বগুড়ায় রথযাত্রা উৎসবে এবার গত বছরের শোকের ছায়া
Published: 27th, June 2025 GMT
বগুড়ায় শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে এবার নানা সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তবে ছিল না উৎসবের আমেজ। গত বছরের রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ছয়জনের মৃত্যুতে শোকের রেশ ছিল পুরো রথযাত্রাজুড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, আজ শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে শহরের সেউজগাড়ি এলাকার আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ বা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন) মন্দির এবং আনন্দ আশ্রম থেকে রথযাত্রা বের হয়। এবারের রথযাত্রা সংক্ষিপ্ত করে সেউজগাড়ি আমতলা মোড়, স্টেশন সড়ক, সাতমাথা, কালীতলা হয়ে পুনরায় শেরপুর সড়ক হয়ে ঠনঠনিয়া থেকে ফিরে সেউজগাড়ি ইসকন মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। অন্যবার রথযাত্রা বিভিন্ন সড়ক ঘুরে শহরের পুলিশ লাইনস সংলগ্ন শিবমন্দিরে গিয়ে শেষ হতো।
গত বছরের ৭ জুলাই জগন্নাথের রথযাত্রা উৎসবে বগুড়া শহরের আমতলা মোড়ে রথের চূড়ার সঙ্গে বিদ্যুতের তারের স্পর্শে ছয়জনের প্রাণহানি ঘটে। আহত হন প্রায় অর্ধশত সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষ। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে আয়োজকদের ‘দায়িত্বহীনতা’ ও ‘সতর্কতার অভাবকে’ দায়ী করে।
আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুর্ঘটনা এড়াতে এবার রথযাত্রা সংক্ষিপ্ত করা হয়। সড়কের বিদ্যুতের তারের সঙ্গে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রথের চূড়াও ছিল অন্যবারের তুলনায় আকারে ছোট। অন্যবার রথযাত্রা ঘিরে ১০০ স্বেচ্ছাসেবী নিয়োজিত থাকলেও এবার এ সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০০।
আরও পড়ুনবগুড়ায় রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৫ জনের মৃত্যু, আহত অর্ধশত০৭ জুলাই ২০২৪এবারের উৎসবে ছিল না উদ্বোধনী পর্বও। অন্যবার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা রথযাত্রায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকলেও এবারের উৎসব ছিল ‘অতিথিবিহীন’। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের জেলা কমিটির সহসভাপতি ও বগুড়া পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র পরিমল চন্দ্র দাস এবং পূজা উদ্যাপন পরিষদ বগুড়া শহর কমিটির সভাপতি পরিমল প্রসাদসহ ধর্মীয় নেতারা রথযাত্রায় নেতৃত্ব দেন।
পূজা উদ্যাপন পরিষদ বগুড়া শহর কমিটির সভাপতি পরিমল প্রসাদ প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের রথযাত্রায় ছয়জন ভক্তের মৃত্যুর রেশ ছিল এবারের উৎসবজুড়ে। দুর্ঘটনা এড়াতে রথের চূড়া নিচে নামিয়ে আনার পাশাপাশি সর্বোচ্চ সতর্কতা ছিল, স্বেচ্ছাসেবকও ছিল চার শতাধিক। রথযাত্রার গন্তব্য কলোনি এলাকার শিবমন্দিরের বদলে এবার শহর প্রদক্ষিণ শেষে ইসকন মন্দিরে ফিরেই শেষ হয়।
আরও পড়ুন‘হঠাৎ শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে, চিৎকার-কান্না শুনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি’০৮ জুলাই ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র রথয ত র রথয ত র য় গত বছর র দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
বিজয়া দশমীতে আজ শেষ হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব
মহা ধুমধামে অঞ্জলি, আরতি, পূজা–অর্চনায় শারদীয় দুর্গোৎসবের বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। আজ সকালে শুরু হবে দেবীর দশমী বিহিত পূজা। এরপর দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবের সমাপ্তি হবে। গত রোববার দেবীর পূজা শুরু হয়েছিল।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ প্রথম আলোকে জানালেন, রাজধানীতে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দশমীর পূজা শুরু হবে ৯টা ৫৭ মিনিটে। দর্পণ বিসর্জনের পরে ১২টায় শুরু হবে স্বেচ্ছা রক্তদান কর্মসূচি। প্রতিবছরই বিজয়ার দিনে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে স্বেচ্ছা রক্তদানের আয়োজন থাকে।
বিজয়ার শোভাযাত্রা শুরু হবে বেলা তিনটা থেকে। এর আগে মহানগরীর অনেক স্থানের মণ্ডপ থেকে প্রতিমা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আনা হবে। বুড়িগঙ্গায় বিসর্জন ঘাটে (ওয়াইজঘাট) নিরঞ্জন হবে সন্ধ্যা নাগাদ। এবার দেবীর আগমন ছিল গজে, আর দোলায় গমন।
সিঁদুরখেলাআজ বিজয়া দশমীতে অনেক মন্দিরেই দশমী বিহিত পূজা ও দর্পণ বিসর্জনের পরে সিঁদুরখেলার আয়োজন থাকবে। সাধারণত এ আয়োজনে বিবাহিত নারীরা দেবীর চরণে সিঁদুর দান করে তা কৌটায় ধারণ করেন সারা বছর ব্যবহারের জন্য। এ সময় তাঁরা একে অন্যের কপাল ও চিবুকে দেবীর চরণ স্পর্শ করা সিঁদুর লাগিয়ে দেন। সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, বনানী মণ্ডপ, ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মণ্ডপে সিঁদুরখেলার আয়োজন থাকবে বলে এসব মণ্ডপের পূজা আয়োজকেরা জানিয়েছেন।
ঢাকের বাদ্যতে মুখর মণ্ডপগতকাল বুধবার শারদীয় দুর্গাপূজার মহানবমীতে ঢাকঢোলের বাদ্যতে মুখর হয়ে উঠেছিল রাজধানীর পূজামণ্ডপগুলো; ছিল আলোর রোশনাই, অঞ্জলি। নবমীতেই দেবী দুর্গা তীব্র লড়াইয়ের মাধ্যমে অসুর বিনাশ করেন। মহিষাসুর বধের এই বিজয় দিবসটি তাই দেবীভক্তদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেবী এই দিনে ভক্তদের মনোবাসনা পূরণ করেন। নবমীর প্রধান ধর্মীয় আচার হলো অসুরবিনাশী দেবীকে অঞ্জলি নিবেদন। রাজধানীর বিভিন্ন মণ্ডপে ভক্তরা ফুল হাতে দেবীপদে এই অঞ্জলি নিবেদন করেন।
বনানী পূজামণ্ডপে সকাল থেকেই ছিল ভক্তদের বিপুল সমাগম। বনানী পূজা উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক চন্দন লোধ প্রথম আলোকে বললেন, সকাল নয়টা থেকে নবমী বিহিত যজ্ঞ ও পূজা শুরু হয়েছিল। অঞ্জলি প্রদান শুরু হয় দুপুর সোয়া ১২টা থেকে। এ সময় ভক্তরা করজোড়ে পুরোহিতের সঙ্গে মন্ত্রপাঠ করে দেবীকে প্রণাম করেন। অঞ্জলি নিবেদন শেষে তাঁরা চরণামৃত ও যজ্ঞের ফোঁটা সংগ্রহ করেন।
মানিকগঞ্জের বেতিলা থেকে যাদব চন্দ্র ঘোষ, স্ত্রী অর্চনা রানি ঘোষকে নিয়ে বনানী মণ্ডপে এসেছিলেন অঞ্জলি দিতে। তাঁরা প্রথম আলোকে বললেন, বনানীর পূজার আয়োজন অনেক বড়। জাঁকজমক, সাজসজ্জাও বর্ণাঢ্য। তাঁদের গ্রামেও পূজা হচ্ছে। তবে গ্রামের পূজার সঙ্গে বনানীর আয়োজনের তুলনা চলে না। প্রতিবছরই তাঁরা নবমীতে এখানে অঞ্জলি দিতে আসেন।
অঞ্জলি দিয়ে দেবী প্রণাম জানালেন অসীম গুহ ও রুপা গুহ দম্পতি। তাঁরা থাকেন গুলশানে। অসীম গুহ জানালেন, এরই মধ্যে তাঁরা ঢাকার অধিকাংশ মণ্ডপে প্রতিমা দর্শন করেছেন। উত্তরার দিয়াবাড়ির মণ্ডপের সাজসজ্জা তাঁর কাছে বেশ ব্যতিক্রম লেগেছে। তবে পরিসর আর বর্ণাঢ্যতার দিক থেকে বনানীর মণ্ডপকেই এগিয়ে রাখবেন। এখনে ভক্তদের বসার জন্য অনেক বড় জায়গা ও অন্যান্য সুবিধা রয়েছে। নিরাপত্তাও খুব ভালো। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা আর্থিক মন্দাভাব রয়েছে। এ কারণে হাত খুলে খরচ করে উৎসব নিয়ে আনন্দ–উচ্ছ্বাস করায় কিছুটা ঘাটতি আছে বলে তাঁর মনে হয়েছে।
এবার বনানী পূজামণ্ডপের সাজসজ্জায় সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানালেন কমিটির আহ্বায়ক চন্দন দত্ত ও গুলশান সর্বজনীন পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাঞ্চন কুমার দত্ত। দেবী প্রতিমায় কোনো কৃত্রিম বস্ত্র বা অলংকার ব্যবহার করা হয়নি। সম্পূর্ণই মাটির তৈরি। প্রতিমায় প্রধানত সাদা রং ব্যবহার করা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হালকা গোলাপি আভা। অস্ত্র আর অলংকার উজ্জ্বল রুপালি রঙের। ফলে সাদা ও রুপালি মিলিয়ে প্রতিমায় বিশেষ স্নিগ্ধতার প্রকাশ ঘটেছে। এ ছাড়া ফটক ও ভেতরের সাজসজ্জায় পাটি, পাটকাঠি, বাঁশ, বেত—এমন উপকরণ ব্যবহার করে লোকজ ঐতিহ্যবাহী নকশায় অলংকরণ করা হয়েছে। তাঁরা জানালেন, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত দুইটা পর্যন্ত মণ্ডপ খেলা থাকে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজারের মতো ভক্ত বনানী মণ্ডপে দেবীদর্শনে এসেছেন।
আয়োজকেরা জানালেন, ষষ্ঠীপূজার দিন থেকেই বনানী মণ্ডপে প্রসাদ বিতরণ করা হচ্ছে। এখানে প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার জনের জন্য প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
নবমীর বিকেলে পাঁচটা থেকে শুরু হয় পূজা ও শ্রীশ্রী চণ্ডীপাঠ। সন্ধ্যার পর ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আরতি দেওয়া হয়েছে রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত।
আয়োজকেরা জানালেন, বনানী, গুলশান, উত্তরা এলাকার প্রায় ৩০টি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে আশুলিয়ায়। সকালে দশমীর পূজা শেষে বিজয়ার যাত্রা শুরু হবে বেলা তিনটার পর থেকে।
মণ্ডপ ঘুরে ঘুরে দেবীদর্শনফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের মাঠে ৩৪ বছর ধরে শারদীয় দুর্গাপূজা হচ্ছে সনাতন সমাজকল্যাণ সংঘের আয়োজনে। এখানেও নবমী পূজায় অনেক ভক্তের সমাগম হয়েছিল। সংঘের সভাপতি মনোতোষ কুমার রায় প্রথম আলোকে বললেন, প্রায় ১০ হাজার ভক্ত নবমীর সকালে দেবীকে অঞ্জলি দিয়েছেন। এখানেও প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ হাজার জনকে প্রসাদ বিতরণ করা হচ্ছে। পার্থ ভৌমিক স্ত্রী সুবর্ণা ভৌমিক ও দুই মেয়ে প্রকৃতি ভৌমিক ও স্পৃহা ভৌমিককে নিয়ে এখানে দেবীকে নবমীর অঞ্জলি দিয়েছেন। তাঁরা থাকেন মণিপুরি পাড়ায়। সারা দিন তাঁরা বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরে দেবীদর্শন করবেন বলে জানালেন।