ভারত-রাশিয়ার মধ্যে আরও এস-৪০০ সরবরাহ নিয়ে আলোচনা
Published: 27th, June 2025 GMT
ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এস-৪০০ সরবরাহ, সু-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমানে উন্নয়ন এবং জরুরি সামরিক হার্ডওয়্যার সরবরাহ নিয়ে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার চীনের কিংডাও শহরে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসোভ সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকের ফাঁকে তাঁরা তা নিয়ে আলোচনা করেন।
গতকাল শুক্রবার ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, দুই দেশের নেতাদের সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পটভূমিতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। যখন আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, আধুনিক প্রযুক্তি এবং যুদ্ধবিমান আধুনিকীকরণের মতো জরুরি প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের উৎপাদন বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা সরবরাহ, সু-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমানের আধুনিকীকরণ এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম দ্রুত সময়ে কেনার বিষয়টি ছিল এই বৈঠকের প্রধান সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অন্যতম।
গত ৭ মে পাকিস্তানে পরিচালিত ভারতের অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’। নয়াদিল্লির দাবি, তাদের নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ বেসামরিক নাগরিক হত্যার প্রতিবাদে এ অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানের সময় পাকিস্তানের পাল্টা হামলা থেকে ভারতীয় সামরিক ঘাঁটি রক্ষায় এস-৪০০ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
২০১৮ সালে ৫৪৩ কোটি ডলারে রাশিয়ার থেকে পাঁচটি এস-৪০০ কেনার চুক্তি করে ভারত। এর মধ্যে তিনটি ভারতের হাতে পৌঁছেছে। বাকি দুটি আসবে ২০২৬ সালে। বর্তমানে ভারতের অস্ত্রভান্ডারের প্রায় ৬০ শতাংশই রাশিয়ার তৈরি।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর ২৫৯টি সু-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমানের মধ্যে ৮৪টি বিমানের উন্নয়নেও রাশিয়া সহযোগিতা করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেলোসোভ বলেন, সামরিক-প্রযুক্তি খাতে রাশিয়া ও ভারতের দীর্ঘমেয়াদি বন্ধুত্ব আরও গভীর হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ সরবর হ মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%
এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের
থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।
থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।
সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এফএওর সূচক কমেছেপ্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।
চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের
অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।