হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব শুরু হয়েছে।
রীতি অনুযায়ী, প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুল্কপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে শুরু হয় এই রথযাত্রা। শুক্রবার (২৭ জুন) নানা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে এই রথযাত্রার মহোৎসব আয়োজন করা হয়েছে সারা দেশে। যা আগামী ৫ জুলাই উল্টো রথযাত্রার মধ্যদিয়ে শেষ হবে।
রাজশাহী: নগরীর রেশমপট্টি এলাকার ইসকন মন্দির থেকে রথে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার প্রতিমা স্থাপন করে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করেন ভক্তরা। একইভাবে বোয়ালিয়ার রথবাড়ি থেকে শুরু হওয়া আরেকটি শোভাযাত্রা কুমারপাড়া, জিরোপয়েন্ট, বাটার মোড়, রানীবাজার হয়ে আলুপট্টিতে গিয়ে শেষ হয়। উৎসব ঘিরে ঢাক-ঢোল, কীর্তন, ধর্মীয় প্রতীক ও ব্যানারে সুসজ্জিত হয়ে নানা বয়সী মানুষ শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
রথযাত্রা উপলক্ষে আয়োজনে ছিল হরিনাম সংকীর্তন, বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ এবং ভক্তদের মধ্যে মহাপ্রসাদ বিতরণ।
আয়োজকেরা জানান, জগন্নাথ হচ্ছেন জগতের পালনকর্তা। তার কৃপা লাভের আশায় ভক্তরা প্রতি বছর তাকে রথে বসিয়ে শোভাযাত্রার আয়োজন করেন।
নাটোর: জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগরে শ্রী-শ্রী মদনমোহন মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে ১৫৫ বছরের প্রাচীন পিতলের রথে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকালে মাঙ্গলিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে হাজারো ভক্তের অংশগ্রহণে রথযাত্রার সূচনা হয়।
এই রথটি স্থানীয়ভাবে ‘উপমহাদেশের বৃহত্তম ও প্রাচীনতম পিতলের রথ’ হিসেবে পরিচিত। এটির উচ্চতা ২৫ ফুট, ভিত্তি ১২ ফুট স্কয়ার। রথটিতে রয়েছে ১২টি চাকা, প্রতিটি চাকার ভেতরে পিতলের ১২টি পাত, ১২টি কোণ এবং ১১২টি পিলার।
আয়োজকরা জানান, মাধনগর মদনমোহন মন্দির থেকে রশি টেনে রথ এগিয়ে নিয়ে যান ভক্তরা। তারা নেচে-গেয়ে, ঢাক-ঢোলের শব্দে মুখরিত করে তোলেন পুরো এলাকা। পাশ্ববর্তী পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলা থেকে হাজারো পূণ্যার্থী রথযাত্রায় অংশ নেন।
সাভার: ঢাকার ধামরাইয়ে প্রায় ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী যশোমাধবের রথ উৎসব। আজ দুপুর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা উপস্থিত হতে শুরু করেন ধামরাইয়ে। বিকেলে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার উপস্থিতিতে রথযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন আয়োজনের। পরে ভক্তরা পাটের রশি ধরে টেনে কায়েতপাড়ার রথ খোলা থেকে মাধবের শ্বশুরালয় যাত্রাবাড়ি মন্দিরে টেনে নিয়ে যান রথটি।
আগামী ৫ জুলাই উল্টো টানের মাধ্যমে রথযাত্রা উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। রথযাত্রা ঘিরে প্রতিবছরের মতো রথমেলা চলবে মাসব্যাপী।
মাগুরা: ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা মধ্য দিয়ে মাগুরায় হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা শুরু হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে রশি টেনে রথ চালনা করেন।
মাগুরা জেলা পূজা উৎযাপন কমিটির সহ-সভাপতি মোহন লাল রায় খোকন ঠাকুর বলেন, প্রতি বছরের মত বারও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে ভগবান শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়েছে।
দিনাজপুর: জেলার ফুলবাড়ী পৌর এলাকার শ্রী শ্রী শিবমন্দির থেকে রথযাত্রা বের হয়। আজ দুপুর ২টার দিকে প্রায় ৩ হাজার হিন্দু ধর্মাবলম্বী রথ নিয়ে শ্রী শ্রী শ্যামা কালী মন্দিরে যাত্রা করেন। এর আগে সকালে শ্রী শ্রী শিব মন্দিরে পূজা করে রথ প্রস্তুত করা হয়। রথযাত্রা শুরুর আগেই হাজার হাজার ভক্তের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে ওঠে শিব মন্দির ও আশপাশের এলাকা।
ফুলবাড়ী ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য সচিব মানিক মন্ডল বলেন, “ফুলবাড়ী একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উর্বর জায়গা। হিন্দুদের রথযাত্রায় যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে সে জন্য আমরা ব্যবসায়ীরা প্রস্তুত ছিলাম।”
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দিনাজপুর জেলা কমিটির সদস্য আনন্দ কুমার গুপ্ত বলেন, “রথযাত্রা আনন্দমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শোভাযাত্রায় পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত ছিলেন।
ঢাকা/কেয়া, আরিফুল, সাব্বির, শাহীন, মোসলেম/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ ব র রথয ত র রথয ত র র জগন ন থ মন দ র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
যুদ্ধবিধ্বস্ত সীমান্ত শহরে ভূগর্ভস্থ কবিতা উৎসব
রাশিয়ান সীমান্তের খুবই কাছে পূর্ব ইউক্রেনের বৃহত্তম শহর খারকিভের অবস্থান। শহরটি তাই সহজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তবু নিজস্ব সাংস্কৃতিক জীবন যাপন বজায় রাখতে দৃঢ় সংকল্প রয়েছে এখানকার অধিবাসীদের। কদিন আগে আয়োজিত একটি কবিতা উৎসব খারকিভের মানুষের মানসিক দৃঢ়তা আর সৃজনশীলতারই প্রমাণ হাজির করে।
রাশিয়ার সীমান্ত থেকে মাত্র ১৮ মাইল দূরে অবস্থিত খারকিভ শহরটি এখন ভাঙা-পোড়ার এক বিরোধপূর্ণ মিশ্রণে প্রায় পরিত্যক্ত। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে রক্ষার জন্য শহরের ভাস্কর্যগুলো বালুর বস্তায় মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। পার্কে ফুলের বাগানগুলো যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। স্ট্রিট লাইফ একটি ইউরোপীয় দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর থেকে যতটা আশা করা যায়, তার চেয়ে কয়েক গুণ শান্ত। তবু বইয়ের দোকান, কফিশপ আর রেস্তোরাঁগুলো খোলা আছে!
খারকিভ শহরটি এখন ভাঙা-পোড়ার এক বিরোধপূর্ণ মিশ্রণে প্রায় পরিত্যক্ত