এই হাছিনা শেখ হাসিনা নয়, তবুও বারবার বদলাচ্ছে স্কুলটির নাম
Published: 27th, June 2025 GMT
২০১৩ সালের আগপর্যন্ত স্কুলটির নাম ছিল ‘পাঁচবাড়ীয়া হাছিনা ওয়াজেদ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। ওই বছর জাতীকরণের সময় সরকার ‘হাছিনা’ বানানটি বদলে দেয়। স্কুলের নাম দাঁড়ায় ‘পাঁচবাড়িয়া হাসিনা ওয়াজেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। গত ৫ আগস্টের পর আবারও পাল্টে স্কুলটির নাম হয়েছে ‘পাঁচবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ৮০৮টি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ছাড়া আরও ১৬৯টি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নাম পরিবর্তনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকার ৬০৩ নম্বরে রয়েছে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নের পাঁচবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সাবেক এক শিক্ষা কর্মকর্তার মা–বাবার নামে। শেখ পরিবারের সদস্যদের নামের সঙ্গে মিল থাকায় রাজনৈতিক কারণে বারবার বিদ্যালয়টি নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ৮০৮ প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন২৬ জুন ২০২৫স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাংশা উপজেলায় একসময় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছিলেন পাংশার পাটগ্রামের (বর্তমান কালুখালী উপজেলা) বাসিন্দা মুনিবর রহমান। তাঁর মা হাছিনা বেগম এবং বাবা ওয়াজেদ আলীর নামে ১৯৮৮ সালে কসবামাজাইল ইউনিয়নে ‘পাঁচবাড়ীয়া হাছিনা ওয়াজেদ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা হয়। স্থানীয় ৪টি পরিবার ৩৩ শতক জমি দান করে। জমিদাতা হিসেবে ওই পরিবারগুলো থেকে চারজন শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন অবসরে গেলেও এখনো কর্মরত আছেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলফাজ উদ্দিন। আট মাস পর তিনিও অবসরে যাবেন।
আলফাজ উদ্দিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সালে সারা দেশে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে। দুঃখের বিষয় গেজেট বই হাতে পাওয়ার পর দেখতে পাই, আমাদের পাঁচবাড়ীয়া হাছিনা ওয়াজেদ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিবর্তন হয়ে পাঁচবাড়িয়া হাসিনা ওয়াজেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় লেখা।’
৫ আগস্টের পর নাম নিয়ে আবারও জটিলতা তৈরি হয় উল্লেখ করে আলফাজ উদ্দিন বলেন, অনেকের ধারণা, শেখ পরিবারের নামের সঙ্গে মিল রেখে বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশে হাসিনা ওয়াজেদ বাদ দিয়ে নতুন রেজল্যুশনে ‘পাঁচবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ করে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে পাঠানো হয়।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি শৈলন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, ‘এলাকাবাসী তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা মুনিবর রহমানের কাছে বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যাপারে গেলে তাঁর মা হাছিনা এবং বাবা ওয়াজেদের নামে নামকরণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমরা একমত হয়ে তখন কাজ শুরু করি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বানান পরিবর্তন করে গেজেট প্রকাশ করায় বিড়ম্বনায় পড়ি। ৫ আগস্টের পর নাম নিয়ে আবার জটিলতা দেখা দিলে শুধু পাঁচবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করা হয়। এভাবে নাম পরিবর্তনে এলাকাবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। পূর্বের হাছিনা ওয়াজেদ নামটি ফিরে এলে আমাদের আপত্তি নেই।’
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তার বাবা-মায়ের নামে বিদ্যালয়ের নামকরণ থাকায় এলাকাবাসী সন্তুষ্ট ছিলেন। শেখ পরিবারের নামের সঙ্গে অনেকটা মিলে যাওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাঁদের নামের বানানের সঙ্গে মিল রেখে গেজেট প্রকাশ করায় সবার মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।
এ বিষয়ে পাংশা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল গ সরক র কর মকর ত পর ব র র সরক র র র রহম ন ব সরক র আওয় ম উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
শিশুর নাম রেখে ৩০ হাজার ডলার পর্যন্ত নেন তিনি
সদ্যোজাত সন্তানের নামকরণ নিয়ে মানুষের মধ্যে আনন্দ ও দোটানার শেষ নেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো শহরের বাসিন্দা টেলর এ হামপ্রি শিশুদের নামকরণকে পেশায় পরিণত করেছেন। মা–বাবাকে নবজাতকের জন্য নাম খুঁজে পেতে সহায়তা করাই তাঁর কাজ। বিনিময়ে তিনি নেন লাখ লাখ টাকা।
দ্য নিউইয়র্ক পোস্ট–এর তথ্যমতে, কোনো শিশুর নাম খুঁজে দিতে হামপ্রি সর্বোচ্চ ৩০ হাজার ডলার পর্যন্ত নেন, যা বাংলাদেশি টাকায় দাঁড়ায় প্রায় ৩৬ লাখ।
নামের প্রতি হামপ্রির ভালোবাসা পুরোনো। এক দশক আগে তিনি শিশুদের নামকরণে অনলাইনে সেবা দেওয়া শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলে শিশুদের নাম রাখা নিয়ে প্রচার শুরু করেন। টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে বর্তমানে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত তিনি পাঁচ শতাধিক শিশুর নাম রাখতে সহায়তা করেছেন।
হামপ্রির গর্ভবতী নারীদের মানসিক ও শারীরিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ আছে। তা ছাড়া ব্র্যান্ডিং ও বিপণন নিয়েও তাঁর অভিজ্ঞতা আছে। নামকরণের ব্যবসা করতে তাঁকে এসব বিষয় সহায়তা করেছে।
নবজাতকের মা–বাবার পছন্দ বুঝতে হামপ্রি তাঁদের অনেক ধরনের প্রশ্ন করেন। সাধারণ ই-মেইল নামের তালিকা দিয়ে পরামর্শ দিতে তিনি নেন ২০০ ডলার (প্রায় ২৪ হাজার টাকা)। আর পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজের জন্য নেন ৩০ হাজার ডলার। এই প্যাকেজে অন্যান্য কিছুর মধ্যে যে শিশুর নাম রাখা হবে, তার পারিবারিক ইতিহাস ঘেঁটে দেখা হয়।
শুধু নাম প্রস্তাব নয়, শিশুর নাম রাখা নিয়ে মা-বাবার মধ্যে ভিন্নমত দেখা দিলে হামপ্রিকে অনেক সময় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাও পালন করতে হয়। ধনী পরিবারের পাশাপাশি পরিচিত তারকারাও নবজাতকের নামকরণে তাঁর দ্বারস্থ হন।
২০২১ সালে নিউইয়র্কার–এ হামপ্রির প্রোফাইল ছাপানো হয়। এর পর থেকেই তাঁর জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে যায়।
হামপ্রিকে নিয়ে অনলাইনে কিছুটা সমালোচনাও হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করা হয়েছে, এমন আধেয়র (কনটেন্ট) মাধ্যমে প্রায় সময় মানুষ আমাকে খুঁজে পায়। তাই আমি এটা মেনে নিয়েছি। কারণ, আমি বিশ্বাস করি, আমার কাজটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।’