চট্টগ্রাম ধর্মীয় সম্প্রীতির শহর: সিটি মেয়র
Published: 27th, June 2025 GMT
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম ধর্মীয় সম্প্রীতির শহর। এই শহরে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান একসঙ্গে বসবাস করেন। এখানে কোনো বিভেদ নেই। এই ঐক্য ধরে রেখে চট্টগ্রামকে একটি গ্রিন ও ক্লিন সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে সবার সহযোগিতা চাই।’
আজ শুক্রবার বিকেলে নন্দনকানন ইসকন শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির ও গৌর-নিতাই আশ্রম আয়োজিত জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসবের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথি হিসেবে মেয়র এ কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার রাজীব রঞ্জন ও অধ্যাপক জিনবোধি ভিক্ষু। নগরের বৌদ্ধমন্দির মোড়ে এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়।
মেয়র বলেন, ‘রথযাত্রা হিন্দুদের একটি ধর্মীয় উৎসব। যুগ যুগ ধরে এখানে এ উৎসব হয়ে আসছে। এবার এমন একটা সময়ে রথযাত্রা উৎসব হচ্ছে, যখন করোনাভাইরাস আবার মাথাচাড়া দিয়েছে। এখন আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আগত সবাইকে আমি অনুরোধ করব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে।’
রাজীব রঞ্জন বলেন, ‘রথযাত্রা উৎসবের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ববোধ আরও জাগ্রত হোক। সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ না থাকুক, এই প্রত্যাশা করি।’
জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসবে রথ টেনে নিয়ে যাচ্ছেন ভক্তরা। আজ বিকেলে চট্টগ্রামের নন্দনকানন বৌদ্ধ মন্দির সড়কে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: রথয ত র
এছাড়াও পড়ুন:
এক ঢেউয়ে নিভে গেছে মুন্ডাদের কারাম উৎসবের প্রদীপ
খুলনার সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রার কয়েকটি গ্রামে ছড়িয়ে আছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী মুন্ডাদের দেড় হাজারের বেশি পরিবার। নিজেদের পরিচয়ে গর্বিত এই জনগোষ্ঠীর গ্রামীণ সংস্কৃতির বড় আয়োজন ছিল কারাম উৎসব। একসময় বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ঢাকঢোল, করতাল আর মাদল তালে মেতে উঠতেন মুন্ডা তরুণ-তরুণীরা। হতো নাচ–গান, পূজা ও খাওয়াদাওয়া, যা চলত গভীর রাত পর্যন্ত। এখন সে উৎসব নেই, শুধু গল্প হয়ে বেঁচে আছে মানুষের স্মৃতিতে।
এ অবস্থায় আজ ৯ আগস্ট শনিবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দিবসটিকে স্বীকৃতি দেয়। তখন থেকে প্রতিবছর আদিবাসীদের অধিকার, সম্মান ও সংস্কৃতি রক্ষায় এদিন পালন করা হয়।
কয়রার নলপাড়া গ্রামের নমিতা রানী মুন্ডা এখনো আশায় বুক বাঁধেন, হয়তো কোনো এক ভোরে আবার কারাম উৎসব ফিরবে। তাঁর ভাঙা ঘরের বারান্দায় বসে কারাম উৎসবের কথা তুলতেই আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘২০০৯ সালের আইলার আগেই শেষবার হইছিল। এরপর আর হয়নি। কারামগাছই তো নেই, উৎসব হবে কীভাবে?’
কারামগাছ—যেটাকে স্থানীয়ভাবে খিলকদম বলা হয়। এই গাছের ডাল ছাড়া কারাম উৎসব অপূর্ণ। মুন্ডারা বিশ্বাস করেন, এই গাছের ডালে লুকানো আছে সমৃদ্ধি আর মঙ্গল।
সম্প্রতি কয়রা উপজেলার মুন্ডাপাড়ার উঠান থেকে উঠান ঘুরে জানা গেল, গল্পের মতো—কীভাবে এক ঢেউয়ে, এক ঝড়ে হারিয়ে গেছে একটি গোটা উৎসব। তাঁদের কথায়, ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলায় বাঁধভাঙা নোনাপানির ঢেউয়ে ডুবে যায় উৎসবের মাঠ, উঠান আর বেদি। জমির লবণাক্ততা এমনভাবে জমে বসে, যে কারামগাছ আর বাঁচে না। মাঝেরপাড়ার পরশুরাম মুন্ডা বলেন, ‘গাছ নাই, উদ্যোগী মানুষও নাই। এই গ্রামের নকুল মুন্ডা বাইচে থাকলি হয়তো উৎসব কুরত। নকুল মুন্ডার ছাওয়ালডাও (ছেলে) বেকার হুয়ি পাড়ি দেছে পাশের দেশ ভারতে।’
কয়রার বতুলবাজার এলাকায় গিয়ে কথা হয় স্বপন মুন্ডার সঙ্গে। তিনি পেশায় দিনমজুর। ঘরের ছাউনি ঠিক করার ফাঁকে বললেন, ‘আগে কত আনন্দ হইতো! নাচ-গান, খাওয়াদাওয়া। এক রাত এক দিন চইলতো কারাম উৎসব। কিন্তু আইলার পর সব শেষ।’ পাশ থেকে স্ত্রী রেনু বালা মুন্ডা শোনালেন তেতো বাস্তবতা, ‘উৎসব করতে কত টাকা লাগে জানেন? একটু আগে আলু ধার কইরে আনছি, উনি আছে উৎসবের চিন্তায়! গরিবের আবার উৎসব?’
কাটকাটা গ্রামের লক্ষী রানী মুন্ডার শৈশব কেটেছে শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নে। বিয়ের পর কয়রায় এসে আর দেখেননি সেই উৎসব। তিনি বলেন, ‘বাপের বাড়িতে ছোটবেলায় কত দেখিছি। এখন আর হয় না। শুনিছি উত্তরাঞ্চলের দিকিত্তে কেউ কারামগাছের চারা আইনে এলাকায় লাগাইল, কিন্তু বাঁচানো যায়নি।’
যে জায়গায় কারাম উৎসবের বেদি সাজানো হতো, সেখানে এখন কেবল শূন্যতা। কয়রার মাঝেরপাড়া গ্রামের নকুল মুন্ডার বাড়ি–সংলগ্ন কারাম উৎসবের স্থান। সম্প্রতি তোলা