ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের আমলে গণমাধ্যম যেভাবে দলীয় লেজুড়বৃত্তি করেছে, তাতে সংবাদপত্রের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট প্রকট হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তীতেও অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি। তবে সংকট উত্তরণে গণমাধ্যমকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ গণতন্ত্র না থাকলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকবে না।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভার্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) গোলটেবিল বৈঠকে এমন অভিমত দেন বিশিষ্টজন। ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা : সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির আইনি কাঠামোর পর্যালোচনা’ শীর্ষক বৈঠকে মব সংস্কৃতি, জুলাই-পরবর্তীতে ১৫ সাংবাদিক গ্রেপ্তার ও ২৬৬ জনের নামে মামলা, জাতীয় প্রেস ক্লাব দখল, টিভি-রেডিওর ভূমিকাসহ গণমাধ্যমের নানা সংকট তুলে ধরেন বক্তারা।

সাংবাদিক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার কোনো সাংবাদিকের নামে মামলা দেয়নি। কেউ ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা দিলে সরকারের কিছু করার থাকে না। গত ১৫ বছরে পুলিশ অসংখ্য মিথ্যা মামলা নিয়েছে। ৫ আগস্টের পর পুলিশের মোরাল অথরিটি ছিল না। এ জন্য মামলা নিতে বাধ্য হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার আমলের আগে থেকেই সাংবাদিকরা বিভক্ত। তারা প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্টকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেননি। আমার কাছে অনেক অনৈতিক তদবির আসে। মেনে নিই না বলে আমার বিরুদ্ধে নানা গাঁজাখুরি কাহিনি প্রচার করা হয়। ভারতের দালাল বলা হয়।’

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘আগে দাস সাংবাদিকতা করে সাংবাদিকরা বেনিফিটেড হয়েছেন; পূর্বাচলে প্লট পেয়েছেন। তদবির করে কাজ পেয়েছেন। আমরা শেখ হাসিনার আমলের জায়গা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছি। কিন্তু বর্তমান সরকারের সফলতা নিয়ে লেজি জার্নালিজম হচ্ছে। আগের আমলের সাংবাদিকদের ব্যর্থতার কারণে মব তৈরি হচ্ছে। বিগত সরকারের আমলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারাই মব করছেন। আমি এটিকে মব বলব না, এটি হলো প্রেসার গ্রুপ। আমরা গণমাধ্যমের কাউকে কিছু লিখতে বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু মিস ইনফরমেশন ও ডিস ইনফরমেশন সিরিয়াসলি দেখছি।’

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বিগত তিনটি নির্বাচনই বিতর্কিত। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য গণমাধ্যম, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে গণমাধ্যম শীর্ষে। তারা সঠিক ভূমিকা পালন করলে কারচুপির নির্বাচন ঠেকানো যেত।’

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ‘আমরা অসুস্থ সময়ের মধ্যে আছি। কী পরিবর্তন এসেছে? তথ্য মন্ত্রণালয় তাদের দায়িত্ব কতটা পালন করছে? ডিএফপির যাত্রা যেখানে ৫ হাজার সার্কুলেশনকে দেড় লাখ দেখিয়ে মিথ্যা দিয়ে শুরু হয়, সেটিই তো তারা বন্ধ করতে পারেনি। সাংবাদিকরা বিভেদ কাটিয়ে ঐক্য গড়তে পারেনি। আগে বিএনপি-জামায়াত ট্যাগ দেওয়া হতো; এখন স্বৈরাচারের দোসর। একপক্ষ আরেকপক্ষকে প্রেস ক্লাবে ঢুকতে দেয় না। সরকার বলে আমরা হস্তক্ষেপ করব না। কিন্তু সরকারের দায়িত্ব তো ব্যবস্থা নেওয়া। এখনও আগের অবস্থা চলতে থাকলে বলব, গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে।’

গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তৃতা করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাংবাদিক এম এ আজিজ, জি-৯ এর সাধারণ সম্পাদক ডা.

সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত, দৃকের প্রতিষ্ঠাতা ড. শহিদুল আলম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক পারভেজ করিম আব্বাসী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ-উর রহমান, দ্য ডিসেন্ট সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, সাংবাদিক মুক্তাদির রশীদ, জায়মা ইসলাম, পারভিন এফ চৌধুরী প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র র র আমল

এছাড়াও পড়ুন:

তদন্ত ছাড়াই সাংবাদিককে মামলায় জড়ালো পুলিশ

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কটকস্থল এলাকায় জমি বিরোধের জেরে দুইপক্ষের দ্বন্ধের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে চাঁদাবাজি মামলার আসামি হয়েছেন মোল্লা ফারুক হাসান নামে এক সাংবাদিক।

তবে থানা পুলিশ অভিযোগের তদন্ত না করেই মামলাটি এজাহারভূক্ত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। এ ঘটনায় স্থানীয় সংবাদকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

আরো পড়ুন:

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতিকে নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ

‘সিভিক ডিফেন্ডারস অব বাংলাদেশ’ ওয়েব পোর্টাল উদ্বোধন

ভুক্তভোগী মোল্লা ফারুক হাসান গৌরনদী প্রেসক্লাবের সদস্য ও দৈনিক খোলা কাগজ পত্রিকা এবং সময়ের কন্ঠস্বর অনলাইন নিউজ পোর্টালের স্থানীয় প্রতিনিধি।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে ভুক্তভোগী মোল্লা ফারুক হাসান অভিযোগ করে বলেন, “গত কয়েকদিন আগে কটকস্থল বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন আরিফ ফিলিং স্টেশনের সামনে স্থানীয় হারুন-অর রশিদ বেপারী ও মো. হিরা মাঝি গংদের মধ্যে উত্তেজনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন থানা পুলিশ। এরপর সেখানে আমি সংবাদ সংগ্রহের জন্য যাই। পরবর্তীতে পুরো ঘটনা নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।”

তিনি বলেন, “ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হারুন-অর রশিদ বেপারী তার প্রতিপক্ষ মো. হিরা মাঝিসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। সংবাদ প্রকাশের জেরে ওই অভিযোগের মধ্যে আমার নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারনে থানা পুলিশ ওই অভিযোগের কোনো তদন্ত না করেই আমাকে আসামি করে ফিলিং স্টেশনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির লিখিত অভিযোগটি মামলা হিসেবে এজাহারভূক্ত করেন।”

তিনি আরো বলেন, “যেখানে সাধারণত হুমকি-ধামকির বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে আগে তদন্ত প্রসঙ্গটি উত্থাপণ করে থানা পুলিশ। সেখানে ঘটনার সময় থানা পুলিশ ওই ফিলিং স্টেশনে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও মনগড়াভাবে হামলা, ভাঙচুর ও চাঁদা দাবির লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরপরই তদন্ত ছাড়া তড়িঘড়ি করে আমাকে জড়িয়ে মামলা দায়ের হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ রহস্যজনক।” মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে তিনি (সাংবাদিক) সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে মামলার বাদি হারুন-অর রশিদ বেপারীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

সাংবাদিককে আসামি করার বিষয়ে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, “একটা মামলা হয়েছে। এখন তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরনদী সার্কেল) শারমিন সুলতানা রাখি বলেন, “পেট্রোল পাম্প নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষ সংবাদকর্মীদের দিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে এবং গৌরনদী থানার ওসির বিরুদ্ধে মিথ্যা মনগড়া সংবাদ প্রকাশিত করিয়েছে। একটি পক্ষ ওই ঘটনা নিয়ে প্রথমে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটির এজাহার দায়ের করা হয়।”

তিনি বলেন, “তদন্ত করার আগেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসার কারণে মামলাটি এজাহারভুক্ত করা হয়েছে। মামলার আসামিদের মধ্যে এক সাংবাদিক রয়েছে বলে জানা গেছে। সাংবাদিক মোল্লা ফারুক যদি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকে, তাহলে তার কিছুই হবে না।”

তিনি আরো বলেন, “ওই সাংবাদিক (মোল্লা ফারুক) আমার কাছে এসেছিল। তাকে আমি বলেছি, আপনি যদি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকেন, তাহলে আপনাকে পুলিশ খোঁজবেও না, আপনি নিশ্চিত থাকেন।”

অপরদিকে, তদন্ত ছাড়া গৌরনদী প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিক মোল্লা ফারুক হাসানকে মামলায় আসামি করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের (বিএমএসএফ) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফর ও বরিশাল সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি নিকুঞ্জ বালা পলাশ, সাধারণ সম্পাদক শাহিন হাসানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা। তারা অনতিবিলম্বে ওই সাংবাদিককে মামলা থেকে অব্যাহতি ও দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি করেছেন।

এছাড়াও পৃথক বিবৃতিতে একই দাবি করেছেন বাংলাদেশ গ্রামীণ সাংবাদিক সংগঠন, গৌরনদী প্রেসক্লাব, কালকিনি সাংবাদিক ফোরাম, আগৈলঝাড়া প্রেসক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃবৃন্দরা।

ঢাকা/পলাশ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এনসিপিকে প্রতীক বাছাইয়ে সময় বেঁধে দিল ইসি
  • প্লাস্টার খোলার পর গুরুত্ব ফিজিওথেরাপির
  • স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা-পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সন্তান না নেওয়া ভালো
  • বিয়ের আগেই দুই সন্তানের মা, আলোচিত এই দক্ষিণি অভিনেত্রীকে কতটা চেনেন
  • ঢাকায় সর্বোচ্চ ২০৬ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড
  • গাজীপুরে নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানায় অভিযান
  • বিশেষ বিবেচনায় চবির হলে থাকা শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমালোচনা
  • তদন্ত ছাড়াই সাংবাদিককে মামলায় জড়ালো পুলিশ
  • মাতৃরূপে ঈশ্বরের উপাসনা
  • গাজার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে চান ট্রাম্প