সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একপক্ষ আইন অমান্য করে তালা ভেঙে সমবায় সমিতির অফিস দখল করেছে বলে অভিযোগ করেছেন কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের অপর পক্ষের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর। সচিবালয়ে সমিতির ক্যান্টিন নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনার পরও সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি আদায়ের আন্দোলন ব্যাহত হবে না বলেও জানান তিনি।

বুধবার (২৫ জুন) সচিবালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

কর্মচারী ঐক্য ফোরামের অন্যতম কো-চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘একপক্ষ আইন অমান্য করে তালা ভেঙে সমবায় সমিতির অফিস দখল করেছে। এ নিয়ে কয়েকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এ ঘটনায় সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আমাদের চলমান নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম থেমে যাবে না।’’

তিনি বলেন, ‘‘এক পক্ষ স্বাভাবিক পন্থায় দায়িত্ব গ্রহণ না করে, তারা নিজেদের হাতে আইন তুলে নিয়ে সচিবালয়ে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় ও ভাতৃত্বপূর্ণ কর্মপরিবেশ, সেই ঐতিহ্য নষ্ট করেছেন।’’

সমবায় সমিতির অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালনা কমিটির বিষয়ে আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন জানিয়ে বাদিউল কবীর বলেন, ‘‘তারা উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সেখানে অবস্থান করেছেন। আমি দুপক্ষকেই সংযত হতে বলি। আমার পক্ষে যারা ছিলেন তারা আমার অনুরোধ রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। তাদেরও অনেকে আমার কথা অনুসরণ করে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এর মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেটা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এটি অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।’’

এ সময় সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘‘যারা এখন সমবায় সমিতির দখল নিয়েছেন আমরা তাদের আদালতের রায়ের কপি দেই। কিন্তু তারা সেই কপি গ্রহণ করেননি। এরপর আমরা বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিতভাবে জানাই। বিষয়টি সমাধান করে দেওয়ার জন্য সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠনের নেতাদেরও অবহিত করি।’’

সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, ‘‘আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের কমিটির মেয়াদ থাকলেও গত ১৯ জুন সমিতির কার্যালয়ে তালা লাগায় একটি পক্ষ। এরপর দায়িত্ব হস্তান্তর ছাড়াই ক্যানটিন পরিচালনা করে তারা। এ বিষয়ে আমরা ১৯ জুন শাহবাগ থানায় অভিযোগ দিয়েছি।’’

এর আগে মঙ্গলবার রাতে সচিবালয়ে সমবায় স‌মি‌তির ক্যান্টিনের নিয়ন্ত্রণ নি‌য়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত প‌রিষ‌দের দুই গ্রুপ সংঘ‌র্ষে জ‌ড়ায়। রাত সাড়ে আটটার দি‌কে এই সংঘ‌র্ষের ঘটনা ঘ‌টে। এ‌তে কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল ইসলামসহ পাঁচজন আহত হ‌য়ে‌ছেন। এ ঘটনায় নুরুল ইসলাম গ্রুপ বাদিউল গ্রুপকে, আবার বাদিউল গ্রুপ নুরুল ইসলাম গ্রুপকে দায়ী করছেন।

নুরুল ইসলাম গ্রুপের মহাসচিব মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম অভিযোগ করেন, ‘‘মঙ্গলবার বিকেলে সমবায় সমিতির আগের কমিটি আদালতের রায়ের বিষয়টি আমাদের জানায়। আমরা বলেছি, এটি তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সমবায় বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের জানাক। তারা ক্যান্টিনের কার্যক্রম বন্ধ করতে বললে আমরা বন্ধ করে দেব। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে যখন ক্যা‌ন্টি‌নের বাজার এসেছিল, ট্রাক থেকে ওএমএস-এর পণ্য নামানো হচ্ছিল, তখন বাদিউলরা আমাদের ওপর হামলা করে। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দোসররাও ছিল। তারা ৩০ থেকে ৪০ জন মিলে আমাদের ওপর রড, লাঠিসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়। আমাদের সভাপতি নুরুল ইসলামসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আমিও আহত হয়েছি।’’

চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন বানচাল ও সমবায় সমিতির আর্থিক দুর্নীতি ঢাকতে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে জা‌নি‌য়ে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ব‌লেন তি‌নি।

অন‌্যদি‌কে নুরুল ইসলাম গ্রু‌পের অ‌ভি‌যোগকে মিথ‌্যা ও উ‌দ্দেশ‌্যপ্রণো‌দিত উ‌ল্লেখ ক‌রে বা‌দিউল কবীর গ্রু‌পের মহাস‌চিব নিজাম উ‌দ্দিন আহ‌মেদ ব‌লেন, ‘‘গত দুই দিন ধ‌রে নুরুল ইসলাম গ্রু‌পের লোকজন স‌চিবাল‌য়ের উক্ত ক‌্যা‌ন্টিন দখ‌লে রাখার জন‌্য লা‌টি‌সোটা নি‌য়ে অবস্থান করছিল। আদাল‌তের আ‌দেশ অনুযায়ী ক‌্যা‌ন্টিন প‌রিচালনার বিষ‌য়ে মঙ্গলবার রা‌তে স‌মি‌তির লোকজন আমা‌দের সভাপ‌তিসহ নেতা‌দের ডা‌কেন। এ সময় ওই গ্রু‌পের নুরুল ইসলামসহ অন‌্যরা ছি‌লেন। এক কথায় দুকথায় হঠাৎ নুরুল ইসলাম আমাদের বাবু ভাই‌কে চেয়ার ছু‌ড়ে মা‌রেন। এসময় প‌রি‌স্থি‌তি উত্তপ্ত হ‌য়ে উঠ‌লে হাতাহা‌তির মতো ভুল বোঝাবু‌ঝি ও অনাকাঙ্খিত প‌রি‌স্থি‌তি সৃ‌ষ্টি হয়।’’

‘‘নুরুল ইসলাম পু‌রো ঘটনার জন‌্য দায়ী। তি‌নি য‌দি চেয়ার ছু‌ড়ে না মার‌তেন তাহ‌লে কো‌নো ঘটনাই ঘটতো না,’’ বলেন তিনি।

এদিকে সংঘর্ষের পর বুধবার স‌চিবাল‌য়ে ক‌্যা‌ন্টিনসহ দোকানপাট বন্ধ র‌য়ে‌ছে। এবং ক‌্যা‌ন্টিন দখ‌লে কর্মচারী‌দের দুই গ্রু‌প এখনও অনড় অবস্থা‌নে র‌য়ে‌ছেন। এ নি‌য়ে ‌যে কো‌নো সময় আরো বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘট‌তে পা‌রে ব‌লে স‌চিবাল‌য়ে আতঙ্ক বিরাজ কর‌ছে।

 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন// 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র ল ইসল ম গ র ব দ উল কর ছ ন আম দ র সমব য

এছাড়াও পড়ুন:

৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম

গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।

এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।

আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’

দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’

ব্যবসার শুরু

রহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।

রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।

হকার থেকে এজেন্ট

কয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।

আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’

পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাস ধুয়েমুছে চালকের সহকারী ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন, ফিরে দেখেন আগুন জ্বলছে
  • ‘বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে, এরপর আর কিছু মনে নেই’
  • রেলের ৭ লাখ টাকার যন্ত্র ২৭ হাজারে বানালেন তিনি
  • রাতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে সাভার-ধামরাইয়ে দুই বাসে আগুন
  • জনস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণাই তাঁর নেশা 
  • ইডেনে স্পিন বিষ, ১৫ উইকেটের দিনে উড়ছে ভারত
  • বিচারকের ছেলে হত্যা মামলার আসামি লিমন পাঁচ দিনের রিমান্ডে
  • বিচারকের ছেলে হত্যা: লিমন ৫ দিনের রিমান্ডে
  • ‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব’
  • ৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম