তাঁদের গলায় ফুলের মালা কারা পরাচ্ছেন, কেন পরাচ্ছেন?
Published: 26th, June 2025 GMT
রাজনৈতিক মামলায় কারাগারে আটক নেতা মুক্তি পেলে তাঁর অনুসারীরা জেল গেটে গিয়ে ফুলের মালা গলায় পরিয়ে বরণ করে নেন। এই রেওয়াজ বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের রাজনীতিতে বহু পুরোনো। কিন্তু নারী, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সহিংসতা চালিয়েছেন, এমন ব্যক্তিরা মুক্তি পেলে তাঁদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেওয়ার একটা প্রবণতা সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে। নানা নেতিবাচক মাত্রিকতা থাকার কারণেই এ প্রবণতা উদ্বেগজনক। কেননা, এখানে নিছক শুধু অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ফুল দিয়ে বরণ করে অপরাধকে উৎসাহিত করা হচ্ছে না, কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও সংঘবদ্ধ সহিংসতাকে উসকে দেওয়া হয়।
মার্চ ও মে—দুই মাসের ব্যবধানে ঢাকা ও চট্টগ্রামে এ ধরনের দুটি ঘটনা ঘটেছে। দুই ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী নারী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীকে তাঁর পোশাকের জন্য প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর ওপর ঘটা সহিংসতার বর্ণনা দিয়ে পোস্ট দেন। সেটিও ভাইরাল হয়। নেটিজেনদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হলে অপরাধীকে গ্রেপ্তারে চাপ তৈরি হয়। একপর্যায়ে তাঁকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
কিন্তু এরপরের ঘটনাপ্রবাহ ছিল এককথায় বাংলাদেশের সমাজের জন্য অচিন্তনীয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একদল লোক ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীকে মুক্ত করার জন্য শাহবাগ থানা ঘেরাও কর্মসূচি দেন। ৪০ থেকে ৫০ জনের মতো একটি মব সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত থানা ঘেরাও করে রাখেন। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুক্তভোগী নারীকে নিয়ে চলতে থাকে বুলিং। তাঁর ইনবক্সে হুমকিও আসতে থাকে। তিনি বাধ্য হন অভিযোগ তুলে নিতে। মাত্র কয়েক মাস আগে তিনি জুলাই আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। হতাশায় দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কথাও বলেন তিনি।
যা–ই হোক, অভিযোগ তুলে নেওয়ার পর অপরাধীকে জামিন দেন আদালত। এরপর তৌহিদি জনতার নামে তাঁর গলায় ফুলের মালা দিয়ে এবং মাথায় পাগড়ি পরিয়ে বরণ করা হয়।
অভিযুক্ত ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় স্পষ্ট না হলেও তাঁর পক্ষে যেটা ঘটেছে, সেটা ভীষণ রাজনৈতিক। সেই রাজনীতিটা নারীবিদ্বেষী, নারীর অগ্রযাত্রাকে পেছনে টেনে ধরার পক্ষের।
একদিকে রাজনীতি, সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরে নেতৃত্ব দেওয়া নারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আক্রান্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ফুলের মালা দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফার মন্তব্য দিয়ে শেষের শুরুটা করা যাক। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘অপরাধীকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা ভয়াবহ বার্তা দেয় এবং সেই বার্তাটি হলো নারী নিপীড়ন স্বাভাবিকের চেয়েও বড় বীরত্ব।’দ্বিতীয় ঘটনাটি আমরা দেখলাম চট্টগ্রামে। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলায় জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস ও মুক্তি পান। এর প্রতিবাদে কর্মসূচি দেয় বামপন্থী সংগঠনগুলো। সেই কর্মসূচি চলাকালে একটি বাম ছাত্রসংগঠনের নারী কর্মীকে পেছন থেকে লাথি মেরে ফেলে দেন শাহবাগবিরোধী ঐক্য নামের একটি সংগঠনের কর্মী। এই লাথি মারার ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ায় সমালোচনার ঝড় ওঠে।
সমালোচনার মুখে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে তিনি জামিন পান। আইনে জামিন পাওয়ার অধিকার সব নাগরিকের আছে। কিন্তু জামিন পাওয়া আকাশকেও ফুলের মালা পরিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
ঢাকা আর চট্টগ্রামের দূরত্ব প্রায় ২৫০ কিলোমিটার হলেও এ দুটি ঘটনাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। কেননা, ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের নারীরা, বিশেষ করে সামনের কাতারের মুখগুলো সামাজিক পরিসর ও ডিজিটাল পরিসর—দুই জায়গাতেই কোনো কোনো গোষ্ঠীর দিক থেকে সংঘবদ্ধ ও পরিকল্পিতভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন। অথচ একসময়ের তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ নানা সমস্যার পরও এখন যে বিশ্বের ৩১তম অর্থনীতি, তার পেছনে অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ সবচেয়ে বড় প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। কয়েক দশকের এই অগ্রগতির ফলেই লিঙ্গসমতার দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দেশ। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট-২০২৫ সেই তথ্যই দিচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িত তরুণকে ফুলের মালা দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সেই অস্ট্রেলিয়াকে পেয়েই আবার খেপে উঠলেন শামার জোসেফ
শামার জোসেফ অস্ট্রেলিয়ানদের পছন্দ করেন। পছন্দ করেন বলতে তাদের বিপক্ষে বোলিংটা উপভোগ করেন। ছোট টেস্ট ক্যারিয়ারে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন টেস্ট ৫ ইনিংসে বোলিং করেছেন।
তাতে দুইবার ৫ উইকেট আর একবার নিয়েছেন ৪ উইকেট, ৯ টেস্টের ক্যারিয়ারের ৩৩ উইকেটের ১৭টিই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। আর পরিসংখ্যানের কথা রাখুন তো! শামার জোসেফ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেললে কিছু একটা হবে হবে বলে মনে হয়। ওটাই তো আসল!
এর বড় কারণ ১৮ মাস আগের ব্রিসবেন টেস্ট। ভাঙা আঙুল নিয়ে বোলিং করে ৬৮ রানে নেন ৭ উইকেট। এভাবেই তিনি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২৭ বছর পর জয় এনে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। সেই ঐতিহাসিক ম্যাচের পর ব্রিজটাউনে কাল আবার অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হন শামার জোসেফ।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কালও তিনি উপহার দিয়েছেন ব্লকবাষ্টার পারফরম্যান্স। স্যাম কনস্টাস, উসমান খাজা, ক্যামেরন গ্রিনকে ফিরিয়েছেন। এরপর বো ওয়েবস্টারকে যেভাবে (মিডল স্টাম্পে পড়া বল বেরিয়ে গিয়ে অফ স্টাম্প ভেঙেছে) বোল্ড করেছেন, তার মূল্য কয়েকটি উইকেটের সমান। নিজেই দিন শেষে বলেছেন—এটি তাঁর করা ক্যারিয়ারের সেরা বলের একটি।
জোসেফ কাদের আউট করেছেন, আরেকবার চোখ বোলান। ১০ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট খেলতে যাওয়া এই দলটাতে চোটের কারণে নেই স্টিভ স্মিথ। বাদ পড়েছেন একসময় যাকে পরবর্তী স্মিথ হিসেবে ধরা হতো সেই মারনাস লাবুশেন।
স্মিথ-লাবুশেনহীন দলে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান কনস্টাস, খাজা ও গ্রিনের সঙ্গে তিনি অলরাউন্ডার ওয়েবস্টারকে ফিরিয়েছেন। মানে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের ভিত্তিটা তিনি গড়তেই দেননি। সে কারণেই তো প্রথম ইনিংসে ১৮০ রানে দলটি গুটিয়ে গেছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন ম্যাচে এটিই অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর। কৃতিত্ব জেইডেন সিলসও পাবেন অনেকটা। ৫ উইকেট নিয়েছেন। এর মধ্যে জশ ইংলিশ, অ্যালেক্স ক্যারি, প্যাট কামিন্সের উইকেট আছে।
শুরু থেকেই কাল অস্ট্রেলিয়া দিশেহারা পথিক ছিল। দলে ফেরা কনস্টাসকে শুরুতেই বোকা বানান কনস্টাস। কয়েকটি আউট সুইং করার পর একটি বল ভেতরে ঢুকতেই এলবিডব্লুর শিকার হন এই ওপেনার। শামার জোসেফ তাঁকে কীভাবে আউট করেছেন তিনি বলেছেন এভাবে, ‘আমি মনে করি ওকে ঠিকঠাকভাবে ফাঁদে ফেলেছিলাম। কয়েকটা আউট সুইং দিয়ে শুরু করি, তারপর হঠাৎ বলটা ভেতরের দিকে ঢুকিয়ে দিই।’
গ্রিন তো উইকেটে বেশিক্ষণ থাকবেন না এটাই নিয়ম হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার এই নতুন নম্বর তিন কাল করেছেন ৩ রান। এরপর ইংলিশকে আউট করেন সিলস। ২২ রানে ৩ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়াকে খাজা ও হেড ৮৯ রানের জুটি গড়ে টেনে তোলেন। ৪৭ রানে খাজা আউট হলে পরের ৬৯ রানে ৭ উইকেট হারায় দলটি। দলে পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৯ রান করেন হেড। তাঁকে আউট করেছেন জাস্টিন গ্রিভস।
ব্রিজটাউনে যে যন্ত্রণা অস্ট্রেলিয়া পেয়েছে, সেটি পাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজও। দলটি ৫৭ রানেই হারিয়েছে ৪ উইকেট। প্রথম ইনিংসে এখনো পিছিয়ে ১২৩ রানে। মিচেল স্টার্ক দুটি, হ্যাজলউড ও কামিন্স একটি করে উইকেট নিয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঅস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৫৬.৫ ওভারে ১৮০ (হেড ৫৯, খাজা ৪৭; সিলস ৫/৬০, শামার জোসেফ ৪/৪৬)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ২০ ওভারে ৫৭/৪ (কিং ২৩*, কার্টি ২০; স্টার্ক ২/৩৫, কামিন্স ১/৮)।