ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবি সানন্দে মেনে নিয়েছে: নাঈম
Published: 26th, June 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) প্রথমবারের মতো জাঁকজমকভাবে নবাব স্যার সলিমুল্লাহর জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ ছাড়া কর্মসূচির অংশ হিসেবে নবাব সলিমুল্লাহর জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং প্রীতিভোজ অনুষ্ঠিত হয়। এ আয়োজনে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন ঢাকাই সিনেমার নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় নায়ক নাঈম। তার আরেকটি পরিচয়- তিনি ঢাকার নবাবদের বংশধর তথা নবাব সলিমুল্লাহর প্রপৌত্র।
অনুষ্ঠানে নাঈম বলছেন, ‘নবাব সলিমুল্লাহ আমার আব্বার আপন দাদা ছিলেন। সেই সূত্রে আমি তাঁর প্রপৌত্র। আমাদের পরিবারকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উষ্ণ অভ্যর্থনা দিয়েছে। কথা বলার সুযোগ দিয়েছে। আমি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোস্ট ড.
অনুষ্ঠানে নাঈম বলেন, আমাদের পরিবার কিন্তু অবিভক্ত ভারত থেকেই মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছে। নবাব সলিমুল্লাহ সাহেব সেই ব্রিটিশ আমলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জায়গা দান করেছিলেন। তখন বাংলাদেশ তো দূরের কথা, পাকিস্তানেরও জন্ম হয়নি। ক্ষণজন্মা এই গুণী মানুষ মাত্র ৪৩ বছর বেঁচেছিলেন। এই স্বল্প সময়ে তিনি এখানকার মানুষের জন্য কাজ করেছেন। মুসলিম লীগের মতো দলকে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অথচ গত কয়েক দশকে মহান এই মানুষটির অবদান অস্বীকার করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর কোনো জন্মদিন বা মৃত্যুদিন পালিত হয়নি। আমরা যখন স্কুলে পড়েছি, তখন সলিমুল্লাহকে নিয়ে পাঠ্যসূচিতে অধ্যায় ছিল। সেটাও পরে তুলে দেওয়া হলো। তাহলে বর্তমান প্রজন্ম তাঁর সম্পর্কে জানবে কিভাবে?’
দাবি প্রসঙ্গে নাঈম বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম প্রতিবছর যেন তার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। তার নামে একটা রিসার্চ কেন্দ্র করা হয় এবং পাঠ্যসূচিতেও তাকে যেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আমাদের দাবি তারা সানন্দে মেনে নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের পরিবার ভীষণ কৃতজ্ঞ।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণ করে বেতন, ভতুর্কি ও সুদ পরিশোধ
এই প্রথম দেশের রাজস্ব আয়ের চেয়ে পরিচালন ব্যয় বেশি হতে যাচ্ছে। ফলে সরকারকে ঋণ করে বেতন, ভর্তুকি ও সুদ পরিশোধ করতে হবে। এটা দেশের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদেরা। তাই অর্থনীতির স্বার্থে এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউশনের (পিআরআই) বাজেট পর্যালোচনা সভায় এই উদ্বেগের কথা জানান অর্থনীতিবিদেরা। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে পিআরআই কার্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার সড়ক পরিবহন ও সেতুবিষয়ক বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন। পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য দেন সংস্থাটির প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জাইদি সাত্তার ও আশিকুর রহমান যৌথভাবে দেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এ সময় আশিকুর রহমান বলেন, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো সরকারের পরিচালন ব্যয় মোট রাজস্ব আয়কে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তার মানে ঋণ করে আমাদের বেতন, ভর্তুকি ও সুদ ব্যয় পরিশোধ করতে হচ্ছে। এটা অর্থনীতির জন্য খুবই উদ্বেগের। আমাদের এমন প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। উন্নয়ন ব্যয়ও কমে আসছে। আর খেলাপি ঋণের পরিমাণ অর্থবছর শেষে ছয় লাখ কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে। এ অর্থ কীভাবে উদ্ধার করা হবে সেটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার। নানা মহল থেকে প্রতিবাদ হলেও ব্যাংক একীভূত করতে হবে। আর এটা শুরু করতে হবে বর্তমান সরকারকেই।
জাইদি সাত্তার বলেন, প্রতিবছর ২৪ লাখ তরুণ কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হচ্ছেন। যার মধ্যে ১০ লাখ তরুণ কাজের সন্ধানে দেশের বাইরে যাচ্ছেন। কিন্তু বাকি ১৪ লাখ তরুণের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। ব্যবসার ক্ষেত্রে উচ্চ করহার রপ্তানিপণ্য বৈচিত্র্যকরণের পথে প্রধান বাধা। এ ছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমলেও সেটি সমন্বয়ে বাজেটে কোনো নির্দেশনা নেই। তবে দেশের বিনিময় হার ও রিজার্ভ পরিস্থিতি ইতিবাচক ধারায় ফিরছে।
জাইদি সাত্তার আরও বলেন, দেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি কমে জিডিপির ১ শতাংশে নেমেছে। সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যও ইতিবাচক হবে আশা করা যায়। প্রবাসী ও রপ্তানি আয় বাড়ছে। এটি ইতিবাচক দিক। এর ফলে বছর শেষে বৈদেশিক আয় একটি ভালো অবস্থানে থাকবে। তারপরও অর্থনীতিতে নানামুখী চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ মইনউদ্দিন বলেন, দেশের সড়ক, নৌ, বিমান ও রেল বিভাগ এক মন্ত্রণালয়ের অধীনে আসা উচিত। বর্তমানে এ খাতের পরিকল্পনা, নকশা, ক্রয়–প্রক্রিয়া সব আলাদা বিভাগের মাধ্যমে হয়। তাতে ক্রয়–প্রক্রিয়াতেই দীর্ঘ সময় লেগে যায়। প্রকল্প অনুমোদন থেকে নির্মাণ শুরু করতে চার-পাঁচ বছর সময় লাগে। এতে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। পণ্যের দাম বেড়ে যায়।
চারটি মন্ত্রণালয়কে এক করার বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা কী, এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ মইনউদ্দিন বলেন, ‘এটা হওয়া উচিত, হয়তো সময় লাগবে; কিন্তু এমন পরিকল্পনা থাকতে হবে। আমি ঢাকার সড়ক নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, এখানে দুটি সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, হাইওয়ে পুলিশ, বিদ্যুৎ বিভাগ, পরিবহন মালিক সমিতিসহ নানা সংস্থা জড়িত। তাই এখানকার সড়ক ব্যবস্থাপনা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক জটিল।’
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতার উদাহরণ দিতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী বলেন, ‘আমি খুলনা গিয়ে দেখেছি, সেতু আছে কিন্তু সড়ক নেই। বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। তাই দেশের যোগাযোগব্যবস্থার কৌশলপত্রগুলো সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোকদের নেতৃত্বে হওয়া উচিত।’
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে। তাতে কর্মসংস্থান কমেছে। ভালো ব্যবসায়ীরাও এখন সংগ্রাম করছেন। কারণ ব্যাংকঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ হয়েছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা নানাভাবে ব্যবসার খরচ কমানোর চেষ্টা করছেন; কিন্তু সরকার রাজস্ব ব্যয় বাড়াচ্ছে। এ অবস্থায় তাই স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি থেকে উত্তরণের সিদ্ধান্তকে কোনো ব্যবসায়ী সমর্থন করছেন না। রপ্তানিকারকেরা এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। আবার এসএমই খাতও এই উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত নয়।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, এমনিতেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা নানা সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। এর মধ্যে এসএমই খাতে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। তাহলে এ খাতের উদ্যোক্তারা কীভাবে টিকে থাকবেন।
সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকার অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনের উপপ্রধান ক্লিনটন পোবকে, পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক খুরশিদ আলম প্রমুখ।