হুরাসাগর নদে খাঁচায় মাছ চাষ, খরচের তুলনায় লাভ বেশি
Published: 26th, June 2025 GMT
পাবনার বেড়া উপজেলার এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে হুরাসাগর নদে খাঁচায় করে মাছ চাষের বিষয়টি প্রথমবার দেখেন আমির আলী। তখন থেকেই তাঁর আগ্রহ জন্মায়। পরে খোঁজখবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর কিছুদিনের মধ্যেই উপজেলার বৃশালিখা মহল্লার পাশে হুরাসাগর নদে নিজের ৪০টি খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেন। এখন সেই খাঁচার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০-এ।
আমির আলীর বাড়ি সুজানগর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে। আগে লুঙ্গি-গামছার ব্যবসা করতেন। এতে লাভের বদলে তাঁকে লোকসান গুনতে হচ্ছিল। নদের পানিতে খাঁচায় মাছ চাষের নতুন পদ্ধতি দেখে তাঁর মনে হয়, এটিই হতে পারে জীবনের মোড় পরিবর্তনের পথ। তাই পাশের বেড়া উপজেলার হুরাসাগর নদে বছরখানেক আগে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন।
আমির বলেন, ‘প্রতি খাঁচায় ৩০০ গ্রাম ওজনের ৫০০টি মাছ ছাড়ি। এগুলো দুই মাসে এক কেজি ওজনের হয়। খরচের তুলনায় লাভ বেশি, তাই এখন আরও খাঁচা বাড়াচ্ছি।’
আমির একা নন, একই রকম অভিজ্ঞতা আরও কয়েকজনের। ২০২৩ সালে বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা মহল্লায় হতদরিদ্র ২০ জন সদস্য নিয়ে ‘মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি’ গড়েন স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মুন্নাফ। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তা এবং স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা পিপিডির (প্রোগ্রামস ফর পিপলস ডেভেলপমেন্ট) কারিগরি সহযোগিতায় তাঁরা নদীর পানিতে খাঁচায় করে ‘মনোসেক্স তেলাপিয়া’ মাছের চাষ শুরু করেন।
মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির উদ্যোগে প্রথমে ২০টি খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করা হয়। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে এগুলো বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৬০-এ। শিগগিরই তাঁরা খাঁচার সংখ্যা ১০০-তে বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন। তাঁদের সফলতা দেখেই আমিরসহ আরও অনেক উদ্যোক্তা এ পদ্ধতির মাছ চাষে যুক্ত হন এবং হচ্ছেন।
কয়েকজন মাছচাষি জানান, প্রবহমান নদীতে মাছ দ্রুত বড় হয়। রোগবালাইও কম, খাবার প্রাকৃতিকভাবে মিলে যায়। এসব কারণেই খরচ কম, লাভ বেশি। প্রতিটি খাঁচা থেকে বছরে ৬০০ কেজি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। ১৮০ টাকা কেজি হিসাবে যার মূল্য প্রায় ১১ হাজার টাকা।
রফিকুল ইসলাম নামের এক উদ্যোক্তা বলেন, নদীর মাছের প্রতি মানুষের চাহিদা ও আগ্রহ বেশি। নদীর প্রবহমান পানিতে খাঁচায় মাছ চাষ কিন্তু পুকুরে চাষের মতো নয়। নদীর পানিতে মাছ প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে। তাই স্বাদও ভালো, চাহিদাও বেশি।
জিআই পাইপ, প্লাস্টিকের ড্রাম, নেট দিয়ে তৈরি করা হয় মাছ চাষের একেকটি খাঁচা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায়ও অনুপস্থিত বেশি
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার মতো এ বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায়ও অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। পরীক্ষার প্রথম দিন আজ বৃহস্পতিবার মোট ১৯ হাজার ৭৫৯ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। গত বছর এ পরীক্ষায় প্রথম দিন অনুপস্থিত ছিলেন ১৫ হাজার ২০৩ পরীক্ষার্থী।
সারা দেশে ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন। এবার মোট পরীক্ষার্থী গতবারের চেয়ে ৮১ হাজারের বেশি কমেছে। তিন বছরের মধ্যে এবারই পরীক্ষার্থী সবচেয়ে কম। এ ছাড়া দুই বছর আগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির পর রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) করেও সোয়া চার লাখের বেশি শিক্ষার্থী এবার পরীক্ষা দিচ্ছেন না।
প্রথম দিনের পরীক্ষা শেষে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে, নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত আজ এইচএসসির বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন ১৪ হাজার ৫১৩ জন। এ ছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন কোরআন মাজিদ বিষয়ের পরীক্ষায় ৪ হাজার ১৯৬ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীন বাংলা পরীক্ষায় ১ হাজার ৫০ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন।
অবশ্য কী কারণে এসব পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। এ ছাড়া অসদুপায়ের জন্য প্রথম দিন ৪৩ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আরও পড়ুনএসএসসিতে অনুপস্থিতির বড় কারণ বাল্যবিবাহ ১৬ জুন ২০২৫গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায়ও তুলনামূলক অনুপস্থিতি বেশি ছিল। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এই পরীক্ষার প্রথম দিনে অনুপস্থিত ছিল ২৬ হাজার ৯২৮ পরীক্ষার্থী। অথচ গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রথম দিন অনুপস্থিত ছিল ১৯ হাজার ৩৫৯ পরীক্ষার্থী। এসএসসি পরীক্ষায় নিজেদের বোর্ডের অধীন পরীক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধান করেছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ৬ হাজার ৩৮৯ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৩৫০ জন অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর তথ্য পাওয়া যায়। তথ্য পাওয়া এসব পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৪১ শতাংশের (৫৪৯) বিয়ে হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৯৭ শতাংশই ছাত্রী। ৩ শতাংশ ছেলে পরীক্ষার্থী বিয়ে করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুপস্থিতির প্রধান কারণ বাল্যবিবাহ। এ ছাড়া পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়া, অসুস্থতা, প্রস্তুতি ভালো না থাকাসহ নানা কারণে বাকিরা পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।
এইচএসসি পরীক্ষা দেখতে আজ রাজধানীর ভাষানটেক সরকারি কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার)। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সবাই সচেতন থাকলে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো সুযোগ অসাধু চক্র পাবে না। কেউ গুজব ছড়ালেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে প্রতিবারই হুমকি থাকে, এবারও আছে। তবে এসএসসি পরীক্ষার মতো এইচএসসি পরীক্ষাতেও তাঁরা তৎপর আছেন।
আরও পড়ুনএইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা দিচ্ছেন না সোয়া ৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ১৭ জুন ২০২৫