সীতাকুণ্ডে বনাঞ্চল কেটে গড়ে ওঠা জাহাজভাঙা কারখানা উচ্ছেদ
Published: 25th, June 2025 GMT
বনাঞ্চল কেটে গড়ে ওঠা বিতর্কিত সেই জাহাজভাঙা কারখানা উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। আজ বুধবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় এলাকার তুলাতলী মৌজায় কোহিনূল স্টিল নামে এই কারখানাটিতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এ সময় কারখানার ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিন হোসেন অভিযানে নেতৃত্ব দেন। অভিযানে সেনা, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সহযোগিতা করেন। এর আগে জেলা প্রশাসনই বনের জায়গায় জাহাজাভাঙা কারখানা স্থাপনের জন্য দুইবার ইজারার অনুমতি দিয়েছিল। আপত্তির পর আবার ইজারা বাতিল করা হয়েছিল। কোহিনূর স্টিল নামে এই কারখানাটি স্থাপন করেছিলেন আবুল কাসেম নামের এক ব্যক্তি। তিনি ‘রাজা কাসেম’ নামে পরিচিত।
ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিন হোসেন অভিযানের সময় বলেন, ‘তুলাতলী মৌজায় কারখানাটি যেখানে হয়েছে, সেটি জাহাজভাঙা কারখানার অঞ্চলভুক্ত এলাকা নয়। তুলাতলী মৌজায় সরকারি খাসজমি ও বনাঞ্চল দখল করে এটি গড়ে উঠেছিল। সেটি এখন উচ্ছেদ করা হয়েছে।’
উচ্ছেদের জন্য এক্সকাভেটরের পাশাপাশি অন্তত ৩০ জন শ্রমিককে কাজে লাগানো হয়। উচ্ছেদের সময় সেখানে লোকজনের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। গণমাধ্যমকর্মীদেরও ঢুকতে দেওয়া হয় সীমিত পরিসরে। ইয়ার্ডের স্বত্বাধিকারী আবুল কাসেম কারখানার বাইরে রাস্তায় অপেক্ষা করছিলেন। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চলে।
এ সময় আবুল কাসেম দাবি করেন, ‘২০২২ সালে সরকারি নীতিমালার আলোকে ইজারা নেওয়া হয়। বর্তমানে যে ভবনটি ভাঙা হচ্ছে, তা উত্তর সলিমপুর মৌজায় অবস্থিত। তুলাতলী মৌজাতে ছিল না। বিগত সরকারের দায়িত্বরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত করে যে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন তাতে ছিল উত্তর সলিমপুর মৌজা। কিন্তু কয়েক মাস আগে থেকে একটি মহল আমার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকতায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ অবৈধভাবে ভাঙার বিষয়ে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলে জানান তিনি।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, তুলাতলী মৌজায় বন বিভাগের ২০ ধারায় নোটিফিকেশনকৃত বনাঞ্চল রয়েছে। ইজারা চুক্তিতে কাগজে–কলমে সলিমপুর মৌজা দেখানো হলেও মূলত তুলাতলী মৌজায় বিতর্কিত এই ইয়ার্ড গড়ে ওঠে। বন বিভাগ বারবার এই ইজারায় আপত্তি জানিয়ে আসছিল। আপত্তি উপেক্ষা করে তখনকার জেলা প্রশাসকেরা একই ভূমি দুইবার রাজা কাসেমকে ইজারা দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে প্রথম ৭ দশমিক ১০ একর ভূমি শিপইয়ার্ডের জন্য ইজারা পায় কাসেমের বিবিসি স্টিল। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আইনি পদক্ষেপ নেয় এই ইজারার বিরুদ্ধে। কিন্তু তুলাতলী মৌজাটি বনাঞ্চল ঘেরা হওয়ায় উচ্চ আদালত ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি ইজারা চুক্তি অবৈধ ঘোষণা করেন। পরে আর ইজারা চুক্তি নবায়ন করেনি জেলা প্রশাসন।
বিবিসির নামে ইজারা বাতিল হওয়ার পর কাসেম তাঁর স্ত্রী কোহিনূর আকতারের নামে নতুন করে একই জায়গায় জমি ইজারার আবেদন করেন। আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয় কোহিনূর স্টিল। এরপর ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কোহিনূর স্টিলের নামে সীতাকুণ্ডের উত্তর সলিমপুর মৌজা দেখিয়ে পাঁচ একর বনভূমি ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। এ নিয়ে ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো পত্রিকায় ‘প্রথমে ব্যর্থ পরে “কৌশলে” ইজারা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আবার ২০২৩ সালের ৮ জুন ‘চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদারতায় ইয়ার্ডের পেটে ৫ হাজার গাছ’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
চুক্তির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে ২০২৩ সালে জেলা প্রশাসন সীতাকুণ্ডের কোহিনূর স্টিল নামের ওই জাহাজভাঙা কারখানার ইজারা বাতিল করেছিল। উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করে হাইকোর্টে প্রতিবেদনও দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এরপর বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে ইজারা চুক্তি বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করেন কোহিনূর স্টিলের মালিক আবুল কাসেম। ইজারা ফিরে পেয়ে কারখানাটিতে ফের জোরেশোরে কাজ শুরু করা হয়। সীতাকুণ্ডের সলিমপুর এলাকার তুলাতলী মৌজায় কোহিনূর স্টিল নামে ইয়ার্ডটির অবস্থান। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় বাতিল হওয়া ইজারা ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেয় ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে। এরপর কাসেম আবার ওই জায়গায় কাজ শুরু করেছিলেন। পরে আদালতের নির্দেশে তা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মোল্যা রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই জাহাজভাঙা কারখানার কারণে আমাদের অনেক বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। এখন ইয়ার্ড উচ্ছেদ হয়েছে। আমরা আবার বনাঞ্চল করব ওই জায়গায়।’
আরও পড়ুনপ্রথমে ব্যর্থ, পরে ‘কৌশলে’ ইজারা২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ ২০২২ স র ইজ র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
পাটুরিয়া লঞ্চঘাট নদীতে বিলীন, লঞ্চে যাত্রীদের ঝুঁকিপূর্ণ ওঠানামা
পদ্মা নদীর প্রবল স্রোতে মানিকগঞ্জের শিবালয়ে পাটুরিয়া লঞ্চঘাট নদীতে বিলীন হওয়ায় অন্য স্থানে ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে যাত্রী ওঠানামা করানো হচ্ছে। আগের লঞ্চঘাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে যাত্রীদের লঞ্চে উঠতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এ সমস্যা দেখা দিলেও কর্তৃপক্ষ আগাম কোনো প্রস্তুতি নেয় না। এবারও যথাসময়ে ব্যবস্থা না নেওয়ায় বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
লঞ্চঘাট–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে ২৪টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার হয়। গত দুই সপ্তাহে নদীতে পানি বেড়ে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ক সপ্তাহ আগে থেকে পাটুরিয়া লঞ্চঘাটে ভাঙন শুরু হয়। এরপর গত মঙ্গলবার দুপুরে লঞ্চঘাটের পশ্চিম পাশের জেটি সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। অপর জেটিও নদীতে ধসে যাওয়ার উপক্রম হয়। এতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে মঙ্গলবার বিকেলে লঞ্চগুলো ঘাটের পশ্চিমে ২ নম্বর ফেরিঘাটের পন্টুনে নিয়ে রাখা হয়। সেখানে কোনোরকমে যাত্রীদের লঞ্চে ওঠানামা করানো হচ্ছিল। তবে গতকাল শুক্রবার বিকেলে ২ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। এতে পন্টুনের নিচ থেকে মাটি ধসে যায় এবং পন্টুনটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এরপর লঞ্চঘাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নিয়ে লঞ্চগুলো রাখা হয়। সেখানে কাঠের পাটাতনের ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে ওঠানামা করছেন যাত্রীরা।
লঞ্চঘাট নদীতে বিলীন হওয়ায় যাত্রীরা ভোগান্তির পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন লঞ্চের মালিক ও শ্রমিকেরা। পাটুরিয়া লঞ্চঘাটের সুপারভাইজার পান্না লাল নন্দী প্রথম আলোকে বলেন, অধিকাংশ যাত্রী ফেরিতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ পারাপার হচ্ছেন। এতে লঞ্চের যাত্রী পারাপার কমে যাওয়ায় তাঁদের আয় কমে গেছে।
ঢাকার সাভারে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার আরিফ হোসেন। গতকাল শনিবার সকালে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। বাস থেকে নেমে লঞ্চঘাটে যাওয়ার পর দেখেন, ঘাট ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি রিকশায় করে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নদীর তীরসংলগ্ন লঞ্চের কাছে গিয়ে নামেন। সেখানে কাদা মাড়িয়ে কাঠের পাটাতনের ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে ওঠেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা নদীবন্দরের উপপরিচালক মো. সেলিম শেখ বলেন, নদীভাঙনের ফলে লঞ্চঘাটটি ভেঙে যাওয়ায় পাশে ২ নম্বর ফেরিঘাটের পন্টুন দিয়ে লঞ্চে যাত্রী ওঠানামা করা হচ্ছিল। তবে ওই ঘাটও ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় পুরোনো ট্রাক টার্মিনালের দক্ষিণে নদীর তীরে অস্থায়ীভাবে লঞ্চে যাত্রী ওঠানামার কাজ হচ্ছে। আশপাশের কোনো স্থানে স্থায়ীভাবে ঘাট নির্মাণ করা যায় কি না, তা নিয়ে পরিকল্পনা চলছে।