ভারতের সংসদের পররাষ্ট্রবিষয়ক স্থায়ী কমিটি ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে দেশটির শীর্ষস্থানীয় চারজন বিশেষজ্ঞের বিশেষ মতবিনিময় সভা হয়েছে। এতে দলমত–নির্বিশেষে সংসদ সদস্যরা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ‘ভবিষ্যতে এগিয়ে নেওয়ার’ আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।

গতকাল শুক্রবার কংগ্রেসদলীয় সংসদ সদস্য শশী থারুরের নেতৃত্বে সংসদীয় কমিটি ও চারজন বিশেষজ্ঞের মধ্যে মতবিনিময় সভা হয়। এর আগে দ্য হিন্দুর করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ঢাকার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং ভারত কীভাবে সেখানে হারানো প্রভাব পুনরুদ্ধার করতে পারে—সেসব বিষয় সভায় আলোচনা হতে পারে।

মতবিনিময় সভার বিষয়ে অবগত এমন একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য হিন্দুকে জানায়, সব সংসদ সদস্যই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার বিষয়গুলো নিয়ে সহানুভূতি ও সচেতনতা দেখিয়েছেন। সভায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক করে সামনে এগিয়ে নেওয়ার আগ্রহের কথা উঠে এসেছে।

সভায় উপস্থিত চার বিশেষজ্ঞ হলেন ভারতের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শঙ্কর মেনন, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) সৈয়দ আতা হাসনাইন ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ডিন অমিতাভ মাত্তু।

মতবিনিময় সভা চলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। সভায় সংসদ সদস্যরা দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য সব ধরনের প্রস্তাব শুনতে আগ্রহী ছিলেন। গত বছরের আগস্টে গণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কের বেশ অবনতি হয়েছে।

সভায় আলোচনার বিষয়ে ইঙ্গিত করে একটি সূত্র জানিয়েছে, এটি একটি সাধারণ উপলব্ধি ছিল যে অভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারত একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। এ দেশকে পাকিস্তানের মতো শত্রুপ্রতিম প্রতিবেশী হিসেবে দেখা উচিত নয়।

সভায় সংসদ সদস্যরা মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে জানিয়েছেন, ভারতের উচিত, পশ্চিমবঙ্গকে অন্তর্ভুক্ত করে স্বল্পপরিসরে সাংস্কৃতিক কূটনীতি চালু করা, যাতে করে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্যকে প্রশমিত করা যায়। বাংলাদেশ সম্প্রতি একটি উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ ২৩ জুন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

সংসদীয় কমিটির আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ এক অভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। এই সম্পর্ক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের ঐতিহ্যের সূত্রে গড়ে উঠেছে। নয়াদিল্লি ও ঢাকার মধ্যে সরাসরি জনসম্পৃক্ত কূটনীতির (প্যারা-ডিপ্লোম্যাসি) জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ সংযোগকে ব্যবহার করা উচিত। এ জন্য জনসাধারণের অংশগ্রহণে মতবিনিময়সহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে।

সংসদ সদস্যরা আরও কিছু বিষয় উত্থাপন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে চীনের প্রভাব, বাংলাদেশ থেকে ভারতে কথিত অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীনের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৯ জুন কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠক।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষের মন্দির

মানুষের মন্দির

এটি ছিল এক বিষণ্ন রাত

ফ্যাকাশে আলোর সঙ্গে,

হৈমন্তী চাঁদের আলোয়

আলোকসজ্জিত আকাশ।

আমরা আনন্দে একত্র হয়েছিলাম

শরতের রোদে রাঙা দুপুরে

আমাদের ঘামের ফসল হাতে

. . . . . . . . . . .

আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি

আমাদের বপনের ঋতুতে

আমাদের যত্নের ঋতুতে,

আমরা ছিলাম অধ্যবসায়ী

আমরা ছিলাম নিবেদিত

আমাদের প্রচেষ্টা প্রতি,

এখন সময় এসেছে ফসল তোলার।

এই সব দিনে

আমরা ভোগ করি পরিশ্রমের ফসল

আমাদের আগে ছিল যারা,

বুঝি না আত্মত্যাগের মানে

যা জন্ম নিয়েছে

নিজের গড়া গৌরবের ছায়া হতে।

আমারও লোভার্ত হাত পৌঁছেছিল সেই আলমারিতে

একটি নিরবচ্ছিন্ন চেতনা নিয়ে,

প্রাচুর্যের মানে বুঝতে অপারগ,

এক নিঃশব্দ অস্বীকৃতির ভারে।

. . . . . . . . . . . .

এই সময়ে

কিছু মানুষ আছে,

আমার প্রতিবেশীরা,

আমার সহপথিক মানবেরা

অক্লান্ত পরিশ্রম করে, তবু ভোগে যন্ত্রণায়।

এদিকে আমার কঠিন চেতনা

আসে আর যায়

সহানুভূতির প্রাঙ্গণ দিয়ে,

ফেলে রেখে যায়

আমার জন্মগত ও ঈশ্বরপ্রদত্ত করুণা,

আমার অসংবেদনশীলতার দ্বারে।

.. . . . . . . . . . .

দশমাংশ কী,

এ কি শুধু এইটুকুই...

আমাদের সীমিত পকেট আর পার্স খালি করা

চাঁদার ঝুড়িতে ফেলার জন্য?

. . . . . . . .

আমি আমার দশম ভেড়া কোথায় দেব,

আমার দশম ছাগল,

আর কোন মন্দিরে...?

এ কি মানুষের তৈরি মন্দির,

ইট, চুনসুরকি আর কাঠ দিয়ে গড়া,

যেখানে আমরা জমায়েত হই

আমাদের স্বেচ্ছায় জমানো অস্থিরতা উজাড় করতে,

নাকি এটা তার চেয়ে বড় কিছু,

একটি মন্দির যা বিরাট কোনো চেতনার জগতে বিরাজমান,

যা আমাদের সকলকে আপন করে জড়িয়ে ধরে?

যখন

যখন সবকিছু ধসে পড়বে,

তখন তুমি কোথায় দাঁড়িয়ে থাকবে?

যখন আকাশ নিজেকে গুটিয়ে নেবে,

তখন তুমি কীভাবে নিশ্বাস নেবে?

যখন তারারা তাদের আলো নিভিয়ে দেবে,

তখন কি আমাদের স্বপ্ন দেখার ক্ষমতাটাও

অদৃশ্য হয়ে যাবে?

যখন হাসি ব্যথার জন্ম দেবে,

তখন কি আমরা

অর্থবোধক অনুভূতি থেকে

সম্পূর্ণ শূন্য হয়ে যাব?

যখন আমরা আর আহারের জন্য ক্ষুধার্ত থাকব না,

তখন কি আমরা সময়ের মৃত্যুযাত্রায়

নীরবে আত্মসমর্পণ করব?

যখন দিগন্তের শেষ

আমাদের সামনে দাঁড়াবে,

তখন কি আমরা ছুটে বেড়াব

সবকিছু মনে করতে, ফিরে পেতে

যা আমরা অবহেলা করেছি,

ধ্বংস করেছি, ভুলে গেছি?

যখন সব ‘কেন’র উত্তর মিলবে,

তখন কি আমরা অবশেষে বুঝতে পারব?

যেমন মি. স্মিথ বলেছিল নিওকে,

আমরা একধরনের ভাইরাস,

একটা বিপজ্জনক জাত

যাদের সবচেয়ে বড় ক্ষমতা হলো

ধ্বংস করার দক্ষতা।

এই আত্মনির্মিত দুঃস্বপ্ন

কবে শেষ হবে?

কবে?

সম্পর্কিত নিবন্ধ