একপক্ষ তালা ভেঙে সমবায় সমিতির অফিস দখল করেছে: বাদিউল কবির
Published: 25th, June 2025 GMT
সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একপক্ষ আইন অমান্য করে তালা ভেঙে সমবায় সমিতির অফিস দখল করেছে বলে অভিযোগ করেছেন কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের অপর পক্ষের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর। সচিবালয়ে সমিতির ক্যান্টিন নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনার পরও সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি আদায়ের আন্দোলন ব্যাহত হবে না বলেও জানান তিনি।
বুধবার (২৫ জুন) সচিবালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্মচারী ঐক্য ফোরামের অন্যতম কো-চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘একপক্ষ আইন অমান্য করে তালা ভেঙে সমবায় সমিতির অফিস দখল করেছে। এ নিয়ে কয়েকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এ ঘটনায় সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আমাদের চলমান নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম থেমে যাবে না।’’
তিনি বলেন, ‘‘এক পক্ষ স্বাভাবিক পন্থায় দায়িত্ব গ্রহণ না করে, তারা নিজেদের হাতে আইন তুলে নিয়ে সচিবালয়ে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় ও ভাতৃত্বপূর্ণ কর্মপরিবেশ, সেই ঐতিহ্য নষ্ট করেছেন।’’
সমবায় সমিতির অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালনা কমিটির বিষয়ে আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন জানিয়ে বাদিউল কবীর বলেন, ‘‘তারা উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সেখানে অবস্থান করেছেন। আমি দুপক্ষকেই সংযত হতে বলি। আমার পক্ষে যারা ছিলেন তারা আমার অনুরোধ রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। তাদেরও অনেকে আমার কথা অনুসরণ করে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এর মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেটা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এটি অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।’’
এ সময় সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘‘যারা এখন সমবায় সমিতির দখল নিয়েছেন আমরা তাদের আদালতের রায়ের কপি দেই। কিন্তু তারা সেই কপি গ্রহণ করেননি। এরপর আমরা বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিতভাবে জানাই। বিষয়টি সমাধান করে দেওয়ার জন্য সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠনের নেতাদেরও অবহিত করি।’’
সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, ‘‘আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের কমিটির মেয়াদ থাকলেও গত ১৯ জুন সমিতির কার্যালয়ে তালা লাগায় একটি পক্ষ। এরপর দায়িত্ব হস্তান্তর ছাড়াই ক্যানটিন পরিচালনা করে তারা। এ বিষয়ে আমরা ১৯ জুন শাহবাগ থানায় অভিযোগ দিয়েছি।’’
এর আগে মঙ্গলবার রাতে সচিবালয়ে সমবায় সমিতির ক্যান্টিনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়ায়। রাত সাড়ে আটটার দিকে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল ইসলামসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নুরুল ইসলাম গ্রুপ বাদিউল গ্রুপকে, আবার বাদিউল গ্রুপ নুরুল ইসলাম গ্রুপকে দায়ী করছেন।
নুরুল ইসলাম গ্রুপের মহাসচিব মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম অভিযোগ করেন, ‘‘মঙ্গলবার বিকেলে সমবায় সমিতির আগের কমিটি আদালতের রায়ের বিষয়টি আমাদের জানায়। আমরা বলেছি, এটি তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সমবায় বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের জানাক। তারা ক্যান্টিনের কার্যক্রম বন্ধ করতে বললে আমরা বন্ধ করে দেব। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে যখন ক্যান্টিনের বাজার এসেছিল, ট্রাক থেকে ওএমএস-এর পণ্য নামানো হচ্ছিল, তখন বাদিউলরা আমাদের ওপর হামলা করে। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দোসররাও ছিল। তারা ৩০ থেকে ৪০ জন মিলে আমাদের ওপর রড, লাঠিসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়। আমাদের সভাপতি নুরুল ইসলামসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আমিও আহত হয়েছি।’’
চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন বানচাল ও সমবায় সমিতির আর্থিক দুর্নীতি ঢাকতে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে জানিয়ে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
অন্যদিকে নুরুল ইসলাম গ্রুপের অভিযোগকে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে বাদিউল কবীর গ্রুপের মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘গত দুই দিন ধরে নুরুল ইসলাম গ্রুপের লোকজন সচিবালয়ের উক্ত ক্যান্টিন দখলে রাখার জন্য লাটিসোটা নিয়ে অবস্থান করছিল। আদালতের আদেশ অনুযায়ী ক্যান্টিন পরিচালনার বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে সমিতির লোকজন আমাদের সভাপতিসহ নেতাদের ডাকেন। এ সময় ওই গ্রুপের নুরুল ইসলামসহ অন্যরা ছিলেন। এক কথায় দুকথায় হঠাৎ নুরুল ইসলাম আমাদের বাবু ভাইকে চেয়ার ছুড়ে মারেন। এসময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে হাতাহাতির মতো ভুল বোঝাবুঝি ও অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।’’
‘‘নুরুল ইসলাম পুরো ঘটনার জন্য দায়ী। তিনি যদি চেয়ার ছুড়ে না মারতেন তাহলে কোনো ঘটনাই ঘটতো না,’’ বলেন তিনি।
এদিকে সংঘর্ষের পর বুধবার সচিবালয়ে ক্যান্টিনসহ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এবং ক্যান্টিন দখলে কর্মচারীদের দুই গ্রুপ এখনও অনড় অবস্থানে রয়েছেন। এ নিয়ে যে কোনো সময় আরো বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে সচিবালয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র ল ইসল ম গ র ব দ উল কর ছ ন আম দ র সমব য
এছাড়াও পড়ুন:
কমেছে তেলের দাম, বেড়েছে শেয়ার সূচক
শেষমেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইরান ও ইসরায়েল—এ খবর প্রকাশিত হতেই বিশ্ববাজারে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। আজ মঙ্গলবার বিশ্ববাজারে তেলের দাম ৪ শতাংশ পড়ে গেছে, শেয়ার সূচকের উত্থান হয়েছে আর ডলার দুর্বল হয়েছে।
এর আগে গত সোমবারও বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেছে। সেদিন ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ৭ শতাংশ পড়ে যায়। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিক্রিয়ায় দেশটি কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের এক সামরিক ঘাঁটিতে প্রতীকী হামলা চালিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছে যে আপাতত তারা আর এগোবে না। এরপর বাজারসংশ্লিষ্টদের মধ্যে এই ধারণার সৃষ্টি হয় যে হরমুজ প্রণালি দিয়ে তেল সরবরাহ এখন বন্ধ হচ্ছে না। যদিও সোমবার ইরানের সংসদে হরমুজ প্রণালি বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
আজ অপরিশোধিত ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬৭ দশমিক ৬৮ ডলার পর্যন্ত নেমে যায়; ১১ জুনের পর যা সর্বনিম্ন। মার্কিন ডব্লিউটিআই ক্রুডের দামও ৩ দশমিক ৬ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। দাম কমে হয় ৬৬ দশমিক শূন্য ২ ডলার। এরপর অবশ্য উভয় জাতের তেলের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পায়।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন যে যুদ্ধের ঝুঁকি আপাতত শেষ। এখন বিনিয়োগকারীদের চোখ থাকবে আসন্ন শুল্ক সিদ্ধান্ত আর বাণিজ্য আলোচনার দিকে। যেভাবে মধ্যপ্রাচ্য সংকট দ্রুত মিটে গেল, তাতে করে শুল্ক ও বাণিজ্য চুক্তির বিষয়েও দ্রুত অগ্রগতি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে যুদ্ধবিরতির খবরে শেয়ারবাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যুদ্ধের কারণে কয়েক দিন টালমাটাল থাকার পর আজ বিশ্বের বিভিন্ন শেয়ারবাজারে সূচকের উত্থান হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচার বেড়েছে ১ শতাংশ, নাসডাক বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। ইউরোপের স্টক্স ৬০০ সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ, বিশেষ করে এয়ারলাইনস ও ভ্রমণ সংস্থাগুলোর শেয়ারের দাম ৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। যদিও তেল-গ্যাস কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে ৩ শতাংশ।
এশিয়ার বাজারেও একই রকম চাঙাভাব ছিল। এমএসসিআইয়ের এশিয়া-প্যাসিফিক সূচক (জাপান বাদে) বেড়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ, জাপানের নিক্কেই বেড়েছে ১ দশমিক ১ শতাংশ।
রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, জাপানে-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনার নতুন পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে। জাপানের প্রধান সমন্বয়কারী রিওসেই আকাজাওয়া সম্ভবত ২৬ জুন সপ্তমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন।
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সাধারণত ‘নিরাপদ বিনিয়োগ’মাধ্যম হিসেবে সরকারি বন্ডের কদর বাড়ে। কিন্তু এবার বাজার দ্বিধায় ছিল যে তেলের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি বাড়বে। তাই বন্ডে বিনিয়োগ তেমন একটা বাড়ছে না।
এদিকে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের ভাইস চেয়ারম্যান মিশেল বোম্যান বলেছেন, চাকরির বাজারে ঝুঁকি বাড়লে ধরে নিতে হবে যে সুদ কমানোর সময় ঘনিয়ে আসছে। এর আগে শুক্রবার ফেড গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার জানিয়েছিলেন, আগামী ২৯-৩০ জুলাইয়ের বৈঠকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সুদ কমানোর পক্ষে।
আজ মার্কিন কংগ্রেসে বক্তব্য দেওয়ার কথা ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের। নিকট ভবিষ্যতে সুদ কমানোর বিষয়ে তিনি এখন পর্যন্ত কিছুটা সংযত। বর্তমানে বাজারের ধারণা, জুলাই মাসে সুদ কমার সম্ভাবনা ২২ শতাংশ। তবে সেপ্টেম্বরের বৈঠকে সুদ কমা প্রায় নিশ্চিত বলেই মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে ১০ বছর মেয়াদি মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার এখন ৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ, জার্মানির ক্ষেত্রে তা ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ।
যুদ্ধবিরতির খবরে ডলারের মান রাতারাতি পড়ে গেছে। আজ জাপানি মুদ্রা ইয়েনের বিপরীতে ডলারের মান শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ কমে ১৪৫ দশমিক ৪৩ ইয়েন হয়েছে। আগের রাতেই যা ছিল ১৪৮ ইয়েন। ইউরোর দামও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১৬০২ ডলার, আগের রাতেই তা শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউরোপ ও জাপান তেল-এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরশীল। সে জন্য তেলের দাম কমলে তাদের মুদ্রা শক্তিশালী হয়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র নিট জ্বালানি রপ্তানিকারক। অর্থাৎ তারা যে পরিমাণ তেল আমদানি করে, তার চেয়ে বেশি রপ্তানি করে। ফলে তাদের মুদ্রার দাম উল্টো কমেছে।