সংবাদপত্রের প্রতি আস্থার সংকট দলীয় লেজুড়বৃত্তি করায়
Published: 26th, June 2025 GMT
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের আমলে গণমাধ্যম যেভাবে দলীয় লেজুড়বৃত্তি করেছে, তাতে সংবাদপত্রের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট প্রকট হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তীতেও অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি। তবে সংকট উত্তরণে গণমাধ্যমকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ গণতন্ত্র না থাকলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকবে না।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভার্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) গোলটেবিল বৈঠকে এমন অভিমত দেন বিশিষ্টজন। ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা : সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির আইনি কাঠামোর পর্যালোচনা’ শীর্ষক বৈঠকে মব সংস্কৃতি, জুলাই-পরবর্তীতে ১৫ সাংবাদিক গ্রেপ্তার ও ২৬৬ জনের নামে মামলা, জাতীয় প্রেস ক্লাব দখল, টিভি-রেডিওর ভূমিকাসহ গণমাধ্যমের নানা সংকট তুলে ধরেন বক্তারা।
সাংবাদিক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার কোনো সাংবাদিকের নামে মামলা দেয়নি। কেউ ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা দিলে সরকারের কিছু করার থাকে না। গত ১৫ বছরে পুলিশ অসংখ্য মিথ্যা মামলা নিয়েছে। ৫ আগস্টের পর পুলিশের মোরাল অথরিটি ছিল না। এ জন্য মামলা নিতে বাধ্য হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার আমলের আগে থেকেই সাংবাদিকরা বিভক্ত। তারা প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্টকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেননি। আমার কাছে অনেক অনৈতিক তদবির আসে। মেনে নিই না বলে আমার বিরুদ্ধে নানা গাঁজাখুরি কাহিনি প্রচার করা হয়। ভারতের দালাল বলা হয়।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘আগে দাস সাংবাদিকতা করে সাংবাদিকরা বেনিফিটেড হয়েছেন; পূর্বাচলে প্লট পেয়েছেন। তদবির করে কাজ পেয়েছেন। আমরা শেখ হাসিনার আমলের জায়গা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছি। কিন্তু বর্তমান সরকারের সফলতা নিয়ে লেজি জার্নালিজম হচ্ছে। আগের আমলের সাংবাদিকদের ব্যর্থতার কারণে মব তৈরি হচ্ছে। বিগত সরকারের আমলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারাই মব করছেন। আমি এটিকে মব বলব না, এটি হলো প্রেসার গ্রুপ। আমরা গণমাধ্যমের কাউকে কিছু লিখতে বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু মিস ইনফরমেশন ও ডিস ইনফরমেশন সিরিয়াসলি দেখছি।’
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বিগত তিনটি নির্বাচনই বিতর্কিত। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য গণমাধ্যম, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে গণমাধ্যম শীর্ষে। তারা সঠিক ভূমিকা পালন করলে কারচুপির নির্বাচন ঠেকানো যেত।’
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ‘আমরা অসুস্থ সময়ের মধ্যে আছি। কী পরিবর্তন এসেছে? তথ্য মন্ত্রণালয় তাদের দায়িত্ব কতটা পালন করছে? ডিএফপির যাত্রা যেখানে ৫ হাজার সার্কুলেশনকে দেড় লাখ দেখিয়ে মিথ্যা দিয়ে শুরু হয়, সেটিই তো তারা বন্ধ করতে পারেনি। সাংবাদিকরা বিভেদ কাটিয়ে ঐক্য গড়তে পারেনি। আগে বিএনপি-জামায়াত ট্যাগ দেওয়া হতো; এখন স্বৈরাচারের দোসর। একপক্ষ আরেকপক্ষকে প্রেস ক্লাবে ঢুকতে দেয় না। সরকার বলে আমরা হস্তক্ষেপ করব না। কিন্তু সরকারের দায়িত্ব তো ব্যবস্থা নেওয়া। এখনও আগের অবস্থা চলতে থাকলে বলব, গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে।’
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তৃতা করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাংবাদিক এম এ আজিজ, জি-৯ এর সাধারণ সম্পাদক ডা.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যুদ্ধের কারণে মধ্যপ্রাচ্য রুটের ফ্লাইটে বিলম্ব: বেবিচক
ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশের আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের বিভিন্ন ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে পারছে না বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় সংস্থাটি।
বেবিচক জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, বাহরাইন এবং কাতার সাময়িকভাবে তাদের আকাশপথ ব্যবহার সীমিত বা বন্ধ রেখেছে। এর প্রভাব পড়েছে ঢাকা থেকে পরিচালিত মধ্যপ্রাচ্যগামী ফ্লাইটগুলোতে। বিশেষ করে শারজাহ, আবুধাবি, দুবাই, দোহা, বাহরাইন ও কুয়েত রুটের যাত্রীবাহী ফ্লাইটগুলোকে নির্ধারিত সময়ের বাইরে বিকল্প রুটে যাত্রা করতে হয়েছে। ফলে অনেক ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে।
বেবিচকের তথ্য অনুযায়ী, গেল কয়েক দিনে নিম্নোক্ত ফ্লাইটগুলো নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে পারেনি। এসব ফ্লাইটের মধ্যে রয়েছে শারজাহ রুটে এয়ার এরাবিয়ার ২টি, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের শারজাহগামী ১টি, দুবাই রুটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ১টি, কুয়েতগামী ইউএস-বাংলার ১টি, কুয়েতের জাজিরা এয়ারওয়েজের ২টি, দোহাগামী কাতার এয়ারওয়েজের ২টি, বাংলাদেশ বিমানের ১টি এবং দোহা রুটে ইউএস-বাংলার আরও ১টি ফ্লাইট। প্রতিটি ফ্লাইটই পরবর্তীতে পুনঃনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী পরিচালিত হয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
এই অবস্থায় যাত্রীদের ভ্রমণ-সংশ্লিষ্ট হালনাগাদ তথ্য জানতে নিজ নিজ এয়ারলাইন্সের অফিস অথবা হটলাইনে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছে বেবিচক।
তারা আরও জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য গন্তব্যে পরিচালিত ফ্লাইটগুলো এখন পর্যন্ত নির্ধারিত সময় অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় যেকোনো সময় শিডিউলে পরিবর্তন হতে পারে।
বেবিচক বলেছে, যাত্রীদের এই অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত। একইসঙ্গে সবাইকে অনুরোধ করছি, ভ্রমণের আগে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে ফ্লাইট সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহ করতে। এছাড়া বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিরতা বিবেচনায় বিমান চলাচলে সাময়িক এ ধরনের বিঘ্ন স্বাভাবিক বলেই মনে করছে সংস্থাটি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও ফ্লাইট চলাচল আগের নিয়মেই ফিরবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বেবিচক।
এর আগে গতকাল বেবিচক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত এবং বাহরাইন চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সাময়িকভাবে তাদের আকাশসীমা বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলাচলের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছিল।
পরবর্তীতে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২৪ জুন ২০২৫ (বাংলাদেশ সময়) রাত ০৩:০০টার পর থেকে উক্ত দেশসমূহ তাদের আকাশসীমা পুনরায় উন্মুক্ত করেছে এবং বর্তমানে দোহা, দুবাই, আবুধাবি, কুয়েত ও বাহরাইন রুটে সকল বাণিজ্যিক ফ্লাইট স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে।