায় অন্য জরিপের কথা বলেছেন
  • ১১ দিনের নতুন কর্মসূচি ইসলামী আন্দোলনের
  • কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা স্থগিত রাখলেন লাদাখের নেতারা
  • গাজায় নতুন শান্তি পরিকল্পনায় একমত ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু
  • জুলাই সনদ: আগামী সপ্তাহে দলগুলোর সঙ্গে আবার আলোচনায় বসবে ঐকমত্য কমিশন