সালমান খান সম্প্রতি নেটফ্লিক্সের ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কপিল শো’র নতুন মৌসুমের প্রথম পর্বে হাজির হয়ে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছেন। এদিন সালমান ছিলেন দারুণ মুডে, ব্যক্তিগত নানা বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, নিজের প্রতিদিনের ডায়েট সম্পর্কেও।
শো চলাকালীন নভোজিৎ সিং সিধুর সঙ্গে আলাপচারিতায় সালমান বলেন, ‘আমার বাবা, মাশাআল্লাহ, আজও প্রতিদিন সকালে হাঁটতে যান। তিনি বলেন, “আমার ক্ষুধা আগের মতো নেই।” কিন্তু তাঁর খাওয়ার বহর শুনলে অবাক হতে হয়—২-৩টা পরোটা, ভাত, মাংস, তারপর মিষ্টি—দিনে দুবার! তাঁর একটা আলাদা রকম মেটাবলিজম আছে।’
আরও পড়ুনসালমান, অক্ষয় নাকি অজয়, ১০০ কোটির রাজা কে২৪ এপ্রিল ২০২৫সালমান খানের বাবা সেলিম খানের বয়স এখন ৮৯। এই বয়সেও তিনি নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস বজায় রেখেছেন। সালমান বলেন, ‘আমরা খুব গর্বিত যে আমাদের এমন একজন বাবা আছেন, যিনি আজও নিজের শরীরের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন।’
এরপর নিজের ডায়েট সম্পর্কে বলতে গিয়ে সালমান খান বলেন, ‘আমি যা-ই খাই না কেন, বেশি খাই না। ধরুন, এক চামচ ভাত বা খুব বেশি হলে দেড় চামচ, সঙ্গে সবজি, আর তার সঙ্গে চিকেন, খাসির মাংস অথবা মাছ।’
শুধু নিজের ডায়েট নয়, বলিউডে ফিটনেস সংস্কৃতি প্রসারেও নিজের ভূমিকা স্মরণ করেন সালমান। তিনি বলেন, ‘আমি বলিউডে প্রথম দিককার অভিনেতাদের মধ্যে একজন, যে কিনা জিম কালচার জনপ্রিয় করে তোলে। আজ যখন ধর্মেন্দ্রজির মতো কিংবদন্তি অভিনেতাদের এখনো ফিটনেস মেনে চলতে দেখি, তখন ভালো লাগে।’
সালমান খান.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাকৃবিতে বহিষ্কারসহ ৫ ছাত্রীর শাস্তি নিয়ে যা জানা গেল
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) তাপসী রাবেয়া হলে কৃষি অনুষদের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাসনোভা হককে র্যাগিংয়ের দায়ে পাঁচ নারী শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তবে ঘটনার নেপথ্যে কারণ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অর্ডিন্যান্স ফর স্টুডেন্ট ডিসিপ্লিন’ এর ৭ নম্বর ধারা অনুসারে অভিযুক্ত তিনজনকে সাময়িকভাবে হল থেকে বহিষ্কার করা হলো। হল থেকে সাময়িক বহিষ্কৃতদের মধ্যে কৃষি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মারিয়া সুলতানা মীমকে ১২ মাসের জন্য এবং একই অনুষদের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়দা জান্নাত সোহা ও আশিকা রুশদাকে ৬ মাসের জন্য হল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
আরো পড়ুন:
আবু সাঈদ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৮ পুলিশ স্বপদে, উত্তাল বেরোবি
আইএসইউতে বসন্তকালীন সেমিস্টারের নবীন বরণ
এছাড়াও প্রাধ্যক্ষের আওতাধীন শাস্তি অনুসারে কৃষি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষ ও প্রথম বর্ষের দুইজনকে ১ হাজার টাকা করে আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রশাসন দুই পক্ষকে একসঙ্গে নিয়ে একবারও বসেনি। ওই মেয়ে (ভিক্টিম) অনেক অভিযোগ আমাদের নামে দিয়েছে, যার কোনো প্রমাণ নেই। আমরা মানছি, রাতে বসাটা আমাদের ভুল ছিল। তবে তার উপর শারীরিক নির্যাতন ও ফোন কেড়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাস্তি পাওয়া দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, “ঘটনার শুরু ১৯ মে দিবাগত রাত ২টার দিকে। আমি আমার রুমে পড়ছিলাম। তখন তার (ভিক্টিম) একজন সহপাঠী আমাকে এসে জানায়, সে (ভিক্টিম) আমার নামে খারাপ কথা বলে বেড়িয়েছে। এরপরে আমি ও আমার একজন সহপাঠী এবং ভিক্টিম ও তার আরো তিনজন সহপাঠী মিলে আমরা গেস্টরুমের পাশে একটা জায়গায় বসেছিলাম।”
তিনি বলেন, “আমরা মূলত ছাদে ছিলাম। তাই বিষয়টি সমাধানের জন্য তিনজন জুনিয়রের একজন তাকে ছাদে আসতে বলে। পরে সে ছাদে আসতে চায়নি, তাই আমরা গেস্টরুমের পাশে একটা জায়গায় বসেছিলাম, যেখানে সিসিটিভিতে সব দেখা যায়। আমরা তার প্রতি কোনো শারীরিক নির্যাতন করিনি এবং তার ফোনও কেড়ে নেওয়া হয়নি। তবে সেদিন ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের মতো আমাদের আলোচনা চলে। পুরো ঘটনা সিসিটিভিতে রেকর্ড আছে। ওই মেয়ে সেদিন দোষ স্বীকারও করেছে এবং পরের দিন বাসায় চলে যায়; এখানো আসেনি।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের বক্তব্য হচ্ছে কোনো শারীরিক নির্যাতন তো এখানে নেই, তাহলে এত বড় শাস্তি কেন? ভিক্টিম তার বয়ানে অনেকগুলো ভুল ও মিথ্যা কথা বলেছে, আমরা যেগুলো প্রাধ্যক্ষ ও হাউজ টিউটর ম্যামদের সঙ্গে বসার সময় প্রমাণ করেছি। কিন্তু ম্যামরা বায়াসড ছিল। তারা আমাদের চরিত্র নিয়ে অনেক কথা বলেছে। প্রাধ্যক্ষ ও হাউজ টিউটর মিলে আমাদের পাঁচজনকে বলেছে, আমাদের নাকি মেয়ে ঘটিত সমস্যা আছে।”
শাস্তি পাওয়া এই শিক্ষার্থী বলেন, “গত ২৭ মে প্রাধ্যক্ষ ও হাউজ টিউটর ম্যামরা পরীক্ষার আগে রাত ১১টা বা সাড়ে ১১টার দিকে আমাদের একে একে ডেকে জেরা করেন। বয়ান নিয়ে সেটা আমাদের পড়তে না দিয়েই স্বাক্ষর করে নেয়। আমরা বলেছিলাম, তার (ভুক্তভোগী ছাত্রী) ওপর কোনো টর্চার করা হয়েছে কি না, সেখানে সিসিটিভি আছে, সেটা দেখে ব্যবস্থা নেন। হল প্রশাসন আমাদের কোনো কথা শোনেনি। ম্যামরা একপ্রকার জোরপূর্বক আমাদের স্বীকার করিয়ে নেয়।
শাস্তি পাওয়া এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, “হলের ম্যামরা আমাদের তিনটা শর্ত দেয়। আমরা এই বিষয় প্রক্টর স্যারকে জানিয়েছিলাম, পরে এটা নিয়ে আরো আলোচনা হয়। এরপরে আমাদের আর কিছু বলেনি। তারপর হুট করে এ নোটিসটা এল।”
এ বিষয়ে বাকৃবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, “তদন্ত কমিটি হয়েছিল, হল প্রশাসন তদন্ত করেছে। আমরা প্রক্টর বডি থেকেও কয়েকবার সেখানে গিয়েছি। দুইপক্ষ থেকেই লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল। প্রত্যেককে প্রশ্ন করে করে এবং হল প্রশাসন থেকে তদন্ত করে তারা রিপোর্ট দাখিল করেছে। ওই মেয়ে (ভিক্টিম) ঘটনার পরদিন খুব ভোরেই তার পরীক্ষা না দিয়ে বাড়ি চলে যায় এবং বাসা থেকেই অভিযোগ দেয়। পরে হল প্রশাসন তাকে ডেকে এনে তার থেকে বিস্তারিত শোনে।”
ওই হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইসরাত জাহান শেলী বলেন, “এটা হলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। হল প্রশাসন তদন্ত করেছে, প্রক্টর স্যার, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা স্যার সবাই বিষয়টা জানেন। তদন্ত কমিটিতে আমার হলের তিনজন হাউজ টিউটর ও আমি ছিলাম। শাস্তির বিষয় অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী উপাচার্য স্যারের সঙ্গে মিটিং করে দেওয়া হয়েছে। ওরা বলছে র্যাগিং করিনি। তাহলে রাত ১টা ৪৫ থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত পাঁচজন মিলে একটা মেয়েকে মানসিক নির্যাতন করেছে।”
তিনি বলেন, “ওই ভিক্টিম মেয়েটা দুর্বল হৃদয়ের। সে সেসময় বলেছিল, ‘আমি স্ট্রোক করতে পারি, আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি।’ তখন ওই পাঁচজন নাকি বলেছে, ‘অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার আগে অন্তত কিছু লক্ষণ প্রকাশ করো, তখন তোমাকে দেখবো আমরা।’ আমরা ভিক্টিম মেয়েকে অভিভাবকসহ ডেকে এনে বক্তব্য নিয়েছি এবং অভিযুক্ত পাঁচজনকে ধাপে ধাপে ডেকে বক্তব্য নিয়েছি।”
শাস্তির বিষয়ে তিনি বলেন, “পাঁচজনের মধ্যে একজনকে ১ বছরের জন্য, দুইজনকে ৬ মাসের জন্য হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া বাকি দুইজনকে ১ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।”
শাস্তি পাওয়া ভিক্টিমের তিন সহপাঠীর বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ বলেন, “ঘটানাটা তো ঘটেছে। তারা (ভিক্টিমের তিন সহপাঠী) এর সঙ্গে জড়িত ছিল। এজন্য শাস্তি পেয়েছে।”
ঢাকা/লিখন/মেহেদী