রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে গণশুনানির দাবিতে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা।

আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া চত্বরে দুপুর ১২টার দিকে এ অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান আল মামুনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক রাফিউল আজম খান, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সানজিত ইসলাম, পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারজানা জান্নাত, রসায়ন বিভাগর শিক্ষক আবদুল লতিফ প্রমুখ।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ২৪ জুন চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয় সংস্থাটি। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান প্রসিকিউটর মো.

মিজানুল ইসলাম। তিনি জানান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামসহ ৩০ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরীও (আকাশ) এ মামলার আসামি। তবে অন্য আসামিদের নাম প্রকাশ করবেন না বলে জানান মিজানুল ইসলাম।

অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেন, ২৩ জুন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গণশুনানি হওয়ার কথা ছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা কী কারণে এই গণশুনানি করলেন না? কেন তাড়াহুড়া করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করছেন? এ কারণে তাঁরা গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে তদন্ত প্রক্রিয়ার ওপর অনাস্থা প্রকাশ করেছেন।

কর্মসূচিতে অধ্যাপক রাফিউল আজম খান বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়, সারা পৃথিবীর মানুষ দেখেছে, কীভাবে দিনের আলোয় পুলিশের গুলিতে একজন শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। আবু সাঈদ ন্যায্য দাবির জন্য রাস্তায় নেমেছিলেন। কিন্তু তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল। আমরা আদালতের এখতিয়ার নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে চাই না। কিন্তু তদন্তকারী যাঁরা আছেন, তাঁদের ভূমিকা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন আছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড ঘটেছে রংপুরের মাটিতে। কিন্তু রংপুরে তাঁরা এলেও সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলা, গণশুনানি করা হয়নি। যাঁরা প্রসিকিউশন ও তদন্তকারী কর্মকর্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবেন না, তাঁদের বক্তব্য নেওয়া হয়নি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁরা একটা তারিখ ঘোষণা করলেও কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেনি।’

ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সানজিত ইসলাম বলেন, যদি গণশুনানি করে তদন্তকাজ পরিচালনা করা হতো, তাহলে এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও অবিশ্বাস তৈরি হতো না।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণশ ন ন ইসল ম তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের সময় অপরিবর্তিত রেখে রাকসুর তফসিল পুনর্বিন্যাস, ভোটকেন্দ্র স্থানান্তরের দাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের সময় ১৫ সেপ্টেম্বর অপরিবর্তিত রেখে তফসিল পুনর্বিন্যাস করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এ ব্যাপারে রাকসুর নির্বাচন কমিশন অধ্যাপক আমজাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাকসুর খসড়া ভোটার তালিকায় বেশকিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে। যা সমাধান করতে একটু সময় প্রয়োজন। এ জন্য তফসিলের ভেতরের কিছু সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে পূর্বনির্ধারিত নির্বাচনের সময় অপরিবর্তিত থাকছে। যথাসময়ে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় এক দশক পর ১৯৬২ সালে রাকসু প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর মোট ১৪টি নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। জুলাই অভ্যুত্থান–পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন রাকসু নির্বাচনের দাবি জানায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে শেষ পর্যন্ত পথনকশা অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি হয়নি।
শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে ২৮ জুলাই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের ভোট গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশিত হবে। ইতিমধ্যে তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনের আচরণবিধি ও খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তবে গতকাল মধ্যেরাতে নির্বাচনের সময় অপরিবর্তিত রেখে তফসিল পুনর্বিন্যাসের বিজ্ঞপ্তি দেয় নির্বাচন কমিশন।

রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন স্বাক্ষরিত নতুন তফসিল বিবরণীতে বলা হয়, ভোটার তালিকায় আপত্তি ও নিষ্পত্তি করা যাবে ১৭ আগস্ট বিকেল ৪টা পর্যন্ত; চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৯ আগস্ট; মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে ২০–২৩ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত; মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে ২৪–২৬ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত; মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৭–২৮ আগস্ট; প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ ৩১ আগস্ট এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

নতুন প্রকাশিত তফসিলে বলা হয়, প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ৪ সেপ্টেম্বর, ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রতিটি আবাসিক হলে ভোট গ্রহণ, অর্থাৎ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং ওই দিনই ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

ভোটকেন্দ্রে আপত্তি ও অনশনের ঘোষণা
তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র আবাসিক হল বাতিল করে একাডেমিক ভবনে স্থানান্তরসহ তিন দাবিতে আন্দোলন করছে। নতুন প্রকাশিত তফসিলেও ভোটকেন্দ্র অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভোটকেন্দ্র পরিবর্তনের সময় বেঁধে দিয়েছে। তা না হলে গণ–অনশন কর্মসূচিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আল শাহরিয়া শুভ। গতকাল মধ্যরাতে শুভ তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে  লিখেছেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভোটকেন্দ্র আবাসিক হল থেকে একাডেমিক বিল্ডিংয়ে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত না এলে গণ–অনশন কর্মসূচি দেওয়া হবে। মনে রাইখেন, সময় ২৪ ঘণ্টা। অপশন একটাই!’

সম্পর্কিত নিবন্ধ