শ্রীলঙ্কার ওয়ানডে দল ঘোষণা, চমক হিসেবে নতুন মুখ
Published: 27th, June 2025 GMT
টেস্ট সিরিজ এখনো শেষ হয়নি। তার আগেই বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে স্কোয়াড ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কা। ১৬ সদস্যের এই দলটিতে যেমন অভিজ্ঞতার ছোঁয়া রয়েছে, তেমনি আছে তরুণদের সুযোগ দেওয়ার সাহসী সিদ্ধান্তও। ২ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ সামনে রেখে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে দল প্রকাশ করেছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড (এসএলসি)।
টেস্ট পর্ব শেষে দুই দল মুখোমুখি হবে ৫০ ওভারের ফরম্যাটে। সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ২ ও ৫ জুলাই, কলম্বোর মাঠে। আর তৃতীয় তথা শেষ ম্যাচটি হবে ৮ জুলাই, পাল্লেকেলেতে। প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই আগে-ভাগে দল গুছিয়ে নিয়েছে লঙ্কানরা।
দলের নেতৃত্বে থাকছেন চারিথ আসালাঙ্কা। তার নেতৃত্বেই ব্যাটিং লাইনআপে আছেন পাথুম নিশাঙ্কা, আভিস্কা ফার্নান্দো, কুশল মেন্ডিস ও সাদিরা সামারাবিক্রমার মতো অভিজ্ঞ মুখ। পাশাপাশি আছেন তরুণ ও প্রতিভাবান নিশান মাদুশঙ্কা, জানিথ লিয়ানাগে এবং কামিন্দু মেন্ডিস।
আরো পড়ুন:
চতুর্থ দিনেই ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কায় বাংলাদেশ
চার বছর পর ইংল্যান্ড টেস্ট দলে আর্চার
বোলিং বিভাগে রয়েছে বৈচিত্র্যের ছড়াছড়ি। স্পিনে আছেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, থিকসানা ও ভ্যান্ডারসে। পেস বিভাগে থাকছেন আসিথা ফার্নান্দো, দিলশান মাদুশাঙ্কা ও মিলন রত্ননায়েকে—যাকে স্কোয়াডে রাখা হয়েছে ফিটনেস পরীক্ষার শর্তে। নতুন মুখ হিসেবে আছেন ইশান মালিঙ্কাও।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ দল আগে থেকেই ওয়ানডে স্কোয়াড ঘোষণা করেছে। নেতৃত্বে আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দলে রয়েছেন অভিজ্ঞ মোস্তাফিজুর রহমান, লিটন দাস, তাসকিন আহমেদ, নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়। তরুণদের মধ্যে আছেন তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ ইমন, জাকের আলি অনিক ও নাহিদ রানা।
এই সিরিজ দুই দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে তরুণদের পরীক্ষা নেওয়ার দিক থেকে। যেখানে শ্রীলঙ্কা চাইবে শক্তি ধরে রাখার পাশাপাশি সম্ভাবনাময় নতুনদের ঝালিয়ে নিতে। বাংলাদেশ সেখানে খুঁজবে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার উপায়। মাঠের লড়াইয়ের আগে দল ঘোষণাতেই তাই বাড়তি আগ্রহ তৈরি হয়েছে দুই শিবিরে।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দেশীয় মৎস্য উপকরণের দুর্দিন
এক সময় খাল-বিলে চাই, পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব হতো। বেশ কদর ছিল চাই, আনতা, পলোর মতো মাছ ধরার উপকরণের। কালের বিবর্তনে এসবের জায়গা দখল করেছে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও ম্যাজিক জাল। হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য, বিপন্ন হচ্ছে দেশি মাছের জীবন চক্র।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো কুমিল্লার তিতাসেও এক সময় প্রচুর আনতা, পলো, চাই তৈরি হতো। বাঁশ কেটে, চাটাই বুনে মাছ ধরার এসব সরঞ্জাম তৈরির শিল্পে সম্পৃক্ত ছিল গ্রামীণ অনেক পরিবার। কেউ পেশায় জেলে, কেউ কারিগর, কেউ পাইকার। চাহিদা একেবারে কমে যাওয়ায় অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
স্থানীয় কারিগর হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘বছরে অন্তত ৫০০টা আনতা তৈরি করতাম, এখন ১০০টাও বিক্রি হয় না। লোকজন এখন কারেন্ট ও ম্যাজিক জালেই সব মাছ মারে। আমাদের মতো গরিবরা এখন কাজ ছাড়া বসে থাকি।’
কারেন্ট ও ম্যাজিক জাল পরিবেশ ও মাছের জীবন চক্রের জন্য হুমকি। এসব জাল নিষিদ্ধ। যথাযথ নজরদারি না থাকায় এসব জাল অবাধে ব্যবহার হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মৎস্য কর্মকর্তারা।
স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তা জানান, কারেন্ট জালে মাছের ডিম-বাচ্চাও ধরা পড়ে। ফলে পরবর্তী প্রজন্ম নষ্ট হয়। এভাবে চললে ১০ বছরের মধ্যে দেশি মাছ হারিয়ে যাবে।
তিতাস উপজেলার একাধিক গ্রামের জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারেন্ট জালের কারণে ছোট ছোট মাছও রেহাই পাচ্ছে না। ফলে দেশি মাছের প্রজনন ধ্বংসের পথে।
আবু তাহের নামে এক জেলে বলেন, ‘আগে এক ফালি খালে চাই ফেললে রুই, কাতলা, শিং, ট্যাংরা উঠত। এখন তো পানি আছে, মাছ নাই। এই জালগুলা সব শেষ কইরা দিতাছে।’
একটি আনতা তৈরি করতে যেখানে কারিগর, বাঁশ-কাঠ ব্যবসায়ী, বিক্রেতা ও পরিবহনকর্মীদের কাজ থাকে, সেখানে কারেন্ট জালের আধিপত্যে তা থেমে গেছে। ফলে শুধু মাছ নয়, বাঁশশিল্প, জাল তৈরি শিল্প, দেশীয় হাট-বাজারের একাংশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
যারা আনতা, পলো তৈরি করতেন, তারা অনেকেই কাজ হারিয়ে গ্রামে বসে আছেন। কিছু পরিবার অভাবের তাড়নায় অন্য পেশায় পা রাখলেও, তাদের কষ্টের কথা চোখে পড়ে সহজেই।
রোকেয়া বেগম নামে এক নারী কারিগর বলেন, ‘পাঁচটা সন্তান নিয়ে এই আনতা তৈরি করে আমার সংসার চলত। এখন কারেন্ট জালের কারণে কেউ আর নিচ্ছে না। আমাগো ঘরে অভাব লেগেই আছে।’
বাতাকান্দি বাজারের মাছ ধরার সরঞ্জামের এক পুরোনো দোকানি সিদ্দিক মিয়া। আলাপকালে তিনি জানান, আগে আনতা, দাড়ি, ভাড়, চাই খুব চলত। এখন কেউ খোঁজও নেয় না। লোকজন এখন ৫০ টাকার ম্যাজিক জাল নেয়। প্রায় ৫ বছর ধরে তাঁর চাই আর দাড়ি বিক্রি হয় না বললেই চলে।
গত বুধবার দুপুরে বাতাকান্দি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে– কয়েকটি আনতা, চাই, পলোর দোকান সরঞ্জাম সাজিয়ে রেখেছে। তবে ক্রেতা নেই, দুই-একজন যা আসছেন, দরদামে বনিবনা না হওয়া বেচাকেনা হচ্ছে না।
আনতা, চাই বিক্রেতা বিমল সরকার জানান, দুপুর ১টা পর্যন্ত একটি সরঞ্জামও বিক্রি করতে পারেননি। আগে অনেক টাকায় বিক্রি করতে পারতেন। তাঁর বাবা-দাদা সবাই এই ব্যবসা করেছেন, কিন্তু কারেন্ট জাল ও রিং জালের কারণে এখন আনতা, চাই কম চলে।
বাজারে আরেক ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলামের ভাষ্য, আগে প্রতিহাটে ৬০-৭০ হাজার টাকার সরঞ্জাম বিক্রি করতে পারতেন। এখন পুরো বর্ষা মৌসুমেও ৫-১০ হাজার টাকা বিক্রি হয় না।
বাতাকান্দি গ্রামের শাহ আলম বলেন, ‘ছোটকাল থেকে দেখে আসছি হাটের দিন এই বাজারে প্রচুর আনতা, পলো, চাই বিক্রি হতো। এখন তেমন একটা বিক্রি হয় না কারেন্ট জাল ও রিং জাল ব্যবহারের কারণে। এতে দেশীয় মাছ ধ্বংসের মুখে।’
বাতাকান্দি বাজারে আনতা কিনতে আসা ক্রেতা শাহ আলম মিয়া জানান, আগে বর্ষার সময় ২০-২৫টি আনতা কিনতেন তিনি। প্রচুর মাছও ধরা পড়ত। এখন কিছু লোক কারেন্ট জাল ও ম্যাজিক জাল ব্যবহার করার কারণে আনতাতে তেমন মাছ ধরা পড়ে না। তাই আনতা ব্যবহার লাভজনক না হওয়ায় কিনছেন না।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় তিতাস উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমা আক্তারের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, কারেন্ট জাল ও রিং জালের আধিপত্যের কারণে দেশীয় মাছ ধরার সামগ্রী আনতা, চাই, পলো হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। কারণ ওইসব জাল দিয়ে কম সময়ে নির্বিচারে মাছ শিকার করা যায়। এসব নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার বন্ধে প্রায়ই বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মাঠ পর্যায়েও অভিযান চালিয়ে জাল ধ্বংস করা হচ্ছে। সবাই এগিয়ে এলে মৎস্য সম্পদ রক্ষা পাবে, না হলে একসময় দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।