ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘ধামাকা শপিং’–এর বিরুদ্ধে গ্রাহকের প্রায় ১১৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে প্রায় ৬২ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বৃহস্পতিবার আদালতের নির্দেশে এসব সম্পত্তি ক্রোক করা হয়।

সিআইডি জানায়, ধামাকা শপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এম ডি জসীম উদ্দিন চিশতীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে গ্রাহকদের অর্থ হস্তান্তর করা হয়। এমনকি মাইক্রোটেড ফুড অ্যান্ড বেভারেজের অ্যাকাউন্টেও এই অর্থ স্থানান্তর করা হয়, যা মানি লন্ডারিংয়ের আওতায় পড়ে। এ বিষয়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর আওতায় বনানী মডেল থানায় ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর একটি মামলা  করা হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বর্তমানে সবাই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন এবং অর্থের একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

সিআইডির তথ্য অনুযায়ী, ক্রোক করা সম্পদের মধ্যে রয়েছে রাজধানীর বনানী মডেল টাউনে ৫ কাঠা জমির ওপর নির্মিত একটি বহুতল ভবন, যার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। পাশাপাশি গাজীপুরের কাশিমপুর পূর্ব বাগাবাড়ী এলাকায় মাইক্রো ট্রেড ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের নামে থাকা ৪১ শতাংশ জমিও (মূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা) ক্রোক করা হয়েছে। ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত ১৬ জুন এই সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেন।

তদন্তে আরও উঠে এসেছে, ধামাকা শপিং নামে অনলাইন প্ল্যাটফর্মটি বৈধ কোনো নিবন্ধন ছাড়াই ইনভ্যারিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের ছত্রচ্ছায়ায় পরিচালিত হচ্ছিল। স্বল্প মূল্যে পণ্য সরবরাহের লোভ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি হাজার হাজার গ্রাহক ও বিক্রেতার কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। তাদের নিজস্ব কোনো ব্যাংক হিসাব না থাকলেও ইনভ্যারিয়েন্ট টেলিকমের সাউথইস্ট ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে তারা লেনদেন করত। সাউথইস্ট ব্যাংকের একটি হিসাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেখানে ৫৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার লেনদেন হলেও ২০২১ সালের ২৭ জুন মাত্র ৯৩ হাজার ৭৩১ টাকা স্থিতি ছিল, যা আর্থিক জালিয়াতির সুস্পষ্ট প্রমাণ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক র ক কর স আইড

এছাড়াও পড়ুন:

ডিসেম্বরে বন্ধ এমআরপি বাড়ছে ই-পাসপোর্ট

নিরাপদ ও দ্রুত ইমিগ্রেশনের কারণে বাংলাদেশিদের মধ্যে বেড়েছে ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট গ্রহণ। বিদেশি ৮০ মিশনের মধ্যে বর্তমানে ৫৯টিতে চলছে ই-পাসপোর্ট সেবা। তিন মাসে নতুন আটটি ও ডিসেম্বরের মধ্যে সবগুলোতে চালু হবে সেবা। এরপর দেশের মতো মিশনেও মিলবে না মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি)।

২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি দেশে শুরু হয় ই-পাসপোর্ট ইস্যু। এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮০ হাজার ৬০০টির বেশি চিপ-সংবলিত আধুনিক পাসপোর্ট ইস্যু করেছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। এটি চালুর পর অধিদপ্তর গুটিয়ে আনছে ২০০৯ সালে শুরু হওয়া এমআরপি কার্যক্রম। দেশে এমআরপি একেবারেই বন্ধ। দেশের বাইরে বাংলাদেশি যেসব মিশন ও দূতাবাসে চালু রয়েছে, তা বন্ধ করে ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হচ্ছে।

এ পর্যন্ত এমআরপি ইস্যুর সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিন কোটির বেশি এমআরপি ইস্যু হয়েছে। দেশে নতুন করে কোনো এমআরপি হচ্ছে না। নবায়নে এলে, তাকে ই-পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।

বিদেশে চাহিদা পূরণে ২০২১ সালের আগস্টে জার্মানির বার্লিন দূতাবাসে চালু হয় ই-পাসপোর্ট অ্যান্ড অটোমেটেড বর্ডার কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট। এরপর থেকে এ পর্যন্ত বিদেশে বাংলাদেশি ৮০ মিশনের মধ্যে ৫৯টিতে পুরোদমে কার্যক্রম চলছে। ই-পাসপোর্ট চালুর সঙ্গে সঙ্গে এসব দূতাবাসে এমআরপি বন্ধ করা হয়েছে।

এমআরপিতে ৩৪টি থাকলেও ই-পাসপোর্টের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রাখা হয়েছে ৩৮। চার আঙুলের ছাপের স্থলে ১০ আঙুলের ছাপ, চোখের কর্ণিয়া ও বাহকের মুখমণ্ডলের ছবি ই-পাসপোর্টে সংরক্ষণ করা হয়। ই-পাসপোর্ট ৫ ও ১০ বছর মেয়াদি এবং ৪৮ ও ৬৪ পাতার ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে এমআরপি ছিল শুধু ৪৮ পাতার পাঁচ বছর মেয়াদি। ই-পাসপোর্ট থাকলে ই-গেটের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো দেশে দ্রুত ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়।

জানা যায়, আগামী তিন মাসের মধ্যে মরক্কো, আলজেরিয়া, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, উজবেকিস্তান, পাকিস্তানের করাচি ও ইসলামাবাদে ই-পাসপোর্ট সেবা কার্যক্রম চালু করবে সরকার। বাকি মিশনে চলতি বছরের মধ্যেই ই-পাসপোর্ট চালু করে বন্ধ করা হবে এমআরপি।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ নুরুস ছালাম সমকালকে বলেন, ‘দেশে আর এমআরপি ইস্যু হচ্ছে না। ডিসেম্বরের পর বিদেশি মিশনে শুধুই ই-পাসপোর্ট মিলবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে আমাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আগামী তিন মাসের মধ্যে নতুন আটটি মিশনে ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম চালু করতে পারব আশা করছি। বাকি যেসব মিশনে এমআরপি চলছে, সেখানেও ডিসেম্বরের মধ্যে ই-পাসপোর্ট দেওয়া সম্ভব হবে।’

২৫ বছর ধরে লন্ডনে বসবাস করছেন সিলেটের আব্দুস সবুর। এমআরপি বাতিলের পর তিনি ই-পাসপোর্ট নিয়েছেন। এ ব্যাপারে সমকালকে আব্দুস সবুর বলেন, ‘লন্ডনে প্রথম এসে হাতে লেখা পাসপোর্ট নিই। মেয়াদ শেষে নবায়ন করতে গেলে বাধ্যতামূলক এমআরপি দেওয়া হয়। আমার মতো প্রবাসীর কাছে পাঁচ বছর পরপর এমআরপি নবায়ন একটু ঝামেলাই বলতে হবে। তবে বর্তমানে ই-পাসপোর্ট পেয়েছি। ১০ বছর নিশ্চিন্তে থাকতে পারব– এটি সত্যিই অন্যরকম অনভূতি।’

এমআরপিতে কৃষিকাজের ভিসা নিয়ে ২০১০ সালের শুরুতে ইতালির রোমে যান বরিশালের সাইফুল ইসলাম। সমকালকে তিনি এমআরপি করার তিক্ত এবং ই-পাসপোর্ট গ্রহণের সুখকর অভিজ্ঞতার কথা জানান। সাইফুল ইসলামের ভাষ্য, আবেদন ফরম পূরণের আগেই দালাল তাঁর কাছ থেকে ব্যাংকের জমা ও কাগজপত্র সত্যায়িত করার কথা বলে হাতিয়ে নেন ২০ হাজার টাকা। পাসপোর্ট অফিসে দাঁড় করিয়ে রেখে লাপাত্তা হয়ে যান। পরে অন্য মাধ্যমে পাসপোর্ট করাতে সক্ষম হন।

তিনি আরও বলেন, ২০২১ সালে ঝামেলা ছাড়াই ১০ বছরের জন্য ই-পাসপোর্ট করেছি। এটি হাতে নিয়ে গর্বের সঙ্গে নিজেকে বাংলাদেশি পরিচয় দিই– এ অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পেপ্যাল নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা
  • ডিসেম্বরে বন্ধ এমআরপি বাড়ছে ই-পাসপোর্ট
  • লিবরা ইনফিউশনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি
  • রুয়েটে সিএমই বিভাগের তিন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নতুন পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তির দাবি